শাহাদাৎ তৈয়বের একগুচ্ছ কবিতা

মাছিবিদ্যা

লুকায়ে আছে আগুন সবখানে। ডাস্টবিন কিংবা নর্দমার

কঠিন পানির ভিতরপুড়ে পুড়ে হৃদয় যদি নরম

খানিকটা হয় লোহার মতোনতারে নিয়েই মানুষ

আছে মাছির স্বভাবে প্রায়, ডানাগুলো থাকে তার

হাত পা চোখের মেশিনারি অক্ষত রেখে, সবকিছু

ছুঁয়ে যাবে স্বাদে নয়, জীবনের টানে বুঝি! আস্বাদনে হয়তো

শিল্প আসে। অর্থ আসে। কিন্তু নীতি আসে না। গতি

প্রকৃতি তারে নিয়ে যাচ্ছে কোথায়সে কথা তার বিদিত

নাইঅথচ তার ডানার চাঞ্চল্যের মধ্যে রাজনীতি একটা

হেতু হয়ে আছে। একটা মাছিবিদ্যা মানুষের মধ্যে বয়ে

যাচ্ছে বিপুল। গতি আর উড়াল ছাড়া আরও কিছু তারে

ডুবায়, জাগায় হয়তো তারই অদৃশ্যে। এই অদৃশ্যকলার

গন্ধ তারে বেহঁশ করে রাখে। কোথাও তার নিশ্চিতি নাই।  

আগুনের গন্ধ একপাশে রেখে সে ঘোরে ভাগাড়েদিগম্বরে।

শহর এবং পীরের চিহ্ন

সময় কোথাও নেই। গরিব পীরের মতো চুপচাপ অকস্মাৎ

একটা সময় দেখা গেল। নাম তার পীরের বাগ নয় যদ্যপি

বৃক্ষের মতো নিঃশব্দ। মহান। তারে দেখা যায়নি। সবার মাঝে

বিচরণ আছে নিভৃত, একা একা। তিনি হাঁটেন, অনেকদূর।

হৃদয়ে হৃদয়ে। বৃক্ষের তলে তলে। অতঃপর ছায়ানিবিড়

দেয়ালের জন্ম হলোবাগানের হাসির মতো নৈসর্গিক

বিস্তার এসে ছেয়ে গেল পাথরের দুনিয়ায় এমন শহরে।

যেন পাথরবৃক্ষের বরলীলা দেখালেন এমন গায়েব পীর।

লোহার শেকড়ের ওপর তার নামের শুহরত ছড়িয়ে গেল

ইটবালির গাঁথুনিগুলো তারই রেখে দেয়া নামে চিহ্ন হয়ে

থেকে গেল। শুধু তারেই দেখা যায় না বারো গলির অন্ধকারে

শহরে সময়ের দেখা মেলে বাজার বাণিজ্যের আলোয় আলোয়।

পুরুষ মাত্র

বৃক্ষের মতো লুটায় আছে তাবৎ চোখ

চোখ মাত্রই যখন পুরুষের চতুর্কলা

চোখের নামে আসলে

       তোমাতে রজু হয়েছিল শরীল

শরীলময় আত্মাহৃদয়, সবকিছুরে নিভায়ে

তোমাতে ভাসে বৃক্ষপাখি পুরাণ, তোমাতে

কিছু নাই, দেহগেহ নাই, নদী নাই

তবু তুমি তুমি ছাড়া যেন তার কিছু নাই,

যা কিছু আছে

সবার ভিতর শুধু তুমি তুমি হয়ে আছ

পিছনে যতদূর তাকানো যায়, এবং সামনে

যদি তুমি না থাকিতে, তবু পুরুষ তার

ভিতরে আপনারে তুমি রূপে গড়ে

স্বভাব তার রচিয়া যাইত, হয়তো তবে

             পুরুষ মাত্রই তুমি!

লেখক : গবেষক ও ক্রিটিক 

আগের সংবাদসাইফ সিরাজের পঞ্চাশটি রুবাইয়াত
পরবর্তি সংবাদসুলাইমান সাদীর একগুচ্ছ কবিতা