আবু জর
মাওলানা আতহার আলী রহ. ১৮৯১ ইসায়ি মোতাবেক ১৩০৯ হিজরি সিলেটের বিয়ানীবাজার থানার গোঙ্গাদিয়া গ্রামের ধর্মপরায়ণ এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কথিত আছে, তাঁর পূর্ব পুরুষগণ উত্তর ইরান থেকে প্রাচীন মুসলিম শাসকদের আমলে সিলেটে এসে বসবাস শুরু করেন।
শিক্ষাজীবন
তিনি নিজ এলাকাতেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করার পর মুরাদাবাদের কাসেমিয়া মাদরাসায় ও রামপুর মাদরাসায় বিভিন্ন শাস্ত্রে জ্ঞান অর্জন করেন। অতঃপর সাহারানপুর ও পরে বিশ্ববিখ্যাত দারুল উলুম দেওবন্দে শিক্ষাগ্রহণ করেন। তঁর উস্তাদদের মধ্যে ছিলেন আল্লামা আনওয়ার শাহ কাশ্মীরি, পাকিস্তানের অন্যতম প্রবক্তা মাওলানা শাব্বির আহমাদ উসমানি ও জাফর আহমাদ উসমানির মতো বরেণ্য মনীষীগণ।
কর্মজীবন
শিক্ষা সমাপ্তির পর আতহার আলী রহ. উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইসলামি সংস্কারক, আধ্যাত্মিক সাধক ও হাজারের অধিক গ্রন্থপ্রণেতা মাওলানা আশরাফ আলি থানভি রহ.-এর কাছে আধ্যাত্মিক সবক লাভ ও রুহানি তাজকিয়াহ অর্জন করেন এবং তাঁর থেকে খেলাফতপ্রাপ্ত হয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন।
উস্তাদদের প্রতি যে তাঁর কত গভীর শ্রদ্ধা ছিল, তাঁদের পবিত্র স্মৃতি নিজের অন্তরে জাগরুক রাখার জন্যে পুত্রের নাম আনোয়ার শাহ এবং দাদা পীর হাজী এমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কি রহ.-এর নামে তাঁর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম জামিয়া ইমদাদিয়া নামকরণ থেকেই তা সহজে অনুমেয়।
দেশে ফিরে আল্লামা আতহার আলী ইসলামি শিক্ষা বিস্তারের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি সিলেট এবং কুমিল্লার জামিয়া মিল্লিয়া (বর্তমানে কাসেমুল উলূম), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জামিয়া ইউনুসিয়াসহ একাধিক মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন। অতঃপর কিশোরগঞ্জের একটি মাদরাসায় শিক্ষকতা ও পরে ঐতিহাসিক শহিদি মসজিদের ইমাম নিযুক্ত হন এবং একজন পীর হিসাবে ইসলামের যাবতীয় শিক্ষা আদর্শ প্রচার করতে থাকেন।
রাজনীতিতে পদার্পণ
শিক্ষকতার সে-সময়েই তিনি ইসলামি আন্দোলন তথা রাজনীতির ফাউন্ডেশন বা প্রাথমিক স্তর বিনির্মাণে আত্মনিয়োগ করেন এবং মানুষকে এরশাদ ও নসিহতের মাধ্যমে ধর্মপরায়ণ করে তোলেন। জায়গায় জায়গায় মাদরাসা-মক্তব স্থাপন করেন। ফলে তাঁকে কেন্দ্র করে কিশোরগঞ্জ এলাকায় একটি সুন্দর ইসলামি পরিবেশ গড়ে ওঠে। তাঁর খ্যাতি বাইরের অন্যান্য জেলায়ও ছড়িয়ে পড়ে।
আল্লামা আতহার আলীর শিক্ষাজীবন যেসব মহামনীষীর সংস্পর্শে অতিবাহিত হয়েছিল, তাঁরা যেমন ছিলেন ইসলামি জ্ঞানে বিশেষজ্ঞ, উঁচু স্তরের পণ্ডিত ও জ্ঞানতাপস, তেমনি ছিলেন বিশ্ব পরিস্থিতির ব্যাপারেও সচেতন এবং ইংরেজবিরোধী আন্দোলনে ও রাজনীতিতে তাঁদের ছিল সক্রিয় পদচারণা। তাঁর উস্তাদদের মধ্যে শাব্বির আহমাদ উসমানি, জাফর আহমাদ উসমানি, আনোয়ার শাহ কাশ্মীরি এবং আধ্যাত্মিক গুরু আশরাফ আলি থানভি রহ., যাঁরা অবিভক্ত ভারতের আজাদি আন্দোলনের ত্যাগী ও সংগ্রামী সিপাহসালার ছিলেন। ফলে শিক্ষকদের প্রভাবে হজরত আতহার আলীর মধ্যেও স্বাভাবিকভাবেই ছাত্রজীবন থেকে রাজনৈতিক ভাবধারা ও সচেতনতার উন্মেষ ঘটেছিল।
রাজনৈতিক জীবন
১৯৪৫ সনে আতহার আলী রহ. বঙ্গীয় ওলামা-মাশায়েখদেরকে নিয়ে নিখিল ভারতীয় ওলামা কনফারেন্সের আয়োজন করেন।
অতঃপর আল্লামা আতহার আলী পৃথক মুসলিম আবাসভূমি তথা পাকিস্তান কায়েমের লক্ষ্যে সমগ্র ভারতবর্ষ চষে বেড়ান এবং প্রধান প্রধান শহরসমূহে সভা-সম্মেলনের আয়োজন করেন, বক্তৃতা দিয়ে পাকিস্তানের পক্ষে জনমত গড়ে তোলেন এবং মুসলমানদের মাঝে ঐক্যের প্রাচীর তৈরি করেন। তিনি মুসলিম লীগের ঐতিহাসিক সিমলা কনফারেন্স ও বাংলার প্রতিনিধিত্বকারী নেতৃবৃন্দের অন্যতম ছিলেন। যাঁদের মধ্যে ছিলেন শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হক, মাওলানা আকরম খাঁ, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, খাজা নাজিমুদ্দীন ও তাজুদ্দীন খান প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
উল্লেখ্য, ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবে শেরে বাংলা এ.কে ফজলুক হক কর্তৃক পঠিত প্রস্তাব প্রণয়নে তাঁর অবদান ছিল সিংহভাগ। এবং তা তিনি করেছিলেন মুর্শিদ মাওলানা আশরাফ আলি থানভির বিশেষ ইঙ্গিতে। লাহোর প্রস্তাব ঘোষণার ঐতিহাসিক সেই ছবিতে শেরে বাংলার পাশেই আল্লামা আতহার আলী ছিলেন।
আতহার আলী রহ.-এর একান্ত প্রচেষ্টা এবং মাওলানা সৈয়দ মুসলেহ উদ্দীন রহ.-এর সহযোগিতায় ১৯৫০ সনের ১৮, ১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার মাছিহাতায় (মাওলানা সৈয়দ মুসলেহ উদ্দীন রহ.-এর নিজ বাড়িতে) সাবেক পূর্বপাকিস্তান জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কাউন্সিল এবং ওলামা কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। এদেশে ইসলামি রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রথম সক্রিয় উদ্যোগ ছিল এই কনফারেন্স। যাতে সর্বমহলে আলেম-ওলামা শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবিসহ সাধারণ জনগণের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ ছিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। যা থেকে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম নতুন প্রত্যয় ও অঙ্গীকার নিয়ে ইসলামি নিজাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। উক্ত কনফারেন্সে শর্ষিনার মরহুম পীর সাহেব মাওলানা নেসার উদ্দীন রহ. ও আল্লামা আতহার আলী রহ.-কে যথাক্রমে সভাপতি ও কার্যকরী সভাপতি এবং মাওলানা শেখ আব্দুর রহীম (প্রফেসর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)-কে মহাসচিব করে ৫২ সদস্য বিশিষ্ট পূর্বপাকিস্তান জমিয়তের কমিটি গঠন করা হয়। শুরু হয় ইসলামি শাসন কায়েমের আন্দোলনের নব সূচনা। যোগ হয় নতুন যাত্রা। ধারণ করে নিয়মতান্ত্রিক ও ধারাবাহিক রাজনৈতিক পরিগ্রহ।
আল্লামা আতহার আলী এর পরপরই তদানিন্তন সমস্ত পাকিস্তানব্যাপী ইসলামি শাসন কায়েমের আন্দোলনকে রাজনৈতিক রূপ দিয়ে ঝটিকা সফর শুরু করেন। গুরুত্বপূর্ণ ও বড় বড় শহরগুলোতে বিরাট বিরাট সভা-সম্মেলন আয়োজন করেন। সর্বস্তরের লোকজনকে উক্ত আন্দোলনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেন এবং আদর্শ প্রস্তাব অনুযায়ী সংবিধান প্রণয়ন না করার দায়ে মুসলিম লীগ সরকারের বিরুদ্ধে প্রবল জনমত গড়ে তোলেন। যার মধ্যে ৫০ থেকে ৫২-এর ভেতরে সিলেট ও করাচিতে দুটি জাতীয় পর্যায়ের ইসলামি কনফারেন্সের আয়োজন করেন। যা থেকে পরবর্তীতে প্রণয়নকৃত ইসলামি সংবিধানের ২২ দফা রূপরেখা বা প্রস্তাবনা পেশ করা হয়েছিল। সর্বোপরি ৫২ সনের মার্চের ১৮, ১৯ ও ২০ তারিখে কিশোরগঞ্জে পূর্বপাকিস্তান জমিয়তের কনফারেন্স আহ্বান করেন আতহার আলী রহ.। দেশের গণমানুষের দাবি ও শ্লোগান ‘আমরা চাই নেজামে ইসলাম’ অনুসারে নেজামে ইসলাম পার্টি গঠন করেন। প্রথম সভাপতি ও সেক্রেটারী নির্বাচিত হন আল্লামা আতহার আলী রহ. নিজে এবং তার অন্যতম সহযোগী মাওলানা সৈয়দ মুসলেহ উদ্দীন রহ.। অতঃপর দলীয় দাবি ও শ্লোগান অনুযায়ী এবং পার্লামেন্টারি দলের নামেই প্রসিদ্ধি লাভ করে এবং গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠে তাঁর দল।
এবার আতহার আলী রহ. শুরু করলেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টির নামে ইসলামি শাসনতন্ত্র কায়েমের রাজনৈতিক কর্মসূচি। তিনি অনুধাবন করতে পেরেছিলেন যে, মুসলিম লীগের বর্তমান নেতৃত্বের মাধ্যমে দেশে ইসলামি নেজাম কায়েম করা কখনও সম্ভব হবে না। অতএব তিনি মুসলিম লীগের সরকার পতনের ডাক দিলেন এবং ৫৩ সনে নেজামে ইসলাম দিবস পালনের আহ্বান করলেন।
৫০ সনে মাছিহাতায়, ৫১ সনে করাচিতে, ৫২ সনে হয়বতনগরে (কিশোরগঞ্জে) এবং ৫৩ সনে ঢাকায় ইসলামি কনফারেন্সগুলো অত্যন্ত সফলভাবে আয়োজন করে আল্লামা আতহার আলী দেশের সর্বস্তরের আলেম-ওলামা, শিক্ষাবিদ ও ইসলামি বুদ্ধিজীবিদের নিয়ে ইসলামি শাসনতন্ত্রের ২২ দফা মূলনীতি প্রকাশ করেন। যা প্রণয়নেও আতহার আলী রহ.-এর অবদান সিংহভাগ।
ইসলামি নেজাম কায়েমের লক্ষ্যে আল্লামা আতহার আলী সেদিন সমস্ত বিরোধীদল থেকেই সম্মতি ও সমর্থন আদায় করেছিলেন এবং তিনি শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হকের কৃষক শ্রমিক পার্টি, মাওলানা ভানানীর আওয়ামী মুসলিম লীগ, (সোহরাওয়াদী) ও খেলাফতে রাব্বানী পার্টি নিয়ে ৫৪ সনে ‘যুক্তফ্রন্ট’ গঠন করেন। ফলে ৫৪-এর সাধারণ নির্বাচনে ‘হক- আতহার-ভাসানী’ ফ্রন্টের কাছে পূর্বপাকিস্তানে মুসলিম লীগ শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করে।
পক্ষান্তরে যুক্তফ্রন্ট বিপুল ব্যবধানে বিজয়ী হয়। সে নির্বাচনে নেজামে ইসলাম পার্টি প্রাদেশিক পরিষদে লাভ করে ৩৬টি আসন এবং কেন্দ্রে পায় ৪টি। পূর্ব পাকিস্তানে শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্টের কোয়ালিশন সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। পক্ষান্তরে ভাসানী, সোহরাওয়ার্দী বিরোধী দলে অবস্থান নেন। যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভায় নেজামে ইসলাম পার্টির পক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন যথাক্রমে আশরাফ উদ্দীন চৌধুরী শিক্ষামন্ত্রী, অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দীন আহমাদ আইনমন্ত্রী এবং অ্যাডভোকেট ফরিদ আহমাদ কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী।
সংসদে নেজামে ইসলাম পার্টির আসন সংখ্যাধিক্যের হিসাবে তেমন বেশি না হলেও আল্লামা আতহার আলী রহ.-এর ব্যক্তিত্বের দরুণ সেখানে নেজামে ইসলাম পার্টির প্রভাব-প্রতিপত্তি ছিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে নেজামে ইসলাম পার্টির সংসদ সদস্য এবং আতহার আলী রহ.-এর আশির্বাদপুষ্ট চৌধুরী মোহাম্মাদ আলীর প্রধানমন্ত্রীত্বে নেজামে ইসলাম পার্টির কেন্দ্রীয় সরকার গঠন এবং ৫৬ সনের ইসলামি শাসনতন্ত্র বিল পাশ করানো ও অনুমোদনের মাধ্যমে। যে সংবিধানের বদৌলতে পাকিস্তান হয়েছিল একটি কল্যাণমুখী ইসলামি প্রজাতন্ত্র। আল্লামা আতহার আলীর সবচেয়ে বড় সাফল্য সংসদে ইসলামী সংবিধান প্রণয়ন এবং পাশকরণ। এ ছিল তাঁর অনন্য অমর কীর্তি। যা ছিল হাজার বছরের মুসলিম আশা-আকাঙ্ক্ষার ও শত চেষ্টার চূড়ান্ত সফলতা। যা তাঁর হাতেই পেয়েছিল পূর্ণতা এবং বাস্তবরূপ।
নেজামে ইসলাম পার্টি কর্তৃক ইসলামপন্থীদের অভূতপূর্ব সাফল্যে দেশ-বিদেশের ইসলামবিরোধী মহল ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়ে এবং ৫৮ সনে আইয়ূব খানকে দিয়ে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ইসলামি সংবিধানকে বাতিল করে দেয়া হয়। আইয়ূব খান এক নিমিষেই এক ঘোষণাতেই এতদিনের মুসলিম হৃদয়ের একান্ত কামনা এবং শত কষ্ট-প্রচেষ্টার ও স্বপ্নের ইসলামি হুকুমততন্ত্র নস্যাত করে বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমানের ঈমানে প্রচণ্ডভাবে আঘাত হানে। ইসলামি নেজাম কায়েমের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন হয়ে যায় চুর্ণবিচুর্ণ। ইসলামি রাজনীতি পিছিয়ে পড়ে আবারও অনেক।
আতহার আলী রহ. আইয়ূব খানের ইসলামবিরোধী পারিবারিক আইনসহ যাবতীয় ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড ও মৌলিক গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে তুমুল আন্দোলন গড়ে তোলে ৬৫ সনে তাকে নির্বাচন দিতে বাধ্য করেন। সেসময় তিনি সমস্ত বিরোধীদলীয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে মুহতারামা ফাতেমা জিন্নাহকে একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী মনোনীত করেন এবং দেশব্যাপী নির্বাচনী প্রচারণা চালান। কারচুপির কারণে নির্বাচনে আইয়ুব খান বিজয়ী হবার পর সর্বপ্রথম আতহার আলী রহ.-কেই কারারুদ্ধ করা হয়। ৬৫ সনের পাক-ভারত যুদ্ধ শেষের সামান্য পূর্বে তাঁকে মুক্তি দেয়া হয়।
৫৯ সালে কিছু বিপথগামী এবং দিল্লী ও মধ্যপন্থী কিছু রাজনৈতিক দল যখন ৫৬-এর ইসলামি সংবিধানের বিরুদ্ধে প্রপাগাণ্ডা চালিয়ে ছিল, তখন তিনি শারীরিক অক্ষমতা ও বার্ধ্যক্যজণিত অসুস্থতা সত্ত্বেও ৫৬- এর সংবিধান পুনরুদ্ধার আন্দোলনে বলিষ্টভাবে নেতৃত্ব দেন। কিন্তু আইয়ুব মার্শাল ‘ল’-এর দশকে পানি অনেক দূর গড়িয়েছে। ইসলামবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো অনেক মজবুত ভিত গড়ে নিয়েছে। ফলে অনিবার্যভাবে ৭০-এর নির্বাচনে ইসলামপন্থীদের পেছনে হঠতে হয়েছে এবং ইসলামবিরোধী ও সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্রপন্থী দলগুলো বিজয়ী হয়েছে। এরইমধ্যে পশ্চিম পাকিস্তানিদের স্বৈরতন্ত্রের কারণে শুরু হলো বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ। অবশেষে অনেক রক্তের বিনিময়ে পশ্চিম পাকিস্তানি স্বৈরাচারীদের কবল থেকে ৭১ সনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়।
ইন্তেকাল
স্বাধীনতাযুদ্ধের পরে আওয়ামী কর্তৃপক্ষও আইয়ুব খানের মতো মাওলানা আতহার আলীকেই সবচেয়ে বড় হুমকি মনে করতে থাকে। ফলে তাঁকে বিনা কারণে ৭১ থেকে ৭৪ পর্যন্ত প্রায় তিন বছর কারাভোগ করতে হয়। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে তাঁকে মুক্তি দেয়া হয়। অত্যধিক পরিশ্রম, দীর্ঘ কারাভোগ এবং বয়সের ভারে নূব্জ্য হওয়ার কারণে তাঁর স্বাস্থ্য একেবারে ভেঙে পড়ে। অতঃপর প্রায় দুই বছর বার্ধ্যক্যজনিত রোগ ভোগের পরে ৭৬ সনের ৫ অক্টোবর ইহজগত ত্যাগ করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন।