ফাতেহ ডেস্ক:
দেশের ১০৮টি স্থানকে অতি দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে বেসরকারি সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। তিন বছরব্যাপী গণমাধ্যমে প্রকাশিত সড়ক দুর্ঘটনার স্থানগুলো পর্যবেক্ষণ করে সারা দেশে ২২৯টি দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করেছে সংগঠনটি। দুর্ঘটনার ধরন ও মাত্রা বিশ্লেষণের মাধ্যমে ১০৮টিকে অতি দুর্ঘটনাপ্রবণ ও ১২১টিকে সাধারণ দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা হিসেবে বিবেচনা করেছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের গবেষণায় অতি দুর্ঘটনাপ্রবণ যে ১০৮টি স্থানের তালিকা তুলে ধরা হয়েছে, তার মধ্যে সাত জেলায় সবচেয়ে বেশি, অর্থাৎ চারটি করে উপজেলায় দুর্ঘটনা সবচেয়ে বেশি হয়। এ সাত জেলা হলো টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, দিনাজপুর, রংপুর, ময়মনসিংহ ও কুমিল্লা। এই সাত জেলায় টাঙ্গাইলের উপজেলাগুলোর মধ্যে বেশি দুর্ঘটনাপ্রবণ ভূঞাপুর, কালিহাতী, ঘাটাইল ও মির্জাপুর। চট্টগ্রামের মীরসরাই, সীতাকুণ্ড, পটিয়া ও চন্দনাইশ উপজেলায় বেশি দুর্ঘটনা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চার দুর্ঘটনাপ্রবণ উপজেলার মধ্যে আছে সরাইল, নবীগঞ্জ, বিজয়নগর ও আখাউড়া। চিরিরবন্দর, বীরগঞ্জ, বিরামপুর ও ফুলবাড়ী—দিনাজপুরের এই চার উপজেলা অতি দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। রংপুরের চার উপজেলা হলো পীরগঞ্জ, কাউনিয়া, পীরগাছা ও বদরগঞ্জ। ময়মনসিংহের চার উপজেলার মধ্যে আছে ভালুকা, গফরগাঁও, নান্দাইল ও ত্রিশাল। আর অতি দুর্ঘটনাপ্রবণ কুমিল্লার চার উপজেলার মধ্যে আছে চান্দিনা, চৌদ্দগ্রাম, ব্রাহ্মণপাড়া ও বুড়িচং।
যেসব এলাকায় বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে, তার সাতটি কারণ তুলে ধরেছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। এর মধ্যে প্রধান কারণ হলো এলাকার সড়কের নকশা ও অবকাঠামোগত ত্রুটি। দ্বিতীয় কারণ হলো সড়কের পারিপার্শ্বিক বিরূপ অবস্থা। গবেষণায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সড়ক নিরাপত্তাসংক্রান্ত ব্যবস্থা না থাকা বা ঘাটতি (সাইন, মার্কিং, সড়ক বিভাজক, পূর্বসতর্কতামূলক নির্দেশনা বোর্ড) দুর্ঘটনার একটি কারণ। আবার যানবাহনের উচ্চগতি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা না থাকা এবং একই সড়কে বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের বাধাহীন ও বেপরোয়া চলাচলও দুর্ঘটনার নেপথ্যে কাজ করে। সমস্যা আছে—এমন স্থানে যানবাহন চালনার ক্ষেত্রে চালকদের সক্ষমতার অভাব বা অদক্ষতা থাকলে দুর্ঘটনা ঘটে বলে গবেষণায় দেখা গেছে। এ ছাড়া সড়কের পার্শ্ববর্তী বা সড়কঘেঁষা জনবসতি থাকলে তা দুর্ঘটনা ঘটাতে ভূমিকা রাখে।
এর আগে ২০১৪ সালে ‘সড়কে নিরাপত্তা: বাস্তবতা এবং প্রতিবন্ধকতাসমূহ’ নামের এক গবেষণায় দেখা যায়, দেশের ২০০৯ সালের প্রায় ৫৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা হয়। ব্র্যাকের সহযোগিতায় এ গবেষণা করে পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি)। ওই গবেষণায় দেখা যায় দেশের পাঁচটি জেলা সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনাপ্রবণ। এগুলো হলো কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ ও ঢাকা।
পিপিআরসির গবেষণা ও রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ৯ বছরে দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকার সংখ্যা বেড়েছে ২০টি।
দুর্বল অবকাঠামোর কারণে সড়কে দুর্ঘটনা ঘটে। তাই সড়কের যেসব স্থানে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটছে, সেসব স্থানের নকশা ও অবকাঠামোগত সমস্যার সমাধান করা দরকার বলে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের সুপারিশে উঠে এসেছে। এ ছাড়া তাদের দেওয়া সুপারিশের মধ্যে আছে সড়ক নিরাপত্তাসংক্রান্ত ঘাটতি নিরসন করা, যানবাহনের গতিসীমা নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তির ব্যবহার করা, একই সড়কে নানা ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধে সার্ভিস লেন অথবা সড়ক বিভাজক তৈরি করা।
রোড সেফটির ফাউন্ডেশনের আগের এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে কয়েক বছর ধরেই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার সংখ্যা ও মৃত্যু বাড়ছে। বিশেষ করে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় কিশোর-তরুণদের মৃত্যুর ঘটনা বেশি। গত বছরের (২০২২) জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে দেশে ২ হাজার ৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২ হাজার ৯৭ জন। তার আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দুর্ঘটনা ২১ শতাংশ এবং প্রাণহানি ১৯ শতাংশ বেড়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে তাই এলাকার অপ্রাপ্তবয়স্কদের মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য যানবাহন চালানো বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার সুপারিশ উঠে এসেছে গবেষণায়। সেখানে আর যে দুটি সুপারিশ আছে, সেগুলো হলো সড়কের পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষের মধ্যে নিরাপদে সড়ক ব্যবহার বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থানগুলো আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নজরদারির আওতায় নিয়ে আসা।