মোহাম্মদ ইশরাক:
এক.
চাইলে লেখাটা আব্দুল মালেক থেকেও শুরু করা যেত। ১৯৬৯ সালের আগস্টে পাকিস্তান জমিয়তে তলাবা তার প্রথম শহীদ পায় পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈবরসায়নের ছাত্র আব্দুল মালেকের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে। যারা পাকিস্তানীদের মুসলমান আর বাঙ্গালীদের অমুসলমান বা কম মুসলমান আকারে দেখিয়ে তৃপ্তি পান তাদের জন্য এটা আজীবন এক ধাঁধা হয়ে থাকবে যে, অল পাকিস্তান জমিয়তে তলাবার পয়লা শহীদ কোন উজ্জ্বল চামড়ার সুদর্শন পাঞ্জাবী তরুণ না। সুঠামদেহী চওড়া সিনার পাঠান না। সিন্ধি না। আফগান সীমান্তের অধিবাসী না। কৃষ্ণকায় ছোটখাটো গড়নের এক বাঙ্গালী। যেই বাঙ্গালীর মুসলমানিত্ব না বাংলার শাহবাগী এলিটরা স্বীকৃতি দেয়, না দেয় পাক-ভারত উপমহাদেশে ইসলামের ঠিকাদারের দায়িত্ব নেওয়া নর্থ ইন্ডিয়ান আশরাফ মুসলমানরা।
সেকুলার শিক্ষাব্যবস্থার বিপক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শক্তিশালী বক্তব্য প্রদান করায় আব্দুল মালেককে মধ্য আগস্টে শহীদ হতে হয়। মালেক হত্যার প্রতিবাদ জানাতে হয় শেখ মুজিবকেও। সমগ্র পাকিস্তানে এটা নিয়ে আলোড়ন তৈরী হয়েছিল। মালেক হত্যাকাণ্ডে মামলাও হয়েছিল। চেনাজানা শাহবাগী রাজনীতিবিদদের সাথে সাথে ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামও মালেক হত্যাকাণ্ডের আসামী ছিলেন। পরবর্তীতে একাত্তরের সহিংসতা এবং সহিংসতা পরবর্তী রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক যুদ্ধের ফলে মালেক হত্যা আড়ালে চলে যায়। খুনীদের গাড়িতে শোভা পায় আজাদ বাংলাদেশের পতাকা। বাংলাদেশের পতাকায় সবুজের মধ্যে যে লাল বৃত্ত নাকি বাংলার সবুজ জমিনে শহীদের লাল রক্তকে নির্দেশ করে। সেই লাল রক্ত আসলে মালেক, জাফর ইকবালের নানা, আর অজস্র বিহারী-পাহাড়ি-বাঙ্গালী-হিন্দুর রক্ত যারা পূর্ব-পশ্চিম পাকিস্তানের শাহবাগীদের ক্ষমতালিপ্সা এবং/অথবা ইসলামবিদ্বেষের শিকার হয়েছে।
মালেক হত্যার ঠিক চল্লিশ বছর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শরীফুজ্জামান নোমানী শহীদ হন। নোমানী ছিলেন মালেকের ইসলামী ছাত্রসংঘের উত্তরসূরী ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সেক্রেটারি। সেকুলার ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের হামলায় নোমানী শহীদ হওয়ার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের সাংগঠনিক সম্পাদক বাদী হয়ে সেকুলার সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
২০১৩ সালে অনেক বাঙ্গালী রাজনৈতিক নেতার ফাঁসির আড়ালে নোমানী হত্যা মামলার বেকসুর খালাসের রায় কারও নজর কাড়ে নাই। মালেকের মত নোমানীকেও কেউ হত্যা করে নাই। মালেক-নোমানীরা জেসিকা নন। জেসিকা হলে হয়ত ক্ষমতা, নারী প্রশ্ন, ও ইনসাফের জরুরতের সম্মিলনে আমরা নো ওয়ান কিল্ড মালেক বা নো ওয়ান কিল্ড নোমানী নামে আর্টফিল্ম দেখতে পেতাম।
নোমানী হত্যার ঠিক দশ বছর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে আবরার ফাহাদকে খুন করে বাংলাদেশের স্বঘোষিত প্রগতিশীল শক্তি। “মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির” ছাত্রসংগঠনের রাতভর নির্যাতনে শহীদ হন সন্দেহভাজন শিবিরকর্মী, “সাম্প্রদায়িক ও পটেনশিয়াল টেররিস্ট” আবরার ফাহাদ।
আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত শাহবাগ প্রভাবিত সংগঠন ছাত্রলীগের সকল নেতা-কর্মী-সমর্থক-সহযোগীর সাজা হয়েছে। ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৫ জনের জেল।
এই লেখার শিরোনাম মালেক থেকে আবরার না হয়ে নোমানী থেকে আবরার; কারণ আমার উদ্দেশ্য আপনাদের দেখানো যে, কিভাবে দশ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতায় এক বিশাল পরিবর্তন ঘটে। মাত্র দশ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের পাবলিক ডিস্কোর্স কিভাবে র্যাডিকালি বদলে যায়। আমি এই লেখায় কে কাকে খুন করেছে তা নিয়ে আলোচনায় মোটেই আগ্রহী নই। আমার দেখার বিষয় যে কিভাবে সহিংসতা ও তার পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা বাংলাদেশে হয়। নোমানী এবং আবরার হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে যে ডিস্কোর্স তারই ব্যবচ্ছেদে আমি আগ্রহী।
দুই.
অনেকেরই খুব আশ্চর্যজনক মনে হতে পারে যদি আমি বলি যে, আসলে আবরার ফাহাদের হত্যারই কোন বিচার হয় নাই। বরং মালেক আর নোমানী হত্যাকান্ড বিচার না পেলেও স্বীকৃতি পেয়েছে। এটা বিচারের প্রথম ধাপ।
মালেক এবং নোমানী হত্যাকাণ্ডের পর কোন আত্মস্বীকৃত খুনী ছিল না। ছাত্র ইউনিয়ন-ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন পাকিস্তানী শাহবাগী সংগঠন যাদের বিরুদ্ধে মালেক হত্যার অভিযোগ উত্থাপিত হয়, তারা কেউ মালেক হত্যার দায় নিতে প্রস্তুত ছিল না। শেখ মুজিব মালেক হত্যার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেন বা দিতে বাধ্য হন। মাহফুজ আনাম সে সময়ে মাগরেবি পাকিস্তানে ছিলেন প্রমাণপূর্বক খ্যাতনামা প্রকৌশলী ও মাশরেকি পাকিস্তান জামাত নেতা খুররম মুরাদ এবং পাকিস্তান মিলিটারির হাতে গুম হওয়া ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতা শাহ জামালের সহযোগিতায় চার্জশিট থেকে নিজের নাম কাটান। মালেকের ছাত্রসংঘ পরিচয় নিয়ে কোন সন্দেহ ছিল না। কিন্তু গোটা পাকিস্তানে কোন শাহবাগী কখনো বলতে পারে নাই যে সে মালেককে খুন করেছে। কারণ এই খুন করাটা জায়েজ ছিল না সেই সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায়। মালককে খুন করা হয়েছে, অভিযুক্ত খুনীরা মন্ত্রীও হয়েছে। কিন্তু মালেকের খুনের কোন এজাজত সেই সমাজ-রাজনীতিতে বিদ্যমান ছিল না। প্রকাশ্য দিবালোকে খুন হলেও আদতে মালেকের খুন হয়েছে নিভৃতে। এখানে অপরাধ আছে কিন্তু অপরাধী নাই। কারণ এই অপরাধ সামাজিক-রাজনৈতিকভাবে জায়েজ না।
এর চল্লিশ বছর পর যখন নোমানীকে খুন করলেন শাহবাগীরা, ততদিনে এই পদ্মা-মেঘনা-যমুনার তীরে অনেক পালাবদল ঘটেছে। একাত্তরের খণ্ডিত ও বিকৃত ইতিহাস চর্চার বদৌলতে বিহারী ও প্রো-পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ করা ব্যক্তিরা হয়েছেন জাতীয় হিরো। আর বাংলাদেশ-বিরোধিতার প্রতিশব্দ হয়েছে যুদ্ধাপরাধ। এন্থনি মাসকারেনহাসের বইয়ে যে বাঙ্গালী মেজরকে বিহারী গণহত্যা-গণধর্ষণে জড়িত দেখতে পাই, তিনি হয়ে যান স্বাধীনতার ঘোষক। আর শান্তি কমিটির সদস্যদের অনেকে কোনদিন কারও ক্ষতি না করেও হয়েছেন মানবতাবিরোধী অপরাধী। মালেক-নোমানীর ছাত্রসংঘ-ছাত্রশিবিরও তখন পাবলিক ডিস্কোর্সে বেশ ব্যাকফুটে। এরপরও শাহবাগীদের নোমানীকে হত্যা করেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। তারা কখনো নোমানী হত্যার ক্রেডিট নিতে পারেন নাই। কখনো গর্ব করে বলতে পারেন নাই যে তারা শিবির মেরেছেন। নোমানী হত্যাকাণ্ডে মামলা করেছেন শিবিরেরই সাংগঠনিক সম্পাদক। পদাধিকার বলে তিনি বাদী হয়েছেন। নোমানীর পরিবার বা আইনজীবী কাউকে কখনো নোমানীর শিবির পরিচয় লুকাতে হয় নাই। শিবির হলে তাকে মারা জায়েজ এই যুক্তি তখনও বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয় নাই। যদিও তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়।
দশ বছর পর আবরার ফাহাদকে শিবির সন্দেহে নির্যাতনপূর্বক হত্যা করা হয়। আবরারের বাবা হতবাক হয়ে জানতে চান যে আজীবন আওয়ামী লীগ করা পরিবারের সন্তানকে কেন শিবির ট্যাগ দিয়ে মারা হল। অনেকে আবার বলেন যে শিবির নিশ্চিত না হয়ে এভাবে নির্যাতন করার অধিকার ছাত্রলীগকে কে দিল। অনেকে অবশ্য আরেকটু বেশী অধিকার সচেতন। তারা বলেন যে ফোন-ল্যাপটপ চেক করে কে শিবিরকর্মী সেটা যাচাই বাছাই করা, ধরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও টর্চার করা – দেশে পুলিশ থাকতে ছাত্রলীগ কেন এসব করবে। অর্থাৎ, শিবির সন্দেহে মানুষকে ধরা, যাচাই-বাছাই করা, এবং জিজ্ঞাসাবাদ ও নির্যাতন করার নেওয়ার অধিকার কেবল রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংস্থারই। আবরারের পক্ষের আইনজীবীও বারংবার বলেন যে, “মিথ্যা শিবির অপবাদ” দিয়ে আবরারকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। অনেকে অবশ্য মনে করেন যে, খুন করে আবরারকে মহৎ বানানো হয়েছে। হালকা চড় থাপ্পড় দিয়ে ছেড়ে দিলে ভাল হত। অথবা খুন করার দরকার ছিল না, শুধু ক্যাম্পাসছাড়া করাই যথেষ্ট ছিল।
আবরার হত্যার প্রতিবাদে দেশজুড়ে যে প্রতিক্রিয়া এবং অভিযুক্তদের শাস্তি দেওয়ার ব্যাপারে রাষ্ট্রের বিচার বিভাগের যে তড়িতকর্মা পরিচয় আমরা দেখতে পাই, তাতে “মিথ্যা শিবির অপবাদ” ছিল কেন্দ্রীয় যুক্তি। আবরারের মানবাধিকার নির্ভর করেছে এই “মিথ্যা শিবির অপবাদ” দাবীর সত্যতার ওপর। অর্থাৎ, আবরারকে যদি মিথ্যা শিবির অপবাদ না দিয়ে সত্য শিবির প্রমাণ করা যেত তাহলে আইনী মামলা থেকে শুরু করে জনরোষ সব উড়ে যেত। অভিযুক্ত আসামীদের আইনজীবিদের কেউ কেউ আদালতে আবরারের হত্যাকাণ্ডকে জামাত-শিবিরের অপপ্রচার বলে যুক্তিও দিয়েছেন।
মালেক এবং নোমানী হত্যার বিচার হয় নাই। কিন্তু তাদের কাউকে বিচারের অধিকারের দাবীতে পরিচয়ের রাজনীতি করতে হয় নাই। তাদের বিচারের অধিকার ছিল সর্বজন স্বীকৃত। মালেক-নোমানী হত্যাকাণ্ডকে বাংলাদেশের সমাজ-রাজনীতি প্রত্যাখ্যান করেছে কোন যদি-কিন্তু ছাড়াই। অন্যদিকে, আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ড জায়েজ নাকি নাজায়েজ সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতি আবরারের পরিচয়ের দ্বারস্থ হয়েছে। কোন যদি-কিন্তু ছাড়া একটা খুনের বিরোধিতা করা বাংলাদেশের মূলধারার সমাজের পক্ষে সম্ভব হয় নাই।
তিন.
মালেক, নোমানী, আবরার—এই তিনজনের খুনের সাথেই শাহবাগী প্রভাবিত ধারা তথা ছাত্রলীগের সংশ্লিষ্টতা আছে বলে মনে করেন অনেকে। এরপরও আমরা ইন্টুইটিভলিই বুঝি যে, আবরার হত্যা বাংলাদেশের আলোচিত অন্যান্য রাজনৈতিক সহিংসতা-হত্যাকাণ্ড থেকে ব্যতিক্রম। আলোচিত বললাম এ কারণে যে, অনালোচিত এরকম অনেক ঘটনাই ঘটেছে নোমানি আর আবরারের মধ্যবর্তী সময়ে। এর মধ্যে ঝিনাইদহের সোহানের কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। “গ্রামের চাচাতো ভাই” সোহান একজন কিশোর শিবিরকর্মী ছিলেন। তাকে গুম করে, নির্যাতন করে সপ্তাহ দুই পর হত্যা করা হয়। ২০১৬ সালের ঘটনা। সোহানের মা ছেলের লাশ পেয়ে বলেছিলেন “মারবেই যদি আমার ছেলেটার চোখ/নখ উপড়ে ফেলল কেন?”
২০১৪-১৫ সালে গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড খুবই স্বাভাবিক ছিল। সেসময় জামাত-শিবিরের নেতাকর্মীরা গুম হলে তাদের পরিবারকে দিয়ে জামাত-শিবির সংবাদ সম্মেলন করিয়ে বলাতো যে তারা জামাত-শিবিরের সাথে সংশিষ্ট নন, তারা রাজনীতি করেন না। এদের মধ্যে যাদের ভাগ্য ভাল তাদেরকে গ্রেফতার দেখিয়ে জেলে ভরা হত। কপাল আরেকটু কম ভাল হলে তারা খুন হতেন। কপাল একদম খারাপ হলে তারা গুম হতেন। বেঁচে আছেন না মরে গেছেন কেউ জানে না। লাশটুকু দাফন করার মত চওড়া কপাল তাদের পরিবারের ছিল না। এগুলো সম্পর্কে আমরা জানি না। কারণ তারা আবরারের মত “মিথ্যা শিবির অপবাদের” শিকার না। তারা সত্য শিবির প্রমাণিত ছিলেন।
অন্যদিকে, মালেক বা নোমানীর মানবাধিকার ছিল। কিন্তু নোমানী থেকে আবরারের মধ্যবর্তী যে জামাত-শিবির-সংস্থার নেতা-নেত্রী, কর্মী-মহিলা কর্মী সমর্থক-মহিলা সমর্থক জুলুমের সম্মুখীন হয়েছিলেন তাদের কারও মানবাধিকারই ছিল না। একাডেমিক পরিভাষায় একে বলা হয় right to have rights. তাদের সেই রাইট টু হ্যাভ রাইটস ছিল না। তারা ছিল ঊনমানুষ বা না-মানুষ। যাদের কেতাবি শব্দ পছন্দ তারা হয়ত আগামবেনের হোমো স্যাকার লফজযুগল এস্তেমালে আগ্রহী হবেন। খুন হলেই একজন হোমো স্যাকার হয়ে যায় না। শাহবাগী রাজিব হায়দার সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হন। সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে, বিচারের রায়ও হয়েছে। রায়ে আদালত বলেছেন, ভিক্টিম রাজীব হায়দার যে লেখালেখির মাধ্যমে ঘৃণা-বিদ্বেষমূলক প্রোপাগান্ডা করতেন তা নিন্দনীয় এবং ফৌজদারী অপরাধ। কিন্তু এতদসত্ত্বেও তিনি মানুষ। অপরাধী হলেও কেউ নামানুষ বা ঊনমানুষ হয়ে যায় না। তাকে খুন করার, তার মানবাধিকার কেড়ে নেওয়ার কোন অধিকার নাই। অভিযুক্ত খুনীদের ফাঁসির আদেশসহ বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডাদেশ হয়েছে। হোম স্যাকারের মানবাধিকার থাকে না। তার রক্ত হালাল। তাকে খুন করা বৈধ। তাকে খুন করলে কোন জবাবদিহি করতে হয় না। তবে কাউকে হোমো স্যাকার দাবী করে খুন করা হলে প্রমাণ করার জরুরত পড়ে যে নিহত ব্যক্তি আসলেই হোমো স্যাকার ছিল।
আবরারের ক্ষেত্রে তাই হয়েছে। খুনীরা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন যে আবরার ফাহাদ হোমো স্যাকার তথা সাচ্চা শিবির। তাই তাদের বিচার ও সাজা হয়েছে। আবরার হোমো স্যাকার হলে তা হত না। বিশ্বজিতও হোমো স্যাকার ছিলেন না। নোমানিও ছিলেন না। যদিও এদের খুনীরা সাজার হাত থেকে বেঁচে গেছে কিন্তু তাদের খুন করা বৈধ এরকম কোন ডিস্কোর্স নাই। তাহলে আমাদের বুঝতে হবে যে কিভাবে নোমানী থেকে আবরার—মাত্র দশ বছরের মধ্যে শিবির নামক হোমো স্যাকার আমরা পেলাম।
চার.
দায়মুক্তির রাজনীতি এখন খুব জনপ্রিয়। কারও কারও কথা শুনলে মনে হবে কাদের মোল্লাকে ফাঁসিটা জল্লাদ শাহজাহানই দিয়েছে। যত দোষ সব জল্লাদ শাহজাহানের। জল্লাদ শাহজাহান স্রেফ এগজিকিউশনারমাত্র—এই কথাটা বলতে গেলেই তারা বলবে জল্লাদের দায়মুক্তি দেওয়া হচ্ছে! এভাবে দায়মুক্তির অভিযোগ আরোপের মাধ্যমেও দায়মুক্তির রাজনীতি ফাংশন করে।
বিচারিক হত্যাকাণ্ডের শিকার জামাত ও একাত্তরের আলবদর নেতা মুজাহিদের কথা স্মরণযোগ্য। শহীদ মুজাহিদ তাঁর বিরুদ্ধে স্বাক্ষী দেওয়া সবাইকে মাফ করে দিয়েছিলেন। মুজাহিদও কি তাহলে দায়মুক্তির সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করতেন? নাকি মুজাহিদ আমাদের বোঝাতে চেয়েছেন যে, মার্সেনারিকে দোষ না দিয়ে খুনের আদেশদানকারীর দিকে মনযোগ দিতে?
বলেছিলাম আবরার হত্যার বিচার হয় নাই। বিচার হয়েছে “মিথ্যা শিবির অপবাদ” দিয়ে করা আবরার হত্যার। পণ্ডিতগণ কি কষ্ট করে এবার সত্য শিবির প্রমাণিত হোমো স্যাকারদের আবার মানুষ বানানোর দিকে একটু নজর দিবেন? নাকি তখন আবার গ্রে এরিয়া, শাহবাগী হলেও বুদ্ধিজীবী, রিকন্সিয়েলিশন, মডারেশন, বৃহত্তর ঐক্য, ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য এধরণের কথা শুনতে হবে? ছাত্রলীগ তো “গ্রামের চাচাতো ভাই”। তাই তার দোষ দেয়াটা খুব সহজ। কিন্তু যে শহুরে মধ্যবিত্ত শিক্ষিত ক্যুল ড্যুড ও তাদের পীরেরা শিবির নামক হোমো স্যাকার উদ্ভাবন করলেন তাদের বিরোধিতা করা খুব কঠিন। ওটা করলে বিপ্লবী তকমা পাওয়া যায় না। সুশীল সমাজে জায়গা হয় না। এস্থেটিক হয় না। সোশাল নেটওয়ার্ক হয় না। কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করা যায় না। স্টার সিনেপ্লেক্স আর নর্থ এন্ডে হ্যাং আউট করার মত মানুষ থাকে না। প্রথম আলোয়ে চাকরি জোটে না। নেত্র নিউজের কাজ পাওয়া যায় না। স্লিভলেস পাঠিকা জোটে না। ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ আর এল ক্লাসিকো নিয়ে বাহাস জমে না। এত কোরবানী করার কি দরকার বলুন? এর চেয়ে বরং হেলমেট লীগ আর ফুডপান্ডা মিম শেয়ার দেওয়াই তো ইনসাফবাদী হওয়ার জন্য যথেষ্ট। ছাত্রলীগের হাতে ইভ টিজিংয়ের শিকার হওয়া ওয়েস্টার্ন পরুয়া তরুণী থেকে শুরু করে খালেদা-নিজামী আমলে বোমাবাজি করা জেএমবি কর্মী সবাই আপনার পাশেই থাকবে।
ছাত্রলীগকে গালি দেওয়ার কাজটা সবাই পারে। যেসব শাহবাগী ছাত্রলীগের ওপর ভর করে বুয়েট ক্যাম্পাস থেকে জামাত-শিবির তাড়িয়েছে তারাও ছাত্রলীগকে গালি দেন। এমনকি ছাত্রলীগবিরোধী আন্দোলনও করেন! আপনি ইয়াসির কাজীর লেকচার শোনা রুচিসম্মত আদমী। কম করে হলেও মিজানুর রহমান আজহারীর লেকচার শোনেন। ওয়াজ আপনার রুচিতে ধরে না। আপনি কেন ওয়াজ শোনা, আরিফ আজাদের বই পড়া, ফেসবুকে ক্রিঞ্জ পোস্ট করা, ফেমিনিজম ইজ ক্যান্সার গ্রুপের সদস্য হওয়া, নিয়মিত কোরান-হাদীস পোস্ট করা খ্যাতদের কাতারে কেন নিজেকে নামাবেন? ইনসাফ তো আসবে-যাবে, কিন্তু সোশাল স্ট্যাটাস আর নেটওয়ার্ক তো অর্জন করতে হয় অনেক মেহনত করে। বহু বতসর ধরে। সামান্য ইনসাফের জন্য এই মারাত্মক সম্পদ কেন হাতছাড়া করবেন? দরকার হলে ইনসাফের মানেই পাল্টে দেবেন। জুলমি কাঠামোর নাম দিয়ে দিবেন ইনসাফ আর পিজি হাসপাতালে পোস্টগ্রাজুয়েশন করাকে বানাবেন মারাত্মক আওয়ামী কানেকশনের দলীল—প্রাইম মিনিস্টার্স অফিস না হলেও অন্তত স্বাচিপের ইকবাল আরসালানের দক্ষিণ হাত না হয়েই যায় না। মীর কাশেমের যেমন কোটি কোটি ডলার-ইউরো-পাউন্ড ছিল অমনই। কিংবা বাঁশেরকেল্লায় লাইকপ্রতি পাঁচ টাকার গল্প। ডাক্তারি পাশ করা প্রায় সব শিবির নেতা-কর্মীই যে দেদারছে বিসিএস চাকরি পাচ্ছে, পিজিতে পোস্টগ্র্যাড করছে—এই তথ্যগুলি লুকিয়ে যাবেন। ক্যাডার বৈষম্যের সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশের অবহেলিত ও অগুরুত্বপূর্ণ হিসাবে বিবেচিত সরকারি স্বাস্থ্যখাতে যে এখনও বাঙ্গালীরা টিকে আছে ওটাকে আখ্যা দিবেন ছাত্রলীগ করার মাধ্যমে ক্যারিয়ার তৈরী। ন্যারেটিভ আর ইমেইজের এই দুনিয়ায় সত্যের আর দরকারটা কি, তাই না?
পাঁচ.
এই কুসুম কুসুম ইনসাফবাদের রুপরেখা আমরা পাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ও শাহবাগী সিপিবির নেতা ড. এম এম আকাশ স্যারের লেখায়:
“ঘটনা যাই ঘটুক প্রগতিশীল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির এ ক্ষেত্রে যা করণীয় সেটা হচ্ছে, ১৯৭১ সালের পরাজিত প্রতিক্রিয়াশীল সন্ত্রাসী শক্তিকে যদি আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় বল প্রয়োগ করেও দুর্বল ও নিঃশেষিত করতে পারে, তাতে বাগড়া না দেওয়া। তবে পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে বিএনপি-জামায়াতকে পরাজিত করার জন্য গণজাগরণ মঞ্চের তরুণ প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে এই আন্দোলনকে মাঠে আরও সচল ও শক্তিশালী করা উচিত। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন আপসকামিতা, দুর্নীতি, অনাবশ্যক বাড়াবাড়ি ও ফ্যাসিবাদী প্রবণতার বিরুদ্ধেও সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে আনুপাতিক নির্বাচনের অধীনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষেই একটি ক্ষমতাসীন দল ও প্রকৃত বিরোধী দল গড়ে ওঠে” (দৈনিক সমকাল, ১৬ মার্চ ২০১৫)
আওয়ামী লীগকে দিয়ে জুলুম করিয়ে নিয়ে এরপর আওয়ামী লীগ বিরোধিতার নাম করে আওয়ামী লীগ পরবর্তী বাংলাদেশেও শাহবাগী মতাদর্শকে ক্ষমতায় রাখার এই পদ্ধতিকেই সম্ভবত বলে সর্প হইয়া দংশাইয়া ওঝা হইয়া ঝাড়া।
তবে, এধরণের আওয়ামী লীগ বিরোধিতার একটা সামাজিক দিকও আছে। এই অধম একটু আঁতেল কিছিমের আদমী হওয়ায় মাঝেমাঝে তীব্র অনিচ্ছাসত্ত্বেও কিছু ভারিক্কি শব্দ দিয়ে আপনাদের বিব্রত করছি। একিন রাখুন, টার্মিনোলজি আর তত্ত্বের চাকচিক্যে আপনাদের চোখ ঝলসে দেওয়াটা মোটেই আমার মক্সুদ না। তবে এখানে স্কেপগোট তত্ত্ব নামক সামাজিক মনস্তত্ত্বের একটা তত্ত্বের অবতারণা না করলেই না। স্কেপগোট তত্ত্ব অনুসারে কোন সমাজ যখন তার কোন ব্যর্থতায় বিব্রত ও স্তম্ভিত হয় তখন সে এই দোষ আরেকজনের ওপর আরোপ করে, সেই জুলুমের প্রচুর বিরোধিতা করে। এর মাধ্যমে সে শুধু সামাজিক দায়মুক্তিই লাভ করে না বরং আত্মিক দায়মুক্তিও লাভ করে। আবরার হত্যার জন্য ছাত্রলীগকে স্কেপগোট বানানোর মাধ্যমে আমাদের জাফর ইকবাল প্রজন্মও নিজের ব্যাপারে তীব্র প্রশান্তি অনুভব করে। সে মনে করে সে নৈতিক মানুষ। তার হাতে কোন রক্ত নাই। রাতে ঘুমাতে সুবিধা হয়। কোন দুঃস্বপ্ন তাড়া করে না। কোরবানীর সহিংসতা নিয়ে আংরেজীতে পোস্ট দেওয়ার সময় মনে হয় না তার প্ররোচণাতে দেশের আনাচে কানাচে প্রতিনিয়ত জেল-জুলুম খুন-ধর্ষণ হচ্ছে। বহু ছেলের ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে গেছে। বহু মা তার ছেলেকে দেখতে পায় না। বহু মানুষ দেশছাড়া হয়েছে। বহু যুগলের বিচ্ছেদ ঘটেছে। বহু স্ত্রী একা বিছানায় ঘুমায়। চঞ্চল চৌধুরীর অভিনয়ের তারিফ করে ডেইলি স্টার শাউটের পোস্ট শেয়ার করে, মারজুক রাসেলের নাটক দেখতে দেখতে আমাদের নৈতিক মানুষটা খুব শান্তিতে ঘুমাতে যান। খুনী তো ছাত্রলীগ। ওর আর দোষ কি বলুন? চারিদিকে শুধু ফ্যাসিবাদ আর ফ্যাসিবাদ। কিন্তু কোথাও কোন ফ্যাসিবাদী নাই। সব দোষ শুধু শেখ হাসিনা আর আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের। বাকিসব ভালো মানুষ। জাফর ইকবাল ভাল, লাকি আক্তার ভাল, কামরুল হাসান মামুন ভাল, মাহফুজ আনাম ভাল, মতিউর রহমান ভাল, মির্জা ফখরুল ভাল, ছাত্র ইউনিয়ন ভাল, ছায়ানট ভাল, উদীচী ভাল, শহুরে মধ্যবিত্ত ভাল, “পোশাকের স্বাধীনতা” করারা ভাল। নারায়ে তাকবির শুনলে গা জ্বলা ধরা বিএনপির সুশীল ভাল। শিবিরের বাকস্বাধীনতা নাই বলা নেটফ্লিক্স প্রজন্ম ভাল। ব্র্যাক ভাল, বিওয়াইএলসি ভাল, ইউনুস ভাল, ইউথ পলিসি ফোরাম ভাল। আমরা সবাই ভাল আমাদের ভালর রাজত্বে। সব কালো শুধু শেখ হাসিনা আর তার দল।
এত এত ভাল মানুষের মাঝেও কেন যেন অধমের মত অসংখ্য মানুষ ক্রমাগত নিরাপত্তাহীনতা আর শ্বাসকষ্টে ভোগে। তবে সেটা ছাত্রলীগের কারণে না। বরং এই ভাল, নৈতিক মানুষদের আতঙ্কেই। যে ভাল মানুষরা ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দেয়। যারা ছাত্রলীগকে হালাল রক্ত চেনায়। কি বললে রক্ত হালাল হবে তা শেখায়। এইতো সেদিনই, ঢাকার এক এলিট স্কুল-কলেজ থেকে পাশ করা এরকম এক শাহবাগী ভাল মানুষ ফেসবুকে বিশাল পোস্ট দিয়ে জানালেন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগে দাখিল হয়েছেন কারণ তিনি শিবির-মৌলবাদ দমন করতে চান। খুব সাবলীল, সুপাঠ্য বাংলায় তার এই সাফাইমূলক লেখায় বহু সুশীল মন্তব্য করেছেন, কেউ কেউ সমালোচনাও করেছেন। এই গেস্টরুম করানো পঁচা ছাত্রলীগে কেন সে যোগ দিলেন এই প্রশ্ন করেছেন অনেকেই। কিন্তু কেউ ভুলেও বলেন নাই শিবির দমন-হঠানো চিন্তাটাই তো আতঙ্কজনক। আর কেউ যখন সেই চিন্তা থেকে ছাত্রলীগের মত সংগঠনে যোগ দেওয়াটাকেও জায়েজ কৌশল মনে করে সে তো রীতিমত দানব!
এই ছেলেটা যেদিন আবরার ফাহাদকে মারবে সেদিন ছাত্রলীগের দোষ হবে। যেদিন সে বাঙ্গালীবিদ্বেষী পলিসি প্রণয়নে ভূমিকা রাখবে সেদিন বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে শ্লোগান উঠবে। কিন্তু শাহবাগের বিচার তো দূরের কথা, সমালোচনা পর্যন্ত হবে না।
আজকের বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কট আওয়ামী লীগ বা স্বৈরাচার না। স্বৈরাচার তো আইয়ুব, মুজিব, জিয়া, এরশাদ সবাই ছিল। এমনকি খালেদা আমলেও স্বৈরাচারী প্রবণতা ছিল। ওসব আমলে তো কখনো আবরার ফাহাদ তৈরী হয় নাই। সোশালিস্ট, ইসলামিস্ট, এবং পাহাড়ি জঙ্গি তথা মিলিট্যান্ট ছাড়া বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনো কোন হোমো স্যাকার ছিল না। কিন্তু আজকে একটা বৈশ্বিক মূলধারার রাজনৈতিক দল হোমো স্যাকার হয়ে বসে আছে। যে শাহবাগের কারণে আজকে বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হোমো স্যাকার তাদের পতন ছাড়া আওয়ামী লীগের পতন ফ্যাসিবাদের খোলস বদলেরই নামান্তরমাত্র। এটা এম এম আকাশের ফর্মূলার বাস্তবায়ন বৈ ভিন্ন কিছু না।
শেষ বেলার সংযুক্তি: সপ্তাহখানেক আগে লেখা হলেও প্রকাশের আগে নানান দফা কাটাছেঁড়া চলছে। মত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকায় সম্পাদক থেকে থেকে শুরু করে সবাই মারাত্মক উদ্বিগ্ন তাদের নিরাপত্তা নিয়ে। এরই মধ্যে দেখলাম দেশের কোন প্রান্তে নাকি একদল মহিলা জামাতকর্মীকে “জিহাদী বই”সহ গ্রেফতার করা হয়েছে। কিছু শাহবাগী ও তাদের কমরেডরা এই জুলুমকে দেখাচ্ছেন জাামাতি, গরীব ও নারী হওয়ার ফলাফল। মানে, গরীব-নারী-জামাত এই ট্রাইফেক্টার কারণে নাকি তারা ডিহিউম্যানাইজড। ভাবখানা এমন যে, গরীব আর নারী না হইলে জামাতিরা ডিজিউম্যানাইজড হয় না। মীর কাশেমও সম্ভবত গরীব ও নারী ছিলেন। কিংবা সালমান এফ রহমানের বউ যখন কোরান ক্লাস বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন তখনও সম্ভবত সেটা তার জামাত, নারী পরিচয়, আর গরীবির কারণেই। ঢাবিসহ বিভিন্ন বিশ্ব্ববিদ্যালয়ের এলিট জাামাতি মেয়েদের একই কায়দায় বছরের পর বছর ধরে গ্রেফতার নির্যাতনও কি তাহলে গরীব হওয়ার কারণে হয়েছে? জামাত-শিবিরের ছেলেরা কি এধরণের ডিহিউম্যানাইজেশনের শিকার হন নাই? এভাবে অবান্তর লিঙ্গ আর অর্থনৈতিক ফ্যাক্টরের অবতারণা করে হোমো স্যাকার তৈরীর পেছনে যে মূল নিয়ামক শাহবাগ তাকে লুকিয়ে ফেলা হয়।