পথের ফুল

সালাহ উদ্দীন আলভী:

—জ্বী বড় মামা, আমি বাসায়। কালকে বাসা ভাড়া তুলেছি। আজ একাউন্টে জমা দেবো। জমা করতেই মেসেজ পেয়ে যাবেন।
—আচ্ছা ঠিক আছে। শুনলাম, তুমি আজকাল বাড়ির বাইরে বেশি সময় কাটাচ্ছো। ব্যাপারটা কী? তোমার মতিগতি কী? মানুষ কি সারাজীবন তোমার নামে নালিশ দিবে আর আমি শুনেই যাবো? ভালোমানুষের মতো চলাফেরা করতে পারো না?
—জ্বী না বড় মামা। এটা যে-ই বলেছে, মিথ্যা বলেছে। সম্ভবত দারোয়ান বলেছে। রইছ মিয়াঁ। মিচকা শয়তান। বলবেই তো। বলবে না? আমি যে ওদেরকে দৌড়ের ওপর রাখি, সেজন্যই বলেছে। আমাকে পছন্দ করে না তো। কাজের কথা বললে তো পছন্দ করবে না। এটাই স্বাভাবিক। ওদের কথা বিশ্বাস করবেন না। ওরা ভীষণ ছোটলোকের মতো চলাফেরা করে। বাসার কাজকামে কোনো মনোযোগ নাই। তয় আপনি চিন্তা করবেন না বড় মামা। আমি আছি না, আপনার একমাত্র ভাগ্নে! সব সামলে নেবো।
—ঠিক আছে ঠিক আছে। আর ভদ্রতা দেখাতে হবে না। আমি তোমাকে ভালো করেই চিনি। কালকে বেতনের টাকা তোমার একাউন্টে পৌঁছে যাবে। কাজের লোক আর দারোয়ানের বেতন দিয়ে দিয়ো। আর আমার কাছে যেন তোমার নামে পরবর্তীতে কোনো কমপ্ল্যান না আসে।
—জ্বী আচ্ছা বড় মামা। স্লামালিকুম।
—ওয়া আলাইকুম.. টুট টুট।

কথা বলতে বলতেই রফিকুল বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লো। কফির বাই উঠেছে ওর। একনাগাড়ে কয়েক কাপ কফি না খেলে এই বাই নামবে না। একনাগাড়ে দু’কাপ কফি শেষ করা রফিকুলের গতানুগতিক অভ্যাস। এক কাপ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় কাপ অর্ডার হয়ে গেছে। একমিনিটে চলে আসবে। রফিকুল পা দুলিয়ে সিগারেট ফুঁকছে। বেঞ্চের ওপরে ভাঁজ করা এক পা। অন্য পা মেঝে ছুঁইছুঁই করছে। কফি খাওয়া মানে, একটা আলাদা ভাব। ব্যতিক্রম এক ইমাজিনেশন। সেটা পা দুলিয়ে না খেলে উপভোগ করা যায় না। আয়েশি ভঙ্গিতে কফি খেলে অনুভবে স্বর্গ ছোঁয়া যায়। সাথে সিগারেট না থাকলে মাথা ঠিক থাকে না। মাথা খারাপ থাকলে স্বর্গে গিয়ে কী লাভ। স্বর্গে যেতে হবে সুস্থ মস্তিষ্কে। সুতরাং সিগারেট ছাড়া কফি, ভাবাই যায়না। নো, নেভার।

রূপসী হাউজিংয়ের এই দিকটা মোটামুটি কোলাহলমুক্ত। শান্ত, স্থির। শহুরে পরিবেশ হলেও এলাকাটা মোটামুটি পরিচ্ছন্ন। ভি.আই.পি অঞ্চল বলে কথা। রফিকুলের ধারণা—এদিককার টং দোকানগুলো চা-কফির জন্য ইন্টারন্যাশনাল। রফিকুল ইন্টারন্যাশনাল টং দোকানে বসে কফি খাচ্ছে।

সকাল থেকে রফিকুলের মনখারাপ। এটা সে বুঝতে পারছে না। সত্যিকারের মনখারাপগুলো খুবই অদ্ভুত হয়। কখনও বুঝতে পারা যায়। কখনও অবোধ্য পড়ে থাকে। রফিকুল তার মনখারাপটা বুঝতে পারছে না। কেবলই উদাস উদাস লাগছে। প্রতিদিন সকালবেলা কফি খাওয়া শেষ করে সে ঘুরতে বেরোয় । হাজীপাড়ার দিকে হেঁটে আসে। কিন্তু আজ কেন জানি টং দোকানের বেঞ্চটা ছেড়ে উঠতে মোটেও ইচ্ছে করছে না।

রফিকুল তার বড় মামার বাসায় কেয়ারটেকার হিসেবে থাকে। সকাল থেকে সন্ধ্যা অব্ধি খাওয়া-ঘুম, ঘুম-খাওয়া ছাড়া কোনো কাজ নেই। মাস শেষ হলে শুধু বাসা ভাড়াটা রিসিভ করে, এই যা। অতিচঞ্চল রফিকুলের বাবা নেই। মা আছেন নামমাত্র। ওনি তাঁর বোনের বাসায় থাকেন। রফিকুলকে নিয়ে তার একটু চিন্তা। পৃথিবীতে একমাত্র বড় মামা ছাড়া কারোর কোনো তোয়াক্কা করে না রফিকুল। সেজন্যেই ইন্টার পাশ হতে না হতেই চালাকি করে ভাইয়ের বাসার কেয়ারটেকার বানিয়ে দিয়েছেন ওর মা। যাতে একটু হলেও কন্ট্রোলে থাকে। কিন্তু রফিকুল মোটেও কন্ট্রোলে নেই। বড় মামা বাইরে থাকেন ফ্যামিলি নিয়ে। এ বাসায় তেমন কেউ নেই। রফিকুলের মার দূর সম্পর্কের এক বড় ভাই আছেন। তিনিও এখন রফিকুলের সাথে বন্ধুসুলভ। বড় মামা ভেবেছিলেন, ঐ লোকটা থাকলে রফিকুল ভয়ে ভয়ে থাকবে। কিন্তু রফিকুল যে এখন ঐ লোকটারই বেশি আপনজন হয়ে গেছে, সেটা তিনি জানতে পারেননি।

ভারি মন নিয়ে চলাফেরা করা মুশকিল। রফিকুল ভারি মন নিয়ে টং দোকানের বেঞ্চে বসে আছে। পাশে একটা চা-ওয়ালা পিচ্চি ফ্ল্যাস্কে চা নিয়ে “চা খাবেন চা, লিপটন চা, দুধ চা..” রফিকুলের কানে পিচ্চিটার গলা কেমন পরিচিত পরিচিত লাগলো। পেছন ফিরে একপলক দেখলো পিচ্চিটাকে। মুহূর্তেই চমকে উঠলো রফিকুল। কিছু একটা মনে পড়ছে ওর। একটু একটু। ঝাপসা, আবছা। একটু পরে পরিষ্কার মনে পড়লো। হ্যাঁ, এই ছেলেটাকে রাতে সে স্বপ্নে দেখেছে। দেখেছে, ছেলেটাকে চড় মেরে কাঁদিয়ে দিয়েছে ও। এখন কোনো অস্পষ্টতা নেই। বলতে গেলে বিস্ময়ে বোবা হয়ে গেছে রফিকুল। তার ভেতরে একই সাথে আনন্দ এবং বেদনা হৈ-হুল্লোড় করছে। বুঝতে পারছে না, কোনটাকে প্রশ্রয় দেবে। আনন্দ, নাকি বেদনাকে? মানুষ অতি আনন্দ এবং অতি শোকে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়ে। রফিকুল সম্ভবত কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়েছে। এতোক্ষণে তার নিজের কাছে নিজের মনখারাপের রহস্য উদঘাটিত হয়েছে।

ছেলেটা চা নিয়ে এর-ওর কাছে যাচ্ছে। কখনও কোনো বড় দোকানে যাচ্ছে, কখনও লোক-জটলা পেলে চা চা বলে চেঁচাচ্ছে। কোথাও বিক্রি করছে। কোথাও খুচরা পয়সা নিয়ে ঝামেলা পোহাচ্ছে। কোথাও বা কারোর হাতে কানমলা খাচ্ছে। কেউ কেউ মজা করে অতিরিক্ত কথা বলাচ্ছে। ও তখন পাকনা জবাব দিয়ে আড্ডার পরিবেশকে আরও সরগরম করে তুলছে।

রফিকুল ছুটছে পিছুপিছু। ছেলেটার অলক্ষ্যে। বাচ্চা ছেলে। ১০/১১ বছর হবে বয়স। ব্যস্ত শহরের এতো এতো মানুষের ভিড়ে একটা শিশু ছেলে কেমনে বুঝবে কেউ একজন ঘণ্টার পর ঘণ্টা তার পিছু নিচ্ছে! রফিকুলের দস্যি মন আনচান করে উঠলো ছেলেটার জন্য। আত্মিক কোনো বন্ধনে সে যেনো আবদ্ধ হয়ে গেলো ছেলেটার সাথে। ওর পিছু ছাড়তে ইচ্ছে করছে না কোনোভাবেই।

বেলা পেরিয়ে তখন সন্ধ্যা। ছেলেটার ফ্লাস্কের চা ফুরিয়ে গেছে। মুখ ভারি করে এক দোকানের বারান্দায় বসে পড়েছে সে। রফিকুল ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আনন্দিত হলো। কাছে যাওয়ার সুযোগ হলো বলে এ আনন্দ।

রফিকুল ভারি পায়ে হেঁটে হেঁটে ছেলেটার অদূরে বসে পড়লো। মনে মনে গুছিয়ে নিলো কীভাবে কথা শুরু করবে। তারপর..

—কী নাম রে তোর?
—মনজু, কেনো?
—চা দে তো এক কাপ।
—চা নাই। চা শ্যাশ।
—কিন্তু আমার তো চা লাগবে।
—চা লাগলে ঐদিকে যান। (ডানদিকে একটা টং দোকান দেখিয়ে বললো মনজু)
—আমি তো ঐদিকে যেতে পারবো না।
—কেনো ফারবেন না, আফনে কি ওইদোকানের বাকি কাশটমার?
—আরে ওরকম কিছু না। আমার পায়ে ব্যথা। অনেক কষ্টে তোর কাছে হেঁটে এসেছি।
—তাহলে এহন আমি কি করুম? ব্যথা কমলে হাইটা গিয়া খাইবেন।
—কেমন মানুষ ব্যাটা তুই? একটা মানুষ ব্যথা পেয়েছে, কই সাহায্য করবি, উল্টো গরম গরম কথা শুরু করলি!
মনজুর চেহারায় কিছুটা স্বাভাবিকতা দেখা গেলো। রফিকুল বুঝলো, ঢিলটা জায়গামতো পড়েছে।
—আচ্ছা দ্যান, টেকা দ্যান। আর কী নিয়া আমু কন।
—আমার কাছে তো টাকা নাই।
—মাগনা চা খাইতে আইছিলেন?
—হুঁ।

একমুহূর্ত কী জানি ভাবলো মনজু। কয়েক সেকেন্ড থামলো। তারপর এক দৌড়ে গিয়ে পাশের টং দোকান থেকে একটা পাউরুটি আর এক কাপ চা নিয়ে এলো। পুরোটা কাজ করলো এক মিনিটে। ওয়ানটাইম প্ল্যাস্টিকের কাপে চা এনে নিজের কাপগুলো থেকে একটা কাপে ঢেলে দিয়ে বললো, নেন খান।

ছেলেটার মানবিকতা দেখে থ মেরে গেলো রফিকুল। ঠোঁটদুটো অতিবেগী রক্তের চাপে তপ্ত হয়ে উঠলো। চোখে যেনো তুমুল উষ্ণতা ভর করেছে। চায়ের কাপে চুমুক দিলো একেবারে অনিচ্ছা সত্ত্বে। চা-টা কেমন হয়েছে, সেদিকে একটুও মনোযোগ নেই তার। নাহলে বুঝতে পারতো, চায়ে চিনিটা দেওয়াই হয়নি। বিস্ময় কাটিয়ে উঠতে পারছে না রফিকুল। তার কল্পনায়ও ছিলো না, একটা টোকাই সাধারণ মানুষের তুলনায় এতো বেশি মহানুভব হতে পারে। মনে মনে কান্না করছে সে। চোখের কোণ ভিজে গেছে। সেটা চোখ মুছার বাহানায় আড়াল করে যাচ্ছে একাধারে।

রফিকুল নিজেকে নিয়ে ভেবে আরও বেশি অবাক হচ্ছে। ধুমধাম করে চলা একটা জীবনের প্রায় বেশ অনেক বছর হয়ে গেলো, সে নিজেকে এতোটা বিগলিত হতে দেখেনি। আজ চোখে জল এসে যাচ্ছে। খুবই অস্বাভাবিক ব্যাপার। এটা যে সে নিজে না, বুঝতে পারছে রফিকুল। এটা অন্য কেউ একজন। অচেনা কোনো মানুষ। যার সাথে বেপরোয়া রফিকুলের কোনো যোগসাজশ নেই।

—ভাইজান!
—হুমমম, বল। (কাপে চুমুক দিয়ে আয়েশি ভঙ্গিতে জবাব দিলো রফিকুল)
—সন্ধ্যা হইছে। বাড়ি যান। আমারেও বিদায় দ্যান।
—কী করে বাড়ি যাই বল। পায়ে ব্যথা। এখানে বসে থাকি। তুইও চাইলে বসতে পারিস। ভালো না লাগলে চলে যা। আচ্ছা ভালো কথা, তোর বাসা কই রে?
—ঐ তো, পাশে। নিউমার্কেটের ভিতরে একটা গলি আছে না? ঐখানে একটা নতুন বস্তি অইছে। ঐখানে।
—বাসায় কে কে আছে তোর?
—কেউ নাই। (অতি স্বাভাবিক স্বরে বললো মনজু। যেনো কেউ না থাকা’টা কোনো ঘটনা না৷ বরং এটাই স্বাভাবিক।)
ব্যথায় বুক ছিঁড়ে কলিজা বেরিয়ে আসতে চাইছে রফিকুলের। কান্না যেন এবার আর বাঁধ মানছে না। তবু স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে জিজ্ঞেস করলো—কার সাথে থাকিস?
—কয়ডা পোলাপান একসাথে এক ঘরে থাকি।
—আমাকে নিয়ে যাবি তোদের বাসায়?
—আমাদের বাসায় গিয়া কী করবেন? বওয়ার জায়গা নাই তো।
—তবু যাবো, চল। তোর জিনিসপত্রগুলো আমার কাছে দে। আর আমাকে তুই ধর।

শিশু মনজু আর কথা বাড়ালো না। রফিকুলকে নিয়ে চললো তার বাসায়। টোকাই জীবন বলে কথা। মা চোখ বড়বড় করে ধমক দিয়ে বলবে না—’কাকে নিয়ে এসেছিস’। বাবাও নেই, যে বলবে—’কাম পাওনা, যারে তারে ঘরে নিয়া চইলা আহো’!

পথে রফিকুল আর মনজু অনেক কথা বললো। কথা বলতে বলতে একে ওপরের মনে জায়গা করে নিলো অনেকখানি। মনজু রফিকুলকে ‘তুমি’ করে বলা শুরু করলো।

মনজুর ঘরে গিয়ে রফিকুলের তো শ্বাসরুদ্ধ অবস্থা । এতো ছোট একটা ঘর। সাত-আট হাত দৈর্ঘ্য-প্রস্ত হবে। শুবার মতো তেমন কিছুই নেই। মেঝেয় কিছু পেপারের ওপর কয়েক টুকরো পাতলা ককশেট। সেখানে দুইতিনটা মলিন কাঁথা। ব্যস। এখানেই মনজুরা ঘুমায়, ছয়-সাতজন।

রফিকুল মনজুকে বললো, ‘এখন থেকে যদি আমি তোদের সাথে থাকি, তুই খুশি হবি?’
মনজু খানিকক্ষণ কী যেনো ভাবলো। তারপর বললো—’তুমি তো বড়লোক। আমাদের সাথে কেমনে থাকবা? রফিকুল বললো—’পারবো, থাকতে পারবো’।
রফিকুলের উত্তরে মনজুর কোনো ভাবান্তর হলো বলে মনে হলো না। সে কিছুতেই এটা মেনে নিতে পারছে না। বললো—চলো খাই।
—কী খাবি?
—আসো, দেখো কী খাওন!
—আচ্ছা, তোর কি কোনো শখ আছে?
—আছে একটা।
—কী সেটা?
—টিভিতে যেইভাবে কথা কয় আমার ঐভাবে কথা কওনের শখ।
—ওওওহ।

মনজুদের কোনো খাবার টেবিল নেই। মেঝেয় রাখা পত্রিকার ওপর পাউরুটি আর বোতলভর্তি পানি। ও-ই তাদের খাবার।

রফিকুলের মুখ দিয়ে কথা সরছে না। এদের জীবনযাপন যেন তাকে তুফানের মতো আঘাত করছে। সাথের ছেলেগুলোও মহান হৃদয়ের। উদার চিন্তার। কিন্তু তারা টোকাই। তারা টোকাই বলে পৃথিবী তাদেরকে দেখতে পাচ্ছে না। পৃথিবী তাদেরকেই বিদ্বান করে গড়ে, যাদের ভেতর আছে পাথরহৃদয়। তারা জ্ঞানার্জন করে, অতঃপর মানুষের প্রাণ হরণ করে৷ আর এরা শিক্ষা পায় না। কিন্তু মানুষের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত হয়ে যায়।

রাত ১২টা ছুঁইছুঁই। রফিকুলের ফোনে কল বাজছে। বড় মামার কল।
—জ্বী বড় মামা।
—তুমি কোথায়? বাসা থেকে কল আসলো। তোমাকে নাকি সকাল থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কোথায়, আছো কোথায় তুমি?
—বড় মামা, আমি একটা বস্তিতে আছি। এখানে অনেক কোলাহল। তবে শান্তি আছে। পুরনো একটা কাঁথা গায়ে দিয়ে শুয়ে আছি। আরামে চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। মানুষগুলোও বেশ ভালো।
—তুমি বস্তিতে ঘুমাচ্ছো? ওখানে খুব শান্তি??
—জ্বী বড় মামা। বিশ্বাস না হলে দেশে আসেন। এসে একবার এখানে ঘুমিয়ে দেখে যান। আশা করি নিরাশ হবেন না।
—রফিকুল, তুমি কী বলছো, বুঝতে পারছো সেটা? কার সাথে বলছো মনে আছে?
—জ্বী বড় মামা। বুঝেসুঝেই কথা বলছি। যার সাথে কথা বলছি, তিনি আমার বড় মামা। জগতে আমি একমাত্র তাকেই ভয় পাই ।
—তুমি বাসায় যাবে, নাকি আমি দেশে আসবো?
—আমি বাসায় যাবো কেনো। চাইলে আপনি দেশে আসতে পারেন। অন্তত একরাত বস্তিতে ঘুমানোর জন্য হলেও আসতে পারেন। এরা অনেক ভালো। বড়লোকরা এদের কাছে সাহায্য চাইলে এরা সগর্বে সাহায্যে এগিয়ে আসে। আমি তো বড়লোকের ভাগ্নে। অনেক খাতির-যত্ন পাচ্ছি। স্বয়ং বড়লোক হিসেবে আপনি যা পাবেন, তা বলে বুঝানো যাবে না।
বড় মামা রেগে গেছেন । ফোন রেখে দিয়েছেন বলে মনে হচ্ছে।

মনজু রফিকুলের ওপর এক পা তুলে ওকে জড়িয়ে শুয়ে আছে। রফিকুল মনজুর জীর্ণ গালে হাত দিয়ে ডাকলো—মনজু?
—হুঁ
—ঘুমিয়ে গেছিস?
—উঁহু
—তাহলে কথা বলছিস না কেন?
—তোমার কথা শুনতেছিলাম।
—কী শুনলি?
—শুনলাম, তুমি আমগো সাথে থাকবা।
—ওহহহ। চল, কাল তোকে স্কুলে দিয়ে আসি।
—আমি পড়ুম না। চা বেচুম, নাইলে তোমার সাথেই থাকুম।
—আমার সাথে কেমনে থাকবি? আমি তো কাজে চলে যাবো।
—আমিও কাজে যামু।
—নাহ। তুই পড়বি। পড়ে বড় মানুষ হবি। সমাজের মানুষকে বুঝিয়ে দিবি, তোর মতো যারা পথে বাস করে, তারা পথের ময়লা না; পথের ফুল।
—তোমার কথা আমার মাথায় ঢুকে না। বড়লোক হয়া লাভ নাই। আমি কামই করুম।
—নাহ, তুই পড়বি। তোর না শুদ্ধ করে টেলিভিশনের লোকদের মতো কথা বলার অনেক শখ?
—হ, টেলিভিশনের ভাষায় কথা কইতে মন চায়। ওদের কথা শুনতে আমার সেই লাগে।
—তাহলে স্কুলে যাবি। নাহলে ভালো করে টেলিভিশনের ভাষায় কথা বলতে পারবি না। টেলিভিশনের ভাষায় কথা বলা শিখে গেলে আমি তোকে টেলিভিশনে দিয়ে আসবো।
—সত্যি কইতাছো তো?
—হ্যাঁ সত্যি।

আগের সংবাদএখন অনেক রাত
পরবর্তি সংবাদআমওয়াস মহামারীর দিনগুলো