ধর্মেকর্মে মনোযোগী হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

|| তাসনিফ আবীদ ||

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ধর্মীয় বিষয়ে সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। পরীক্ষার হল ও ভাইভা পরীক্ষায় হিজাব পরিধানের অধিকারের জন্য আন্দোলন, মেয়েদের নামাজের জায়গার জন্য দাবি তোলা, গণ ইফতারের আয়োজন, ফিলিস্তিনের পক্ষে রাজপথে মিছিল ও মানববন্ধনসহ ঢাবি শিক্ষার্থীদের সচেতনতামূলক উপস্থিতি কম নয়। এছাড়া ঢাবির মসজিদগুলোতেও এখন বাড়ছে মুসল্লির সংখ্যা।

ঢাবি শিক্ষার্থী মাসুম বিল্লাহ জানান, আমাদের প্রতিটি ডিপার্টমেন্টেই জামে মসজিদ আছে। এছাড়া পাঞ্জেগানা মসজিদও রয়েছে অনেক। এসব স্থানে নামাজের সময় অবাক করার মতো জমায়েত দেখা যায়। আমরা যখন ঢাবিতে ভর্তি হওয়ার আগে বড়ভাইদের সঙ্গে নানা সময়ে দেখা করতে আসতাম তখন এমন অবস্থা দেখিনি। বিষয়টি আমাদেরকে খুব আনন্দ দেয়।

ঢাবির আরেক শিক্ষার্থী মারুফ হাসানের মতে, এসবের পেছনে মূল কাজ করছে তাবলিগ জামাত। এছাড়া ইসলামি কিছু ছাত্র সংগঠনের মাধ্যমেও ঢাবিতে ইসলাম চর্চা বাড়ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাবির মসজিদগুলোতে তাবলিগের মাশওয়ারা, তালিম, ইমান-ইয়াকিনের কথার আয়োজন হয়ে থাকে। এছাড়া মসজিদগুলোতে হয় কুরআন শিক্ষার আসর। বিশেষ করে রমজান মাসে এসবের সঙ্গে যুক্ত হয় আরো নানা ইসলামি অনুষঙ্গ।

দিন দিন নামাজি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। সময়ের ব্যবধানে ঢাবিতে মসজিদ সংখ্যা বাড়ানোর প্রয়োজন আছে কী না জানতে চাইলে ঢাবি শিক্ষার্থী ‍সুহেল রানা জানান, আমার মনে হয় আমাদের এখানে যথেষ্ট পরিমাণ মসজিদ আছে। মসজিদের বাইরেও নামাজের জায়গা আছে। তবে মেয়েদের জন্য যদি নামাজের নির্দিষ্ট জায়গা হতো তাহলে খুব ভালো হতো।

ঢাবিতে যেসব দল ছাত্র রাজনীতি করে থাকে তাদের অন্যতম ইসলামি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ। এই ছাত্র সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মুনতাসির আহমাদের মতে, এদেশে ইসলাম চর্চার ইতিহাস দীর্ঘদিনের। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সাধারণ মানুষের মাঝে দ্বীন চর্চা ব্যাপক হয় হেফাজতে ইসলামের ২০১৩ সালের আন্দোলনের পর থেকে। এরপর ধীরে ধীরে মানুষ ইসলাম চর্চায় ব্যাপকভাবে আগ্রহী হয়ে ওঠে। পাশাপাশি শাষকগোষ্ঠী রাজনৈতিকভাবে ইসলামকে কোণঠাসা করতে চাচ্ছে। তাই ইসলাম বর্তমানে সামাজিকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। জেনারেল শিক্ষিতদের মাঝে প্র্যাক্টিসিং মুসলিমের সংখ্যা বাড়ছে। এরই ধারবাহিকতায় ঢাবিতে ইসলাম চর্চা, নামাজি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ও ধর্মের প্রতি অনুরাগী ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে।

তিনি বলেন, এই রমজানে তো ইফতার ইস্যুতে ঢাবির ছাত্রদের একটা সাহসী উচ্চারণ আমাদের সামনে এসেছে। আপনি জানেন কী না জানিনা, ‘ঢাবির ছাত্রীদের মাঝেও কিন্তু ইসলাম চর্চা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।’ ছেলেদের নানা আয়োজন আমাদের চোখে পড়ে তাই সেটা জানি। মেয়েদের ধর্মের প্রতি অনুরাগের বিষয়টি অনেকটা আড়ালেই থেকে যায়। তবে আড়ালে থাকলেও এটি আমাদের জন্য আনন্দের।

‘ঢাবিতে নানা সময়ে হিজাব, নামাজ, ইসলামি রাজনীতি, ইফতার, ফিলিস্তিন ইস্যু, ইসলামি সাংস্কৃতি, কুরআন চর্চা, কুরআনি তালিমের যেচিত্রগুলো আমাদের সামনে এসে উপস্থিত হয় এতে অংশ নেওয়া সব শিক্ষার্থী কিন্তু শতভাগ ধর্ম-কর্ম মেনে চলে এমন না। কিন্তু তাদের সবার দাবি হলো, ঢাবিতে ধর্মচর্চাটাকে সবাই স্বাভাবিকভাবে দেখুক। ধর্ম চর্চা সবার নাগরিক অধিকার। এখানে পূজার মণ্ডপ হতে পারলে গণ ইফতারের আয়োজনও হতে পারে। এখানে উন্মুক্ত কনসার্ট হতে পারলে বটতলায় কুরআনের আসরও হতে পারে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা অফিস-বাড়ি সবখানেই ধর্মচর্চার স্বাধীনতা থাকা উচিৎ; এমনটাই তারা জানান দিতে চায়।’ –যুক্ত করেন তিনি

আগের সংবাদআমেরিকায় রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে মুসলিম বিদ্বেষী হামলা
পরবর্তি সংবাদবায়তুল মোকাররমে ঈদুল ফিতরের ৫ জামাত