বিষাদের পথ মাড়িয়ে

সুমাইয়া মারজান:

পাহাড়ের পাদদেশে পাথরের কোলে হেলান দিয়ে বসে আছেন এক নারী। চোখে তার অনন্ত শূন্যতা, অপেক্ষার ব্যাকুলতা। বেদনার বেনোজলে ভিজছে গাল। দূরের বালিয়াড়ি ছাড়িয়ে দিগন্তে মিশে যায় তার বিষণ্ণ দৃষ্টি। অসহ্য রকমের অপেক্ষায় প্রহর কাটছে তার। দৃষ্টির গন্তব্য মদিনার পথপানে। কখনো বনু আবদুল আসাদ কবিলার গলি পথের দিকে অশ্রুভেজা চোখে তাকিয়ে থাকেন। মদিনায় তার প্রিয়তম ও বনু আবদুল আসাদ কবিলায় তার আহত বুকের মানিককে রেখে বনু মুগীরার এই কবিলায় তিনি শরাহত পানকৌড়ির মতো ছটফট করছেন। হায়! জীবন কেন এত বেদনার! এতটা দুর্বিষহ!

চোখের তারায় জীবন্ত জলছাপ হয়ে ভাসে হারানো সুখের দিন। বিভীষিকাময় স্মৃতিগুলো।

তখন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম সবেমাত্র নবুওয়াতের ঘোষণা দিয়েছেন। নারীদের থেকে মাত্র চারজন সে ডাকে সাড়া দিয়েছেন। খুয়াইলিদ কন্যা খাদিজা, উম্মে আয়মান, উম্মে ফজল ও বিরহব্যথায় কাতর এই নারী। তার নাম হিন্দ বিনতে আবু উমাইয়া। যদিও তাকে এখন সবাই উম্মে সালামা বলেই সম্বোধন করে। তার সন্তান সালামার নামে তার উপনাম উম্মে সালামা। আর তার স্বামী আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল আসাদ হলেন পুরুষদের থেকে ১১তম ইসলাম গ্রহণকারী। তাকেও তার উপনাম আবু সালামা বলেই ডাকা হতো। এই দম্পতি ছিলেন প্রথম সারির সৌভাগ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত। উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা তো স্বামীর হাত ধরেই এ কল্যাণ ও সৌভাগ্যের পথে যাত্রা শুরু করেন। উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহার স্বামী আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল আসাদ ছিলেন নবীজির ফুফাতো ভাই। তার মা ছিলেন বাররাহ বিনতে আব্দুল মুত্তালিব। এছাড়াও নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ও আব্দুল্লাহ ইবনে আবদুল আসাদ ছিলেন দুধভাই। কারণ তারা উভয়েই আবু লাহাবের সুয়াইবা নামের একজন দাসীর দুধপান করেছিলেন।

নবীজির মুখ থেকে ইসলামের প্রতি উদাত্ত আহবান বের হওয়ার সাথে সাথেই এ দম্পতি ইসলাম গ্রহণ করেন। কিন্তু হায়! হাতেগোনা কজন মাত্র মুসলমান হয়েছেন তখন। মুসলমানদের শক্তি ও প্রতিরোধ ক্ষমতা বলতে গেলে ছিলোই না। তাই তারা ইসলাম গ্রহণ করার সাথেসাথেই তাদের উপর নেমে এলো অত্যাচারের নির্মম চাবুক। স্বদেশে টিকে থাকা যখন একপ্রকার অসম্ভব হয়ে গেলো তখন নবীজি তার সাহাবীদেরকে পার্শ্ববতী দেশ ইথিওপিয়ায় হিজরত করার নির্দেশ দিলেন । নবীজির নির্দেশ পেয়ে একটা কাফেলা রাতের আঁধারে গোপনে ইথিওপিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। হিন্দ ও আবদুল্লাহ দম্পতিও এ কাফেলায় ছিলেন। তখন নবুওয়াতের পঞ্চম বছর। ৬২৫ খ্রিষ্টাব্দ।

ইথিওপিয়ায় পৌঁছার পর তাদের জীবন থেকে প্রতিনিয়ত জুলুমের স্বীকার হওয়ার ভয় দূর হলো অবশ্য, কিন্তু মক্কা ও মক্কার মুসলমানদের জন্য তারা সবসময়েই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকতেন। ইথিওপিয়ায় থাকাকালীন সময়ে তাদের ঘর আলোকিত করে তাদের সন্তান সালামা জন্ম নেয়। সেখানে তারা পাঁচবছর অবস্থান করেন।

পঞ্চম বছরের শেষ দিকে এসে তারা এক উড়ো খবরের মাধ্যমে জানতে পারলেন, মক্কার কাফেররা অধিকাংশই মুসলমান হয়ে গেছে। মক্কার পরিস্থিতি এখন মুসলমানদের অনুকূলে। শুনে তাদের নির্বাসিত এইসব মুসলমানগণের মন স্বদেশে ফেরার জন্য আকুল হয়ে উঠলো। বেশ আয়োজন করে সমস্ত তল্পিতল্পা গুটিয়ে ৩৩জনের এক কাফেলা আনন্দের সাথে মক্কার পথে রওয়ানা হয়ে গেলেন। আরব উপকূলে জাহাজ ভিড়িয়ে মক্কার কাছাকাছি এসে শুনলেন ভয়াবহ দুঃসংবাদ। জানতে পারলেন যে সংবাদ শুনে তারা নিরাপদ আবাসস্থল ছেড়ে এসেছিলেন তা ডাহা মিথ্যা। উল্টো কাফেরদের নির্যাতনের দৌরাত্ম্য বেড়েছে আরও। এ দুঃসংবাদ শোনার পরে অনেকের মন ভেঙে গেলো। তারা আবার ফিরতি যাত্রা করলেন ইথিওপিয়ায়। সালামা দম্পতি ফিরবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিলেন। সাহস করে মক্কায় এলেন। মক্কায় ফিরে আসার পর তাদের নিরাপত্তা দিলেন আবু সালামার মামা আবু তালিব ও মা বাররাহ বিনতে আব্দুল মুত্তালিব। যদিও মক্কার কুরাইশরা আবু তালিবের জন্য তাদের কোন ক্ষতি করতে পারলো না তবুও নানানভাবে বুঝিয়ে দিতো তাদের মনের আক্রোশ। তারা সেসব মুখ বুজে সহ্য করে যেতে লাগলেন।

তারপর একদিন এলো হিজরতের ঘোষণা। এবার যেতে হবে ইয়াসরিবে। মোটামুটি চেনাজানা কাছের পথ। সালামা দম্পতি তাই হিজরতের প্রস্তুতি নিলেন। এবার তাদের সাথে আছেন পুত্র সালামাও। মদিনায় প্রথম হিজরতকারী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করলেন তারা।

মক্কা থেকে গোপনে বেরিয়ে গেলো একটি ছোট কাফেলা। কাফেলায় আছেন আবু সালামা, উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহুম, তাদের শিশুপুত্র সালামা ও একটি উট । উটের পিঠে বোঝাই করা মাল-সামানা আর হাওদায় স্ত্রী-পুত্রকে বসিয়ে আবু সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহু উটের রশি ধরে এগিয়ে চললেন বালুকাময় মরুভূমি মাড়িয়ে।

সাফা পাহাড়ের পাদদেশ আবতাহ নামক স্থানে এসে দেখা পেলেন উম্মে সালামার কবিলা বনু মুগীরার কিছু লোকের। তারা আবু সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে দূর থেকে দেখেই চিনে ফেললো । বুঝে নিলো যে তারা মক্কা থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন। তাই তারা তাদের গতিরোধ করে দাঁড়ালো। আবু সালামাকে বললো, তুমি আমাদের কন্যাকে নিয়ে এখানে-সেখানে পালিয়ে বেড়াবে তা আমরা কিছুতেই হতে দিবো না। আবু সালামার হাত থেকে লাগাম ছিনিয়ে নিলো। এরইমধ্যে আবু সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহুর গোত্র বনু আবদুল আসাদের লোকেরাও এলো। তারা বনু মুগীরাকে জানিয়ে দিলো যে, তোমরা তোমাদের কন্যাকে স্বামীর সাথে যেতে না দিলে আমরাও আমাদের শিশুকে তোমাদের কন্যার সাথে যেতে দিবো না। উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা তার পুত্রকে প্রাণপণে আগলে রাখার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু তারা প্রচণ্ড টানাহেঁচড়া করতে লাগলো। একপর্যায়ে সালামার হাত ভেঙে গেলো। সালামা ভীষণ চিৎকার, কান্না করতে শুরু করলে উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা তাদের কাছে আহত পুত্রকে ছিনিয়ে না নেওয়ার জন্য অনেক কাকুতি মিনতি করলেন। তারা তার ক্ষত-বিক্ষত হৃদয়ের আর্তনাদ শুনলো না। সালামাকে নিয়ে চলে গেলো। উম্মে সালামাকে বনু মুগীরার লোকেরা তাদের কবিলায় নিয়ে এলো আর হিজরতের হুকুম যেহেতু আগেরই ছিলো আবু সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহু মদিনার দিকে চলে গেলেন। সেদিন থেকেই উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহার অবস্থা পাগলীনির মতো। স্বামী, সন্তানকে হারিয়ে তার জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠলো। তার এ অবস্থা দেখে বনু মুগীরার এক লোকের দয়া হলো। তিনি বনু মুগীরার সকলকে একত্রিত করে বললেন, আপনারা কেন এই অসহায় নারীকে ছেড়ে দিচ্ছেন না? একে তো আপনারা স্বামী, সন্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছেন! তার এই কথাগুলো বেশ কাজের ছিলো। তার কথাগুলো তাদের পাষাণ হৃদয়ে আঘাত করেছিলো। যার কারণে তাদের দয়া হলো। তারা উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বললো, তুমি এখন যেখানে ইচ্ছা সেখানে যেতে পারো। আমাদের পক্ষ থেকে আর কোন বাধা দেওয়া হবে না। বনু মুগীরার দয়াপরবশ হওয়া দেখে বনু আবদুল আসাদও সালামাকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিলো।

পুত্রকে ফিরে পেয়ে উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা আর দেরি করলেন না। একটি উট জোগাড় করে একাই রওয়ানা হয়ে গেলেন মদিনার পানে । বালুকাময় মরুভূমির বিপদজনক পথ আর দস্যুর ভয় সব উপেক্ষা করে আল্লাহর নামে সফর শুরু করলেন। আল্লাহর উপর যেমন ভরসা করে পথ চলা শুরু করেছিলেন আল্লাহ তাকে রক্ষা করেছেন। তানঈম নামক স্থানে এসে দেখা পেলেন, উসমান ইবনে তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহুর। উসমান ইবনে তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু তখনও মুসলমান হননি। আর মুসলমানদের বিরুদ্ধে তার কঠোর অবস্থানের কথাও সবার জানা ছিলো। তাই উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা কিছুটা ভয় পেয়ে গেলেন। কিন্তু তিনি যখন আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে বের হয়েছেন আল্লাহ তাকে তো রক্ষা করবেনই। আল্লাহ উসমান ইবনে তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহুকেই বানিয়ে দিলেন তার প্রহরী। উসমান ইবনে তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বললেন, আবু উমাইয়ার কন্যা! একা একা কোথায় যাচ্ছো তুমি? উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা জবাব দিলেন, মদিনায় আমার স্বামীর কাছে যাচ্ছি। উসমান ইবনে তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু ফের জিজ্ঞেস করলেন, একা যাচ্ছো? আর কেউ তোমার সাথে নেই? উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন আল্লাহ ও আমার পুত্র ছাড়া আর কেউ নেই আমার সাথে। উসমান ইবনে তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আল্লাহর কসম! মরুর এই দুর্গম পথ তোমাকে একা পাড়ি দিতে দিবো না। চলো, আমি তোমাকে মদিনায় পৌঁছে দিয়ে আসবো। এ কথা বলে তিনি উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহার উটের লাগাম ধরে মদিনার পথে হাঁটতে লাগলেন। উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা পরবর্তীতে যখন সেসময়কার কথা স্মৃতিচারণ করেন, তখন বলেন—আল্লাহর কসম! আরবে তার চেয়ে সম্মানিত ও অধিকতর সম্ভ্রান্ত দ্বিতীয় কোন পুরুষ আমি দেখিনি। তিনি সজ্জন, উদার, ভদ্র এক ব্যক্তিত্ব। চলার পথে আমরা যখন কোথাও যাত্রাবিরতি করতাম, তিনি রশি ধরে উটকে বসাতেন। আড়ালে সরে দাঁড়াতেন। দূরত্ব বজায় রেখে কোনও মরুবৃক্ষের ছায়ায় আশ্রয় নিতেন। আবার যখন যাত্রা শুরু করার সময় হতো উট প্রস্তুত করে আমাকে আরোহণ করতে বলে দূরে চলে যেতেন। পথ চলতে চলতে আমরা যখন মদিনা থেকে দুমাইল দূরের কোবাপল্লির কাছাকাছি বনু আমর ইবনে আউফের বসতিতে পৌঁছলাম। তখন তিনি আমাকে বললেন, তোমার স্বামী আবু সালামা এ গ্রামেই আছেন। তুমি আল্লাহর নাম নিয়ে তার কাছে চলে যাও।

এভাবে তিনি আমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই তবে মক্কায় ফিরে যান।

অবশেষে স্বামীর সাথে দেখা হলো উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহার। উম্মে সালামার জীবনের সবচেয়ে যন্ত্রণাময় দিনগুলোর অবসান হলো। স্বামীকে দেখে তার দুচোখ জুড়োলো। হৃদয় জুড়ে বইছে শান্ত,শীতল অসীম আনন্দের হাওয়া।

উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহার তারপরের দিনগুলো খুবই সুখে কাটছিলো। দারুণ নিশ্চিন্তের এক জীবন শুরু হলো তার। মদিনার মুহাজির পল্লিতে স্বামী,সন্তানকে নিয়ে সুখে ঘর করতে লাগলেন। ইসলাম পালনেও কোন বাধাপ্রাপ্ত হন না তারা। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের ছায়ায় তাদের দিন হয়ে উঠছিলো বসন্তের নতুন পাতার মতোই সুকোমল। অতীতের কথা ভুলে গিয়ে নতুন এক জীবন শুরু করেছেন সালামা দম্পতি। ভেবে ভেবে তার হৃদয় কেবলই আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠে। নবীজির পাঠশালায় নিত্যনতুন জ্ঞানে দিনদিন ঋদ্ধ হয়ে উঠছেন তারা। বাস্তব জীবন যেমন হয়ে উঠেছে সুখের তেমনি কল্পনার নানারঙে রঙিন হয়ে উঠে তার মনের আকাশ। পরকালের জীবন কেমন হবে? নবীজির মুখ থেকে শুনে শুনে সে সুখের জীবনের আশা করেন উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা। জান্নাতেও আবু সালামাকেই পেতে চান তিনি।

তার প্রিয়তম, প্রেমাস্পদ, হৃদয়ের বাদশাহ হিসেবে। কথাচ্ছলে একদিন মনের এ ইচ্ছাটুকু জানালেন আবু সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে। বললেন, আমি শুনেছি, যদি কোনো মহিলার স্বামী মৃত্যুর পরে জান্নাতে যায় আর তার স্ত্রী দ্বিতীয় বিয়ে না করে তাহলে আল্লাহ সে স্ত্রীকে স্বামীর সাথে জান্নাতে একত্রিত করবেন। ঠিক একই ব্যাপার স্বামীর ক্ষেত্রেও। তাই চলুন, আমরা ওয়াদা করি, আপনি আমার অবর্তমানে আর বিয়ে করবেন না। আমিও আপনার অবর্তমানে আর বিয়ে করবো না। আবু সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহু স্ত্রীর এমন ভালোবাসায় অভিভূত হয়ে গেলেন। মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলেন স্ত্রীর দিকে। তারপর বললেন, আমি একটা কথা বলবো, তুমি কি তা মানবে? উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, আপনার কথা মানা ছাড়া আর আনন্দ কোথায় আছে? আবু সালামা এগিয়ে এসে প্রিয়তমার কাছ ঘেঁষে বসলেন। তারপর ধীরে ধীরে বললেন, আমি যদি তোমার আগে মারা যাই,তো তুমি আবার বিয়ে করে নেবে। কথা শেষে আবু সালামা দোয়া করলেন, হে আল্লাহ! আমার পরে উম্মে সালামাকে আমার চেয়ে উত্তম সঙ্গী মিলিয়ে দিও। যে তাকে কখনোই কষ্ট দিবে না, সবসময় সুখে রাখবে। উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা দোয়া শুনে একপ্রকার হয়রান হয়ে গেলেন যেন। হায়! এ কী দোয়া করলেন তিনি! আবু সালামার চেয়ে উত্তম সঙ্গী কোথায় পাবো আমি? কে আমাকে আর তার মতো করে ভালোবাসবে?

তার বছরখানেক পরে বেজে উঠে বদর যুদ্ধের দামামা। বদরী কাফেলায় শরীক হলেন আবু সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহুও। বদর যুদ্ধের দেড় বছর পরে ডাক এলো উহুদের ময়দানে যাবার। আবু সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহু যথারীতি ছুটে গেলেন সে ডাকে সাড়া দিয়ে। এ যুদ্ধে এক শত্রুর ছুঁড়ে দেওয়া তীরের আঘাতে আহত হলেন তিনি। এ আঘাত ভালো করে সেরে উঠার আগেই কাতানে যুদ্ধাভিযানের ডাক আসে। আবু সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহু সেখানেও যান। এবং পূর্বের জায়গায় আবার আঘাতপ্রাপ্ত হলেন। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। প্রায় ২৯ দিনের দীর্ঘ অভিযান শেষে আবু সালামা মদিনায় ফিরে আসেন। ক্ষতস্থানে ততদিন পচন ধরে গেছে। কিছুদিন শয্যাশায়ী থেকে চতুর্থ হিজরীর ৯ই জমাদিউল আখিরায় আল্লাহর ডাকে সাড়া দেন।

উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা এসেছেন নবীজির দরবারে। কাঁদছেন অঝোরে। তার প্রিয়তমকে হারিয়ে শোকে পাগলপারা তিনি। নবীজিকে স্বামীর মৃত্যুসংবাদ জানাতে এসেছেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম আবু সালামার মৃত্যুতে খুবই মর্মাহত হলেন। নবীজি তার এক পুরনো সঙ্গীকে হারিয়ে শোকে মুষড়ে পড়লেন যেন। নিজে তার জানাযা পড়ালেন।

জানাযায় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম চার তাকবিরের জায়গায় নয়টি তাকবির দিলেন। নামাজ শেষে সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি যে চার তাকবিরের জায়গায় নয়টি তাকবির দিলেন? নবীজি সাহাবিদের বললেন, আবু সালামা এমন এক ব্যক্তি ছিলেন, যার জন্য হাজার তাকবিরও যথেষ্ট নয়।

আবু সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহু তার স্ত্রী উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় রেখে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। তার মৃত্যুর কিছুদিন পরে তার এক কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা তার নাম রাখেন যয়নব। যয়নবের বড় আরও ভাইবোন আছে। সালামা, উমর, দুররা তাদের নাম। সদ্য বিধবা হওয়া একজন মহিলার জন্য চারটি এতিম সন্তান নিয়ে মদিনায় একা বসবাস করাটা যে কষ্টকর তা সাহাবায়ে কেরাম ও নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের নজর এড়ালো না। তারা সবাই মনে মনে তার জন্য কিছু একটা করা দরকার ভাবতে লাগলেন। এই ভাবনা থেকেই আবু বকর, উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুম তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন। তিনি তাদের না করে দিলেন। কারণ তখনো তিনি স্বামীর শোক কাটিয়ে বিয়ের জন্য প্রস্তুত হয়ে উঠতে পারেননি। আবু সালামার পরে আর কাকে তার চেয়ে উত্তম জেনে সঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করতে পারবেন তিনি? তারপর এলো আবু সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহুর দোয়ার সেই কাঙ্খিত শ্রেষ্ঠ পুরুষ। প্রস্তাবটা এলো উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহার পুত্র উমরের মাধ্যমেই। এই প্রস্তাব দিলেন স্বয়ং নবীজি নিজে। তার চেয়ে উত্তম পুরুষ এই দুনিয়ার বুকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। উম্মে সালামা এই প্রস্তাব পাওয়ার পর বুঝলেন, তাহলে স্বয়ং নবীজিই ছিলেন আবু সালামার সেই দোয়ার ফসল! নবীজির প্রস্তাব এতো উত্তম প্রস্তাব! এতো ফিরিয়ে দেওয়ার নয়।

কিন্তু তার প্রচণ্ড আত্মমর্যাদাবোধ তার মনে বেশকিছু ব্যাপার সংশয়ের সৃষ্টি করলো। একে তো তার বয়সের সূর্য এখন মধ্যআকাশে। নবীজির রয়েছেন কুমারী ও কমবয়সী আরও স্ত্রী। তাদের কারণে তার মর্যাদা খাটো করে দেখা হতে পারে। তার উপর পূর্বের স্বামী আবু সালামার ঘরের চার সন্তানও তার সাথে। সবমিলিয়ে তিনি দ্বিধাবোধ করছিলেন। নবীজিকে এসব জানালে নবীজি একে একে সবগুলো অসুবিধা খণ্ডন করলেন। বললেন, আমি দোয়া করবো আল্লাহ তোমার আত্মমর্যাদাবোধের প্রখরতা কমিয়ে দিন। আর তোমার বয়স বেশি, আমিও তো বয়স্ক। আর বাকি রইলো তোমার সন্তানের ব্যাপারটা। আমারও সন্তান আছে। তাদের সাথে তোমার সন্তানদের দেখাশোনাও আমিই করবো। এরপর আসলে আর কিছু বলার থাকে না। তাই বুদ্ধিমতী উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা আর কিছু বললেনও না। তিনি সম্মতি জানালেন।

বিয়ের আয়োজন করা শুরু হলো। অবশ্য খুব যে জমজমাট আয়োজন তা নয়। সাদামাটা আয়োজন যেমন হয় তেমনই। সামান্য কিছু খাবার আর কয়েকজন কাছের মানুষদের নিয়ে বিয়ে সম্পন্ন হলো। উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহার মাথায় উম্মুল মুমিনিনের মুকুট উঠলো। তখন চতুর্থ হিজরীর শাওয়াল মাস শেষ হতে আর কয়েকদিন বাকি।

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার ভীষণ মন খারাপ। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম আবার বিয়ে করে নতুন বঁধূয়া তুলেছেন হুজরায়। কারণ তার প্রিয়তমকে তিনি কারোর সাথে ভাগাভাগি করতে রাজি নন। তার উপর শুনেছেন সেই বধূ নাকি আবার খুবই সুন্দরী। ভেতরে ভেতরে চিন্তায় পড়ে গেলেন। অস্থির হয়ে গেলেন বেশ। হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহার সাথে ব্যাপারটা শেয়ার করলেন। হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহা তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, আপনি যেমন শুনেছেন আসলে তিনি তেমন সুন্দরী না। পরে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা কৌতূহল চেপে রাখতে না পেরে গেলেন উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে দেখতে। দেখার পরে বুঝলেন হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহা তাকে কেবল সান্ত্বনা দিয়েছিলেন।

উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা ছিলেন ভীষণই লাজুক প্রকৃতির। লজ্জার কারণে বিয়ের পরেও নবীজীর সাথে তিনি স্বাভাবিক হতে পারছিলেন না। নবীজি রাতের বেলা যখন তার ঘরে এলেন তখন তিনি তার শিশুকন্যা যয়নবকে দুধ পান করানো শুরু করে দিলেন। নবীজি নিজেও তো লজ্জাশীল। তার এ অবস্থা দেখে নবীজি হালকা আলাপ সেরে ফিরে গেলেন। পরপর তিনরাত একই কাণ্ড ঘটলো। উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহার দুধভাই আম্মার বিন ইয়াসির এই ঘটনা শুনে বললেন, আরে এই নারী তো দেখছি নবীজিকে তার অধিকার থেকে বাধাগ্রস্ত করছে। এই বলে যয়নবকে তিনি নিয়ে গেলেন। পরে ধীরে ধীরে নবীজির সাথে তার লজ্জার ভাব কেটে যায় এবং তিনি স্বাভাবিক হয়ে যান।

উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা তার তাৎক্ষণিক বুদ্ধিমত্তা, বিচক্ষণতা আর জ্ঞানের জন্য মশহুর ছিলেন।

হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় চুক্তি সই হয়ে গেলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম যখন সাহাবীদের বললেন, ওঠো এবং নিজ নিজ পশু কুরবানি করো। সাহাবায়ে কেরাম সন্ধির ব্যাপারটা নিয়ে তখন এতটাই শোকার্ত ও বিষণ্ণ ছিলেন যে, নবীজী তিনবার এই আদেশ দেওয়ার পরেও কেউ উঠলেন না। নবীজি নিজের তাঁবুতে গেলেন। সে সফরে নবীজির সাথে উম্মুল মুমিনিন উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা। নবীজি তাকে বিষয়টি বললেন। বুদ্ধিমতী উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা নবীজিকে চমৎকার পরামর্শ দিলেন। তিনি বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি কাউকে কিছু না বলে আপনার হাদির পশু জবাই করুন। এবং আপনার মাথা মুণ্ডন করে নিন।

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম তা-ই করলেন। সাহাবায়ে কেরাম এ দৃশ্য দেখে নবীজির অনুসরণ করলেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম মাথা মুণ্ডনকারীদের জন্য তিনবার ও চুল ছোটকারীদের জন্য তিনবার মাগফিরাতের দোয়া করলেন। হুদায়বিয়ার এ সময়ের তাৎক্ষনিক বুদ্ধিমত্তামূলক পরামর্শ তাকে অবিস্মরণীয় করে রেখেছে।

তার এ উপস্থিত বুদ্ধির বিচক্ষণতার কারণে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম তাকে অনেক যুদ্ধাভিযানে সাথে রাখতেন। হুদায়বিয়া, খায়বার, মক্কা বিজয়, হাওয়াজিন, সাকিফ, তায়েফ ও বিদায় হজের সফরে নবীজির সঙ্গে ছিলেন।

উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা প্রচণ্ড আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন হওয়ার পাশাপাশি মত প্রকাশে ছিলেন স্বাধীনচেতা। ৯ম হিজরী সনে ঈলা ও তাখঈরের ঘটনার সময় আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ও উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু নিজ নিজ মেয়েদের তারা শাসন করছিলেন। এসময় উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহার সাথে এ ব্যাপারে কথা বলতে এলে উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলে উঠলেন, ইবনে খাত্তাব! এতো আশ্চর্যের ব্যাপার! এমনকি আপনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ও তার স্ত্রীদের ব্যক্তিগত ব্যাপারেও নাক গলাতে এসেছেন?

উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তার এ কথা শুনে আর কিছু বললেন না। নীরবে বাড়ি ফিরে গেলেন। পরদিন উমর রাদিআল্লাহু আনহু নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামকে এ কথা জানালে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম মৃদু করে হেসে দেন।

উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা ছিলেন বিদ্বান ও বিদ্যোৎসাহী। ছিলেন হাদিস শাস্ত্রের ধ্রুবতারা। সাহাবি ও তাবেয়িদের বড় একটি দল তার থেকে জ্ঞানার্জন করেছেন। মতবিরোধ চলছিল, সমাধান হচ্ছিলো না এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ মাসআলায় তার শরণাপন্ন হয়েছেন। তিনি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম থেকে অনেক হাদিস বর্ণনা করেছেন। তার বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা ৩৭৮। বুখারি ও মুসলিমে রয়েছে ২৯টি।

হাদিস ছাড়াও তিনি তফসির, ফিকহ, বংশবিদ্যা ও সামাজিক রীতিনীতি বিষয়ে অগাধ জ্ঞান রাখতেন। কবিতা আর সাহিত্য তো ছিল তার নিয়মিত চর্চার বিষয়। তিনি যেহেতু অনেক বিচক্ষণ ও জ্ঞানী ছিলেন, এজন্য নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের-অন্য স্ত্রীরাও তাকে আলাদাভাবে সমীহ করতেন।

হাফসা ও আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহার খর্বাকৃতি ও পোশাক নিয়ে কৌতুক করলে তার নিন্দায় সুরা হুজুরাতের ১১ নম্বর আয়াত নাজিল হয়। উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা আরও কয়েকটি নাজিলের প্রেক্ষাপট। সুরা আলে ইমরানের ১৯৫ নম্বর আয়াতের শানে নুজুলে এসেছে। একদিন তিনি নবীজিকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর নবী! হিজরতের ব্যাপারে শুধু পুরুষের নাম নেওয়া হয়েছে, নারীদের ব্যাপারে কোনো ইঙ্গিতও করা হয়নি! এর উত্তরে আল্লাহ তায়ালা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের উপর উল্লেখিত আয়াত নাজিল করেন।

একদিন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহার ঘরে ছিলেন। এমন সময় সাহাবি দাহিয়্যাতুল কালবি এলেন নবীজির সাথে কথা বলতে। তাকে দেখে উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা অন্যদিকে সরে গেলেন। দীর্ঘক্ষণ তারা কথা বলার পর দাহিয়্যাতুল কালবি চলে গেলেন। নবীজি উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞেস করলেন বলো সে কে ছিল? উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, কেন? সে তো দাহিয়্যা কালবি ছিল। নবীজি মুচকি হেসে মসজিদে নববিতে চলে গেলেন। সেখানে মিম্বারে বসে সেসব কথাই বলতে লাগলেন যেগুলো ঘরে বসে দাহিয়্যাতুল কালবির সাথে বলেছিলেন। মসজিদে নববির লাগোয়া ঘর থেকে উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা তা শুনে বুঝতে পারলেন দাহিয়্যা কালবি নয়, আগন্তুক আসলে জিবরাইল আলায়হিস সালাম ছিলেন।

জ্ঞানের আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্র উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা নবীসেবায়ও অনন্য উপমা ছিলেন। জান-প্রাণ দিয়ে খেদমত করেছেন প্রিয় নবীর। যেদিন তার পালা থাকতো সেদিন তিনি ঘরদোর পরিচ্ছন্ন করে রাখতেন। নবীজির পছন্দের খাবার রান্না করতেন। নবীজি আসরের পর পালাক্রমে সব স্ত্রীর কাছে যেতেন। শুরুটা করতেন উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে দিয়ে। কারণ তিনি বয়সে স্ত্রীদের সবার বড় ছিলেন। আর শেষ করতেন দিয়ে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে দিয়ে। কারণ তিনি সবার ছোট ছিলেন।

ক্রীতদাসী সাফিনাকে নবীজির খেদমতের শর্তে স্বাধীন করে দিয়েছেন। সাফিনা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, মুক্তিতে উম্মে সালামা শর্তারোপ না করলেও আমি মৃত্যু পর্যন্ত নবীজির সঙ্গ ত্যাগ করতাম না। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম যখন মৃত্যুশয্যায় ছিলেন, তখন তার পরামর্শেই নবীজির জীবনের শেষ দিনগুলো আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার ঘরে কাটানোর ব্যবস্থা করা হয়। নবীজির জীবনের শেষ মুহূর্তেও আত্মত্যাগ,বিচক্ষণতা, ভালোবাসার মাধ্যমে তিনি নবীজির মনোরঞ্জন করেছেন।

৬৩ হিজরি সন। বার্ধক্য দেখা দিয়েছে উম্মুল মুমিনিন উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহার জীবনে। বুঝতে পারছেন তার জীবনাবসানের সময় ঘনিয়ে এসেছে। তাই ঘরের লোকজনের কাছে অসিয়ত করলেন আমার মৃত্যুর পর আমার জানাযার নামাজ যেন সাঈদ ইবনে যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু পড়ান। কারণ তিনি ছিলেন আশারায়ে মুববাশশারার একজন। কিন্তু তার ইচ্ছা পূরণ হলো না। সাঈদ ইবনে যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু তার আগেই মৃত্যুবরণ করেন। তারপর আর কারোর নাম তিনি বলেননি। বলেছেন কেবল গভর্নর ওলিদ ইবনে ওতবা যেন তার জানাযা না পড়ান। কারণ শাসকদের তাকওয়ার ব্যাপারে তার মনে রয়েছে যথেষ্ট সন্দেহ। তার এ অসিয়ত পালন করা হয়। ৮৪ বছর বয়সে সকলকে শোকের অথৈ সাগরে ভাসিয়ে এ জ্ঞানী নারী তার প্রিয়তমের সান্নিধ্যে চলে যাবার পর তার জানাযা পড়ান বিখ্যাত সাহাবি হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের কন্যা ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহার কবরের কাছে মুহাম্মদ ইবনে যায়েদ ইবনে আলীর কবরের পাশে নববী বাগানের অন্যতম এ প্রদীপকে সমাহিত করা হয়।

তথ্যসহায়িকা:

১.সিয়ারু আলামিন নুবালা।
২.মুসনাদে আহমাদ।
৩.তাবাকাতে ইবনে সাদ।
৪.আত-তাবাকাতুল কুবরা।
৫.সীরাতে ইবনে হিশাম।

আগের সংবাদদখল
পরবর্তি সংবাদআশ্রয়