যেভাবে কাটাতেন সময় : মদিনা হুজুরের সকাল-সন্ধ্যা

হুসাইন আহমদ:

মদিনা হুজুর—আমার স্মৃতির জগতে সবচেয়ে উজ্জ্বল, সবচে জ্যোতির্ময় একজন মানুষ। তার জীবনের শেষ চারটি বছর আমি তার সঙ্গে ছায়ার মতো লেগে থেকেছি। ভোরে ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমুতে যাবার আগ পর্যন্ত। আমি সাক্ষী হয়ে রয়েছি তার জীবন যাপনের। আমার হাতে এখনো লেগে আছে তার স্পর্শ। আমার অস্তিত্বে মিশে আছে তার নরোম মমতা।

হুজুর তাহাজ্জুদ পড়তে উঠতেন। বার্ধক্য তাকে নিয়মিত ইবাদাতে পরাজিত করতে পারেনি। তাহাজ্জুদ পড়ে আবার শুয়ে যেতেন। উঠতেন ফজরের আজান হলে। তখন আমিও উঠে হুজুরের কাছে হাজির হতাম। পানি গরম করতাম। গরম পানিতে অজু করিয়ে হুজুরকে নিয়ে যেতাম মসজিদে।

ফজর নামাজের পর হুজুর দৈনন্দিন আমল করতেন। তাসবিহপাঠ, সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত ও আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত ইত্যাদি আরও অন্যান্য আমল। সূর্য উঠলে চাশত পড়ে শুয়ে যেতেন। আটটা কিংবা নয়টায় উঠে নাশতা করতেন। নাশতার পর আবার শুইতেন। উঠতেন জোহরের আগে। উঠে গোসল করতেন। শরীর ভালো থাকলে কুরআন তেলাওয়াত করতেন নামাজের আগ পর্যন্ত।

জোহরের পর খাবার খেয়ে মোতালাআ করার জন্য কিতাব হাতে নিতেন। তার দরসের সময় ছিলো আসরের আগে। যতদিন সুস্থ ছিলেন, ছাত্রাবাস থেকে মূল ভবনে এসে ক্লাস করাতেন। যখন আর মূল ভবনে আসতে পারতেন না, তাকমিলের ছাত্ররা আবু দাউদ কিতাব নিয়ে ছাত্রাবাসে তার রুমে চলে যেতো। আসর পড়ে তিনি বাসায় যেতেন না। বারান্দায় পায়চারি করতেন।

মাগরিব পড়ে মদিনা হুজুর হালকা চা-বিস্কুট খেতেন। তারপর শরীর ভালো থাকলে কিতাব মুতালাআ করতেন। নতুবা শুয়ে পড়তেন। এশারের আজান হলে উঠে অজু করে তৈরী হতেন। এশার পর খাবার খেয়ে আবার শুয়ে পড়তেন।

শেষ ক’বছর এভাবেই কেটেছে তার জীবন। তিনি আমাকে কখনো ধমক দেননি। খুব স্নেহ করতেন আমাকে। লকডাউনে যখন আমি বাড়ি চলে গিয়েছিলাম, প্রতিদিন ফোন করে হুজুরের সঙ্গে কথা বলতাম। হুজুর খুব খুশি হতেন। তিনি আমাকে প্রায়ই বলতেন, উসতাদের সঙ্গে বেয়াদবি করবি না। সুন্নতের বিপরীত চলবি না। মদিনার নবিজিকে কষ্ট দিয়ে মদিনার ইলম পাওয়া যায় না। শুনেছি—হুজুরের মধ্যবয়সের ছাত্ররা তাকে ‘আব্বা’ বলে ডাকতো। তিনিও ছাত্রদেরকে পিতার মতো আদর স্নেহ করতেন।

আল্লাহ তার কবরকে জান্নাতের বাগান বানিয়ে দিন। আল্লাহ আমার খেদমতকে কবুল করে নিন। আমিন।

 

আগের সংবাদকরোনারোধে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ৫ জরুরি নির্দেশনা
পরবর্তি সংবাদডব্লিউএইচও’কে আরও শক্তিশালী করার প্রস্তাবে বাধা যুক্তরাষ্ট্রের