বেফাকের নতুন মহাপরিচালক: মাওলানা নদভীর ১০ কর্মপরিকল্পনা

রাকিবুল হাসান নাঈম:

বেফাককে শুধু পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান নয়, বরং আদর্শ শিক্ষাবোর্ড হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন দেশের সর্ববৃহৎ কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সদ্যনিযুক্ত মহাপরিচালক মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী। ফাতেহের সঙ্গে আলাপে তিনি এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন । তিনি আগামী ১ রবিউস সানি থেকে বেফাকের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। দায়িত্ব গ্রহণের পর কী হবে তার কর্মপরিকল্পনা, তাও তুলে ধরেন ফাতেহের কাছে।

রবিবার (১৬ অক্টোবর) রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী ভাঙ্গাপ্রেসস্থ বেফাকের কার্যালয়ে বেফাকের খাস কমিটির বৈঠকে মহাপরিচালক হিসেবে তার নিয়োগের ব্যাপারটি চূড়ান্ত হয়। বেফাকের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাওলানা মাহমুদুল হাসানের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, বেফাকের সহ সভাপতি আল্লামা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, মুফতী ফয়জুল্লাহ, হাফেজ মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন আহমদ গহরপুরী প্রমুখ। এর আগে ২০২০ সালের ২৩ নভেম্বর (সোমবার) বেফাক অফিসের কার্যদিবসে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন বেফাকের মহাপরিচালক অধ্যাপক মাওলানা জোবায়ের আহমদ চৌধুরী। তার পদত্যাগের পর বেফাকের সহকারী মহাপরিচালক মাওলানা মুহাম্মদ জোবায়ের অদ্যবধি ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

ছাড়বেন বিভিন্ন পদ

বেফাকের মহাপরিচালকের জন্য বাধ্যতামূলক হলো, তিনি আর কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে পারবেন না। তাই যেসব প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন মাওলানা নদভী, সেখানে তিনি আর চাকরি করবেন না বলে জানিয়েছেন। বলেছেন, তিনি সেসব প্রতিষ্ঠানে সেবা হিসেবে কাজ করে যাবেন।

তিনি ফাতেহকে বলেন, দৈনিক ইনকিলাবে আমি বাইশ বছর ধরে কাজ করছি। আমি সিনিয়র সহকারী সম্পাদক। এখন সেখানে আমার অফিস করতে হয় না। তারা তো আমাকে ছাড়বে না। ফরিদাবাদ মাদরাসায় পড়াই রাতে, সেটা চালু থাকবে। যাত্রাবাড়ি মাদরাসায় পড়াই রাতে, সেটা চালু থাকবে। এসব জায়গায় আমি বেতনভুক্ত শিক্ষক না। দিনে যেখানে সেবা দিতাম, সেটা পারলে রাতে নিয়ে আসব। কারণ বেফাকে এখন আমার প্রচুর সময় দিতে হবে। সবাই আমার উপর ভরসা করে দায়িত্ব দিয়েছেন। তাদের ভরসার কদর করার চেষ্টা করব আমি।

তিনি আরও বলেন, দূর-দূরান্তে অনেক প্রোগ্রাম রয়েছে। সেগুলোও ক্লোজ করে আনছি। আগামী ১ রবিউস সানি থেকে দায়িত্ব গ্রহণ করে নিয়মিত অফিস করব।

১০ কর্মপরিকল্পনা

বেফাককে আমূল ঢেলে সাজাতে চান মাওলানা নদভি। ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা কেমন, কোন কোন বিষয়ে তিনি আগে কাজ করবেন জানতে চাইলে তিনি ফাতেহকে দশটি কর্মপরিকল্পনার কথা জানান। নিচে পরিকল্পনাগুলো তুলে ধরা হলো।

১. প্রথমেই আমি বেফাক অফিসে মুহতামিম হয়রানি বন্ধ করব। দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মাদরাসার মুহতামিম বিভিন্ন কাজে বেফাকে অফিসে এসে ভাল আচরণ পান না বলে অভিযোগ আছে। সেটা আমি দূর করার চেষ্টা করব।

২. মাদরাসার নিবন্ধন করতে এসেও অনেকে হয়রানির শিকার হন। আমি নিবন্ধন হয়রানি বন্ধ করব।

৩. পরীক্ষার প্যাটার্ন আমূল বদলে দিব। কেবল সাজেশন পড়ে কেউ ভালো নম্বর তুলতে পারবে না, এমন।

৪. বেফাকের অধীনে পরীক্ষা দিয়ে যারা ফারেগ হয়েছেন, তাদের নিয়ে গঠন করব একডেমিক ক্লাব। যেন তারা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকে। সবাই এক জায়গায় বসে আলাপ-আলোচনা করতে পারে।

৫. বেফাক অফিসে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ আছে। সেগুলো সঠিক তদন্ত করে নিরসন করব। বেফাক থাকবে স্বচ্ছ।

৬. বেফাক অফিসে মিডিয়া সেল থাকবে। আমাদের যেসব ছেলে মিডিয়ায় কাজ করে, তাদের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। কেউ যদি বেফাক নিয়ে প্রতিবেদন করতে চায়, কিছু লিখতে চায়, সে যেন সব তথ্য সহজেই পায়, তার ব্যবস্থা করা হবে।

৭. প্রকাশনা সেক্টরে যারা কাজ করে, তাদের জন্য একটি কর্ণার করব বেফাক অফিসে।

৮. আমাদের ছেলেরা যারা লেখক, তাদের প্রতিটি বইয়ের তিনটি করে কপি রাখব বেফাকের লাইব্রেরীতে।

৯. আমি বেফাকের জন্য গড়ে তুলতে চাই সর্ববৃহৎ কুতুবখানা। যেখানে আমাদের গবেষকরা গবেষণা করতে পারবেন।

১০. বেফাক অফিসে ইসলাহি প্রোগ্রাম হবে। যেমন, বিভিন্ন আল্লাহওয়ালাদের এনে তাদের নাসিহত শোনা এবং তাদের থেকে পরামর্শ নেয়া।

কর্মপরিকল্পনা ১০০ দিনের

মাওলানা নদভী ফাতেহকে বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমেই আমি বেফাক অফিসের সবাইকে নিয়ে বসব। কার কি অভিযোগ, কোন বিষয়ে আগে কাজ করা দরকার, তাদের পরামর্শ শুনব। অফিসের বাইরে থেকেও যতটুকু সম্ভব অভিযোগ শুনব। অভিযোগগুলো আগে জানতে হবে আমাকে। তারপর কাজ।

সবাই অভিযোগ শোনার কথা বলে। কিন্তু কেউ বাস্তবায়ন করে না। অভিযোগ শোনার সময়টা কতদিন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি ১০০ দিনের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করব। সবাইকে সময় দিব। এই সময়ে সবার অভিযোগ নিরসন করতে বলব। ১০০ দিন পর আমি একশনে যাব। তখনও কোনো কাজ না হলে জবাবদিহি করব।’

আগের সংবাদসংখ্যালঘু ভাবা হিন্দুদের হীনমন্যতা: প্রধান বিচারপতি
পরবর্তি সংবাদএইচএসসি শুরু ৬ নভেম্বর, ৪২ দিন কোচিং সেন্টার বন্ধ