ফ্লোরেন্তিনো: এক অলোক পরিণতি

সাইফ সিরাজ:

এক.

সেন্ট ফারউড। ভিনতেশ রাজ্যের এক নামজাদা ভবিষ্যদ্বক্তা। যার ব্যাপারে নানা মিথ আর গল্প পুরো রাজ্য পেরিয়ে ভিন রাজ্যেও প্রচলিত। জ্ঞান, উপাসনা আর যাদুকরি বক্তব্যের কারণে তার ভক্তের সংখ্যা বেহিসেব। সন্তান পিতার কাছে, ছাত্র শিক্ষকের কাছে, ছোট ভাই বড় ভাইয়ের কাছে সেন্ট ফারউডের গল্প শুনে শুনে তাকেই নিজেদের নায়কের আসনে বসিয়েছে। ফারউড এমন এক ব্যক্তিত্ব যার তুলনা তিনি নিজেই। তার ভবিষ্যদ্বাণী ব্যর্থ হয় না বলেই ভক্তদের বিশ্বাস। এমন একটা প্রোফাইল আর জনতার ভালোবাসা নিয়ে তিনি ছুটছিলেন বিরতিহীন। ছাত্র আর ভক্তদের বেষ্টনিতে তাকে দেখে রাজা ফ্লোরেন্তিনো পর্যন্ত ঈর্ষা করতো ফারউডকে। ঈর্ষা করলেও রাজার আর ভিন্ন কোন পথ ছিলো না। সিংহাসনের প্রয়োজনে ফারউডের সমর্থন ছিলো তার খুব প্রয়োজন। কারণ, ফারউডের গোত্রের নাম ছিল দারভিয়ান। এই দারভিয়ান গোত্রের সমর্থন ছাড়া রাজ্য শাসন কোনভাবেই সম্ভব ছিলো না তার জন্য। ফলে রাজা ফ্লোরেন্তিনো ফারউডকে নিজেরে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন। মানুষ যতই বড় হোক তার সমালোচক থাকেই। সেই সমালোচকেরা বলে, `রাজা নয়; সেন্ট নিজেই ফ্লোরেন্তিনোর আঁচলের নিচে গিয়েছে। কারণ তার এত এত গুণের আড়ালে বদগুণগুলো ঢেকেই গিয়েছিলো। ফলে তার ক্ষমতা কেন্দ্রিক লোভটা সহজেই দেখা যেতো না। রাজার সকল জুলুম ও শোষণ দেখেও ফারউড চুপ থাকতেন। এমনকি নিজ সম্প্রদায় দারভিয়ানের উপর কৃত জুলুমেও তাঁকে মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকতে দেখা গেছে। কখনও কখনও সুযোগ পেলে এইসব জুলুমের বৈধতা দিয়ে কলাম লিখতেও দেখা গেছে তাকে। আর এইসব কারণেই রাজা ঈর্ষা করার পরও ফারউডকে নিজের দলের লোক বলে মেনে নিয়েছে।’

দুই.

ভিনতেশ মূলত চারদিকে পাহাড় বেষ্টিত একটি রাজ্য। পুরো রাজ্য থেকে বের হতে হলে একমাত্র পশ্চিম দিকে একটাই সমতল পথ। আর বাকি সবগুলো বের হওয়ার পথই আকাশপথে। দীর্ঘ একটা লড়াইয়ের পর ৫০০১ সালে স্বাধীনতা লাভ করে পিস্তানা সাম্রাজ্য থেকে। সেই স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পর ক্ষমতায় বসে ফ্লোরেন্তিনো। কথিত আছে সিংহাসনে বসার জন্য ফ্লোরেন্তিনো নিজের রাজ্যের বহু চিন্তক ও তরুণ দেশপ্রেমিককে কুরবানী করেছেন গোপনে। আর প্রকাশ্যে করেছেন বহু ভিন্নমতের মানুষকে খুন। অনেক গোয়েন্দা সূত্রের খবর হলো শত্রু রাজ্যের সঙ্গে আঁতাত করেছেন কৌশলে।

ফ্লোরেন্তিনো ক্ষমতায় আছেন দুই যুগ ধরে। এই সময়ে পুরো ভিনতেশ মূলত একটা দলের দেশ হয়ে ওঠে। সাধারণ জনগণের কোনো অধিকার তখন ছিলো না ভিনতেশে। প্রতিদিনই কেউ না কেউ হারিয়ে যেতো ভিনতেশ থেকে। সকাল বেলায় ঘরের দরোজায় লাশ পেতো সন্তান অথবা স্ত্রী। মানুষ তখন বলতে শুরু করলো, ‘ইমাম মাহদী চলে গেছেন! ঈসাও এসে চলে গেছেন! দাজ্জালও ধ্বংস হয়েছে। এই আধুনিক দাজ্জালের হাত থেকে কে আমাদের মুক্তি দিবে?’ প্রতিদিন রাতের অন্ধকারে ভিনতেশের সাধারণ মানুষ চোখের পানি ফেলে প্রার্থনা করতো। কেউ কেউ অতিষ্ট হয়ে পাহাড়ের উপরে চলে যেতো ফ্লোরেন্তিনোকে অভিশাপ দিতে। এই অতি আবেগীদের লাশ পরের দিন ভোরে তাদের বাড়ির সামনে পাওয়া যেতো।

ভিনতেশ তখন এক ভয়ের রাজ্য। সাধারণ জনগণ ভয় পায় রাজাকে। কখন রাজার রোষানলে পরে জীবন হারায়। ফলে জনগণ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে হিজরত করতে শুরু করে। ভিনতেশের ধার্মিকগণ ছিল সবচেয়ে বিপদে। কী মুসলিম! কী খৃস্টান! সবাই তখন চরম বিপদে। ধর্মীয় কোন বিধান বললেই সেটা যদি রাজার লোকদের বিপক্ষে যেতো তাহলেই সকালে সেই ধার্মিকের লাশ মিলতো তার দরজায়। ওদিকে রাজা ভয় পায় জনগণকে। কখন জানি ফুঁসে ওঠে জনগণ! ফলে একটু কৌতুক পর্যন্ত মেনে নিতে পারে না রাজা। জনগণকে রাজার দিকে থেকে সরিয়ে রাখতে অগণিত সেক্টরে যুদ্ধ বাঁধিয়ে রাখতো ফ্লোরেন্তিনো। এইসব যুদ্ধ জয় ও ভিনতেশের চেতনার গল্পে তরুণদেরকে বুঁধ করে রাখতে একদল বাকপণ্ডিত নিয়োগ করে ফ্লোরেন্তিনো। যাদের মুখে কথার চেয়ে গালি ফুটে বেশি। যাদের মুখের চেয়ে হাত চলে বেশি।

এই যখন ঘটনা তখন সেন্ট ফারউড একদিন ফ্লোরেন্তিনোর একজন মন্ত্রীকে ডেকে আনলেন নিজের আস্তানায়। মানুষ ভাবলো ফারউড এবার কঠিন কিছু বলবেন। তারা মন্ত্রী আর ফারউডের মিটিংয়ের খবর জানার জন্য অধীর অপেক্ষায় থাকলো। হঠাৎ করেই তারা টিভির স্ক্রিনে দেখতে পেলো ফারউড বলছেন, ‘আমি স্বপ্নে দেখেছি ফ্লোরেন্তিনো আমৃত্যু সিংহাসনে থাকবেন।’ এই বক্তব্যের পরে ফারউড রাতারাতি নায়ক থেকে খলনায়কে পরিণত হন। কিন্তু ফারউড তার এই পতনকে কিছুই মনে করলেন না। বরং ফ্লোরেন্তিনোকে প্রতিরোধের প্রতিটি পদক্ষেপেরে বিপক্ষে অবস্থান নিলেন তিনি। অল্প ক’জন অনুসারী নিয়ে সেন্ট ফারউড তার পুরো গোত্রের বিপক্ষে অবস্থান নিলেন। এমনকি তার স্বগোত্রীয় সকল সম্মানিত মনীষীদের বিরুদ্ধে নানা কুৎসা রটানোর জন্য রাজার সহযোগিতায় নতুন একটা চ্যানেল খুললেন। চলতে থাকলো সেন্ট ফারউডের স্পিরিচুয়াল পতন।

তিন.

পুরো ভিনতেশে মানুষ এখন দুইভাগে বিভক্ত। একদল ফ্লোরেন্তিনোর পক্ষের, বলা ভালো ফ্লোরেন্তিনোর সুবিধাভোগী। আরেকদল তার নির্যাতনের শিকার। এমন সময় তার ইমেজ উদ্ধারের প্রয়োজন হলো। ফলে সে ক্ষমতা ছাড়ার ঘোষণা দিল। জানালো রাজ্য পরিচালনায় তার কোনো মন নেই। আর চারমাস পরেই রাজ্য পরিচালনা থেকে অবসরে যাবেন তিনি। এই ঘোষণা দেওয়ার পরপরই তার দলের লোকেরা প্রচার করতে শুরু করলো, ফ্লোরেন্তিনো এখন নির্জন পাহাড়ে বসে সারা রাত ধ্যান করেন। প্রভুকে পাওয়ার জন্য ফ্লোরেন্তিনো পাগল প্রায় হয়ে গেছেন।

এইসব ঘোষণা এবং তার ধ্যানের প্রচারণাকে মানুষ একটা চাল হিসেইে ধরে নিলো। মানুষ তাদের কাজে মনযোগ দিল। কেউ কেউ এই প্রচারণায় বিশ্বাস করে নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করলো। ইতোমধ্যেই দৃশ্যপটে হাজির ফ্লোরেন্তিনোর বাবা। সঙ্গে সেন্ট ফারউড। যৌথ ববিৃতিতে জানালো, ‘ফ্লোরেন্তিনো ক্ষমতা ছাড়লেই রাজ্যে অরাজকতা শুরু হবে। অগণিত মানুষ মরে যাবে প্রতিহিংসার আগুনে পুড়ে।’

মানুষ যা ভাবছিলো তাই হলো। আবার ক্ষমতায় আসলো ফ্লোরেন্তিনো। মাত্র তিনমাস গেল এই ঘোষণার পরে। এর একমাস ছিল তার ক্ষমতা ছাড়ার। শুরু হলো আবার নানান সমালোচনা। নানাভাবে মানুষ ফ্লোরেন্তিনোর সমালোচনা করছিল। সবচেয়ে বেশি সমালোচনা করছিল ফ্লোরেন্তিনোর চাচাত ভাই নিজার। কারণ নিজারের বাবাকেই ক্ষমতাচ্যূত করেছিল ফ্লোরেন্তিনো। ক্ষমতাচ্যুতির তিনদিনের মাথায় তাকে বন্দিও করেছিল। আজ পর্যন্ত সেই বৃদ্ধ বন্দি হয়েই আছেন। ফলে নিজারের আশা ছিল এইবার তার বাবা মুক্তি পাবে। আশার ভঙ্গের যন্ত্রণায় তার সমালোচনা ছিল তীব্র এবং যৌক্তিক। পরের দিন এই সমালোচনার পুরস্কার পেয়েছিল নিজার। তার বাবা ও ছেলের লাশ মিলেছিল ভোরে ঘরের দরোজায়।

চার.

ইমেজ উদ্ধার করতে গিয়ে ইমেজ হারিয়ে এখন মাথা খারাপ অবস্থা ফ্লোরেন্তিনোর। পুরো ভিনতেশে চলছে ছোট ছোট প্রতিবাদ। কোনভাবেই এইসব প্রতিবাদকে থামানো যাচ্ছে না। এমন সময় এই প্রতিবাদ কীভাবে থামানো যায় সেই পরামর্শের জন্য ডাকা হলো সেন্ট ফারউডকে।

-ফারউড, এই সঙ্কট থেকে কীভাবে রক্ষা পেতে পারি। এইভাবে প্রতিবাদ চলতে থাকলো তো আমার ইজ্জত থাকে না।
-জনাব, আপনি কোন টেনশন করবেন না। আমি দুইটা পথ বাতলে দিচ্ছি। একটা, যেকোনভাবে দেশে একটা বড় ধরণের সংকট তৈরি করুন। যেনো সব মানুষ সেই সংকটের পেছনে দৌড়াতে থাকে। প্রতিবাদের চিন্তাই করতে না পারে। আর দুই, যখন দেশে সংকট ঘনিভূত হবে তখন আপনাকে নিয়ে আমি ধ্যানে বসবো। মৃত্যুর পর আপনার আত্মার হিসেবে কীভাবে হবে তা দেখতে আপনার অলোক আত্মাকে হাজির করবো। তখন আমি আপনার আত্মাকে প্রশ্ন করবো। আত্মা উত্তর দিবে। আপনার পরকালে সকল সাওয়াল-জাওয়াব লাইভে মানুষ দেখবে। মানুষ জানতে পারবে পরকালে আপনার অবস্থান। ফলে কেউ আপনারা মতো একজন মহান মানুষের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার চিন্তাই করবে না।

সেন্টের এইসব কথা স্বাভাবিকভাবে ফ্লোরেন্তিনোর বিশ্বাস হওয়ার কথা না। কিন্তু সংকটময় মূহুর্তে তার আর কোনো কিছু ভাবার সময় নেই। সভাসদের অনেকেই ফারউডের এইসবের বিরোধিতা করেন। কিন্তু ফ্লোরেন্তিনো এইসবকে পাত্তা না দিয়ে কাজে লেগে যান।

এরপর রাজ্যের গৌরব একমাত্র বিদ্যুৎ স্টেশনটি বন্ধ হয়ে যায়। মানুষের মধ্যে হাহাকার শুরু হয়। স্টেশন ঠিক হতে হতে প্রধান হাসপাতালে হয় ভয়াবহ বোমা হামলা। এই সংকট কাটিয়ে উঠতে উঠতেই দেশের প্রধান খাদ্য পণ্যের সংকট শুরু হয়। মানুষ একের পর এক সংকটে দিশেহারা। চলতে থাকে আলোচনা আর পর্য়ালোচনা। আন্দোলন এক মাসেই শেষ।

পাঁচ.

এমন সময় ঘোষণা আসে রাজা ফ্লোরেন্তিনো সেন্ট ফারউডের আস্তানায় পনের দিনের ধ্যানে বসবেন দেশের কল্যান কামনায়। শেষ দিনের পুরো চব্বিশ ঘন্টার কারনামা লাইভে দেখানো হবে। ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই মানুষ আবার ডুবে গেল রাজার ধ্যানের আলোচনায়। চারদিকে আলোচনা একটাই, রাজার ধ্যান। এই আলোচনায় আছে বিরোধী পক্ষ। আছে রাজাপক্ষ। আছে পেইড পক্ষ। আছে ট্রল পক্ষ। এইসব পক্ষ মিলে পুরো রাজ্যকে একটা রোলার কোস্টারের যাত্রী বানিয়ে দিয়েছে। যেখানে কেবলই রাজার ধ্যান। পত্রিকা, টিভি আর অন্তর্জালে আলোচনা একটাই। রাজার ধ্যান যে একটা ফালতু বিষয় এইটা সবাই জানে, তার পরেও কেন এমন আলেচানা এইটা নিয়ে? প্রশ্ন করলো একজন আরেকজনকে একটা চায়ের দোকানে বসে। প্রশ্ন শেষ করার আগেই তার গায়ে দুই চার ঘুষি পরে গেল। এইসব কারণেই কেউ আর ভিন্ন কোন কথা সরাসরি বলে না। বিরোধী পক্ষও নানান কৌশলে বিরোধিতা করছে।

সেন্ট ফারউড খুব ফুরফুরে মেজাজে আছেন। তার পরামর্শেই রাজার সিংহাসন প্রায় নিরাপদ। এখন প্লানচিট নামক এই ধ্যানটাতে সফল হতে পারলে সামনে একটা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ঠেকায় কে?

ছয়.

ধ্যানে চলে গেছেন রাজা ফ্লোরেন্তিনো। পনের দিন ধরে কেবলই ধ্যানময় পুরো রাজ্য। আটাশে এপ্রিল শেষ দিন। লাইভ চলছে। সারাদিন দেখা গেছে রাজা প্রার্থনায় বসে আছেন। চিৎকার করে করে দেশ ও জনগণের কল্যানের জন্য প্রভুর কাছে প্রার্থনা করছেন। টিভি এংকর আর ভারচুয়াল বিভিন্ন চ্যানেলের এংকররা নানাভাবে এইসব প্রচারে আলোয় নিয়ে আসছে।

সন্ধ্যা নামতেই ফারউডের আস্তানার অভ্যন্তরে দুই হাজার তেরোটি মোম বাতি, দুই দাজার তেরোটি ফানুস এবং দুই হাজার তোরোটি ডিমার জ্বলে উঠল। দুই হাজার তোরোটি কেন? এই ব্যাখ্যায় ফারউড বলেন, এইটা রাজা ফ্লোরেন্তিনোর এটা রাকি সংখ্যা। এইটা তার জন্মের তিথি ও ক্ষমতারোহণের তিথির কোড নম্বর। নই নম্বরই আমাদের সকল সংকট নিরসনের হাতিয়ার।

মোমবাতিগুলোর ঠিক মধ্যস্থলে একটা টকটকে লাল আসন পাতা হয়। সেই আসনটি দেখে ফ্লোরেন্তিনোর চাচাতো ভাই নিজার চিৎকার করে বলে উঠেন, ‘এই আসনটি হলো এই জাতির এই দেশের অগণিত লাশের রক্তের প্রতীক। হে ফ্লোরেন্তিনো! তোর দিন ফুরিয়ে আসছে। আশা করি এই ধ্যান নামক নাটকটাই হবে তোর শেষ নাটক।’ রাত আটটায় নিজারের লাশের গাড়ি এসে থামে ফ্লোরেন্তিনোর ধ্যান আসনের সামনে। ফারউড বলেন, এইটা বরং ভালই হলো। আমার এইরকম প্লানচিটের সময় একটা লাশ হলে খুব ভালো হয়। এরপর লাশটিকে ফুল দিয়ে ঢেকে দিতে বলেন ফ্লোরেন্তিনো।

রাত দশটায় শুরু হয় ধ্যানে বসে ফারউডের সঙ্গে ফ্লোরেন্তিনোর আত্মার আলাপ। সারা দেশের প্রতিটা মানুষ এই আলাপ শুনার জন্য বসে আছে। কেউ আছে বিশ্বাসে। কেউ আছে ভণ্ডামির শেষটা দেখতে। কেউ আবার চ‚ড়ান্ত নির্মোহ হয়েও বসে আছে। কেন বসে আছে নিজেও জানে না।

-রাজা, প্রভু আপনার সঙ্গে কী আচরণ করলেন?
-প্রভু তো আমাকে ক্ষমা করে দিলেন। বললেন, ‘পাহাড়ের ধ্যান আমি কবুল করে নিয়েছি ফলে তুমি ক্ষমা পাবে।’
-এরপর আপনাকে প্রভু কোথায় নিয়ে গেলেন?
-এরপর প্রভু আমাকে দেশের সম্পদ পাচার জনিত প্রশ্ন করলেন! আমি আটকে গেলাম। আমার বাবা এলেন, বললেন, ‘প্রভু! আমার সন্তান অগণিত উপাসনালয় বানিয়েছে। যেখানে মানুষ আরামে উপাসনা করে। আপনি সেইসব উপাসনার খাতিরে তারে ক্ষমা করে দেন। আমি স্বপ্নে দেখেছি আপনি আমার সন্তানকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।’ আমার বাবার অনুরোধে প্রভু এইবারও আমাকে ক্ষমা করে দেন।
-প্রভু কি আপনাকে সেন্ট ফারউডের সঙ্গে সম্পর্ক থাকায় কোন বিশেষ সুবিধা দেয়নি?
-হ্যাঁ! বলতে ভুলেই গেছিলাম। আমি প্রভুর দরবারে হাজির হতেই প্রভু বললেন, আসুন আমার বন্ধু ফারউডের বন্ধু! আপনি আমার অধীনে নিরাপদ। এই আলাপ শুনে ফরউডের মুখে মুচকি হাসি ফুটে উঠে।
-প্রভু আপনাকে এরপর কোথায় নিয়ে গেলেন!
-এরপর প্রভু আমাকে স্বর্গের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময় রাজ্যের মৃত সকল নষ্ট আত্মা এসে স্বর্গের চাবি নিয়ে গেল। তারা প্রভুর কাছে আমার বিচার চাইল। প্রভু বললেন, ‘তোমরা চাবি দাও। রাজার সকল অপরাধ ক্ষমার্হ। রাজার মূলত মানুষকে সাজা দেন। রাজার নির্দেশে মৃত্যু মানে তোমাদের মুক্তি…

আলাপ শেষ হতে পারেনি। ফারউডের আস্তানায় সকল আলো নিভে যায়। চার দিক থেকে আওয়াজ আসতে থাকে, ‘এইসব ভণ্ডামি বন্ধ করো!’ প্রথমে ফিস ফিস করে। এরপর শব্দ করে। এরপর বিকট আওয়াজে! ফরউড এবং ফ্লোরেন্তিনো প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যায়। পালানোর পথ খুঁজতে থাকে। ঠিক সেই সময় আলো জ্বলে উঠে। সেন্ট ও রাজা খুশি হতে গিয়ে চুপসে যায়। এই আলো তাদের জ্বালানো আলো নয়। টর্চের মতো জ্বলছে। প্রতিটি আলোর দুইটি ধারা। একটু ভালো করে লক্ষ্য করে সেন্ট ফারউড দেখেন প্রতিটা আলো মানুষর চোখ। তার জ্বালানো দুই হাজার তোরোটি মোম, ফানুস ও ডিমার এক একটা মানুষের কঙ্কাল হয়ে গেছে। সেই কঙ্কালের চোখ থেকে এই আলো ঠিকরে পড়ছে।

কয়েক মিনিট যেতেই প্রতিটা কঙ্কাল মানুষ হয়ে উঠলো। এইবার ফ্লোরেন্তিনো আর সেন্ট ফারউড প্রতিটা চেহারাকে চিনতে পারলো। প্রত্যকের কণ্ঠেই তখন কোরাস, ‘যেই প্রভুর সঙ্গে ধ্যানের নামে প্রতারণা করলে, সেই প্রভু আমাদের সক্ষমতা দিয়ে দিলেন। আর মৃত লাশের সক্ষমতা বলতে কাকে বুঝায় তাতো বুঝোই!’

রাজা ফ্লোরেন্তিনোর সাজানো সকল সক্ষমতা তখন তাসের ঘর। আর সেন্ট ফারউড এক নিতান্ত ব্যবহৃত টিস্যূ…

রাজনগর
০২ জুলাই ২০২১

 

আগের সংবাদকবিতা
পরবর্তি সংবাদকেউ ফেরে খালি হাতে