আবদুর রহমান দাখিল:
বাংলা নারীবাদ শব্দের ইংরেজি রূপ Feminism মূলত Feminine মূল থেকে উদ্ভূত। এর ফরাসি ও জার্মান প্রতিশব্দ Feminin, অর্থ—নারী বা স্ত্রীলিঙ্গ। শব্দটির মূল উৎপত্তি লাতিন শব্দ Femina থেকে। ফেমিনিজম বা নারীবাদ শব্দটি পরিভাষা হিসেবে সর্বপ্রথম ফরাসি ভাষায় প্রবেশ করে ১৮৩৭ সালে, ‘ম্যান-ওমেন’ শিরোনামে লিখিত একটি প্রবন্ধের মাধ্যমে। প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৭২ সালে। উক্ত প্রবন্ধে ফেমিনিজম শব্দটি এমন নারীদের বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছিল, তারা আচার-আচরণে পুরুষের অনুকরণ করে। কিন্তু ফেমিনিজম শব্দটি এই অর্থে ব্যবহারের আগে থেকেই নারীবাদী আন্দলনের সূচনা হয়েছিল। এমনকি প্রথম দিককার নারীবাদীরা নিজেদের ফেমিনিস্ট শব্দে পরিচিত করত না।
নারীবাদ বা ফেমিনিজম শব্দটির পারিভাষিক সংজ্ঞা নিয়ে রয়েছে তুমুল বিতর্ক। পশ্চিমা নারীবাদী চিন্তক ও লেখিকা বেল হোকস বিষয়টি স্বীকার করে বলেন—‘নারীবাদী চিন্তার একটি কেন্দ্রীয় সমস্যা হচ্ছে এর একটি সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞায় সকলের ঐকমত প্রতিষ্ঠিত না হওয়া, কিংবা এমন কোনো সংজ্ঞা গ্রহণ করতে না পারা যা আমাদের সকলের চিন্তাকে প্রতিফলিত করে। একটি সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞায় একমত হতে না পারলে তত্ত্ব ও মতাদর্শ হিসেবে এর শক্ত ভিত্তি আমরা দাঁড় করাতে সক্ষম হব না এবং এর সূত্র ধরে কোনো সফল ও পূর্ণাঙ্গ প্রকল্পে আমরা মনোনিবেশ করতে পারব না।’
সংজ্ঞা নিয়ে এই মতপার্থক্যের মূল কারণ হচ্ছে স্থান ও কাল ভেদে নারীবাদী আন্দলন একেক সময় একের রূপ ধারণ করেছে এবং সময়ে সময়ে তাতে নানা বিবর্তন ও সংস্কার এসেছে। তবে সংজ্ঞা নিয়ে এই বিতর্ক সত্ত্বেও নারীবাদ বলতে যা বোঝায় তা হচ্ছে—নারীর ওপর পারিবারিক সহিংসতা ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধ করতে এবং নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী-পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলন করা।
উল্লেখ্য যে, আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু ইসলামী নারীবাদ হলেও আমরা পাশ্চাত্য নারীবাদ দিয়ে আলোচনা শুরু করেছি। কারণ ইসলামী নারীবাদ পশ্চিমা নারীবাদের বিকল্প হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও মূলত এ দুইয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। ‘ইসলামী নারীবাদ’ পরিভাষাটির প্রথম ব্যবহার দেখা যায় ১৯৯২ সালে তেহরান থেকে প্রকাশিত নারী বিষয়ক ম্যাগাজিন ‘জানান’ -এ দুজন ইরানি লেখিকা জিবা মীর হুসাইনি ও আফসানা নজমাবাদীর লেখায়। এরপর ১৯৯৬ সালে সৌদি লেখিকা মী ইমানির বই ‘ইসলাম ও নারীবাদ’ প্রকাশিত হয়, যেখানে এই পরিভাষাটি ব্যবহার হয়।
প্রচলিত পশ্চিমা নারীবাদ ও ইসলামী নারীবাদের মূল চিন্তা ও দাবিতে তেমন কোনো পার্থক্য না থাকলেও দাবি-উপস্থাপন ও কর্মপন্থায় কিছু ভিন্নতা রয়েছে। লেবাননী গবেষক ও লেখিকা দিলাল বাজরি বলেন—‘ইসলামী নারীবাদ পশ্চিমা নারীবাদের সমস্ত চিন্তাকে উত্তরাধিকার সূত্রে গ্রহণ ও নিজের ভেতর ধারণ করলেও তারা সেটা অস্বীকার করে বলে, এটা ইসলাম।’ নারীবাদ যেমন প্রচলিত সমস্ত প্রথা ও ধর্মকে পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থা হিসেবে দাবি করে, যা যুগ যুগ ধরে নারীকে নিপীড়িত শোষিত ও বঞ্চিত করার জন্যই তৈরি হয়েছে। ইসলামী নারীবাদের দাবিও একই। তবে সমস্যার মোকাবেলায় পশ্চিমা নারীবাদ গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, স্বাধীনতা, সাম্য ইত্যাদির মতো লিবারেল ধারণাগুলোকে সামনে আনলেও ইসলামী নারীবাদ প্রাথমিকভাবে এর মোকাবেলা করতে চায় ভিন্নভাবে।
ইসলামী নারীবাদের মতে কোরআন ও হাদিসের সমস্ত প্রচলিত ব্যাখ্যা হচ্ছে পুরুষতান্ত্রিক ব্যাখ্যা। ফলে কোরআন ও হাদীসকে নারীবাদের আলোকে অধ্যায়ন ও পুনর্পাঠ করতে হবে এবং নারীবান্ধব নতুন ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে হবে। এই দৃষ্টিকোণকে সামনে রেখে ইসলামী নারীবাদ নতুনভাবে কোরআন-হাদিসের পাঠ ও ব্যাখ্যা করতে চায়। এই চিন্তার সূত্র খুঁজতে গেলে আমরা সন্ধান পাব নতুন আরেকটি ধারণার—যা ‘নারীবাদী ধর্মতত্ত্ব’ নামে পরিচিত। পশ্চিমে ধর্মের বলয়ে থেকে বা ধর্মকে একেবারে প্রত্যাখ্যান না করে যারা নারীবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে, তাদের হাত ধরেই এই ধারণার উৎপত্তি। ফলে আমরা দেখতে পাই ইসলামী নারীবাদ শব্দটির আবির্ভাবের পূর্ব থেকেই ‘ইহুদি নারীবাদ’ ও ‘খৃষ্টান নারীবাদ’— শব্দদুটির প্রচলন ছিল। এরা সবাই যদিও ধর্মের ভেতরে থেকে ধর্মের নারীবাদী ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে চেয়েছে, কিন্তু শেষ বিচারে প্রায় সবার পরিণতি হয়েছে ধর্মবিদ্বেষ থেকে নিয়ে ধর্মের বিবিধ বিধানের সরাসরি প্রত্যাখ্যান।
ইসলামী নারীবাদ কীভাবে একজন মানুষকে ধীরে ধীরে কুফর ও রিদ্দাহ পর্যন্ত নিয়ে যায়, তার বিররণ দিয়েছেন ড্যানিয়েল হাকিকাৎজু। তিনি পাঁচটি স্তর বর্ণনা করেন, যার একেকটি স্তর অতিক্রম করে করে চূড়ান্ত স্তরে পৌঁছেন একজন মুসলিম নারীবাদী, সেখানে ধর্মের নানা বিধানকে সরাসরি অস্বীকার করেন। প্রথম ধাপে কিছু যৌক্তিক অভিযোগ দিয়েই শুরুটা হয়। মুসলিম পুরুষরা নারীদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন নয়, নারীরা নিপীড়িত, নিগৃহীত। ইসলামী প্রতিষ্ঠানগুলো এ নিয়ে কোনো কথা বলে না, কার্যকর পদক্ষেপ নেয় না ইত্যাদি। বলাবাহুল্য যে, এমন সমস্যাগুলো কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না। তবে এর সমাধান কখনোই নারীবাদ নয়, বরং ইসলামের সঠিক জ্ঞানের চর্চা ও ইসলামী আইনের প্রতিষ্ঠা। কিন্তু যখন এর সমাধান হিসেবে নারীবাদকে গ্রহণ করা হয়, তখন মূলত একটা সমস্যার সমাধানে তার চেয়ে বড়ো আরেকটা সমস্যাকে আমদানি করা হয়।
প্রথম ধাপে নারীর বিভিন্ন অধিকারের বিষয়ে নানা অভিযোগ আপত্তির পর দ্বিতীয় ধাপে এই ব্যাপারগুলো মতাদর্শিক রূপ নেয়। তখন এমন কিছু নতুন অভিযোগ উত্থাপন করা হয়, যা আসলে বাস্তবতা বিবর্জিত। যেমন অমুক কনফারেন্সে কেন শুধু পুরুষদের রাখা হল, নারীদের কেন রাখা হলো না, কেন নারীদের পর্দা, হিজাব, শালীনতা বিষয়ে পুরুষরা বলবে? ইত্যাদি। এ পর্যায়ে এসে সমস্ত সমস্যার জন্য দায়ী করা হয় পুরুষতান্ত্রিকতা নামক এক অদৃশ্য জুজুকে। এই ধাপে আলোচনার কাঠামো গড়ে ওঠে এবং চালিত হয় পশ্চিমা নারীবাদী এবং লিবারেল অবস্থানকে কেন্দ্র করে। এ সময়ে নারীর প্রতি ইসলামের বিশেষ ও স্বতন্ত্র কিছু বিধান নিয়ে সোচ্চার হতে দেখা যায় তাদের। যেমন পর্দা, হিজাব, নারীর ঘরের বাইরে যাওয়া, সাধারণ কর্মক্ষেত্রে কাজ করা, নারী-পুরুষের মেলামেশা ইত্যাদি। এসব বিষয়ে অনেকটা অজ্ঞতা নিয়েই ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া হয়।
তৃতীয় ধাপে যখন একজন নারীবাদী জানতে পারে যে, নারী-বিষয়ক এসব স্বতন্ত্র বিধানগুলো আসলেই শরীয়াহ নির্দেশিত, তখন ইসলামী জ্ঞানব্যবস্থা নিয়েই সে অভিযোগ তোলে। ইসলামী জ্ঞানের সিলসিলাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়। যুগ যুগ ধরে চলে আসা মুসলিম স্কলারদের পুরুষতান্ত্রিক বলে আখ্যা দেওয়া হয়। কোরআন ও হাদিসকে নতুন করে নারীবাদী ব্যাখ্যায় এনে নারীবাদী ধর্মতত্ত্ব উদ্ভাবনের প্রয়োজনীতা উপলব্ধি হয়। এই ধারাবাহিকতার শেষ থেকেই তৈরি হয় চতুর্থ ধাপ।
চতুর্থ ধাপে একজন মুসলিম নারীবাদী লক্ষ্য করে শুধুমাত্র কোরআন হাদিসের ব্যাখ্যার মধ্যেই না, বরং সরাসরি কোরআন ও হাদিসের টেক্সটে সুস্পষ্টভাবে এমন কিছু বিষয় আছে, যা নারীবাদের মানদণ্ডে টিকে না। যেমন সুরা নিসার ৩৪নং আয়াত, যেখানে আল্লাহ বলেছেন—‘পুরুষরা নারীদের তত্ত্বাবধায়ক, এ কারণে যে, আল্লাহ তাদের একের ওপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন’। এমন অন্যান্য আয়াত, যেখানে অবাধ্যতার জন্য নারীদের বিছানা ত্যাগ ও তাদের মৃদু প্রহার করতে বলা হয়েছে, দুইজন নারীর সাক্ষ্যকে একজন পুরুষের সাক্ষ্যর সমান বলা হয়েছে, উত্তরাধিকার আইনে পুরুষের অংশকে দ্বিগুণ করা হয়েছেন, আকল ও ধর্মে নারীর অপূর্ণাঙ্গতার কথা বলা হয়েছে ইত্যাদি। এই ধাপে এসে যখন মুসলিম নারীবাদী দেখে যে, এসব বিষয়কে পুরুষতান্ত্রিক ব্যাখ্যা বলে পার পাওয়া যাবে না, তখন সে সরাসরি এসব বিষয়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। যেমন মালয়েশিয়ার মুসলিম নারীবাদী সংগঠন সিস্টার্স ইন ইসলামের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আমিনা ওয়াদুদের মতে— ‘কুরআনে বর্ণিত স্পষ্ট যেসব আয়াতের বিকল্প ব্যাখ্যা নারীবাদীরা খুঁজে পাচ্ছেন না, সেসকল আয়াতকে প্রত্যাখ্যান করা উচিত। তিনি বলেন— ‘ব্যক্তিগতভাবে আমি এমন কিছু আয়াত পেয়েছি, যেগুলো অর্থ প্রকাশে অপর্যাপ্ত কিংবা অগ্রহণযোগ্য, যদিও সেসবের উপর অনেক ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, যেখানে ঐশী বাণী হিসেবে কুরআনের বিশেষ কিছু বক্তব্য সমস্যাযুক্ত মনে হবে, ‘সেখানে সুযোগ রয়েছে কুরআনের বক্তব্যকে প্রত্যাখান করার, জবাব দেয়ার, এমনকি ‘না’ বলার।
এভাবেই একজন মুসলিম নারীবাদী দিনশেষে সরাসরি ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। পঞ্চম ধাপে এসে তারা ধর্ম নয়, বরং সরাসরি স্রষ্টার উপর নানা অভিযোগ তুলে। যেমন, আল্লাহ যদি নারী ও পুরুষের ব্যাপারে সাম্যবাদী হন তাহলে নিজের ব্যাপারে কুরআনে কেন পুরুষবাচক শব্দ ব্যবহার করলেন? আল্লাহ্ কেন প্রথমে আদমকে (আলাইহিস সালাম) তথা একজন পুরুষকে সৃষ্টি করলেন? কেন প্রথমে নারীকে সৃষ্টি করলেন না? শেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেন একজন পুরুষ? কেন নারী নন? কেন আল্লাহর ওয়াহি নারীর মাধ্যমে না এসে পুরুষের মাধ্যমে এল? এভাবে একজন মুসলিম নারীবাদী তার চূড়ান্ত অবস্থা তথা কুফর ও রিদ্দাহের দিকে পৌঁছে যায়।
ওয়াহিদ মুরাদ একে আখ্যায়িত করেন নারীবাদী ধর্মতত্ত্ব নয়, শয়তানী ধর্মতত্ত্ব বলে। তিনি এই পর্যায়গুলোকেই আরেকটু ভিন্নভাবে তুলে ধরেছেন। তার মতে— ‘নারীবাদী ধর্মতত্ত্ব আন্দোলন প্রথম পর্যায়ে সমস্ত ঐতিহ্যবাদী সনাতন ধর্মকে পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার ধারাবাহিকতা হিসেবে দেখিয়ে নারীর নিপীড়ন, বঞ্চনা ও শোষণের দায় আরোপ করে এবং এর উপর শক্ত সমালোচনা করে। যখন ধর্মীয় শিক্ষার প্রত্যাখ্যান করে সম্পূর্ণরূপে সুফল হওয়া যায়নি তখন দ্বিতীয় পর্যায়ে এই ধর্মগুলোর ঐতিহ্যে এবং ও টেক্সটে এমন রেফারেন্স খোঁজা শুরু করে, যার নারীবাদী ব্যাখ্যা নারীবাদের পক্ষে ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু এই প্রক্রিয়াও যখন কাঙ্ক্ষিত ফল দিতে সমর্থ হয়নি, তখন নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গিকে ধর্মীয় শৈলীতে উপস্থাপন করার জন্য ‘শয়তানি নারীবাদী ধর্মতত্ত্ব’ নামে একটি নতুন ধর্ম তৈরি করা হয়। এজন্য অনেকেই ইসলামী নারীবাদকে পশ্চিমা নারীবাদের চেয়েও ভয়ঙ্কর বলেছেন।
শেষ কথা হচ্ছে, নারীদের উপর সমাজে যেসব শোষণ, নিপীড়ণ ও বঞ্চনা চলে, তা কখনোই অস্বীকার করা যায় না। তবে এর প্রতিকার ইসলামেই রয়েছে। শরীয়াহর বিশুদ্ধ জ্ঞানের চর্চা ও সত্যিকারের ইসলামী আইন সমাজে প্রতিষ্ঠিত ও বাস্তবায়িত করতে পারলেই এর প্রতিকার সম্ভব। নারীবাদের ধারণা নিজেই একটা সমস্যা, এটা কখনোই সমাধান নয়।
ইউরোপে ফেমিনিস্ট আন্দলনের ভিত্তি তৈরি করে মেরি ওয়েস্টনক্র্যাফ্টের বিখ্যাত বই A Vindication of the Rights of Woman (1792), যা প্রকাশিত হয়েছিল ১৭৯২ সালের দিকে। এই বই প্রকাশিত হবার ৩ বছর পূর্বে ১৭৮৯ সালে ইউরোপীয় পর্যটক, নাট্যকার এবং লেখিকা লেডি এলিজাবেথ ক্র্যাভেন উসমানী খিলাফতের রাজধানী তুরস্ক ভ্রমণ করেছিলেন। তিনি তুরস্কের মুসলিম নারীদের সম্পর্কে কিছু পর্যবেক্ষণ লিখেছিলেন, অর্থাৎ যখন ইউরোপে নারীবাদের জন্ম হয়নি। ওসমানীয় তুর্কি নারীদের সম্পর্কে তিনি লিখেন—‘এখানে প্রতিদিনই অনেক নারীকে দৈনন্দিন কাজকর্মের প্রয়োজনে রাস্তায় চলাচল করতে দেখা যায়। হয়ত সংখ্যাটা পুরুষের তুলনায় বেশি হবে না, কিন্তু কোনোভাবেই কম নয়। আমি এমন কোনো দেশ দেখিনি, যেখানকার নারীরা তুরস্কের নারীদের মতো এতোটা স্বাধীনতা ভোগ করে। তাদেরকে কোনো প্রকার অবমাননার শিকার হতে হয় না। নারীর প্রতি তুর্কিদের উদারতা অন্য সব জাতির জন্য আদর্শ হওয়া উচিত। আমি সত্যিই মনে করি পৃথিবীর অন্য কোনো নারী এখানকার নারীদের মতো স্বাধীনতা অর্জন করতে পারেনি। তাদেরকে কোনো প্রকার হয়রানির আশঙ্কায় থাকতে হয় না। এখানের নারীরা হয়তো নিজেদেরকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ ভেবে গভীরভাবে শ্বাস নেয়।’
এটাই ইসলামী ব্যবস্থার অধীনে নারীদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ছবি। পুরো ইসলামী খেলাফতের সময়টা জুড়েই এই চিত্র ছিল। বিশেষত এটা সেই সময়ের চিত্র, যখন ইউরোপে নারীবাদী আন্দলনের প্রেক্ষাপট তৈরি হচ্ছে। তাই নারী নির্যাতন ও নারী অধিকার হরণের একমাত্র সমাধান ইসলামই, অন্য কিছু নয়।