দ্যা গুড মুসলিম প্রকল্প : আমেরিকান ইসলাম

হুজাইফা মাহমুদ:

৯/১১-এর ঘটনা নিঃসন্দেহে এই শতকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। যে ঘটনার পর পৃথিবীর অনেক কিছুই বদলে যায়। বিশেষত মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি এক নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়। একই সাথে আমেরিকা-রাশিয়ার স্নায়ুযুদ্ধের পর বিশ্বরাজনীতি প্রবেশ করে এক নতুন অধ্যায়ে। মধ্যযুগের ক্রুসেড যুদ্ধের পর পুনরায়  ইসলাম এবং পশ্চিমের চিরায়ত আদর্শ ও সভ্যতার সংঘাত সুস্পষ্ট আকারে এবং প্রকাশ্যে যুদ্ধের ময়দানে অবতীর্ণ হয়।

৯/১১ আমেরিকার কাছে এ কারণেও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ যে, এই প্রথমবারের মতো একটি দাপটশালী সাম্রাজ্যবাদী শক্তি নিজ দেশে আক্রান্ত হলো। বিশ্ব দাপিয়ে বেড়ানো আমেরিকার কল্পনাতেও ছিলো না যে, তার বুকেও কেউ আঘাত হানতে সক্ষম হবে!

বিশেষত বিগত অর্ধশতকে দুনিয়াব্যাপী নিজ সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটাতে গিয়ে কত মানুষকে বলি দিয়েছে তার নেই কোন সঠিক পরিসংখ্যান। কিন্তু এবারেই প্রথম, বন্দুকের নল উল্টে গেলো।

এই ঘটনার অব্যবহিত পরে যা ঘটে, তা হলো, কেবল আমেরিকা নয় বরং গোটা পশ্চিমের সমষ্টিগত আবেগ রাগ ক্ষোভ ও শঙ্কাকে ইসলামের বিরুদ্ধে এক অনন্ত যুদ্ধের দিকে পরিচালিত করা হয়। ইসলামের  প্রতি যুগযুগের পুষে রাখা ঘৃণার সুপ্ত আগ্নেয়গিরি যেন সহসাই বিস্ফারিত হলো ইউরোপ আমেরিকার জমিনে। তারা এই হামলাকে কেবল একটি বহুতল বাণিজ্যিক ভবনের উপর হামলা হিসেবে নেয়নি, বরং পশ্চিমা সভ্যতার উপর হামলা হিসেবেই নিয়েছে।

একদিকে ইসলাম পশ্চিমের জমিনে শঙ্কার ত্রাসের মূর্তিমান রূপ নিয়েছে, অপরদিকে অনেক উৎসাহীর মনে কৌতূহলের স্পর্শও লেগেছে। তারা ইসলামকে সভ্যতা ও জ্ঞানের জায়গা থেকে জানার জন্য আগ্রহী হন। ফলে অনেকেই আগ্রাসী মিডিয়ার বয়ান, রাষ্ট্রীয় বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদদের এন্টি ইসলামিক ন্যারেটিভকে পাশে রেখে নিজ থেকে স্ব-উদ্যোগে ইসলামের সাথে জ্ঞানতাত্ত্বিক পর্যায়ে পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করেন।

এর আশ্চর্যজনক ফলাফলও আমরা দেখি! তারা খুব সহজেই ইসলামের পশ্চিমা ন্যারেটিভ এবং রিপ্রেজেন্টেশন থেকে প্রকৃত ইসলামকে আলাদা করে ফেলতে পেরেছেন। ফলে এই ৯/১১ ইউরোপ ও আমেরিকায় ইসলাম মানুষের উভয়কেন্দ্রিক আগ্রহের বিন্দুতে পরিণত হয়, এবং আমরা ইউরোপিয়ান নও মুসলিমদের একটি বিশাল জাগরণ দেখতে পাই! এটি ৯/১১ এর পর শুরু হওয়া ‘ওয়ার অন টেররের’ বিপরীত পার্শ্বের গুরুত্বপূর্ণ  আলাপ। আমাদের আলোচ্য বিষয়ের জন্য এই পটভূমি বয়ান ও ভূমিকার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, সামনের আলোচনা থেকে সেটা আরও স্পষ্ট হবে।

ভালো মুসলিম, খারাপ মুসলিম

প্রেসিডেন্ট বুশ যখন তার পশ্চিমা সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন তখন একে তিনি ধর্মযুদ্ধ বা ক্রুসেড হিসেবেই ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু এটা যদি ক্রুসেড হয় তাহলে তিনি তার মুসলিম দেশগুলোর সহযোগিতা পাবেন না, যাদের সহযোগিতা ব্যতীত এই যুদ্ধে নামা তার পক্ষে সম্ভব না। ফলত তিনি এই অবস্থান থেকে সরে এসে আরও কৌশলী অবস্থান গ্রহণ করলেন।

তিনি সমস্ত মুসলিমকে  দুইভাগে ভাগ করলেন; গুড মুসলিম এবং ব্যাড মুসলিম। তার এই বিভাজিত দৃষ্টিকোণ থেকে  ‘ব্যাড মুসলিম’ হলো যাবতীয় সন্ত্রাসবাদের জন্য দায়ী। একই সাথে সমস্ত মুসলিমদেরকে একথা বুঝিয়ে দেয়া হলো, নিজেদেরকে ‘গুড মুসলিম’ হিসেবে প্রমাণ করার জন্য তাদের উচিৎ আমেরিকাবাসীর এই দুঃখ ও শোকের ভাগিদার হওয়া এবং ‘ব্যাড মুসলিম’দের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া যুদ্ধে সার্বিক সমর্থন করা। গুড মুসলিম মানে হলো আপনি আমেরিকা ও ওয়েস্টার্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ থেকে নিজের ধর্ম ও বিশ্বাসের সাংঘর্ষিক মনে করেন না, এবং একটাকে অপরটা থেকে  পৃথক মনে করেন না।  এই মূল্যবোধকে আত্মিকরণের মধ্য দিয়েই কেবল একজন মুসলিম ‘গুড মুসলিম’ হতে পারে। এই প্রজ্ঞাপনের  মূলবার্তা হলো, আমেরিকার নির্ধারিত মানদণ্ডে  মুসলিম হিসেবে ‘গুড’ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত সকলেই ব্যাড মুসলিম বা সম্ভাব্য সন্ত্রাসবাদী। পরিচয় প্রকাশ ও প্রমাণের মতো একটি অস্পষ্ট বিষয়কে সকলের উপর অপরিহার্য বিষয় হিসেবে চাপিয়ে দেয়া হলো।

যদিও মুসলিম মাত্রই খারাপ, ভয়ঙ্কর, সন্ত্রাস, বর্বর, পশ্চাৎপদ কিংবা এ জাতীয় স্টেরিওটাইপিং পশ্চিমের বহুল চর্চিত ধারণা; কিন্তু ৯/১১ যেন এই ধারণাকে আরও পোক্ত করেছে এবং এই সরলিকরণকৃত চিন্তার বৈধতা দান করেছে।

আফগানিস্তানে হামলা শুরু করার পর কিছু বুদ্ধিজীবী বলেছেন, আমেরিকা এক অদৃশ্য এবং কল্পিত শক্তির বিরুদ্ধে লড়ছে। এই অদৃশ্য শক্তি হলো ‘ব্যাড মুসলিম’ নামক একটি কল্পিত শত্রু বর্গ। যার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, সে ধর্ম ও রাষ্ট্রকে এক মনে করে। তাছাড়া সে মুসলিম হিসেবে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয়, অর্থাৎ মৌলবাদী এবং যাবতীয় আধুনিকতার কট্টর বিরোধী। ইতিপূর্বে আফ্রিকাকে দেখা হতো আধুনিকায়নের অনুপযুক্ত জাতি হিসেবে। স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে পশ্চিমা কল্পনায় আফ্রিকার জায়গায় মধ্যপ্রাচ্য ও ইসলাম ঢুকে পড়ে । অর্থাৎ, এই দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বায়নের যুগে ইসলাম ও মধ্যপ্রাচ্য কেবল আধুনিকায়নের অযোগ্যই নয়, বরং আধুনিকতার প্রতি কঠোর শত্রুভাবাপন্ন।

বরং প্রাক-আধুনিক যুগের প্রতি তার রয়েছে অদম্য আকর্ষণ। ফলে ইসলামের ব্যাপারে পশ্চিমের এই আশঙ্কা প্রবলতর হয়েছে যে, এরা কেবল নিজেরাই অনাধুনিক থেকে যাবেনা, বরং নিজেদের সাথে করে গোটা পৃথিবীটাকেই পশ্চাৎগামী করে ফেলবে, প্রাক-আধুনিক যুগে নিয়ে যাবে। সুতরাং আধুনিকতা-বিরোধী ‘কট্টরপন্থী ইসলাম’কে সার্বিকভাবে ক্ষমতাহীন করার মাধ্যমে, এমনতর একটি বিপর্যয় থেকে উদ্ধার পাওয়া এবং বাকি দুনিয়াকে উদ্ধার করা যেন পশ্চিমের অবশ্য কর্তব্যের মাঝেই পড়ে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আধুনিকায়নের প্রথম ধাপই হবে সেখানে পশ্চিমা লিবারেল ডেমোক্রেসির মডেল স্থাপন করা। মুসলিম বিশ্বে সবসময়ই বিদ্যমান ছিলো এন্টি ডেমোক্রেটিক ও এন্টি সেক্যুলার একটি শক্তিশালী ধারা। পশ্চিম মানসে সাধারণত এই সরলীকরণ  করা হয় যে, এন্টি-ড্যামোক্রেটিক মানে এন্টি-মডার্নিস্ট বা এন্টি ওয়েস্টার্ন।

সুতরাং এই শক্তিগুলোকে নির্মূল করে পশ্চিমা গণতন্ত্রকে সেসব রাষ্ট্রের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনাটাও তাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ।

এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে, মুসলিম দেশগুলোতে ‘মৌলবাদিতা’ থাকা এবং গণতন্ত্র ও আধুনিকতা বা পশ্চিমা প্রীতি না থাকাকে আমেরিকা বিপদজনক হিসাবে দেখে কেন? এর কারণ হলো, আমেরিকার মতো সাম্রাজ্যবাদী একটি রাষ্ট্র-যন্ত্র সবসময়ই তার চারপাশের পৃথিবীর যাবতীয় নাড়াচাড়াকে নিজের স্বার্থ (interest) ও নিরাপত্তার (security) দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করে। সে হিসাবে ‘ইসলামী মৌলবাদে’র উত্থানকে যদি আমেরিকা তার নিজের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ মনে করে থাকে, তাহলে তাকে দমন করে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। একইভাবে, এই ‘ইসলামী মৌলবাদী’ শক্তির উত্থানের মাধ্যমে যদি তার স্বার্থ রক্ষা হয় তাহলে সেই শক্তিকে সমর্থনও করতে পারে। যেটা আমরা আফগান-সোভিয়েত যুদ্ধে দেখেছি। আমেরিকার নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্টের মতো প্রথম সারির পত্রিকাগুলোতে আফগান তালেবানদের সশস্ত্র ছবি ছাপা হতো এবং তাদেরকে বীর মুক্তিযুদ্ধা হিসাবে আখ্যা দেয়া হতো। প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান বলেছেন, এই তালেবানরা হলো আব্রাহাম লিঙ্কনের আদর্শের উত্তরসূরী। আমেরিকা তখন তালেবানের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

কিন্তু একযুগ পেরোনোর আগেই এই একই তালেবানকে আমেরিকা পৃথিবীর নৃশংসতম সন্ত্রাসীগোষ্ঠি হিসাবে আখ্যায়িত করে পৃথিবী ও মানবতার জন্য হুমকি বলে ঘোষণা দেয় এবং এদের নির্মূলের জন্য ‘ওয়ার অন টেরর’ নাম দিয়ে  প্রহসনমূলক আগ্রাসন শুরু করে।

সভ্যতার সংঘাত

ইসলাম ও পশ্চিমের এই সংঘাত যেন অনিবার্যই ছিলো। বরং পশ্চিমাদের ক্রুসেডীয়, ঔপনিবেশিক ও সাম্রাজ্যবাদী ঐতিহ্যের সিলসিলাই যেন এই সংঘাতকে অনিবার্য করে তুলছিলো । ১৯৯৩ সালে আমেরিকার প্রভাবশালী  রাজনীতি বিশেষজ্ঞ স্যামুয়েল হান্টিংটন তার বিখ্যাত গবেষণাগ্রন্থ The Clash of Civilizations and the Remaking of World Order প্রকাশ করেন। আমেরিকা- সোভিয়েত রাশিয়ার স্নায়ুযুদ্ধ সমাপ্তির পর আগামী বিশ্বের যুদ্ধ ও সংঘাতের স্বরূপ কেমন হবে, একক ক্ষমতা ও বিশ্ব ব্যবস্থাপনার গতি প্রকৃতি কোন দিকে গড়াবে, তার একটি সম্ভাব্য রোডম্যাপ তিনি তৈরী করে দেন। তার মতে, স্নায়ুযুদ্ধের পর বিশ্বরাজনীতি এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করছে। এই নতুন বিশ্বের দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের কারণ আদর্শ ও অর্থনীতি-কেন্দ্রিক  হবেনা, বরং সংস্কৃতিই হবে এই সংঘাতের মূল।  বৈশ্বিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে জাতিরাষ্ট্রগুলো শক্তিশালী হিসেবে থাকলেও মৌলিক দ্বন্দ্বটা হবে মূলত জাতি এবং বিভিন্ন সভ্যতার মাঝে।

হান্টিংটন তার গবেষণায় একথা স্পষ্ট করেই বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, সংঘাতন্মুখ এই দুই সভ্যতার একটি ইসলাম এবং অপরটি পশ্চিম। ইসলাম ও পশ্চিমের মাঝে যে পর্দাটি রয়েছে তা হলো সভ্যতা ও সংস্কৃতির।  ইসলামের সাথে এই সংঘাতকে অনিবার্য ভেবেই হান্টিংটন পশ্চিমকে সতর্ক হওয়া এবং প্রস্তুতি নেয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।  বলাবাহুল্য তার এই প্রস্তাবনাপত্রটি আমেরিকার ফরেইন পলিসি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করেছে। এর সুগভীর প্রভাবও স্পষ্টই বুঝা যায়।

হান্টিংটন তার প্রস্তাবনায় ‘গুড মুসলিম’ এবং ‘ব্যাড মুসলিম’ বলে কোন বিভাজন রেখা টানেননি, বরং তার কাছে ইসলাম ও মুসলিম মাত্রই পশ্চিমের শত্রু। কিন্তু তার শিক্ষক, প্রখ্যাত প্রাচ্যবিদ বার্নার্ড লুইস এই বিভাজনটি তৈরী করেছেন। তিনিই প্রথম দেখিয়েছেন ব্যাড মুসলিমের বিপরীতে গুড মুসলিম-এর উপস্থিতি আছে, আমেরিকার ফরেইন পলিসির জন্য এর সপক্ষে বুদ্ধিবৃত্তিক সমর্থন যুগিয়েছেন। পরবর্তীতে তার এই আইডিয়াই ফরেইন পলিসির চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে।

হান্টিংটন চেয়েছিলেন যুদ্ধটা পশ্চিম এবং ইসলামের মাঝেই হোক, সামগ্রিকভাবেই দুটি সভ্যতার সংঘাত। অপরদিকে লুইস এটা বুঝিয়েছেন যে, ইসলামের ভেতরই ‘চরমপন্থা’ এবং এর বিপরীতপন্থার উপস্থিতি রয়েছে। পশ্চিমারা এই দুইপন্থার মাঝখানে লড়াই করে তেমন সুবিধা করতে পারবে না। ইসলামি দেশগুলোতে সেক্যুলারিজম ও ড্যামোক্রেসি না থাকায় মানুষের মাঝে মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্য একধরণের আকাঙ্খা তৈরী হয়েছে। পশ্চিম সেটাকে সুযোগ হিসেবে নিবে। মুসলমানদের মাঝে যারা সেক্যুলার, লিবারেল ও গণতন্ত্রপন্থী, তারা পশ্চিমের পক্ষশক্তি। শত্রু হলো চরমপন্থী বা ব্যাড মুসলিমরা– যারা স্যাকুলারিজম, লিবারেলিজম, মানবাধিকার, ডেমোক্রেসিকে পশ্চিমা প্রকল্পের অংশ হিসেবে দেখে এবং এর বিরোধিতা করে। সুতরাং মুসলিমরা নিজেরাই নিজেদের লড়াই করুক, গুড মুসলিম বনাম ব্যাড মুসলিম, পশ্চিম সেটা দর্শকসারিতে বসে দেখবে, এবং দিনশেষে উভয়েই পশ্চিমের প্রতিনিধি হয়ে লড়বে।

৯/১১ পরবর্তী সময়ে এই লুইস-ই বুশ প্রশাসনের ইসলাম ও মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা হয়ে কাজ করেন।

তার পরামর্শ অনুযায়ী বুশ-ব্লেয়ার প্রশাসন হান্টিংটন স্টাইল থেকে সরে এসে লুইসের ‘গুড মুসলিম’ এবং ‘ব্যাড মুসলিম’ এর কার্ড প্লে করেন। গুড মুসলিমরা নিরাপদ এবং পশ্চিমের মিত্রপক্ষ।  এমনকি প্রয়োজনে কোন দেশ দখল করে সরকার প্রশাসন পরিবর্তন করে ব্যাড মুসলিমের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব থেকে গুড মুসলিমকে মুক্ত করার জন্য প্রস্তুত। যে অযুহাতে আমেরিকা ও পশ্চিমা শক্তি ইরাকে প্রবেশ করেছে, সেখানকার গুড মুসলিমদেরকে ‘স্বৈরশাসকের’ কবল থেকে  মুক্ত করে তাদের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে।

ঔপনিবেশিক আমল থেকে নিয়ে আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসন পর্যন্ত পশ্চিমা প্রাচ্যবিদগণ  এই একটি কাজটিই অত্যন্ত দক্ষতার সাথে করেছেন, যে অঞ্চল বা রাষ্ট্র দখল করা হবে, উপনিবেশ স্থাপন কিংবা সাম্রাজ্য সম্প্রসারণের মাধ্যমে, তার সম্পর্কে সার্বিক জ্ঞান সরবরাহ করে ক্ষমতা ও সাম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশিদার হয়েছেন। বার্নার্ড লুইস, স্টিফেন শোয়ার্টজ কিংবা ড্যালিয়েল পাইপ আর হান্টিংটনসহ আমেরিকার অন্যায় যুদ্ধের বুদ্ধিবৃত্তিক সাপোর্ট দিয়ে যাওয়া বড় একটি দল, যারা এই অশুভ জ্ঞানতাত্ত্বিক সিলসিলারই উত্তরসুরী। অনিবার্যভাবে অগণতান্ত্রিক, বিশৃঙ্খল ও উন্মত্ত ইসলামের হুমকি সম্পর্কে পশ্চিমকে ক্রমাগত সতর্ক করা ও উস্কে দেয়াই ছিলো তাদের একমাত্র কাজ।

ফরেইন পলিসি ও থিঙ্কট্যাঙ্ক

আমেরিকার ফরেইন পলিসি  অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। কারণ, আমেরিকা নিজেকে কেবল একটি ভৌগলিকভাবে সীমাবদ্ধ দেশ হিসেবেই দেখে না, বরং তারচেয়েও অনেক বেশি কিছু। আমেরিকা একটি ম্যাকানিজম। তার বৈশ্বিক নেতৃত্বের দায়িত্ব রয়েছে বলে মনে করা হয় এবং সেই নেতৃত্ব ও খবরদারীর জায়গা থেকেই  সে যেকোন দেশের, বিশেষত মুসলিম বিশ্ব ও অনুন্নত ‘তৃতীয়’ বিশ্বের, অভ্যন্তরীন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে হস্তক্ষেপ করতে পারে। ফলে, কোন দেশের সাথে কী ধরণের সম্পর্ক রাখবে, কতটুকু সম্পর্ক রাখবে, কাদের সাথে যুদ্ধ করবে, কাদেরকে সাহায্য করবে, এই যাবতীয় বিষয়গুলো দেখাশোনা করা ও পরামর্শ দেয়াই ফরেইন পলিসির কাজ।

আমেরিকান ফরেইন পলিসির নীতি নির্ধারক ও পরামর্শদাতা হিসেবে বার্নার্ড লুইস, হান্টিংটন, স্টিফেন শোয়ার্টজ প্রমুখ এর পাশাপাশি অনেক স্বতন্ত্র গবেষণা প্রতিষ্ঠানও গড়ে তোলা হয়। যারা ইসলাম ও মুসলিম বিশ্বের ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ের সার্বিক অবস্থা ও ইতিহাস  নিয়ে বিস্তর গবেষণা, আলোচনা, পর্যালোচনার মাধ্যমে আমেরিকান ফরেইন পলিসিকে সহায়তা করবে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রভাব ও ভূমিকা অকল্পনীয়।

৯/১১ এর পর এই  প্রতিষ্ঠানগুলোর (think tanks) মৌলিক কাজই হয়ে দাঁড়ায় মুসলিম বিশ্বের কোথায় আমেরিকার স্বার্থ বিঘ্নিত হচ্ছে, কোথায় আমেরিকার বৈশ্বিক নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে সেটা খুঁজে বের করা এবং এর সমাধানের উপায়গুলো উপস্থাপন করা। এর মাঝে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি থিঙ্কট্যাঙ্ক হলো– RAND Corporation , Brooking Institute, institute of peace, Defence of democracy, counter terrorism, National security Policy. এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো আমেরিকার প্রতিরক্ষা ও সামরিক বাহিনীর সহায়তায় যৌথভাবে কাজ শুরু করে। এরা শুধু সহায়তাই করেনা, বরং অনেক ক্ষেত্রে মিলিটারি কার্যক্রমকে শেইপিংও করে।

দ্যা গুড মুসলিমস এবং ইসলামের আধুনিকায়ন

ইসলাম কি কখনো আধুনিক হতে পারবে? ইসলাম কি আধুনিকতার বিরুদ্ধ শক্তি ? বা এই দ্রুত পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে আধুনিকতার সাথে পাল্লা দিয়ে ইসলাম কি নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে? এই প্রশ্নগুলো আজকাল খুবই কমন, যেকোনো অঙ্গনে। ইসলামের বিপরীতে যখন আধুনিকতার আলোচনা করা হয় তখন স্বাভাবিকভাবেই আধুনিকতাকে তার কালগত অর্থের বাইরে একটি ধ্রুব ও আধিপত্যবাদী মতবাদ হিসাবে দেখা হয়। সুতরাং এই আলাপ শুরুর আগেই আমাদেরকে আধুনিকতা (modernity) এবং আধুনিকতাবাদ (modernism), এই উভয়ের মধ্যকার মৌলিক পার্থক্যের বিষয়টি সামনে রাখতে হবে।

আধুনিকতাকে যখন একটি মতবাদ আকারে উপস্থিত করা হয় তখন সেটা আর ধ্রুব ও অনিবার্য কোন বিষয় থাকে না, বরং আর দশটা মানবীয় দর্শন ও মতবাদের মতোই একেও বিচার বিশ্লেষণ করে গ্রহণ বর্জনের ব্যাপার সামনে আসে। পশ্চিম যখন ইসলামকে আধুনিকতার বিরোধী শক্তি হিসেবে অভিযুক্ত করে, তখন সে মতবাদ হিসেবে হাজির থাকা আধুনিকতা ও কালগত অর্থের আধুনিকতা উভয়কে কৌশলে একত্রে উপস্থাপন করে এবং এ কথা বুঝাতে চায় যে, ইসলাম এখনও তার চৌদ্দশত বছর পেছনের ইতিহাসেই পড়ে আছে এবং থাকতে চায়। বর্তমান দুনিয়ায় তাদের কোন প্রাসঙ্গিকতা নাই। এটা নিঃসন্দেহে ভুল উপস্থাপনা। এই আধুনিকতাবাদ, যার জন্ম ও লালনপালন চূড়ান্তভাবে সেক্যুলারাইজড পশ্চিমের রেনেসাঁ পরবর্তী সময়ে, যা অনেকগুলো চিন্তা দর্শন ও মতবাদের একটি ফুল প্যাকেজকে অফার করে এবং যার সাথে ইসলামের সত্ত্বাগত বিরোধ রয়েছে। সম্পূর্ণ  বিপরীত দুই মেরুতে উভয়ের অবস্থান।

কাউকে আধুনিক হওয়ার জন্য অনুরোধ  জানানোর সহজ অর্থ হলো, তাকে পশ্চিমা হতে বলা। আমেরিকান ইসলাম বা পশ্চিমা ইসলাম বলতে আমরা যা বুঝি তার মূল প্রস্তাবনাও এটাই। কেননা একমাত্র ইসলামই তার আদি ও অবিকৃত সত্ত্বা নিয়ে আধুনিক পশ্চিমা সভ্যতাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। সুতরাং ইসলামকে যদি তার আদি ও মূল সত্ত্বা থেকে সরিয়ে এনে পশ্চিমায়ন করা যায়, তাহলে পশ্চিমের সামনে আর কোন চ্যালেঞ্জ থাকে না। এই বাস্তবতা সবার আগে বুঝেছিলেন নেপোলিয়ান বেনাপোর্ট এবং লর্ড ক্রোমারের মতো ঔপনিবেশিক বেনিয়ারা। আজ আমরা মুসলিম সমাজের একাংশের মাঝে আধুনিকতাকে সর্বোতভাবে গ্রহণ করে নেয়ার জন্য যে আকুতি দেখি, এর শুরু হয়েছিলো সেই ঔপনিবেশিক আমল থেকেই। উনবিংশ শতকের মিশর, মরক্কো ও ভারতবর্ষে ঔপনিবেশিক শক্তি এমন একটি দলকে  তৈরী করতে সক্ষম করতে হয়েছিলো, যারা আধুনিক হওয়ার নামে পশ্চিমা হওয়ার দিকে আহ্বান করেছিলেন। পার্থক্য হলো, সেসময় তারা কোনমতেই মুসলিম সমাজের মূলধারার লোক ছিলেন না। কিন্তু আজকের সময়ে আমরা মুসলিম সমাজের মূল ধারারই একটি বৃহত্তর অংশকে দেখি তারা ইসলামের আধুনিকায়নের প্রকল্প হাতে নিয়ে নেমেছেন। একদিকে মুসলিম সমাজগুলোতে যেমন আধুনিক মতবাদসমূহ তাদের ধর্মহীনতা ও ধর্মত্যাগের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, অপরদিকে আরেকদল ট্র্যাডিশনাল আলেম উলামার বিরোধিতায় নেমে তাদেরকে গুরুত্বহীন করে ফেলতে চাইছেন।

৯/১১ পরবর্তী সময়ে মুসলিমদের উপর পশ্চিমাদের ক্রমাগত চাপ ও প্রভাব বিস্তারের কারণে এই প্রবণতা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। পুরো পৃথিবীতেই মূলধারার ইসলামের অনুসারীদেরকে একপ্রকারের টেরোরাইজ করা হয়েছে। বিশ্ব মিডিয়া ও ইসলামবিরোধী রাষ্ট্রশক্তিগুলো এই ধারণা প্রতিষ্ঠিত করেছে যে, মুসলিম মাত্রই একটি সন্দেহজনক সত্ত্বা ও সম্ভাব্য টেরোরিস্ট। নিদেনপক্ষে গোঁয়ার ও মূর্খ টাইপের লোকতো হবেই। ইসলামি শরিয়াহ, রাজনীতি, জিহাদ, খিলাফাহ, হিজাব, মাদ্রাসা, দাঁড়ি, টুপি কিংবা এ জাতীয় ইসলামের একান্ত মৌলিক বিষয় ও সিম্বলগুলোর ব্যাপারে মানুষের মনে একধরনের ভীতি ও ঘৃণা সৃষ্টি করা হয়েছে পরিকল্পিতভাবে। এমনকি মুসলিম নাম ও প্রতীক বহনকারী যেকোন মুসলিমকে পৃথিবীর যেকোন জায়গায় টেরোরিস্ট হিসেবে সন্দেহ করে হেনস্থা করার অবাধ বৈধতা পেয়ে যায় তারা। দ্বিতীয়ত, ইসলামকে কট্টরপন্থা, মৌলবাদ, উগ্রবাদ এবং উদারবাদের মাঝে ভাগ করা হয়েছে। যে উদারতা অনিবার্যভাবেই শরীয়তের নির্ধারিত গণ্ডিকে অতিক্রম করে।

বিশেষত আমেরিকা ও পশ্চিমা দেশগুলোতে বসবাসরত মুসলিমদের বড় একটা অংশ এখন নিজেদেরকে আধুনিক মুসলিম হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। সেসব মুসলিম সমাজে এমন অনেক ধর্মীয় পন্ডিত ও আলেম উলামাগণ রয়েছেন যারা  ইসলাম ও আধুনিকতাবাদের মাঝে যে আদর্শিক ও সভ্যতাগত পার্থক্য রয়েছে, সেটাকে জ্ঞানগত দিক থেকে সুকৌশলে মুছে ফেলার নিরন্তর  চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ফলে এমন ধর্মীয় ব্যক্তিত্বও আমরা আজকাল অহরহ দেখছি, যিনি একদিকে সমাজের ধর্মীয় বিষয়াবলীর নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনা দেন, অপরদিকে তিনিই আবার সমকাম, নারীবাদ, বিবর্তনবাদ, লিবারেলিজমের মতো ইসলামের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক মতবাদ ও আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। এমন অনেক ‘ইসলামি প্রতিষ্ঠান’ও গড়ে উঠেছে, যারা প্রকাশ্যে ইসলামের বিপরীত আদর্শকে প্রচার করছে ইসলামের নামে! ‘কুরআন, হাদীস ও উম্মতের ইজমা’এর মাধ্যমে স্থিরকৃত অনেক বিষয়েও তারা অযাচিতভাবে হস্তক্ষেপ করছেন এবং এগুলোতে পশ্চিমা মূল্যবোধকে সংযুক্ত করছেন।

আমেরিকার ধর্ম ও সমাজ গবেষণা বিষয়ক প্রতিষ্ঠান পিও রিসার্চ সেন্টার (Pew research center)-এর জরিপে দেখা যায়, আমেরিকার ৫২%  মুসলিম মনে করেন যে, ইসলামের ট্র্যাডিশনাল বোঝাপড়াকে বর্তমান আধুনিক যুগের প্রয়োজন ও চাহিদা মোয়াফেক রিফর্ম বা সংস্কার করা প্রয়োজন। বিপরীতে মাত্র ৩৮% মুসলিম মনে করেন যে, বর্তমান যুগের মোকাবেলার জন্য ইসলামের ট্র্যাডিশনাল বোঝাপড়াই যথেষ্ঠ, এর রিফর্ম করার প্রয়োজন নেই।  যারা রিফর্মের দাবি করেন, তাদের ৭১% মনে করেন যে, ব্যক্তি জীবনে ধর্ম গুরুত্বপূর্ণ কোন বিষয় না। পিও রিসার্চের মন্তব্য, আমেরিকান মুসলিমরা মনে করেন, উচ্চপর্যায়ের ধার্মিক হওয়ার জন্য ইসলামের ট্র্যাডিশনাল বোঝাপড়া ও মতাদর্শ গ্রহণ করাটা জরুরী না। বরং প্রত্যেকেই তার নিজ সমাজ ও যুগের অনুযায়ী ইসলামকে বুঝবে ও মেনে চলবে। অর্থাৎ কোরআন ও হাদীসের টেক্সট একরৈখিক না, এগুলোকে চাইলে যেকোনভাবে ব্যাখ্যা করা যায়।

এ হলো আমেরিকার হিসাব, পশ্চিমের বাকি দেশগুলোর অবস্থাও এ থেকে খুব সহজেই অনুমেয়।

পৃথিবীতে ইসলামই একমাত্র অকাট্য ও অপরিবর্তনশীল দীন। কিয়ামত পর্যন্ত এর কোন বিধানে সামান্য পরিবর্তনও আনা সম্ভব না। এই চেষ্টা যে করবে, সে বিভ্রান্ত হবে। অনেকে এটা ভাবেন যে, আধুনিকতাবাদের সাথে সাংঘর্ষিক কিছু বিষয়ে ইসলামের বক্তব্যকে যদি সহজ ও নমনীয় করা যায়, তাহলে অমুসলিমরা খুশি হবে এবং ইসলাম গ্রহণে উদ্বুদ্ধ হবে। এটা মারাত্মকভাবে ক্ষতিকর বোকামি চিন্তা। যদি এমন হতো যে, কুরআনের একটা শব্দ বা বাক্য পরিবর্তন  করলে পৃথিবীর সমস্ত অমুসলিম মুসলিম হয়ে যাবে, তখনও এই অধিকার কারো নেই যে, সে এটা করবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, তারা কিছু অমুসলিমকে খুশি করার জন্য কুরআনের একটা দুইটা শব্দ বা বাক্য নয়, বরং একেকটা হুকুম পরিবর্তন করে ফেলতেও দ্বিধাবোধ করছেন না!

যদি আধুনিক পৃথিবী আমাদেরকে গ্রহণ করে নিতো, তাহলেই বরং ইসলামের সত্যতা নিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তা হতো। আধুনিক মানুষরাই এখন আধুনিকতার সঙ্কটগুলো চিহ্নিত করছেন এবং বের হওয়ার পথ খুঁজছেন। পুরো পৃথিবী আমাদের বিরোধিতা করছে, এটাই হলো ইসলামের সত্যতার নিদর্শন। ইসলাম ব্যতীত অপরাপর যেসব ধর্ম আছে তারা ইতিমধ্যেই মডার্নিজমকে হজম করে মৌলিকতা হারিয়ে বিলীন হয়ে গেছে। সুতরাং আমাদের এ নিয়ে গর্ব করা উচিৎ যে, আধুনিক দুনিয়া আমাদেরকে পছন্দ করে না।

গ্রন্থসূত্র:

১/ দ্যা গুড মুসলিম, ব্যাড মুসলিম– মাহমুদ মামদানি

২/ কাভারিং ইসলাম— এডওয়ার্ড সাঈদ

৩/ ইসলাম এন্ড ওয়েস্ট — বার্নার্ড লুইস

৪/ দ্যা রগট অফ মুসলিম রেইজ– বার্নার্ড লুইস 

৪/ ক্ল্যাশ অফ সিভিলাইজেশ্যন — স্যামুয়েল হান্টার

৫/ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যে ইসলাম — আলিয়া আলি ইজেতবেগোভিচ 

 

আগের সংবাদহলোকাস্টের মিথ : যেভাবে তৈরি হয়েছে বিশ শতকের সবচেয়ে বড় মিথ্যাচার !
পরবর্তি সংবাদবাংলাদেশে ইসলামী বইয়ের ঐতিহ্য ও সাম্প্রতিক ধারা