বাংলাদেশে ‘হালাল ইনভেস্টমেন্ট’র সম্ভাবনা বাড়ছে

|| তাসনিফ আবীদ ||

হালালভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য রিজিক উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম। আমাদের নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যবসা করেছেন। যারা সতভাবে ব্যবসা করেন, ইসলামের দৃষ্টিতে তাদের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে।

প্রযুক্তির উৎকর্ষে এখন ব্যবসার ধরণ পাল্টেছে। সিস্টেম আপডেট হয়েছে। অনলাইন অফলাইনের নানা ব্যবসা এখন মানুষের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তাছাড়া অনলাইনের কল্যাণে ঘরে বসে এখন হালালভাবে ব্যবসায় বিনিয়োগের নানা ক্ষেত্রে তৈরি হচ্ছে, বাড়ছে।

বাংলাদেশে ২০২২ সাল থেকে ‘হালাল ইনভেস্টমেন্ট’ নিয়ে কাজ করছেন মেসার্স আমানাহ ফিনটেক’র ফাউন্ডার আবু বকর সিদ্দীক। তার সঙ্গে কথা হয় দেশে হালাল ইনভেস্টমেন্টের সম্ভাবনা, ভবিষ্যৎ ও বর্তমান নিয়ে।

তিনি জানান, ধর্মকর্ম মেনে যারা জীবনযাপন করেন তারা হাতে থাকা নগদ অর্থ হালাল জায়গায় ইনভেস্ট করতে চায়। কিন্তু নানা কারণে আমাদের দেশে নিরাপদ হালাল ইনভেস্টমেন্ট’র ক্ষেত্র ব্যাপকভাবে তৈরি না হওয়ায় তারা সেটি করতে পারেন না। আমি এই বিষয়টি একবার দেখি স্যোশাল মিডিয়ায় বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে।

‘আমি যেহেতু আগে থেকেই টুকটাক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলাম তাই তখন নিজের উদ্যোগে একটি ফেসবুক গ্রুপ ক্রিয়েট করি। নাম দিই ‘হালাল ইনভেস্টমেন্ট (সিকিউর ইউর মানি)’। বর্তমান পুজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় যেখানে অনেকে তার অলস টাকা ব্যাংক এ রেখে সুদি সিস্টেমে ইনকাম করার রাস্তা খুজছে, ঠিক তেমনি ভাবেই অনেকে খুজছে হালালভাবে ইনকাম করার রাস্তা। এই গ্রুপ মুলত তাদের নিয়েই যারা হালাল কামাই এর রাস্তা খুঁজছে তার সাথে অর্থের নিরাপত্তাও খুঁজছে।’ -যোগ করেন তিনি

তিনি জানান, ‘বতর্মানে আমাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট রয়েছে একই নামে। এছাড়া ফেসবুক গ্রুপে আমাদের ৩১ হাজারেরও বেশি মেম্বার রয়েছে; যারা হালাল উপায়ে ইনভেস্টে ইন্টারেস্টেড।’

‘হালাল ইনভেস্টমেন্ট’ কীভাবে ইনভেস্টরদের মাঝে কাজ করে থাকে জানতে চাইলে তিনি জানান, যেসব উদ্যোক্তার ইনভেস্ট লাগবে তারা প্রথমে আমাদের সার্বিক ফর্মালিটি রক্ষা করে আমাদের কাছে আবেদন করে থাকে। আমরা সববিষয় খুটিয়ে দেখে ইনভেস্টরদের জন্য তা নিরাপদ ও হালাল মনে হলে ফেসবুক গ্রুপ ও ওয়েবসাইটে উন্মুক্ত করি। আপনি জেনে খুশি হবেন, বর্তমানে আমাদের কোনো প্রজেক্টের পোস্ট দেওয়ার তিন/চার ঘণ্টার মধ্যেই কোটা পূরণ হয়ে যায়।

বাংলাদেশে হালাল ইনভেস্টমেন্ট এর সম্ভাবনা ও ভবিষ্যৎ কেমন? জানতে চাইলে তিনি তথ্য দেন, দুই বছরের মতো অল্প সময়ে আমরা ৬০ এর উপরে প্রজেক্ট সম্পন্ন করেছি আলহামদুলিল্লাহ। পাশাপাশি ৫/৬টা প্রজেক্টে বর্তমানে ফান্ডিং নিচ্ছি। এ পর্যন্ত আমাদের প্রায় ৩০ কোটি টাকার মতো ইনভেস্টমেন্ট হয়েছে।

তিনি জানান, শুরু আমাদের ধারনাও ছিল না হালালভাবে ইনভেস্ট’র প্রতি মানুষের মাঝে এতো আকাঙ্খা বা তৃষ্ণা আছে। আমরা যত কাজ করছি ততই দেখছি এই আকাঙ্খা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারা ফান্ডিংয়ের জন্য আরো প্রজেক্ট খুঁজছে।

‘যদি আমাদের মতো আরো কিছু প্রতিষ্ঠান আমানতের সঙ্গে হালাল ইনভেস্ট নিয়ে কাজ করার জন্য এগিয়ে আসতো তাহলে মানুষের জন্য আরো উপকার হতো। আমাদের অভিজ্ঞতা, পরামর্শ দিয়ে তাদেরকে সার্বিক সহযোগিতা করবো ইনশাআল্লাহ।’ -যোগ করেন তিনি

এদিকে বাংলাদেশে ‘হালাল ইনভেস্টমেন্ট’র সম্ভাবনা বৃদ্ধির বিষয়টিকে পজেটিভভাবে দেখছেন আইএফএ কনসালটেন্সি’র কো-ফাউন্ডার ও ইসলামি অর্থনীতিবিদ মুফতি ইউসুফ সুলতান। তিনি বলেন, সম্প্রতি ফিলিস্তিনে ইসরাইলি আগ্রাসনের পর আমরা ইসরাইলি পণ্য বয়কটের একটা ডাক দিয়েছে। এখন আমরা পণ্য বয়কট করবো ঠিক আছে কিন্তু এর বিকল্প পণ্যও কিন্তু বাজারে ছাড়তে হবে। সেজন্য দরকার মুসলিম উদ্যোক্তাদের নানা উদ্যোগ। আর বিকল্প পণ্য বাজারে আনতে হলে ‘ইনভেস্টমেন্ট’ খুবই জরুরি। তাই হালাল ইনভেস্টমেন্টে মানুষ এগিয়ে এলে মুসলমানরা এগিয়ে যাবে। আমাদের ছোট্ট এ দেশ এগিয়ে যাবে। পরনির্ভরতা কমবে।

তবে ইনভেস্টমেন্ট’র ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করার জন্য বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছেন এই গবেষক। তিনি বলেন, বিনিয়োগ বা ইনভেস্টমেন্ট’র ক্ষেত্রে কখনো লোভে পড়া যাবে না। লোভাতুর লভ্যাংশ দেখে কিছু না ভেবে বিনিয়োগ করলে ক্ষতির মুখোমুখী হতে হবে।

‘এছাড়া যেখানে বিনিয়োগ করছি সেই বিজনেস এবং ব্যক্তি স্বচ্ছ কীনা যাচাই করতে হবে। ‘খুব দ্রুত লাভ দিয়ে দিবে’ এমন অফার দেখে বিনিয়োগ করা যাবে না। ভাবতে হবে। বিজনেসের জন্য যেসব লাইসেন্স দরকার সেসব লাইসেন্স আমি যেখানে বিনিয়োগ করছি সেই প্রতিষ্ঠানের আছে কীনা দেখে নিতে হবে। চুক্তির সার্বিক বিষয়গুলো ক্লিয়ার করে নিতে হবে। সর্বপরি অভিজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে হবে।’ –যোগ করেন এই অর্থনীতিবিদ

তিনি বলেন, সবশেষ দু’টি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। এক. যার কাছে ইনভেস্ট করছি সে ব্যবসায় দক্ষ কীনা। দক্ষ না হলে বিনিয়োগকারীর কষ্টের টাকা ক্ষতির মুখে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল। দুই. যার কাছে বিনিয়োগ করছি সে আমানতদার কীনা। তার মাঝে আমানাহ আছে কীনা। তার যদি আমানাহ না থাকে, সে আমার বিনিয়োগ দিয়ে বহুগুণে লাভ করলেও তা আমার পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এসব বিষয় দেখে ইস্তেখারা করে ইনভেস্ট করলে আশা করি ক্ষতির মুখোমুখী হতে হবে না। অর্থনৈতিকভাবেও আমরা স্বাবলম্বী হতে পারবো।

আগের সংবাদগাজায় ইসরায়েলি হামলায় সাবেক ফিলিস্তিনি মন্ত্রী ও আল আকসার ইমাম নিহত
পরবর্তি সংবাদবুধবার থেকে মাঠে নামছে সশস্ত্র বাহিনী