আবদুল্লাহিল বাকি:
১.
বাংলা সাহিত্য ও গদ্যের–অগ্রগতির ক্ষেত্রে সাময়িক পত্রের অবদান অনস্বীকার্য। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, উনিশ শতকের আগে মূলত পদ্যই একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে চলেছিল। মিশনারীদের ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে এবং ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের বিদেশি ছাত্রদের পাঠ্যপুস্তক রচনার প্রয়োজনে বাংলা গদ্যের আনুষ্ঠানিক যাত্রারম্ভ হয়।
উনবিংশ শতকের বাংলা গদ্যের প্রারম্ভিক ইতিহাস অনুসন্ধান করলে দেখা যায় যে, শ্রীরামপুরের মিশনারীদের ধর্মপ্রচারের জন্য রচিত গদ্য বা ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের শিক্ষকদের রচিত পাঠ্যপুস্তকধর্মী রচনার গদ্য ছিল মূলত বিশেষ এক শ্রেণীর পাঠকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বাংলা গদ্যের শ্রীবৃদ্ধিতে বা অগ্রযাত্রায় এ রচনাগুলো বিশেষ সহায়তা করতে পারেনি। ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে বাংলা সাময়িক পত্রের প্রথম আত্মপ্রকাশের মধ্য দিয়ে যথার্থ অর্থে বাংলা গদ্য সর্বসাধারণের দৃষ্টিগোচর হয়। সংবাদ থেকে জ্ঞান ও সংস্কৃতির পরিবেশক এই সকল পত্র-পত্রিকাগুলিতে ধর্ম-বিচার, শিক্ষা-নিবন্ধ, নকশাধর্মী রচনা প্রকাশিত হতে হতে কালক্রমে সেই পথেই একসময় ভাষার এই বিশিষ্ট মাধ্যমটি কথাগদ্য ধারণের উপযুক্ত হয়ে ওঠে।
১৮১৮ খ্রীষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে ‘দিগ্দর্শন’ নামে বাংলা অক্ষরে মুদ্রিত বাংলা ভাষায় প্রথম মাসিক পত্রিকা শ্রীরামপুর ব্যাপ্টিস্ট মিশন থেকে জন ক্লার্ক মার্শম্যানের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়। এর ঠিক পরে ঐ বছরেই ২৩ মে মার্শম্যানেরই সম্পাদনায় মিশন থেকে প্রকাশ লাভ করে বাংলা ভাষার প্রথম সংবাদপত্র (সাপ্তাহিক) ‘সমাচার দর্পণ’। ১৮১৮-এর জুন মাসেই বের হয় গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের প্রকাশনায় বাঙালি পরিচালিত প্রথম বাংলা সাপ্তাহিক সংবাদপত্র ‘বাঙ্গাল গেজেটি’।
যে পরিবেশে বাংলা সাময়িকপত্রের সূচনা হয়, তাতে এসব পত্রিকায় ইংরেজ কোম্পানির সমালোচনা আশা করা যেত না। তাছাড়া এসব পত্রিকা প্রকাশের উদ্দেশ্যও ছিল স্বতন্ত্র।
সাময়িকপত্রগুলো প্রথমে ছিল সংবাদাশ্রিত। ধর্ম ও সমাজ-প্রসঙ্গ ছিল তার সহচর। যদিও পরে এ প্রসঙ্গকে প্রাধান্য দিয়ে অনেক পত্রিকা প্রকাশ লাভ করে। পরবর্তীতে দেখা দেয়, সাময়িক পত্রে সাহিত্য সৃষ্টির প্রয়াস এবং শুদ্ধ সাহিত্যপত্রিকা প্রকাশের আয়োজন। ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্বন্ধে সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা দেখা যায় বেশ আগে থেকেই, পরে দেখা দেয় রাজনৈতিক চেতনাবিকাশের উদ্যোগ।
‘সমাচার দর্পণে’র একটি অঘোষিত উদ্দেশ্য ছিল, খ্রিস্টধর্মের প্রচার। ফলে অনিবার্যভাবে হিন্দু ও মুসলমানের ধর্ম সম্পর্কে কিছু নিন্দার কথাও তারা পত্রস্থ করত। রাজা রামমোহন রায় (১৭৭৪–১৮৩৩) ইংরেজি বাংলা দ্বিভাষিক পত্র `Brahmunical magazine’ বা ব্রাহ্মণ সেবধি’ (সেপ্টেম্বর ১৮২১) প্রকাশ করে হিন্দুধর্ম ও ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে পাদ্রীদের আক্রমণের নিন্দা করেন।
মুসলিম-সম্পাদিত বাংলা সাময়িকপত্র বললে, ‘সমাচার সভারাজেন্দ্রে’র সম্পূর্ণ পরিচয় দেয়া হয় না। বলা উচিত, পত্রিকাটি ছিল বাংলা ফার্সি দ্বিভাষিক পত্রিকা। মুসলিম সম্পাদিত ফার্সি পত্রিকার আবির্ভাব তখন প্রথম ঘটে। এর আগে যেসব ফার্সি পত্রিকা বাংলাদেশ থেকে প্রকাশ পায়— রামমোহন রায়ের ‘মীরাৎ-উল-আখবার’ (এপ্রিল ১৮২২), মণিরাম ঠাকুরের ‘শামস-উল-আখবার’ (মে ১৮২৩), এবং শ্রীরামপুর মিশনের ‘আখবারে শ্রীরামপুর’ (মার্চ ১৮২৬)। ‘সমাচার সভারাজেন্দ্রে’র মুসলিম সম্পাদক শুধু বাংলা পত্রিকা প্রকাশ করেই ক্ষ্যান্ত থাকলেন না, ফার্সি পত্রিকার অভাবও দুর করতে চাইলেন। তবে এই অভাববোধও তাৎপর্যহীন নয়। কারণ, ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে ফার্সি রাজ ভাষার মর্যাদায় আসীন ছিল। শিক্ষিত ও অভিজাত মুসলমান তখনও এই ভাষাকে তার নিজস্ব সংস্কৃতির বাহন মনে করতেন।
বাংলাদেশের কিংবা ভারতবর্ষের বাইরে যে মুসলিম জগত, তা সবসময়ই তখনকার লেখকদেরকে গভীরভাবে আকর্ষণ করেছে। দীর্ঘকাল স্বদেশের তুলনায় তাদের মাঝে বহির্ভারতীয় মুসলমান ও তাদের সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে বেশি— চীনের, রাশিয়ার বা তিব্বতের। ইতিহাস আলোচনায় এই মানসিকতার প্রকাশ ঘটেছে সর্বাধিক।
সাময়িক পত্রের পাতা উল্টালে দেখা যেত— আরবভূমির চেয়ে তুরস্কের আলোচনা অধিক দখল করে আছে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা। ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে রাশিয়া যখন তুরস্ক আক্রমণ করে, তখন তুরস্কের বিপদকে বাঙালি মুসলমান নিজের বিপদ বলেই মনে করেছিল। যুদ্ধ শুরু হবার অল্পকালের মধ্যেই প্রকাশিত হয়– ‘মোহাম্মদী আখবার’। এই পত্রিকার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল উর্দু ও বাংলা ভাষাভাষী সাধারণ মুসলমানগণের নিকট রুশ–তুরস্ক যুদ্ধের বিস্তারিত খবর প্রচার। প্রথমে এটি ছিল অর্ধ-সাপ্তাহিক। যুদ্ধ শেষ হবার অল্পকাল পরে তা সাপ্তাহিকে পরিণত হয়, প্রয়োজন স্তিমিত হবার কারণে।
তখন উসমানী খেলাফতের পাশে দাঁড়ানোর অভিপ্রায়ে অর্থসাহায্য করেছিলেন মুসলমানরা। ভূপালের বেগম পাঠিয়েছিলেন দু লক্ষ টাকা। ঢাকার নবাবেরা পাঠান বিশ হাজার টাকা। নওয়াব আব্দুল লতিফের উদ্যোগে প্রেরিত হয় দশ হাজার টাকা। এবং নবাব আমির আলী খানের চেষ্টায় দশ সহস্রাধিক টাকা। তাছাড়া, নাখোদা মসজিদে চাঁদা সংগ্রহের সিন্দুক স্থাপন করে সকল মুসলমানকে মুক্তহস্তে দান করতে অনুরোধ জানানো হয়।
রুশ-তুরস্ক যুদ্ধ বাঙালি মুসলমান লেখকদের মনে কতটা রেখাপাত করেছিল, তার পরিচয় পরবর্তীকালে পাওয়া যায়। প্লেভনা-বীর ওসমান পাশার মৃত্যু হলে ‘কোহিনুরে’ তার বীরত্ব সম্পর্কে প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়, ‘প্রচারকে’ বের হয় প্রবন্ধ কবিতা এবং ‘ইসলাম প্রচারক’ সে সম্পর্কে লেখে সম্পাদকীয়, আলোচনা ও কবিতা।
উনিশ শতকের শেষদিকে তুরস্কের সুলতান দামেস্ক থেকে হেজাজ পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা করে সারা পৃথিবীর মুসলমানের সাহায্য ও সহানুভূতি প্রার্থনা করেন। এই রেলপথের জন্য অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে কলকাতায় ‘হেজাজ ফান্ড কমিটি’ গঠিত হয়। এই চাঁদা সংগ্রহের বিষয়ে ‘ইসলাম প্রচারক’ বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিল। প্রতিমাসেই পত্রিকার সাথে সম্পর্কিত ব্যক্তিগণ এ নিয়ে আবেদন প্রকাশ করতেন এবং সংগৃহীত চাঁদার হিসাব পত্রস্থ করতেন।
বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে সুলতান আব্দুল হামিদ ক্ষমতাচ্যুত হওয়া সত্ত্বেও তুরস্কের প্রতি বাঙালি মুসলমানের মনোভাব পরিবর্তন হয়নি। কারণ, তাঁদের সে অনুরাগ সাময়িক ছিল না; ছিল স্থায়ী বন্ধনের দ্যোতক। বলকান যুদ্ধের সময় ডক্টর আনসারীর নেতৃত্বাধীন মেডিক্যাল মিশনের সদস্যরূপে সাহিত্যিক ইসমাইল হোসেন সিরাজী তুরস্কে যান তুর্কিদের সাহায্য করতে, এবং ফিরে এসে তুর্কিদের নিয়ে একাধিক গ্রন্থ রচনা করেন।
প্রথম মহাযুদ্ধে জার্মানির পক্ষে তুরস্ক যোগ দিলে এই দেশের মুসলমানদের মনে ইংরেজবিরোধী মনোভাব বহুলাংশে প্রবল হয়ে উঠে। যুদ্ধশেষে তুরস্কের ভাগ্যনির্ণয়ে মিত্রপক্ষের কঠোরতার প্রতিবাদে জন্ম নেয় খেলাফত আন্দোলন।
কামাল পাশা তুরস্কের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয়ে খেলাফত রহিত করে দেয়। যে খেলাফত রক্ষার জন্য এত আন্দোলন, এত আবেদন, তার আর কিছুই অবশিষ্ট রইল না। তুরস্ককে নতুন ছাঁচে ঢেলে সাজালেন কামাল। তার এই সমস্ত কাজকর্মের কলুষতা নিয়ে কথা বলতেন একদল লেখক। ‘মোহাম্মদী’ ছিল তাদের মুখপত্রস্থানীয়।
যে মনোভাব থেকে মুসলমান লেখকদের মধ্যে দেখা দিয়েছিল তুরস্ক-প্রীতি, সেই মনোভাব কার্যকর হয়েছিল ইতিহাস ও সাহিত্যের চর্চায়। যে ইতিহাস ক্ষেত্রে বাঙালি মুসলমান নিজের ঐতিহ্য সন্ধান করেছিলেন, সে ইতিহাস ইসলামের ইতিহাস অর্থাৎ মুসলিম শাসনাধীন দেশসমূহের ইতিহাস। পরাধীনতার শৃংখলে নিজেরা জড়িত থেকেও তারা পুরাকালের মুসলমানের দেশবিজয়ের স্মৃতিচর্চা করেছেন অসাধারণ আবেগময়তার সঙ্গে।
তখন চারপাশের হিন্দু সমাজের বৈরী আচরণ ও উচ্চারণের কারণে মুসলিম সমাজে একটা ব্যাপক মানসিক যন্ত্রণার জন্ম নিয়েছিল। এই যন্ত্রণাকে ত্বরান্বিত করত হিন্দু সমাজের মধ্যকার চরম প্রতিহিংসাপরায়ণতা বা শোষণের তৃষ্ণা। সেইসব যন্ত্রণার কথা লিপিবদ্ধ হয়েছে মুসলিম লেখকদের বিভিন্ন লেখায়। হিন্দু মুসলমানের সম্মিলনকে তখন এর সমাধান হিসেবে দাঁড় করানো হয়। এর পক্ষেও লেখেন অসংখ্য মুসলিম ও হিন্দু লেখক।
তখন বাংলা ভাষার ক্ষেত্রেও মুসলিম লেখকদের চেয়ে হিন্দু লেখক ছিল অধিক। এবং এ নিয়ে মুসলমানদের প্রতি তাদের এক প্রকার সামগ্রিক তাচ্ছিল্য অথবা হেয় করার মানসিকতা প্রকাশ পেয়েছিল। তাই মুসলমানদের মাঝে স্বতন্ত্র সাহিত্য সৃষ্টির প্রয়োজন ও তার প্রয়াস দেখা দিয়েছিল। স্বতন্ত্র বলতে, মুসলিম–জীবন সম্বলিত আখ্যান ও ইসলামসম্মত ভাবধারা প্রকাশক রচনা। স্বাতন্ত্র্যের প্রয়োজন তাদের কাছে সত্য ছিল। জীবনের ধারা একটি চিহ্নিত সম্প্রদায়ের মানুষ হিসেবে তাদেরকে যেভাবে স্পর্শ করেছে, তার প্রতিক্রিয়া জানাবার যথার্থ প্রয়োজন তারা উপলব্ধি করেছিলেন। তাদের ভাবনা— তা ইতিহাস হোক, আন্তর্জাতিক সমস্যা সম্পর্কে হোক, দেশীয় রাজনীতি সম্পর্কে হোক, অর্থনৈতিক জীবন সম্পর্কে হোক, ভাষা ও সাহিত্য সম্পর্কে হোক— তা প্রকাশের একটা মাধ্যম, একটা ক্ষেত্র তারা সন্ধান করেছিলেন। মুসলিম সম্পাদিত সাময়িকপত্রগুলো তাদেরকে সে সুযোগই দিয়েছিল।
সেখানে লিপিবদ্ধ আছে আমাদের সমাজজীবন ও সাহিত্যধারার ইতিহাস।
২
সমাচার সভারাজেন্দ্র (সাপ্তাহিক)
১৮৩১ সালের মার্চ মাসে এটি প্রথম প্রকাশিত হয়, শেখ আলীমুল্লাহর সম্পাদনায় কলকাতার কলিঙ্গা লেন থেকে ফারসি ও বাংলা ভাষায়। পত্রিকাটি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।
পাদ্রী জেমস লঙের একটি তালিকায় সমাচার সভারাজেন্দ্রের সম্পাদক হিসেবে দুর্লভচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের নাম আছে। অধ্যাপক মুস্তাফা নূরউল ইসলাম বলেন, শেখ আলীমুল্লাহ পত্রিকার স্বত্বাধিকারী, মুদ্রাকর ও প্রকাশক ছিলেন। কিন্তু সরকারি নথিপত্র সম্পাদক হিসেবে তার নাম পাওয়া যায় না।
জগদুদ্দীপক ভাস্কর (সাপ্তাহিক)
১৮৪৬ সালের জুন মাসে কলকাতার বৈঠকখানা স্ট্রীট থেকে বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি, ফারসি ও উর্দু ভাষায় এটি প্রথম প্রকাশিত হয়। এর প্রকাশক ছিলেন মৌলভী নাসিরউদ্দিন। আর প্রচারক ছিলেন ফরিদউদ্দিন খাঁ। এটিও খুব একটা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। প্রকাশের দেড় মাস পরই পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়।
আজিজুন নেহার (মাসিক)
১৮৭৪ সালের এপ্রিল মাসে হুগলি কলেজ থেকে মীর মোশাররফ হোসেনের সম্পাদনায় এটি প্রথম প্রকাশিত হয়। কিছু মুসলিম যুবকের উদ্যোগে এর প্রচারকার্য চুঁচুড়া থেকে হয়েছিল।
পারিল বার্তাবহ (পাক্ষিক)
১৮৭৪ সালে আনিসউদ্দিন আহমদের সম্পাদনায় এটি ঢাকার পারিল গ্রাম থেকে প্রকাশিত হত।
মহাম্মদি আখবার (অর্ধ-সাপ্তাহিক)
১৮৭৭ সালের জুন মাসে কাজী আবদুল খালেকের সম্পাদনায় কলকাতার উত্তর শিয়ালদহ অঞ্চল থেকে এটি বাংলা-উর্দু ভাষায় প্রথম প্রকাশিত হয়। ১৮৭৮ সাল পর্যন্ত এটি প্রতি সোমবার ও শুক্রবারের নিয়মিত প্রকাশিত হতো। তারপর তার সাপ্তাহিক আকার ধারণ করে। এর ভাষারীতি অনেকটা পুঁথির মত ছিল।
আখবারে এসলামীয়া (মাসিক)
১৮৮৪ সালে মোহাম্মদ নঈমউদ্দিনের সম্পাদনায় টাঙ্গাইলের মাহমুদিয়া প্রেস থেকে এটি প্রথম প্রকাশিত হয়।
১৮৯৩ সালে পত্রিকাটির প্রচার রহিত হয়। সেটা ছিল দশম বর্ষ। আরো দু’বছর পর- ১৮৯৫ সালে এর একাদশ বর্ষের সংখ্যাগুলো আবার বের হতে শুরু করে।
মুসলমান (সাপ্তাহিক)
১৮৮৪ সালে মোহাম্মদ রেয়াজউদ্দিন আহমদের সম্পাদনায় কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়। এর ১০ থেকে ১২ টি সংখ্যা মাত্র প্রকাশিত হতে পারে।
আহমদী (পাক্ষিক)
১৮৮৬ সালের জুলাই মাসে আব্দুল হামিদ খান ইউসফজয়ীর সম্পাদনায় টাঙ্গাইল থেকে করিমন্নেসা খানমের অর্থায়নে প্রকাশিত হয়। দৃষ্টিভঙ্গিগত কারণে স্থানীয় আখবারে ইসলামিয়ার সাথে এর দ্বন্দ্ব ছিল।
হিন্দু-মোসলমান সম্মিলনী (মাসিক)
১৮৮৭ সালের আগস্ট মাসে এটি মুনশী গোলাম কাদেরের সম্পাদনায় কলকাতার ৮০ ওল্ড বৈঠকখানা বাজার রোড থেকে প্রকাশিত হয়, শাহানশাহ অ্যান্ড কোম্পানির অর্থায়নে। এটি ছিল ৩২ পৃষ্ঠা। দাম দুই আনা। পত্রিকাটি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।
ভারতের ভ্রম নিবারণী ত্রৈমাসিক পত্রিকা (ত্রিমাসিক)
১৮৮৯ সালের ডিসেম্বরে মুহম্মদ আবেদীনের সম্পাদনায় এটি কলকাতার মীরজাফর লেন থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত হয়। এই পত্রিকার প্রথম সংখ্যার সূচনা হয়— “ধর্মের মূলে কুঠারাঘাত করায় ভারতবর্ষ পরাধীন হয়েছে” এই বক্তব্য দিয়ে।
হিতকরী (পাক্ষিক)
১৮৯০ সালের এপ্রিলে মীর মোশাররফ হোসেনের সম্পাদনায় কুষ্টিয়ার লাহিনীপাড়া থেকে প্রকাশিত হয়। এই পত্রিকাটি চিন্তানৈতিকভাবে হিন্দু মুসলমানের মিলনকামী ছিল। এর অধিকাংশ লেখক এবং গ্রাহক মুসলিম ছিল।
পরবর্তী বছর মীর মোশাররফ হোসেনের কর্মস্থল টাঙ্গাইল থেকে কয়েক সংখ্যা প্রকাশিত হবার পর এটি বন্ধ হয়ে যায়। মাঝখানে কিছুদিন মোসলেমউদ্দিন খাঁ এর সম্পাদনাকার্য চালিয়ে নেন।
১৮৯৯ সালে আবার হিতকারী নবপর্যায়ে আত্মপ্রকাশ করে।
ভীষক-দর্পণ (মাসিক)
১৮৯১ সালের জুলাই মাসে এম.জহিরুদ্দীন আহমাদের সম্পাদনায় এ পত্রিকাটি কলকাতার মেছুয়াবাজার স্ট্রীট থেকে শরৎচন্দ্র দেবের অর্থায়নে মুদ্রিত ও প্রকাশিত হয়।
এটি ছিল চিকিৎসাবিষয়ক পত্রিকা। দাম ১২ আনা। কোন কোন সংখ্যায় নারীশিক্ষার পক্ষে সমর্থনমূলক লেখা আছে। লেখকদের মধ্যে ডাক্তার নীলরতন অধিকারী ও ডাক্তার নীলরতন সরকারের নাম উল্লেখযোগ্য।
দশম বর্ষ থেকে এটি কালীমোহন বাগচী ও গিরিশচন্দ্র বাগচীর সম্পাদনায় প্রকাশ পেতে থাকে।
ইসলাম-প্রচারক (মাসিক)
১৮৯১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মোহাম্মদ রেয়াজউদ্দিন আহমেদের সম্পাদনায় এটি কলকাতার গোরস্থান রোড থেকে আব্দুস সামাদ কর্তৃক প্রকাশিত ও মুনীন্দ্রমোহন বসু কর্তৃক মুদ্রিত হয়। দাম দু আনা। এটি ছিল ইসলাম–ধর্মনীতি, সমাজনীতি, ইতিহাস ও সাহিত্য বিষয়ক পত্রিকা।
ইসলাম প্রচারক প্রথম পর্যায়ে কতদিন চলেছিল তা নিশ্চিতভাবে বলা দুষ্কর। ব্রজেন্দ্রনাথের মতে, এটি দুই বছর চলার পর কিছুদিন বন্ধ থাকে। ১৮৯৯ সালে এটি নবপর্যায়ে নিয়মিত প্রকাশিত হতে থাকে।
এটির নবপর্যায়ে প্রকাশিত কিছু লেখা—
জাতীয় উন্নতি বিধানের উপায়: মোহাম্মদ রেয়াজউদ্দিন আহমেদ
দিল্লির কুতুব মিনার: মৌলভী মোখলেছর রহমান চৌধুরী বি, এ,
আল-মামুন: মুন্সি আবদুল আলা
বাইবেল আপনি আপনার বিরুদ্ধে: শেখ জমিরুদ্দিন
এবনে হাজর আস্কোলানী: মৌলভী আলাউদ্দিন আহমদ
লিভারপুলের নবদীক্ষিত মুসলমান: মোহাম্মদ রেয়াজউদ্দিন আহমেদ
প্রভু যীশুখ্রীষ্ট কে?: মুন্সী শেখ জমিরুদ্দীন
বঙ্গ ও বিহার বিজয়: মুন্সি মোহাম্মদ এসমাইল হোসেন
প্যারিসে বিশ্বপ্রদর্শনী: মৌলভী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান
মৌলানা শিবলীর ভ্রমণ বৃত্তান্ত: মোহাম্মদ রেয়াজউদ্দিন আহমেদ
মহাবীর দৌলতুল গাজী ওসমান পাশা: মোহাম্মদ রেয়াজউদ্দিন আহমেদ
তফসির হাক্কানির বঙ্গানুবাদ: মৌলভী আলাউদ্দিন আহমদ
এহইয়া অল অলুমের বঙ্গানুবাদ: কাজী নওয়াজ খোদা
বাইবেলে যুদ্ধ ও জীবহত্যা: মুন্সী শেখ জমিরুদ্দীন
চীনে মুসলমান: মুন্সি এমদাদ আলী খান ও মোহাম্মদ রেয়াজউদ্দিন আহমেদ
দিমাস্ক-হেজাজ রেলওয়ে: মোহাম্মদ রেয়াজউদ্দিন আহমেদ
কনস্টান্টিনোপলে মহামান্য সুলতানের রৌপ্যজুবিলী উৎসব: মোহাম্মদ রেয়াজউদ্দিন আহমেদ
মুসলমান শিক্ষার পূর্ব্বতন নিদর্শন: মৌলভী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান
মালাবারে ইসলাম প্রচার: মহম্মদ ইসমাইল হোসেন সিরাজী
ইসলাম–দর্শন: মৌলভী আলাউদ্দিন আহমদ
তিব্বতের মুসলমান: মোহাম্মদ রেয়াজউদ্দিন আহমেদ
পূর্ব্বস্মৃতি—কুতবুদ্দীন আইবক: মুন্সি মোহাম্মদ নজিবর রহমান
মুসলমান জাতির বর্ত্তমান অবস্থা: মোহাম্মদ এসমাইল হোসেন সিরাজী
আবুল ফজল আল্লামা: মুন্সি শেখ ফজলল করিম
স্বাধীন চিন্তাশীলতা: মুন্সি মোহাম্মদ এসমাইল হোসেন সিরাজী
প্রকৃত বাইবেলের কি অস্তিত্ব আছে: মুন্সী শেখ জমিরুদ্দীন
পারস্য কবিদ্বয়ের (হাফিজ ও সাদী) বিবরণ: মুন্সী শেখ জমিরুদ্দীন
মরতজা–চরিত: মুন্সী আব্দুল লতিফ
সায়ং চিন্তা: মৌলভী নওসের আলী খান ইউসফজী
ইসলামের ভবিষ্যৎ: মোহাম্মদ এসমাইল হোসেন সিরাজী
আর্য্যজাতির ভারতে আগমন: মুন্সি দেরাজউদ্দিন আহমদ
মাতৃভাষা ও জাতীয় উন্নতি: ইসমাইল হোসেন সিরাজী
আলেকজান্দ্রিয়ার পুস্তকাগার: শ্রীনির্ম্মলচন্দ্র ঘোষ
ইসাই ও ইসলাম–শাস্ত্র সংঘর্ষ: মুন্সী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ
মুসলমান বোর্ডিং বা ছাত্রাবাস: ইবনে মাআজ
বাঙালি জাতি ও শিবাজী: মৌলভী ওসমান আলী বি, এল
যীশু খ্রীষ্টের জীবনী সমালোচনা: মুন্সী শেখ ফজলল করিম
ইতিহাস ক্ষেত্রে মুসলমান: মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী
যোগ-কালন্দর: আব্দুল করিম সাহিত্যবিশারদ
টমাস কার্লাইল ও ইসলাম: শেখ জমিরুদ্দিন
সম্রাট আওরঙ্গজেব ও সত্নারামী বিদ্রোহ: ওসমান আলী বি, এল
খলিফাদিগের ইতিহাস: মৌলভী আলাউদ্দিন আহমদ
তুরস্ক ইংলণ্ড ও রুশিয়া: মোহাম্মদ রেয়াজউদ্দিন আহমেদ
মুসলমান সমাজে স্ত্রীজাতির প্রতি ভীষণ অত্যাচার: শেখ জমিরুদ্দীন
প্রাথমিক মুসলমানদের জ্ঞানচর্চা ও মুসলমান সুধিমন্ডলী: সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী
ইসলাম ও মিশন: মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী
জেহাদের নামে প্রতারণা: বশিরুদ্দিন আহমদ
সিসিলি দ্বীপে মুসলমানদিগের জ্ঞানচর্চা ও সুধিমন্ডলী: এসমাইল হোসেন সিরাজী
মুসলমান জাতি ও হিন্দু লেখক: সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী
মহর্ষি হযরত ইমাম রব্বানি মোজাদ্দাদে আলফ সানী: শেখ ফজলল করিম
হযরত মোহাম্মদের নবুয়ত সম্বন্ধে বাইবেলের সাক্ষ্য: মুন্সী শেখ জমিরুদ্দীন
‘তসওফ’ এবং Theosophy (ঐশিক জ্ঞান): শ্রীতঃ
নব্যভারতে চেহলম: মোহাম্মদ এবরার আনসারী
বঙ্গবিভাগ ও স্বদেশী আন্দোলন: ইবনে মাআজ
মিহির (মাসিক)
১৮৯২ সালের জানুয়ারিতে শেখ আব্দুর রহিমের সম্পাদনায় কলকাতার সিতারাম ঘোষ স্ট্রীট থেকে প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটির প্রকাশ নিয়মিত ছিল না। এটির বিশেষত্ব ছিল ভাষার লালিত্য ও প্রাঞ্জলতার ক্ষেত্রে।
হাফেজ (পাক্ষিক)
১৮৯২ সালের নভেম্বর মাসে আব্দুর রহিমের সম্পাদনায় কলকাতার সীতারাম ঘোষের স্ট্রীট থেকে সম্পাদক কর্তৃক প্রকাশিত হয়। দাম দু’পয়সা। দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।
এর লেখকদের মধ্য থেকে কায়কোবাদ, মহম্মদ রেজওয়ান উদ্দিন আহমদ উল্লেখযোগ্য।
প্রচারক (মাসিক)
১৮৯৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে মধু মিয়ার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়। এই পত্রিকার মুদ্রণ ও প্রকাশের স্থান ঘনঘন বদল হয়েছে।
পত্রিকাটি নিয়মিত প্রকাশিত হতো না। প্রায়ই যুক্ত সংখ্যা বের হতো। দাম তিন আনা। ধর্মীয় আলোচনার ক্ষেত্রে পত্রিকাটি বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ছিল।
এর লেখকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন–এসমাইল হোসেন সিরাজী, মুনশী মহম্মদ মেহেরুল্লাহ, পাদ্রী চন্দ্রনাথ সরকার।
দ্বিতীয় বর্ষ, দ্বাদশ সংখ্যার সূচিপত্র—
আরব [কবিতা]: মুনশী এসমাইল হোসেন সিরাজী
আপত্তি খন্ডন: পাদ্রী চন্দ্রনাথ সরকার
আয়ুব নবীর স্ত্রী: মুনশী মহম্মদ এসমাইল হোসেন
আশুরা [কবিতা]: মুনশী মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন
ইসলাম ও বিজ্ঞান: মওলানা মহম্মদ এসমাইল হোসেন উল্কা
খোদাতায়ালার সৃষ্টিরহস্য: মুনশী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ
খ্রীষ্টিয়ান ধর্ম্মনীতি: পাদ্রী চন্দ্রনাথ সরকার
তফসীর আজিজিয়ার বঙ্গানুবাদ: মওলানা মহম্মদ মনিরুজ্জামান
তুরস্কের সোলতান: মুনশী সৈয়দ ফজলে হক
দক্ষিণ আফ্রিকার যুদ্ধ বিবরণ: মাখনলাল ভঞ্জ
নববর্ষের উদ্বোধন [কবিতা]: মহম্মদ এসমাইল হোসেন
মজহাবের সত্যতা: মওলানা মহম্মদ মনিরুজ্জামান
লা-মজহাবিগণের ধর্ম্মরহস্যভেদ: মওলানা মহম্মদ মনিরুজ্জামান
শাহনামা: মুনশী মোজাম্মেল হক
শিক্ষা: মাখনলাল ভঞ্জ
সোলতান মাহমুদ: মুনশী এসমাইল হোসেন
স্পেনের ইতিহাস: মওলানা মহম্মদ মনিরুজ্জামান
তফসির হাক্কানির বঙ্গানুবাদ
লহরী (মাসিক)
১৯০০ সালের মে মাসে মোজাম্মেল হকের সম্পাদনায় নদীয়া থেকে প্রকাশিত হয়। দাম তিনা আনা। এক বছরে শুধু আটটি সংখ্যা প্রকাশ পায়। এটি নানা বিষয়ের কবিতাময়ী সমালোচনী পত্রিকা ছিল।
নবনুর (মাসিক)
১৯০৩ সালের মে মাসে সৈয়দ এমদাদ আলীর সম্পাদনায় পত্রিকাটি কলকাতার আমহার্স্ট স্ট্রীট থেকে প্রকাশিত হয়। দাম চার আনা। প্রথম বর্ষের একাদশ সংখ্যা থেকে সম্পাদক ছিল মোহাম্মদ আসাদ আলী। আর দ্বিতীয় বর্ষের অষ্টম, নবম ও দশম সংখ্যা সম্পাদক ছিলেন কাজী ইমদাদুল হক। পত্রিকাটি চার বছর ন মাস চলেছিল।
এই পত্রিকায় প্রকাশিত কয়েকটি লেখা—
হিন্দু নারীর মুসলমান ঘৃণা: মৌলভী ইমদাদুল হক
মুসলমান সমাজে ইতিহাস চর্চা
প্রাচীন মুসলমানী গীতিমালা: আবদুল করিম
সিরাজুদ্দৌলা: জীবেন্দ্রকুমার দত্ত
আরবীয় দর্শনালোচনা: আবদুল্লা আল মামুন সোহরাওয়ার্দী
মুসলমানের প্রতি হিন্দু–লেখকের অত্যাচার
মোগল শাসনের দুটি কথা: পঞ্চানন ঘোষ
হিন্দু লেখক ও মুসলমান সমাজ: আফতাবউদ্দীন আহমদ
সম্রাট আওরঙ্গজেব: এস, এম, এ, আহাদ
ধর্ম্মযুদ্ধ, গাজী ও জেহাদ: সম্পাদক
মধ্য এসিয়ার জ্ঞানসাম্রাজ্য: সম্পাদক
বোরকা: মিসেস আর, এস, হোসেন
ধর্ম্মযুদ্ধ: চারুচন্দ্র মিত্র
চিকিৎসা সম্বন্ধে মুসলমান জাতি: ফজলর রহমান খাঁ
হিন্দু ও মুসলমানের প্রতি: যোগেন্দ্রনাথ গুপ্ত
ক্রুসেড বা খ্রিস্টান-ধর্ম্মযুদ্ধ: দলিলউদ্দিন আহমদ
বঙ্গসাহিত্যে হিন্দু মুসলমান: মোহাম্মদ হেদায়েতউল্লা
কোরাণ শরীফের ইতিবৃত্ত: চারুচন্দ্র মিত্র
মহারাজ রাজবল্লবভ সেনের জীবনচরিত: আব্দুল করিম
খলিফাগণের শাসননীতি: ফজলর রহমান খাঁ
রাজনীতিক্ষেত্রে হিন্দু-মুসলমান: লেহাজউদ্দিন আহমদ
ধর্ম্ম ও বিজ্ঞান: মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী
রাজনৈতিক আন্দোলন ও মুসলমান: খয়েরখাহ মুনশী
স্বদেশী আন্দোলন: মোহাম্মদ হেদায়েতউল্লা
সুলতান ২য় মোহম্মদ কর্তৃক কনসটান্টিনোপল অধিকার: হামেদ আলী
মুসলমানাধিকৃত ভারতের ইতিহাস: কেশবচন্দ্র গুপ্ত
একজন বাঙ্গালী মুসলমান বীর: যদুনাথ সরকার
সূরা লোকমান: তসলিমউদ্দীন আহমদ
সুলতান সালাদিন: রামপ্রাণ গুপ্ত
মালাবার উপকূলে ইসলাম: এস, এম, আব্দুল আহাদ
সূরা মরীয়ম: তসলিমউদ্দীন আহমদ
মোগল রাজবংশ: রামপ্রাণ গুপ্ত
ইসলাম নূর [কবিতা]: চারুচন্দ্র মিত্র
কোহিনুর (মাসিক)
১৮৯৮ সালের জুলাই মাসে কোহিনুর পত্রিকা প্রথম প্রকাশিত হয়। সম্পাদক: এস, কে, এম, মোহাম্মদ রওশন আলী। দ্বিতীয় বর্ষ, দ্বিতীয় সংখ্যা বের হবার পর এটি বন্ধ হয়ে যায়। তারপর নবপর্যায়ে প্রকাশ হয় ১৯০৩ সালে। দাম তিন আনা।
কোহিনুর পত্রিকার আখ্যাপত্রে লেখা থাকতো: “হিন্দু–মুসলমানের সম্প্রীতি উদ্দেশ্যে প্রকাশিত মাসিকপত্র সমালোচনা”।
এই পত্রিকায় প্রকাশিত কিছু লেখা—
প্রাচ্য ও প্রতীচ্য দর্শন: সুরেন্দ্রনাথ গোস্বামী
আফগান শাসনকালে ভারতবাসীর অবস্থা: রামপ্রাণ গুপ্ত
ভারতীয় পারস্য কবিগণ: সৈয়দ নুরুল হোসেন
হযরত বেলাল সম্বন্ধে যৎকিঞ্চিৎ: শেখ জমিরুদ্দিন
শিবাজী–উৎসব ও মুসলমান জাতি: ও, আলী
জমজম-প্রসঙ্গ: মোহাম্মদ এবরার আনসারী
হযরত মোহাম্মদ বোখারী সম্বন্ধে যৎকিঞ্চিৎ: শেখ জমিরুদ্দিন
খেলাফত: শেখ আহাম্মদ সোবাহান
মোহাম্মদী (মাসিক)
১৯০৩ সালের আগস্ট মাসে মোহাম্মদ আকরম খাঁর সম্পাদনায় কলকাতা থেকে এটি প্রকাশিত হয়। কিছুদিন বন্ধ থাকার পর ১৯২৭ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত পত্রিকাটি নিয়মিত প্রকাশিত হয়। পরে আবার দুই বছর বন্ধ থাকার পর ১৯৪৯ সালের ডিসেম্বর মাসে এটি ঢাকা থেকে পুনঃপ্রকাশিত হয় এবং ১৯৭০ সাল পর্যন্ত এর প্রকাশনা অব্যাহত থাকে। আকরম খাঁর পরে মুজিবুর রহমান খাঁ ও বদরুল আনাম খাঁ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, আখতারুল আলম, আ.ন.ম গোলাম মোস্তফা, মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ প্রমুখ তরুণ সাংবাদিক-সাহিত্যিক এর সম্পাদনা-সহযোগীর দায়িত্ব পালন করেন।
১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ আগস্ট মাসিক মোহাম্মদী পত্রিকার প্রথম সংখ্যা প্রেস থেকে মুদ্রিত হয়ে প্রকাশিত হয়। কিন্তু এই সংখ্যার পর ছাপাখানার মালিক দ্বিতীয় সংখ্যা মুদ্রণে অসম্মত হন। শেষ পর্যন্ত তখনকার ধনাঢ্য তেল ব্যবসায়ী এবং মাওলানা আকরম খাঁর পিতৃবন্ধু মাওলানা আবদুল্লাহ তার “আলতাফী প্রেসে” মাসিক মোহাম্মদী মুদ্রণের সুযোগ করে দেন।
ব্রিটিশ ভারত ও পাকিস্তানে বাংলার মুসলমানদের মধ্যে সাহিত্য-সংস্কৃতির একটি স্বতন্ত্র ধারা সৃষ্টি এবং জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বভিত্তিক মুসলিম জাতীয়তাবাদের বিকাশ এবং শেষে পাকিস্তানি ভাবধারার প্রসার ঘটানো ছিল মোহাম্মদী প্রকাশের মূল উদ্দেশ্য। তবে এতে অন্য মতাদর্শের লেখকের লেখাও প্রকাশিত হতো। এতে যেসব মুসলমান লেখক, কবি-সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ লিখতেন তাঁরা হলেন সুফিয়া কামাল, শওকত ওসমান, তালিম হোসেন, আবদুল হাই, আবু জাফর শামসুদ্দীন, হবীবুল্লাহ্ বাহার চৌধুরী, মোহাম্মদ আকরম খাঁ, আবদুল্লাহ আল-মুতী শরফুদ্দিন, আবদুল গনি হাজারী, আলাউদ্দিন আল আজাদ, আবু রুশদ, জসীমউদ্দীন, আশরাফ সিদ্দিকী, ফেরদৌস খান প্রমুখ। তাঁরা অনেকই পরবর্তীকালে লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ ও প্রতিষ্ঠালাভ করেন।
বাংলা, আসাম ও বার্মার মুসলমানদের কাছে এ পত্রিকাটি বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। পরবর্তীকালে দৈনিক মোহাম্মদী ও সাপ্তাহিক মোহাম্মদী পত্রিকাদ্বয় প্রকাশিত হয়। বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলনে এবং, বিশেষ করে হিন্দু আধিপত্যবাদী আচরণের মুখে, মুসলমানদের গোষ্ঠীগত স্বার্থ রক্ষায় এই পত্রিকাটি দুদর্মনীয় ভূমিকা পালন করেছিল। গ্রাম-গঞ্জের সাধারণ বঞ্চিত ও শোষিত মানুষ, বিশেষ করে পশ্চাদপদ মুসলিম সমাজের উন্নয়নে এবং মুসলিম সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশে মাসিক মোহাম্মদীর ভূমিকা ছিল সুদূরপ্রসারী।
এই পত্রিকায় কার্তিক ১৩৬৫ থেকে আশ্বিন ১৩৬৬ পর্যন্ত প্রকাশিত বিভিন্ন লেখা—
ইসলাম দর্শন: আলমগীর জলিল
আজাদী–উত্তর পূর্ব পাকিস্তানের সজনধর্ম্মী রচনা: আবু রুশদ
নজরুলের বিদ্রোহবাদ: আনসার আলী এম, এ,
পুঁথি সাহিত্যের ত্রিধারা: আলী আহমদ এম, এ, বি, টি,
একেই কি বলে ইতিহাস?: আকবর আলী খান
ইসলামে জীবন ও মূল্যবোধ: ইব্রাহীম খাঁ
মুসলিম সাহিত্যের ধারা: খন্দকার আব্দুর রহীম
মুজাহিদ অভ্যুত্থানের পশ্চাৎভূমি: জগলুল হায়দর আফরিক
তুর্ক–জর্মন মিশন উপজাতীয় এলাকা: জগলুল হায়দর আফরিক
ইসলামী চিত্র শিল্প: মাওলা বখ্শ
আধুনিক উর্দ্দু সাহিত্যে মুসলিম মহিলা: মাওলা বখ্শ
বাংলা সাহিত্যে ইসলাম: মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল
পূর্ব পাকিস্তানের উপভাষা প্রসঙ্গে: মাইজুদ্দীন আহমদ
আণবিক যুগে ইসলামের মুসলমান: মোহাম্মদ আজরফ
কম্যুনিজম বনাম ইসলামী সমাজব্যবস্থা: মোহাম্মদ আজরফ
বাংলা সাহিত্যে উপমা: মইনুদ্দীন
বিজ্ঞানে মুসলিম অবদান: মোহাম্মদ আবদুর রহীম
পাশ্চাত্য সভ্যতা ও ইসলাম: মোহাম্মদ আবদুর রহীম
আমাদের তামাদ্দুনিক সংগ্রাম: মমতাজ হোসেন
উনিশ শতকে মুসলিম ধর্মান্দোলন: মাহমুদ শাহ কোরেশী
ঋণশোধ [গল্প]: সৈয়দ শামসুল হক
যৌবনোত্তর [কবিতা] : হাসান আজিজুর রহমান
হানিফি (মাসিক)
১৯০৩ সালের ডিসেম্বরে এম, এস, নূরুল হোসেন কাসিমপুরীর সম্পাদনায় ময়মনসিংহ থেকে প্রকাশিত হয় এটি। হানাফী মাযহাবের মুখোপত্র এর বলে পরিচয় দেওয়া হয়েছে। দাম তিন আনা।
মোসলেম হিতৈষী (সাপ্তাহিক)
১৯১১ সালে শেখ আব্দুর রহিমের সম্পাদনায় কলকাতার হ্যারিসন রোড থেকে এটি প্রকাশিত হয়। মিহির ও সুধাকর বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বঙ্গীয় মুসলিম সমাজে জাতীয় সংবাদপত্রের অভাব ও সংকট দেখা দেয়। বিষয়টি ফুরফুরার পীর মাওলানা আবু বক্কর সাহেবের কর্ণগোচর হলে তার পরামর্শে সমাজহিতৈষী মাননীয় মৌলভী ওয়াহেদ হোসেন বি, এল, উকিল সাহেব, সৎ সাহিত্যিক মুন্সী শেখ আব্দুর রহিম ও অপরাপর কতিপয় সমাজসেবকদের প্রযত্নে ১৩১৭ সালের ৮ই মাঘ তারিখে কলকাতার গ্রীয়ার পার্কে আঞ্জুমানে ওয়াজিনের প্রাণপ্রতিষ্ঠা হয়। সেই সভা একটি জাতীয় সংবাদপত্র প্রচার করার সিদ্ধান্ত নেয়। তখন ফুরফুরার পীর সাহেব সেই সংকল্পের অনুমোদন করেন ও তার পৃষ্ঠপোষক হন।
১৯১৬ সালে মোসলেম হিতৈষীর প্রেস অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত হয়। কিছুদিন এর প্রকাশ বন্ধ থাকার পর মোল্লা আতাউল হক মোল্লা এনামুল হকের অর্থ সাহায্যে এটি পুনরায় আত্মপ্রকাশ করতে থাকে।
কোহিনুর (মাসিক)
১৯১১ সালের এপ্রিল মাসে মোহাম্মদ রওশন আলী চৌধুরীর সম্পাদনায় ফরিদপুর থেকে এটি প্রকাশিত হয়। দাম চার আনা।
দ্বিতীয় বর্ষ, সপ্তম সংখ্যা প্রকাশের পর পত্রিকা বন্ধ হয়ে যায়। তিন বছর পর তা নবপর্যায়ে আত্মপ্রকাশ করে; তবে এরপরও তা বেশিদিন চলেনি।
এতে প্রকাশিত বিভিন্ন লেখা—
আরব জাতির ইতিহাস: শেখ রেয়াজউদ্দিন আহমদ
মোসলেম গণিতজ্ঞগণের সংক্ষিপ্ত পরিচয়: মহম্মদ কে, চাঁদ
বঙ্গসাহিত্যে মুসলমান লেখক: মোহাম্মদ ইয়াকুব আলী
প্রাথমিক মুসলমানগণের বিদ্যানুরাগ: মহম্মদ কে, চাঁদ
মোসলেম বৈজ্ঞানিক অল হাজেন: মহম্মদ কে, চাঁদ
ফরাসি রাজ্যে মোসলেম অধিকার: কাজী ইমদাদুল হক
মধ্যযুগে মোসলেম সাম্রাজ্যে বিদ্যাশিক্ষার ব্যবস্থা: মহম্মদ কে, চাঁদ
অর্দ্ধচন্দ্র চিহ্নিত পতাকা সম্বন্ধে যৎকিঞ্চিৎ: মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ্
ইসলামের স্বরূপ: মোহাম্মদ ইয়াকুব আলী
জামে অল-অজহারের ইতিহাস: মহম্মদ কে, চাঁদ
কোরাণ শরীফের নীতি: মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ্
আল-এসলাম (মাসিক)
১৯১৫ সালের মে মাসে মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ সম্পাদনায় পত্রিকাটি কলকাতার ফুল বাগান রোড থেকে মোহাম্মদ মুজাফফরউদ্দীন কর্তৃক প্রকাশিত হয়। দাম তিন আনা। এটি আঞ্জুমান-ই-উলামা-ই-বাঙ্গালার মুখপত্র ছিল। প্রতিষ্ঠানের যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী পত্রিকা সম্পাদক মাওলানা আকরাম খাঁকে সাহায্য করতেন।
আঞ্জুমান-ই-উলামা-ই-বাঙ্গালা ছিল আলেমদের একটি ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন। ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে এটি কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয়। ইসলাম প্রচার, মুসলিমদের বিরুদ্ধে অন্য ধর্ম প্রচারকদের বৈরিতামূলক প্রচারণা মোকাবেলা, কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে মুসলিম সমাজের সংস্কারের উদ্দেশ্যে এই সংগঠনটি গঠিত হয়। মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ, মাওলানা মুহম্মদ আবদুল্লাহিল বাকী ও ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ছিলেন এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।
খেলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনে আঞ্জুমান অংশ নেয়। আঞ্জুমান হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের পক্ষপাতী ছিল। স্বদেশী পণ্যের বিক্রির জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে কলকাতায় স্বদেশী খেলাফত স্টোর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার পর ১৯২১ সালে আঞ্জুমানের কার্যক্রম বন্ধ হয় এবং তা জামিয়াত-উল-উলামা-ই-হিন্দের বাংলার শাখা জামিয়াত-উল-উলামা-ই-বাঙ্গালার সাথে একীভূত হয়।
এ পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠার উপরে আরবিতে লেখা থাকতো “ইন্নাদ্দী–না ইনদাল্লহিল ইসলাম”।
এই পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন লেখা—
কোরআনের দুইটি আদর্শ: মোহাম্মদ আকরম খাঁ
মূল বাইবেল কোথায়?: মোহাম্মদ আকরাম খাঁ
শিল্পক্ষেত্রে মুসলমান: এসলামাবাদী
মোহাম্মদ: শ্রী আশুতোষ মুখোপাধ্যায় বি, এল,
আরব ও ভূগোল শাস্ত্র: আবু এহিয়া মোহাম্মদ আবদুল জব্বার রোকনী
কোরআন শরীফ ও বিজ্ঞান: মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ
অস্ত্র চিকিৎসায় মুসলমান: এসলামাবাদী
তাছাওয়াফ: ডাঃ এস, এম, হোসেন
হাদিস ও চিকিৎসাশাস্ত্র: আবু এহিয়া মোহাম্মদ আবদুল জব্বার রোকনী
কোরআন ও জ্যোতির্বিদ্যা: মইনুদ্দিন হোসেন
আকবর শাহের ধর্ম্মমত: মোজাম্মেল হক
দাস-প্রথা: আব্দুল মালেক চৌধুরী
শিল্পক্ষেত্রে মুসলমান: এসলামাবাদী
গণিতশাস্ত্রে মুসলমান: আবু এহিয়া মোহাম্মদ আবদুল জব্বার রোকনী
রুশীয় মুসলমান: আবুল ফয়েজ মোহাম্মদ নুরুদ্দিন রোকনী
আধুনিক দর্শন বিজ্ঞান ও ধর্ম্ম: আহমদ আলী
শ্রীহট্টে ইসলামের প্রতিষ্ঠা ও প্রচার: আবদুল মালেক চৌধুরী
ডাক্তার মিঙ্গানা ও কোরআন: আব্দুল্লাহেল বাকী
মোসলিম জগতে নৌ-বহর: আবদুল ফয়েজ মোহাম্মদ নুরউদ্দিন রোকনী
মুসলমান আমলে হিন্দুর অধিকার: এসলামাবাদী
কোরাণ শরীফ ও জ্যোতিষ: মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ
কোরআনের বিশুদ্ধতা আলোচনা: মোহাম্মদ কে, চাঁদ
এসলামে নারীজাতির স্বত্বাধিকার: আহমদ আলী
ধর্ম্ম মনুষ্যের প্রকৃতিগত: আহমদ আলী
আরবীয় সভ্যতা: আবুল ফয়েজ মোহাম্মদ নুরউদ্দিন রোকনী
তাবাকাতে এবনে সায়াদ: আব্দুল্লাহেল বাকী
জন্মান্তরবাদ: মোঃ মুজাফফরউদ্দিন
খোদাতাআলার অস্তিত্ব: আহমদ আলী
সাহাবীর সংখ্যা ও শ্রেণি: আব্দুল্লাহেল বাকী
জাতীয় সাহিত্যে হিন্দু মুসলমান: সেখ হাবিবর রহমান
নামাজের দার্শনিক তত্ত্ব: মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী
ইসলামের রাজ্যশাসন নীতি: আহমদ আলী
এসলাম বা মানবধর্ম্ম: শাহ আবদুল্লা
খ্রিস্টীয় ধর্মগ্রন্থসমূহের ইতিহাস: মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ
চীন দেশীয় মুসলমান: আবুল ফয়েজ মোহাম্মদ নুরউদ্দিন রোকনী
মুদ্রণযন্ত্রের আবিষ্কার: আব্দুল্লাহেল বাকী
ভারতীয় মুসলমান রাজগণের সাহিত্যসেবা ও শিক্ষা বিস্তার: কুমার নরেন্দ্রনাথ লাহা
মধ্যাকর্ষণ আবিষ্কারে মুসলমান: আবদুর রহমান
নামাজের দার্শনিক তত্ত্ব: মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী
অদৃষ্টবাদ: আব্দুল্লাহেল বাকী
হযরত মুহাম্মদ (দঃ) এবং বুদ্ধদেব: মোজাম্মেল হক বি, এ,
বাঙ্গালার মুসলমানদিগের অতীত জীবনের যৎকিঞ্চিৎ: এ, কে, আমিনুল্লাহ
উদারতা ও তাহার প্রতিদান: আব্দুল্লাহেল বাকী
তৌহিদ ও তছলিছ: মোহাম্মদ আশরফ আলী
হযরত মুহাম্মদের (দঃ) নবুয়ত সম্বন্ধে বাইবেলের সাক্ষ্য: মোহাম্মদ আশরফ আলী
এসলামের মূল সূত্র: আবুল আছিম খান চৌধুরী
খৃস্টান ধর্ম্মের বিফলতা: মোহাম্মদ আশরফ আলী
স্বাস্থ্যবিজ্ঞানে হযরত মোহাম্মদ: সিরাজী
এসলাম ও মানবজাতি: মোহাম্মদ আশরফ আলী
ধর্ম্ম ও গোঁড়ামি: এম, এ, হাকিম রুহানী
অজ্ঞানতার যুগে আরব: মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী
ইসলাম ও মিশন: মোহম্মদ মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী
ইউরোপ ও কোরআন: ফররোখ আহমদ নেজামপুরী
মোসলেম তত্ত্ব: খোন্দকার গোলাম আহমদ
আরবীয় প্রতিমা সম্বন্ধে যৎকিঞ্চিৎ: আব্দুল্লাহেল বাকী
কোরআন ও রণনীতি: মঈনউদ্দিন হোসায়ন
ইসলাম জগতে ইতিহাসচর্চা: শেখ আবুল মনসুর এলাহী বখশ
এবনে রোশদ: আব্দুল্লাহেল বাকী
বাইবেল-তত্ত্ব: দানেশ
রসায়ন শাস্ত্রে মুসলমান: ফররোখ আহমদ নিজামপুরী
এসলামে জাতীয়তা: মোহাম্মদ আনওর আলী
রাজনীতিতে হযরত মোহাম্মদ (দঃ): জাহেদুল হোছাইন
আহলে হাদিস (মাসিক)
১৯১৫ সালের সেপ্টেম্বরে মোহাম্মদ আব্দুল হাকিম ও মোহাম্মদ বাবর আলীর সম্পাদনায় এটি কলকাতার মারকুইস লেন থেকে প্রকাশিত হয়। দাম চার আনা। এটি আহলে হাদিস সম্প্রদায়ের মুখপত্র ছিল।
সওগাত (মাসিক)
১৩২৫ বঙ্গাব্দের (১৯১৮ সাল) অগ্রহায়ণ মাসে মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীনের সম্পাদনায় কলকাতা থেকে এটি প্রকাশিত হয়। ১৩২৭ বঙ্গাব্দের চৈত্রমাসে (১৯২১ সালের মার্চ-এপ্রিল) অনিবার্য কারণবশত এর প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ ছয় বছর পর ১৩৩৩ বঙ্গাব্দের (১৯২৬ সাল) আষাঢ় মাসে সওগাত-নবপর্যায় নামে পুনরায় এর প্রকাশনা শুরু হয় এবং ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ (১৯৩০ সাল) পর্যন্ত নিয়মিত প্রকাশিত হওয়ার পর অনিয়মিত হয়ে পড়ে। ১৯৫০ থেকে প্রায় তিন বছর সওগাতের কোনো সংখ্যা প্রকাশিত হয়নি। ১৯৫২ সালের নভেম্বর/ডিসেম্বর (অগ্রহায়ণ ১৩৫৯) থেকে পত্রিকাটি ঢাকা থেকে প্রকাশিত হতে থাকে।
নাসিরউদ্দীনের উদ্দেশ্য ছিল সামাজিক ন্যায়বিচার ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার প্রতি দায়বদ্ধ একটি উন্নতমানের প্রগতিশীল পত্রিকা প্রকাশ করা। এর প্রমাণস্বরূপ তিনি সওগাতের প্রথম সংখ্যায় সাতটি নীতি ঘোষণা করেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতীক হিসেবে পত্রিকার প্রথম সংখ্যার প্রথম পৃষ্ঠায় বেগম রোকেয়ার এবং পরবর্তী পৃষ্ঠায় মানকুমারী বসুর একটি করে কবিতা মুদ্রিত হয়।
সওগাতের উদ্বোধনী সংখ্যায় খ্যাতনামা পুরুষ ও মহিলাদের ষোলোটি ছবি ছাপা হয়। মহিলাদের এই ছবি ছাপানো এবং নারীশিক্ষা ও নারীমুক্তি বিষয়ে প্রচুর প্রবন্ধ প্রকাশের মাধ্যমে সওগাতের উদার দৃষ্টিভঙ্গিই প্রকাশ করার চেষ্টা করেছে তারা। সওগাত বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠিত ও নবীন লেখিকাদের লেখা নিয়ে ‘মহিলা সংখ্যা’ নামে ছয়টি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে। ফলে প্রতিশ্রুতিশীল মহিলা লেখকরা উৎসাহিত হন।
কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন সওগাতের প্রধান লেখকদের অন্যতম। ছোটগল্প, প্রবন্ধ, কবিতা, গান ও গজল ব্যতীত নজরুলের মৃত্যুক্ষুধা উপন্যাসটিও সওগাত ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করে। সওগাতের অন্যান্য প্রধান লেখক ছিলেন বেগম রোকেয়া, কাজী আবদুল ওদুদ, আবুল কালাম শামসুদ্দীন, আবুল মনসুর আহমদ এবং আবুল ফজল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরও এতে লিখেছেন।
বাঙালি মুসলমানদের সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে পথিকৃতের ভূমিকা পালনকারী সওগাত ঢাকার সাহিত্যিক সমাজেও একটি উদার দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার ও নবীন প্রতিভার লালন করত।
শিখা (বার্ষিক)
১৯২৭ সালের এপ্রিল মাসে পত্রিকাটি ঢাকা থেকে মুসলিম সাহিত্য সমাজ কর্তৃক প্রকাশিত হয়। শিখা ১৯২৭ সাল থেকে ১৯৩১ সাল পর্যন্ত বছরে একবার প্রকাশিত হত। এর মোট পাঁচটি সংখ্যার সম্পাদকের নাম— আবুল হুসেন, (১ম সংখ্যা) কাজী মোতাহার হোসেন, (২য় ও ৩য় সংখ্যা) মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, (৪র্থ সংখ্যা) আবুল ফজল, (৫ম সংখ্যা)।
মুসলিম সাহিত্য সমাজ ছিল বাংলাদেশের একটি বুদ্ধিমুক্তির আন্দোলনের দল যা ১৯২৭ সালে প্রতিষ্ঠিত শিখা পত্রিকার সাথে সাথে গঠিত হয়। মুসলিম সাহিত্য সমাজের কর্ণধার ছিলেন কাজী মোতাহার হোসেন, কাজী আবদুল ওদুদ এবং আবুল হুসেন। ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত মাত্র এক দশক চলেছিল এই ঢাকা কেন্দ্রিক গোষ্ঠীটির কার্যক্রম।
সমকালের অন্যান্য সাময়িকপত্র থেকে শিখা ভিন্ন ধরনের ছিল। মুসলিম সাহিত্য-সমাজের সারা বছরের কর্মকাণ্ডের পরিচয় বহন করত এটি। শিখার প্রতিটি সংখ্যার উপরে “জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব” কথাটি লেখা থাকত। তাদের আদর্শ ছিল উনিশ শতকের নবজাগরণ, ইউরোপের নবজাগরণ, কামাল আতাতুর্কের নেতৃত্বে তুরস্কের বুকে জন্ম নেওয়া নবজাগরণ।
সে সময় অবিভক্ত বাংলার সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া অংশ ছিল পূর্ব বাংলা এবং যার প্রধান শহর ছিল ঢাকা। এ অঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকজন ছিলেন মুসলমান যাদের সামগ্রিক সামাজিক পরিমণ্ডল ছিল শাস্ত্র ও সংস্কারের অচলায়তনে আবদ্ধ। কাজী মোতাহার হোসেনের দ্বিতীয় বর্ষের কার্য বিবরণীতে পাওয়া যায় : “আমরা চাই সমাজের চিন্তাধারাকে কুটিল ও পঙ্কিল পথ হইতে ফিরাইয়া প্রেম ও সৌন্দর্য্যের সহজ সত্য পথে চালিত করিয়া আমাদের দায়িত্ববোধের পরিচয় দিতে। এক কথা আমরা বুদ্ধিকে মুক্ত রাখিয়া প্রশান্ত জ্ঞানদৃষ্টি দ্বারা বস্তু জগত ও ভাবজগতের ব্যাপারাদি প্রত্যক্ষ করিতে ও করাইতে চাই”। মুসলিম সাহিত্য সমাজের লক্ষ্য ছিল ধর্ম ও ধর্ম-প্রভাবিত মুসলমান সমাজকে বৈজ্ঞানিক যুক্তির পাটাতনের উপর দাঁড় করিয়ে দেওয়া। মুসলিম সাহিত্য সমাজ করণীয় সম্পর্কে পাওয়া যায় : “মুসলিম সমাজে অনেক গলদ ঢুকিয়াছে। মিথ্যা হাদিস দ্বারা ঐ সবের সমর্থন চলিতেছে; অনেক সময় লোকেরা নিজেদের মতলব হাসিল করার জন্য হাদিস সৃষ্টি করিয়াছে; যে সমস্ত হাদিস বুদ্ধির দ্বারা সমর্থিত নহে তাহা মানিতে হইবে না; কুরআনের ব্যাখা যাহা হইয়া গিয়াছে তাহা ব্যতীত আর হইতে পারিবে না, ইহা ঠিক নহে; কাল ও অবস্থা ভেদে ইহার নতুন ব্যাখ্যা দিতে হইবে।” এক্ষেত্রে তারা সরাসরি মোতাযেলাবাদ দ্বারা প্রভাবিত হয়। তাদের অনেকের লেখায় উঠে আসে মোতাযেলাদের গুণগান।
তাদের মন্ত্র ছিল ‘বুদ্ধির মুক্তি’- Emancipation of the intelect। এই মন্ত্র তারা পেয়েছিলেন বহু জায়গা থেকে—কামাল আতাতুর্কের কাছ থেকে, রামমোহন রবীন্দ্রনাথ ও রোমাঁ রোলাঁর কাছ থেকে, পারসিক কবি সাদীর কাছ থেকে, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে। এই সাহিত্য সমাজ পূর্ণ উদ্যোমে কাজ করতে পেরেছিল তিন বৎসর। এর প্রথম ও দ্বিতীয় বার্ষিক অধিবেশনে নজরুল যোগ দিয়েছিলেন এবং এর আদর্শ ও আবেদনের অর্থপূর্ণতা উপলব্ধি করে উল্লসিত হয়েছিলেন। তৃতীয় বার্ষিক অধিবেশনের পরে এর সাধারণ ও বার্ষিক সব অধিবেশনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম হলে নিষিদ্ধ হয়। অভিযোগ দাঁড়িয়েছিল, এই সাহিত্য সমাজ মুসলমানধর্মবিরোধী। শিখা পরপর ৫ বছর প্রকাশিত হতে পারে। তবে এর বাৎসরিক অধিবেশন হয়ে চলে আরো সাত বৎসর—দশম বার্ষিক অধিবেশনে শরৎচন্দ্র এর সভাপতিত্ব করেন।
ফররুখ আহমদের ভাষায় এটি ছিল—”বুদ্ধির ব্যভিচার আন্দোলন”।
পরিশিষ্ট
এখানে ১৯২৭ পর্যন্ত প্রকাশিত মুসলিম সম্পাদিত বিভিন্ন পত্রিকার কথা আনা হল। এরপরেও ব্রিটিশযুগে বহু পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে, হয়ত সেগুলো ততটা প্রসিদ্ধ হয়নি অথবা সেগুলোর প্রভাব ছিল সীমিত। ইসলামী আদর্শ ও মুসলিম সভ্যতা-সংস্কৃতিকেন্দ্রিক অনেক সাময়িক পত্র প্রকাশ হয়ে চলেছে আজ অবধি— বিভিন্নকেন্দ্রিক, বহুবিধ চেতনাকে ঘিরে।