পাঠ্যক্রমে ‘লিঙ্গপরিবর্তন’, ইসলামিক স্টাডিজের চেয়ারম্যানরা বলছেন ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক

রাকিবুল হাসান নাঈম:

২০২৩ সালে প্রকাশিত হওয়া নতুন পাঠ্যপুস্তকে ‘লিঙ্গ পরিচয়ে’র ভুল চিন্তা ও ধারণা উপস্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হয়েছে লিঙ্গ পরিবর্তনের বিকৃত মানসিকতাকে। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজের চেয়ারম্যানরা বলছেন, এই প্রচেষ্টা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক।

সপ্তম শ্রেণীর ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ অনুশীলন বইয়ের ‘লিঙ্গ বৈচিত্র্য ও জেন্ডার ধারণা’ অধ্যায়ে একটি গল্পে লিঙ্গ বিষয়ক ধারণা দেয়া হয়েছে। তাতে আত্মপরিচয় বুঝাতে গিয়ে দেখানো হয়েছে, নারী-পুরুষ নির্দিষ্ট কোনো পরিচয় না। পুরুষাঙ্গ থাকলেও শরীফ যদি মনে করো সে শরীফা, তাহলে সে শরীফা-ই। এটাই আত্মপরিচয়। জৈবিক পরিচয়ে সামাজিক পরিচয়ে সে আবদ্ধ না, আত্মপরিচয়ই তার পরিচয়। পুরুষ শরীরে (biological sex) পুরুষের মতোই জীবনযাপন (gender) করতে হবে, এমন না।

পাঠ্যবইয়ে লিঙ্গ পরিবর্তনের এই ধারণাকে স্বাভাবিক করার চেষ্টাকে ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক বলে অভিহিত করেছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজের চেয়ারম্যানরা। তারা বলছেন, লিঙ্গ পরিবর্তন ইসলামে হারাম। এটার সাথে আপোষ করার সুযোগ নেই।

‘লিঙ্গপরিবর্তন ধারণার সঙ্গে আপোষ নেই’

এ প্রসঙ্গে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামিক স্টাডিজের চেয়ারম্যান ড. শামসুল আলমের সঙ্গে। তিনি ফাতেহকে বলেন, ‘লিঙ্গ পরিবর্তন ইসলামে কোনোভাবেই জায়েজ নেই। এটার সাথে আপোষ করারও সুযোগ নেই।’

পাঠ্যপুস্তকে লিঙ্গ পরিচয়ের বিকৃত উপস্থাপন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নতুন পাঠ্যপুস্তকে লিঙ্গ পরিচয় নিয়ে যা বলা হয়েছে, তা নিতান্তই মূর্খতাসুলভ। বইয়ে বলা হয়েছে, পুরুষ যদি মনে করে সে নারী, তাহলে সে নারী-ই। কোনো নারী যদি মনে করে সে পুরুষ, তাহলে সে নারী-ই। ইসলামে এই ‘মনে করা’র কোনো মূল্য নেই। এর উপর ভিত্তি করে কিছু হয় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘শুধু লিঙ্গ পরিচয় না, সব পাঠ্যপুস্তক থেকেই ইসলামকে সরানো হচ্ছে। কদিন পর আল্লাহর নামও রাখবে না। এখন বিষয়টি নিয়ে সবারই প্রতিবাদ জানানো উচিত।’

‘ইসলামবিরোধী এজেন্ডার অংশ হিসেবে লিঙ্গ পরিচয়ের বিকৃতি’

পাঠ্যপুস্তকে ইসলামবিরোধী এজেন্ডার অংশ হিসেবে লিঙ্গ পরিচয়ের বিকৃতি ঘটানো হয়েছে বলে মনে করেন ঢাকা কলেজের ইসলামিক স্টাডিজের চেয়ারম্যান প্রফেসর মুস্তাফিজুর রহমান। ফাতেহকে তিনি বলেন, ‘লিঙ্গ পরিবর্তন হারাম। এটা কুরআনেই সুস্পষ্ট বলা আছে। কোনো সৃষ্টিকে বিকৃত করা যাবে না। এটার জন্য হাদিস কিংবা ফিকহ থেকেও দলিল দিতে হবে না।’

পাঠ্যপুস্তক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পাঠ্যপুস্তকে এখন যে বিষয়গুলো শেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে, তা মূলত ইসলামবিরোধী এজেন্ডার অংশ। পুরুষ হয়ে নিজেকে নারী মনে করা, নারী হয়ে নিজেকে পুরুষ মনে করা তো বিকৃত মানসিকতা। ইসলাম এটা সমর্থন করে না। এ বিষয়টি নিয়ে সবারই লেখা উচিত।’

‘লিঙ্গপরিবর্তন ইসলামে হারাম’

পাঠ্যপুস্তকে দেয়া লিঙ্গ পরিচয়কে ইসলাম সমর্থন করে না বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইলিয়াস সিদ্দিকী। ফাতেহকে তিনি বলেন, ‘লিঙ্গ পরিবর্তন ইসলাম সমর্থন করে না। এটা সুস্পষ্ট। আমি হিজরাদের কথা বলছি না। যারা মূলত পুরুষ, কিন্তু অস্ত্রোপচার করে নারী হতে চায়, তারা তো পুরো নারী হতে পারে না। নারীর হরমোনে নারীর ভাব আসে৷ আচার-আচরণে মেয়েলেপনা আসে। কিন্তু সে ত পূর্ণ নারী না। এটা বিকৃতি। ইসলামে এটা হারাম। আল্লাহ তায়ালা কুরআনেও এটা নিষেধ করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘যদি কারো দৈহিক অবয়বে সামান্য পরিমাণ বিপরীত লিঙ্গের নিদর্শন থাকে, যেমন-পুরুষের ভেতরে নারীর কোনো আকৃতি বা নারীর ভেতরে পুরুষের কোনো আকৃতি। আর তা অপারেশন বা অন্য কোনোভাবে দূর করার দ্বারা তার জীবনযাপন সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় হয়। এমন পরিবর্তন করা ইসলামী আইনবিশারদদের মতে বৈধ। তবে পুরুষ থেকে সম্পূর্ণরূপে নারী বা নারী থেকে সম্পূর্ণরূপে পুরুষ হওয়ার চেষ্টা হারাম। এভাবে লিঙ্গ পরিবর্তন করা স্রষ্টার সৃষ্টিবিরোধী ঘৃণ্যতম একটি কাজ। এতে ব্যক্তির দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগৎ হুমকির মুখে পড়ে। এ ছাড়া সামাজিক ভারসাম্যহীনতা ও রাষ্ট্রীয় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে এসব ভয়ঙ্কর ভূমিকা রাখে।’

আগের সংবাদ১১ মাসে ইউক্রেনে ৯ হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহতের দাবি
পরবর্তি সংবাদনওগাঁয় বইছে শৈত্যপ্রবাহ, তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি