রাকিবুল হাসান নাঈম:
সিলেট-সুনামগঞ্জের অধিকাংশ এলাকা থেকে বন্যার পানি নেমে গেছে। বেফাকের আনুমানিক তথ্যমতে, এ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিলেট বিভাগের হাজারের অধিক মাদরাসা। বন্যায় এসব প্রতিষ্ঠানের কোনোটি পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত আবার কোনোটি অধিকাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে বন্যার পানি নেমে গেলেও সব মাদরাসায় পুনর্বাসন সম্পন্ন না করে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, বন্যায় আর্থিক ও অবকাঠামোগত দু ধরণেরই ক্ষতি হয়েছে। আবকাঠামোগত সংস্কার সম্পন্ন করে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা যাবে। তবে আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে।
ক্ষতিগ্রস্ত মাদরাসার সঠিক পরিসংখ্যান জানা নেই। শিক্ষাবোর্ডের কাছেও নেই পুরো তথ্য। তবুও আঞ্চলিক বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থার সহযোগিতায় কয়েকটি উপজেলার সংক্ষিপ্ত পরিসংখ্যান জানা গেছে। তাতে জানা গেছে, সিলেট বিভাগে সবচে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নিচু অঞ্চলগুলো। এরমধ্যে রয়েছে জৈন্তা, গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ। সুনামগঞ্জেও বেশ ক্ষতির মুখে পড়েছে মাদরাসাগুলো। সবচে বেশি ক্ষতি হয়েছে ছোট ছোট মাদরাসাগুলোর। নষ্ট হয়ে গেছে টিনের বেড়া, ধসে গেছে ভিটের মাটি।
জৈন্তাপুরের ক্ষতিগ্রস্ত মাদরাসা
সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ৭৬ টি মাদরাসা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন জৈন্তা হৈমু মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা জিল্লুর রহমান ।
১নং নিজপাট ইউনিয়নের মাদরাসাগুলো হলো: আশরাফুল উলূম নিজপাট মাদরাসা(উলয়া), দারুল উলূম জৈন্তাপুর মাদরাসা(নুরানী). মারকাজুল উলূম ডৌডিক মাদরাসা(ইবতেদাইয়্যাহ), আনোয়ারুল উলূম পাখিবিল মাদরাসা, ফাতিমাতুয যাহরা রা. সারিঘাট মহিলা মাদরাসা(তাকমীল), লক্ষিপ্রাসাদ রুপচেং ইসলামিয়া মাদরাসা(নুরানী), মাদরাসায়ে আবু হুরায়রা নয়াগাতি(মুতাওয়াসসিতা), আনসারুল উলুম হর্নি মাদরসা(নূরানী), গুয়াবাড়ি মাদরাসা(নুরানী), খাদিজাতুল কুবরা রুপচেং মহিলা মাদরাসা(মুতাওয়াসসিতা)।
২নং জৈন্তাপুর ইউনিয়নের মাদরাসাগুলো হলো: ইমদাদুল উলূম লামনীগ্রাম(মিশকাত), গুলজারুল উলূম ৪নম্বর মাদরাসা(মুতাওয়াসসিতা), আসামপাড়া হাফিজিয়া মাদরাসা(হিফজ), বৃহত্তর আসামপাড়া মাহমুদিয়া মাদরাসা(মুতাওয়াসসিতা), নলজুরী মোকাম মাদরাসা(মুতাওয়াসসিতা), বিরাইমারা মাদরাসা(নূরানী), খারুবিল মাদরাসা(নুরানী), বিড়াখাই মাদরাসা(নুরানী), দারুর রাসাদ মল্লিফৌদ মাদরাসা(মুতায়্ওয়াসসিতা)।
৩নং চারিকাটা ইউনিয়নের মাদরাসাগুলো হলো: চারিকাটা থুবাং হামিদিয়া মাদরাসা, রামপ্রসাদ ইসলামিয়া মাদরাসা, থুবাং হাজি গিয়াসউদ্দিন মহিলা মাদরাসা(মহিলা,তাকমীল), মাদানিয়া বনপাড়া মাদরাসা(নূরানী), আহমদপুর মাদরাসা(নুরানী), রহমানিয়া ফুলতল মাদরাসা(নূরানী), কুমারপাড়া হাফিজিয়া মাদরাসা(হিফজ), কুব্বাতুল ইসলাম মাদরাসা(নূরানী), হামিউস সুন্নাহ নিধিখাল মাদরাসা(ইবতেদাইয়্যাহ), আবু হুরায়রা নকিয়ার মাদরাসা(ইবতেদাইয়্যাহ), মদিনাতুল উলূম বালিদাড়া মাদরাসা(নুরানী), নয়াখেল দক্ষিণ মহিলা মাদরাসা(মুতাওয়াসসিতা)।
৪নং দরবস্ত ইউনিয়নের মাদরাসাগুলো হলো: মদিনাতুল উলূম খরিলহাট মাদরাসা(তাকমীল), দরবস্ত আল-মনসূর মাদরাসা , তাহফিযুল কুরআন সরুফৌদ মাদরাসা(হিফজ), মাদানিয়া কিন্ডারগার্টেন বারইকান্দি(ইবতেদাইয়্যাহ), দারুল আরকাম দরবস্ত(নুরানী), বিছনাটেক আজিজিয়া মাদরাসা(ইবতেদাইয়্যাহ, দরবস্ত ফাতিমাতুয জাহরা রা. মহিলা মাদরাসা(মিশকাত), নুরে মদিনা শুকইনপুর মাদরাসা(ইবতেদাইয়্যাহ), দারুল কুরআন খাজার মোকাম মাদরাসা, মাদরাসায়ে ওমর ফারুক সেনগ্রাম(মুতাওয়াসসিতা), ক্বাসিমুল উলুম গর্দ্দনা মাদরাসা(নুরানী), কাঞ্জর মাদানিয়া মাদরাসা(নুরানী), সেনগ্রাম মহিলা মাদরাসা(উলয়া), দারুল হুদা মুটগুঞ্জা মাদরাসা(নুরানী), কাসিমুল উলূম চাল্লাইন মাদরাসা(ইবতেদাইয়্যাহ), করগ্রাম মাদানিয়া মাদরাসা(নুরানী), মাদানিয়া ভাইটগ্রাম মাদরাসা(মুতাওয়াসসিতা), মহাইল ক্বওমি মাদরাসা(মুতাওয়াসসিতা), এহইয়াউল উলূম মানিকপাড়া ঈদগাহ মাদরাসা(ইবতেদাইয়্যাহ), রওজাতুল ইসলাম চাক্তা ক্বওমি মাদরাসা(মহিলা,তাকমীল), দারুস সুন্নাহ ছাতারখাই মাদরাসা(সাঃআম্মা), ছাতারখাই মহিলা মাদরাসা(সাঃউলয়া)।
৫নং ফতেপুর ইউনিয়নের মাদরাসাগুলো হলো: জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম হেমু (তাকমীল), আয়েশা সিদ্দিকা রাঃ মহিলা মাদ্রাসা হেমূ(তাকমীল), জামিয়া ইসলামিয়া মাদরাসাতুল উলূম হরিপুর।(তাকমিল ,পুরুষ), জামিয়া ক্বাসিমুল উলূম হেমু নয়াগ্রাম। মুখতাসার/হেদায়াতুন্নাহু (মহিলা, তাকমিল), হরিপুর হাফিজিয়া।( সরফ)। মঈনুল ইসলাম লামাশ্যামপুর। সরফ।(মহিলা, মিশকাত), জামিয়া ইসলামিয়া মিসবাহুল উলূম শ্যামপুর বাগেরখাল।( কাফিয়া, মাহিলা মিশকাত), ক্বামরুল ইসলাম বাগেরখাল মাদ্রাসা।(মহিলা,তাকমিল) , উম্মাহাতুল মুমিনিন বাগেরখাল।( সরফ), হাফাজুল ইসলাম মুলকুটিঘর মাদ্রাসা।(নুরানি), আনহারুল উলূম বালিপাড়া মাদরাসা।(নুরানি), উৎলারপার মাদরাসা। (নুরানি), উপর শ্যামপুর নুরানী মাদ্রাসা(নূরানী, শিকারখা নূরানী মাদ্রাসা(নুরানী)।
৬নং চিকনাগুল ইউনিয়নের মাদরাসাগুলো হলো: মিফতাহুল উলূম চিকনাগুল মাদ্রাসা (কাফিয়ি), চিকনাগুল মহিলা মাদ্রাসা (তাকমীল), কান্দী মাদ্রাসা (কাফিয়া), আজিজিয়া মহিলা মাদ্রাসা (মিশকাত), রাহমানিয়া মাদ্রাসা (ইবতেদাইয়্যাহ), মুজাহিরুল উলূম উমনপুর মাদ্রাসা (নুরানী), সাতজনী নুরানী মাদ্রাসা (নূরানী), পানিছড়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা(হিফজ), পানিছড়া নূরানী মাদ্রাসা (নুরানী)।
মাওলানা জিল্লুর রহমান ফাতেহকে বলেন, সবচে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ছোট ছোট মাদরাসাগুলো। এগুলোর অবকাঠামো ভেঙ্গে গেছে। যেগুলো মাটির ফ্লোর, সেগুলো হয়ে পড়েছে ব্যবহার অযোগ্য। অনেক মাদরাসা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে। যেমন , আমার মাদরাসার দিঘি আছে। দিঘি ডুবে ৩-৪ লাখ টাকার মাছ চলে গেছে। দিঘি খুব কম মাদরাসাতেই আছে। তবে পুকুর আছে ১৫-২০ টি মাদরাসায়। প্রতিটি মাদরাসা কমপক্ষে ১-২ লাখ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জকিগঞ্জের ক্ষতিগ্রস্ত মাদরাসা
সিলেটের বন্যায় যে মাদরাসাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তারমধ্যে অন্যতম জকিগঞ্জের মাদরাসাগুলো। জকিগঞ্জ কওমি মাদরাসা ঐক্য পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, এবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই উপজেলার ৫২ টি মাদরাসা। এরমধ্যে তাকমিল পর্যায়ের মাদরাসা ৪ টি, ফজিলত পর্যায়ের মাদরাসা ১ টি, সানাবিয়্যা পর্যায়ের মাদরাসা ৩টি, মুতাওয়াসসিতা পর্যায়ের মাদরাসা ১৫ টি, ইবতেদাইয়্যাহ পর্যায়ের মাদরাসা ২০ টি এবং বিভিন্ন স্তরের মহিলা মাদরাসা রয়েছে ১১টি। এই মাদরাসাগুলোর নাম ফাতেহের কাছে আছে।
এরমধ্যে উপজেলার বারহাল ইউনিয়নের তাকমিল পর্যায়ের মাদরাসা শাহবাগ জামিয়া কাসেমুল উলুম মাদরাসা বন্যায় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মাদরাসাটির ভাইস প্রিন্সিপাল মুফতি মাসউদ আহমাদ ফাতেহকে বলেন, ‘যারা বন্যার সময় আশ্রয় নিয়েছে, তাদেরকে মাদরাসার পক্ষ থেকে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
জকিগঞ্জের পরিস্থিতি জানতে কথা বলা হয় সিলেট লাউয়াই ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা মুখলেসুর রহমানের সঙ্গে। তিনি ফাতেহকে জানান, ক্ষতিগ্রস্ত এসব মাদরাসাগুলোর মধ্যে ১৭টি মাদরাসা সবচে বেশি অবকাঠামোগত ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে। বন্যার পর এগুলো ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এগুলো এখনই মেরামত করা প্রয়োজন। সবচে ক্ষতির মুখে পড়েছে টিনের মাদরাসাগুলো। এছাড়াও পুকুরের মাছ ভেসে গিয়ে, ফসল নষ্ট হয়ে অনেক মাদরাসা পড়েছে আর্থিক সংকটে।
সুনামগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্ত মাদরাসা
সুনামগঞ্জে বন্যার্ত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত মাদরাসার কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে জামেয়া মারকাজুল উলূম বর্মাউত্তর-রামনগর-বাণীপুর সুনামগঞ্জ মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা আবদুর রহমান কফিল ফাতেহকে বলেছেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মাদরাসার সংখ্যা হবে শতাধিক। তার নিজের মাদরাসা জামেয়া মারকাজুল উলূম বন্যায় হয়ে উঠেছিল গণমানুষের আশ্রয়কেন্দ্র। নিজের মাদরাসার ক্ষতি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, বন্যায় মারকাজুল উলূম নিজেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে। মাদরাসার অন্যতম আয়ের উৎস পুকুরের মাছ বন্যায় ভেসে গেছে। এই পুকুর থেকে মাদরাসা বছরে কয়েক লাখ টাকা উপার্জন করে। এ ছাড়া মাদরাসার নিচতলায় সংরক্ষিত ধান, যা থেকে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক খোরাকির ব্যবস্থা হয় তার কিছুটা নষ্ট হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রায় প্রতিটি মাদরাসা গড়ে লাখ টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছে। এ হিসেবে সুনামগঞ্জ মাদরাসায় মোট আনুমানিক ক্ষতি কোটি টাকার উপরে।
সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার চরমহল্লাহ ইউনিয়নে অবস্থিত চাঁনপুর হাফিজিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসা। মাদরাসাটির প্রতিষ্ঠাতার ছেলে হাফিজ ছানোয়ার হোসাইন ফাতেহকে বলেন, বন্যার সময় তার বাবার মাদরাসার দোতলাটি আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ১৪ ই জুন থেকে হঠাৎ পানি বেড়ে যাওয়ায় মাদ্রাসার বোর্ডিংয়ের চাল, ডাল, পেয়াজ, কুতুবখানার কিতাবাদী, ফ্রিজ ইত্যাদি নষ্ট হয়ে গেছে। মাদ্রাসার মূল ভবনে প্রায় ছ’ফুট পানি ছিলো। মাদ্রাসার দ্বিতীয় তলার কাজ বর্তমানে চলমান। বন্যার স্রোতে বালুর স্তুপ থেকে প্রায় ৩০ ফুট বালু ভেসে যায় ও ৫০ বস্তা সিমেন্ট নষ্ট হয়ে যায়। এখনও মাদ্রাসার সীমানা থেকে পানি যায়নি। কিতাব, আসবাবপত্র বোর্ডিংয়ের ছামানাসহ প্রায় লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে।
সিলেটের ক্ষতিগ্রস্ত মাদরাসা
কথা হয় সিলেট পশ্চিম গৌরিপুর মাদরাসা মুহতামিম মাওলানা বদরূল আলমের সঙ্গে। ফাতেহকে তিনি জানান, তার মাদরাসা আর্থিক ও অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে । পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়ায় ক্ষতি হয়েছে ৭০-৮০ হাজার টাকা। এছাড়া বন্যার আগে ৫০ হাজার টাকার মাটি তুলেছিলেন মাদরাসা ভিটায়। বন্যায় ভিটে ভেঙে মাটিও ধসে পড়েছে। এছাড়া মাদরাসার পেপে গাছ, শাক-সবজি মিলিয়ে দেড় লাখ টাকার ক্ষতির মুখোমুখি তিনি। তিনি আরও বলেন, বন্যার পানি নেমেছে। কিন্তু গ্রামের মানুষ এখনো আশ্রয়কেন্দ্র এবং আত্মীয়স্বজনের বাড়ি থেকে ফেরেনি। চারদিকে কেমন হাহাকার, শূন্যতা বিরাজ করছে।
শায়খ শফিকুল হক আমকুনি রহ. প্রতিষ্ঠিত সিলেটের জামিয়া মাহমুদিয়া সুবহানিঘাট মাদরাসাও ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে। এই মাদরাসার সাবেক ছাত্র সিলেটের তরুণ আলেম মুফতি মামুন মুজাহিদ ফাতেহকে বলেন, আকস্মিক বন্যার কারণে মাদরাসার জিনিসপত্র সরানোর তেমন সুযোগ হয়নি। ফলে বেশ ক্ষতি হয়ে গেছে। যেমন পানি তোলার মটরগুলো নষ্ট হয়ে গেছে, গ্যাসের পাইস লিক হয়ে গেছে, দফতরের কাগজপত্র, কুতুবখানার অনেক কিতাবও নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়াও মাদরাসার পারটেক্সের ফার্নিচার, ম্যাট, কার্পেট ইত্যাদিও নষ্ট হয়ে গেছে। কারণ নিচতলায় বুক সমান পানি ছিল।
ক্ষতির মুখে পড়েছে গোয়াইনঘাটের মিছবাহুল উলূম নিজ ধরগ্রাম মাদ্রাসা। সিলেটের জামেয়া হুসাইনিয়া ইসলামিয়া ঝেরঝেরীপাড়া মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক মুফতি সাঈদ বিন বশির ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে মাদরাসাটি দেখে এসেছেন। তিনি ফাতেহকে বলেন, মাদরাসাটির অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে। মাদরাসার কুরআন শরীফগুলো সব নষ্ট হয়ে গেছে। পাঠ্যপুস্তক নষ্ট হয়ে গেছে। মাদরাসাটিতে এখন শ খানেক কুরআন শরীফ দরকার। বন্যার কিছুদিন আগেই টিন দিয়ে নতুন একটি ঘর তোলা হয়েছিল। বন্যায় সেটিও নষ্ট হয়ে গেছে। মাটি এবং টিন দুটোরই ক্ষতি হয়েছে।
তবে সিলেটের শহরের মাদরাসাগুলো তেমন ক্ষতির মুখে পড়েনি বলে সাক্ষাৎকারদাতারা জানিয়েছেন।
মাদরাসাগুলোর পুনর্বাসনে শিক্ষাবোর্ডের মিটিং
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মাদরাসার তালিকা কওমি শিক্ষাবোর্ড বেফাকের কাছে না থাকলেও মাদরাসাগুলোর পুনর্বাসন নিয়ে বার কয়েক মিটিং হয়েছে বলে জানিয়েছেন বেফাকের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মাওলানা মুহাম্মদ যুবায়ের। ক্ষতিগ্রস্ত মাদরাসার পরিসংখ্যান জানতে চাইলে তিনি ফাতেহকে বলেন, ‘তেমনভাবে তালিকা তৈরী করা হয়নি। তবে আলোচনা চলছে। ঈদের ছুটির পর ১৯ জুলাই অফিস খুলবে। তখন আমরা বেফাকভুক্ত মাদরাসাগুলোতে ফোন দিয়ে দিয়ে কে কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হলো, তার তথ্য নিব। তারপর প্রয়োজনমতো পুনর্বাসনে সহেযোগিতা করবো।’
তবে মাদরাসা সংশ্লিষ্টরা বেশ চিন্তায় আছেন আর্থিক ক্ষতির কথা ভেবে। তারা জানিয়েছেন, অনেক মাদরাসার আয়ের খাত পুকুর ভেসে গেছে বন্যার জলে। এখন মাদরাসা খুললেও খরচ নির্বাহ করা কঠিন হবে। যেহেতু আশপাশের সব গ্রামই বন্যার শিকার, তাই গ্রামের মানুষ থেকে সহযোগিতা খুব পাওয়া যাবে না। তাছাড়া সব মাদরাসাতেই অবকাঠামোগত বাবদ কিছু না কিছু খরচ করতেই হবে। বিভিন্ন মাদরাসার কর্তৃপক্ষ আবেদন জানিয়েছেন, দাতব্য সংস্থাগুলো যেন মাদরাসা পুনর্বাসনের দিকেও মনোযোগ দেন।