
|| তাসনিফ আবীদ ||
বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী মুদ্রার বিষয়ে আলোচনা উঠলেই দিনার বা ডলারের নাম আসে। তবে অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, তালেবান নিয়ন্ত্রিত ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের আফগানি এখন বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী মুদ্রা। অথচ তালিবান সরকার আফগানিস্তানের ক্ষমতা গ্রহণের পর পশ্চিমা বিশ্বের অনেক অর্থনীতিবিদ আফগান অর্থনীতি নিয়ে সঙ্কা প্রকাশ করেছিল।
আফগান অর্থনীতিতে পশ্চিমাদের অবৈধ হস্তক্ষেপ-
২০২১ সালের আগস্টে মার্কিন মদদপুষ্ট সরকারকে হটিয়ে আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসে তালেবান। এর মধ্য দিয়ে দেশটির প্রায় দুই দশকের যুদ্ধ ও সংঘাতের অবসান ঘটে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের ইশারায় তালিবান ক্ষমতায় আসার পরপরই আফগানিস্তান থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নেয় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। এছাড়া নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভে থাকা আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের ৯৫০ কোটি ডলারেরও বেশি অর্থ আটকে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৭৭ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এর পরপরই আশঙ্কাজনকভাবে বিশ্ব বাজারে দর পতন হতে থাকে আফগানির।
এখন কেন আফগানিকে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী মুদ্রা বলা হচ্ছে-
২০২১ সালের মার্চে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার ছিল ৭৭ দশমিক ৩০ আফগানি। তালেবানের ক্ষমতা দখলের একদিন আগে বিনিময় হার ছিল ৮৮ আফগানি। সেখানে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর ২০২১ সালের নভেম্বরে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার ১৩০ আফগানিতে পৌঁছায়।
এদিকে রোববার (২২ অক্টোবর ২০২৩) বৈশ্বিক মুদ্রাবাজারের বিনিময় হার অনুযায়ী বাংলাদেশি মুদ্রা টাকা এবং পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের রূপির চেয়ে অনেক শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে আফগানিস্তানের মুদ্রা। যেখানে ৭৫ আফগানিতে মিলছে ১ মার্কিন ডলার। যেখানে বাংলাদেশি মুদ্রায় ডলারের বিনিময় হার ১১০ টাকা এবং ভারতীয় মুদ্রার বিনিময় হার ৮৩.১২ রুপি।
ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ বছর আফগানির দাম বেড়েছে প্রায় ১৪ শতাংশ। গত ২৬ সেপ্টেম্বর এক ডলারের বিপরীতে আফগানির ভ্যালু ছিল ৭৮.২৫। সেখানে এক মাসেরও কম ব্যবধানে ২২ অক্টোবর ১ ডলারের বিপরীতে আফগানির ভ্যালু ৭৫.৩৮।
আফগানির কীভাবে এই উত্থান-
বিশ্ব ব্যাংকের দাবি, মানবিক সহায়তা থেকে পাওয়া শত শত কোটি ডলার এবং এশীয় প্রতিবেশীদের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যের কল্যাণেই দ্বিতীয় প্রান্তিকে আফগানিস্তানের মুদ্রা বিশ্বব্যাপী র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে উঠে এসেছে।
তবে অর্থনীতি বিশ্লেষক ও সাংবাদিক জিয়া হাসান এক বিশ্লেষণে বলেন, দুই বছর আগে ক্ষমতা দখলের পর তালেবান সরকার নিজেদের মুদ্রা আফগানির অবস্থান শক্ত রাখতে একাধিক ব্যবস্থা চালু করেছে। এর মধ্যে স্থানীয় লেনদেনে ডলার এবং পাকিস্তানি রুপির ব্যবহার নিষিদ্ধ করা এবং দেশের বাইরে থেকে কাগজের নোট আকারে ডলার আনার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা অন্যতম। আফগানিস্তান অনলাইন ট্রেডিং অবৈধ করেছে এবং নিয়ম লঙ্ঘন করলে কারাদণ্ডের বিধান রেখেছে।
আফগানিস্তানে এখন বিদেশি মুদ্রার লেনদেন হয় মানি এক্সচেঞ্জারের মাধ্যমে। এই ব্যবস্থাকে বলা হয় সারাফ। বিদেশি নিষেধাজ্ঞার কারণে এখন সব ধরনের মুদ্রাই দেশটিতে প্রবেশ করে আফগানির মাধ্যমে। এমনকি দেশটির ভেতরে কোনো বিদেশি মুদ্রার কার্যক্রম চলে না।
মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ, নগদ প্রবাহ এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ গত ত্রৈমাসিক অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানির দাম প্রায় ৯ শতাংশ বাড়াতে সহায়তা করেছে। যা অন্য মুদ্রার হয়নি।
এছাড়া আফগানিস্তানের প্রাকৃতিক সম্পদও দেশটির উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আফগানিস্তানে আনুমানিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের লিথিয়াম ভান্ডার মজুদ রয়েছে।