মুনশী নাঈম:
মধ্যযুগের শেষের দিকে ইউরোপীয় ইতিহাসে ঘটেছে বিশাল বিশাল ঘটনা। যেসব ঘটনা মহাদেশের সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক এবং রাজনৈতিক চেতনায় গভীর পরিবর্তন ঘটায়। এই সচেতনতাকে সবচেয়ে বেশি জাগ্রত করেছিল আন্দালুসিয়া, সিসিলি, দক্ষিণ ভূমধ্যসাগর বা আনাতোলিয়া এবং পূর্ব ইউরোপ থেকে আসা মুসলিম প্রতিবেশীদের উপস্থিতি। যুদ্ধ ও ক্রুসেডের যুগে, মামলুক ও উসমানীয় যুগে এই সমস্ত মুসলিম, আরব এবং তুর্কিরা ইউরোপীয় চেতনায় ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল । কিন্তু ক্যাথলিক চার্চ এবং এর ইউরোপের নাগরিকদের মধ্যকার সম্পর্কও প্রত্যক্ষ করেছে পাদ্রী এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে সম্পর্কের ইতিহাসে সবচেয়ে বৈপ্লবিক মিথস্ক্রিয়া।
রোমের ক্যাথলিক চার্চ তেরো শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে মানুষ ও পাথরকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। ইতিহাসবিদ রেভারেন্ড অ্যান্ড্রু মিলার তার বই “অ্যা ব্রিফ হিস্ট্রি অফ দ্য চার্চ”-এ বলেছেন, ‘ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত ইউরোপে কোনো প্রাণী স্বাধীন ছিল না। বরং, পুরোহিত ছিলেন ছোট-বড় সবকিছুর কর্তা। দেহ ও আত্মার উপর, বর্তমান ও অনন্তকালের উপর তার নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব ছিল। তাদের সামনে কারও দাঁড়ানোর সাহস ছিল না।’
মার্টিন লুথারের দিকে যাত্রা
ত্রয়োদশ, চতুর্দশ এবং পঞ্চদশ শতাব্দীতে বেশ কয়েকটি ঘটনা চার্চের ভাবমূর্তি এবং প্রভাবকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করেছিল। তার শীর্ষে ছিল খ্রিস্টের প্রকৃতি নিয়ে কনস্টান্টিনোপলের চার্চ এবং রোমের চার্চের মধ্যে পুরোনো বিরোধ। তারপরে অটোমানদের হাতে কনস্টান্টিনোপলের পতন এবং ইউরোপীয় ভূখণ্ডের গভীরে তাদের প্রবেশ।
তখন ফ্রান্সের ল্যাঙ্গুয়েডক অঞ্চলে একটি আন্দোলনের উত্থান ঘটে। আন্দোলনের কর্মীরা এক ঈশ্বরের অনুপস্থিতিকে প্রচার করতো। তারা বলতো, ভালো এবং মন্দ নামে দুটি শক্তি আছে। তারা তাদের নিজস্ব একটি গির্জা প্রতিষ্ঠা করেছিল। যেটি রোমের চার্চের কর্তৃত্বকে হুমকি দিতে শুরু করেছিল। তবে এই আন্দোলনকে অঙ্কুরেই নির্মূল করে দেয়া হয়।
তবে এর চেয়েও বিপজ্জনক ছিল পোপ পঞ্চম ক্লেমেন্টের রোম থেকে ফ্রান্সের অ্যাভিগনন শহরে চলে যাওয়া। ১৩৭৮ খ্রিস্টাব্দে পোপ গ্রেগরি একাদশের প্রত্যাবর্তন এবং কাউন্সিলের আবির্ভাব পর্যন্ত পুরো সত্তর বছর ধরে সেখানে পোপতন্ত্র ছিল। ইউরোপীয় চার্চের ইতিহাসে এটি ‘ধর্মীয় বিভেদ’ হিসাবে পরিচিত।
এই ধর্মীয় বিভাজন রোম এবং অ্যাভিগননের মধ্যে দীর্ঘকাল বজায় ছিল। পরে রোম অ্যাভিগননের এই কর্মকে ‘ধর্মদ্রোহিতা’ হিসাবে আখ্যা দিয়ে তাকে নির্মূল করার জন্য যুদ্ধ এবং সংঘাতের জন্ম দেয়। অন্যদিকে ব্রিটিশ এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জন উইক্লিফের নেতৃত্বে ইউরোপে ধর্মতাত্ত্বিকদের কণ্ঠস্বর শোনা যেতে শুরু করে। তারা সেই সময়ে তাদের ঐতিহ্যগত প্রতিদ্বন্দ্বী এবং শত্রু ফ্রান্সে পোপতন্ত্রের স্থানান্তরের সমালোচনাও করে। বরং, ফরাসি রাজার পোপতন্ত্রের শোষণ এবং সেই সময়ে ইংরেজরা পোপতন্ত্রের কাছে যে জমি, অনুদান এবং উপহার পেশ করেছিল তার উপর তার নিয়ন্ত্রণ ইংল্যান্ড এবং রোমের মধ্যে দ্বন্দ্বের বীজ বপন করে। জার্মান ধর্মযাজক এবং ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপক “মার্টিন লুথার” এর আবির্ভাব এবং উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ইউরোপে লুথেরান আন্দোলন ও প্রোটেস্ট্যান্টিজমের বিস্তারের পর এর প্রভাব শীঘ্রই দেখা দেয়।
ইংল্যান্ডে পোপতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিপ্লবে জন উইক্লিফের ভূমিকা থাকলেও চেক বোহেমিয়ান ‘জন হুস’ নামক এক ধর্মতাত্ত্বিকেরও একটি প্রভাবশালী ভূমিকা ছিল। তিনি ধর্মীয় সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং সেই যুগে পাদ্রীরা যে পাপের মধ্যে পড়েছিলেন তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন। পোপতন্ত্রের ক্ষমতা এবং নিয়ন্ত্রণের কারণে তিনি ধর্মদ্রোহিতার জন্য দোষী সাব্যস্ত হন এবং তাকে পুড়িয়ে মারার মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। দণ্ডটি বাস্তবে ১৪১৫ খ্রিস্টাব্দে কার্যকর করা হয়েছিল। এর থেকে সেই যুগে চিন্তা ও রাজনীতিতে ক্যাথলিক চার্চের প্রভাব বুঝা যায়।
মধ্যপ্রাচ্যে ক্রুসেডের সময় শেষ হওয়ার পর চার্চের চিন্তা কেবল অর্থ সংগ্রহ এবং বিলাসিতা ঘিরেই কেন্দ্রীভূত হতে থাকে। পোপের প্রাসাদটিকে তখনকার রাজার সবচেয়ে বিলাসবহুল প্রাসাদের মতো দেখাতো। সেই কারণে, পোপতন্ত্র এবং অনেক ইউরোপীয় রাজার মধ্যে এমন এক সময়ে দ্বন্দ্ব সংঘটিত হয়েছিল যখন অটোমানরা কনস্টান্টিনোপল এবং ইউরোপের পূর্ব ও কেন্দ্রের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করেছিল।
অন্যদিকে পোপতন্ত্র সংস্কারের আহ্বানকারী সমস্ত গোষ্ঠীকে, যেমন ওয়ালডেনসিয়ান, অ্যালবিনিয়ান, ললার্ডস, বোহেমিয়ান এবং বাকি গোষ্ঠীগুলিকে নিশ্চিহ্ন করার ক্ষেত্রে মনোযোগ দিয়েছিল।
লুথার এবং তার দারুণ প্রভাব
ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সংস্কারের জন্য সবচেয়ে বেশি আকাঙ্ক্ষা জেগেছিল যেখানে, তা হলো বর্তমান জার্মানি এবং পোল্যান্ড। ১৪৮৩ সালের ১০ই নভেম্বর উত্তর জার্মানিতে মার্টিন লুথার তিনি একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা চেয়েছিলেন তিনি উকিল কিংবা দার্শনিক হবেন। তাই তিনি এরফুর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু লুথারের মন হঠাৎ পরিবর্তন হয়ে যায়। একটি মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা পার করার পরে তিনি প্রার্থনা, তপস্যা এবং সন্ন্যাসবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েন। তারপরে তিনি ১৫০৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে উইটেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মতত্ত্ব পড়ানো শুরু করেন। কিন্তু তার নিজের প্রতি নিজের ঘৃণা ও ভয় কাজ করছিল। তিনি এর থেকে মুক্তি চাচ্ছিলেন। পরে ১৫১০ খ্রিস্টাব্দে যখন তিনি রোম পরিদর্শন করেন, দেখতে পান চার্চের নৈতিক পতন এবং পাদরিদের আনন্দের মধ্যে বিস্তীর্ণ বৈষম্য। দেখতে পান তাদের কথা ও কাজে মিল নেই।
তারপর সমস্যাটি আরও জটিল হয়ে ওঠে যখন পোপ লিও দশম পাপের ক্ষমার বিনিময়ে এবং অটোমান, মামলুক এবং ইসলামিক মাগরেব দেশগুলির বিরুদ্ধে ক্রুসেডে অংশগ্রহণের বিকল্প হিসাবে অর্থ চান। লুথার তখন ভাবেন, পাপ করে অর্থের বিনিময়ে বিধাতার শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যায় কথাটি খুবই অন্যায্য। পাপ থেকে পরিত্রাণ কেবল প্রার্থনা এবং উপাসনার মাধ্যমে হওয়া উচিত নয়, বরং ঈশ্বরের প্রশংসা এবং তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা উচিত, কারণ বিশ্বাস হল ক্ষমার শর্ত। ক্ষমা করার গুণ একমাত্র ঈশ্বরের। এই গুণে পোপের অধিকার নেই।
১৫১৭ খ্রিস্টাব্দের সেই মুহূর্ত থেকে লুথেরান এই মতবাদ ছড়িয়ে পড়ে। অটোমানদের বিরুদ্ধে মোহাকসের যুদ্ধের সময় সাময়িক সময়ের জন্য রোমের চার্চ এই ধারণা স্বীকার করে নেয়। তবে পোপ শীঘ্রই তার স্বীকৃতি প্রত্যাহারও করে নেয়। লুথারের এই চিন্তা জার্মানি এবং সমগ্র ইউরোপ মহাদেশে একটি বুদ্ধিবৃত্তিক এবং বিপ্লবী ভূমিকম্প ঘটায়। পোপতন্ত্রের হৃদয় ইতালিতেও সাধারণ জনগণকে জার্মান, ল্যাটিন এবং অন্যান্য ভাষায় বাইবেলের ব্যাখ্যা দেখতে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
মার্টিন লুথারের মৃত্যুর চার বছর আগে ১৫৪২ সালের আগ পর্যন্ত এই চিন্তা প্রকাশ্যেই প্রচার করার অনুমতি ছিল। এমনকি ইতালিতেও। মানুষ বুঝে, ক্ষমার গুণ কেবল স্রষ্টার, পাদরিদের নয়।
খ্রিস্টান ঐক্যবাদী আন্দোলন
মার্টিন লুথার গির্জার ইতিহাস এবং ইউরোপের ইতিহাসে ষোড়শ শতাব্দীতে এবং তার পরেও বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন। তিনি নিস্তরঙ্গ হ্রদে একটি পাথর নিক্ষেপ করেছিলেন, যেখানে জনগণ এবং রাজনীতিবিদদের উপর পোপদের আধিপত্য ছিল এবং পোপ এবং ধর্মযাজকরা ধন-সম্পদে রাজার মতো ছিল। বিশেষ করে রোমের পোপরা।
এটি ছিল খ্রিস্টান একেশ্বরবাদের উত্থান। এই মতবাদকে থামাতে এক কাতারে চলে আসে ক্যাথলিক এবং প্রোটেস্ট্যান্টরা। তারা লুথারের অনুসারীদের ধর্মদ্রোহী এবং অবিশ্বাসী হিসাবে আখ্যা দেয়।
খ্রিস্টান একেশ্বরবাদ আন্দোলন ট্রিনিটি (স্রষ্টার তিন শরীক) অস্বীকারের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল। তাদের মতে, মসীহ আ. ছিলেন একজন প্রেরিত নবী বা উচ্চ মর্যাদার একজন মহান ব্যক্তি। তিনি ঈশ্বর নন বা ঈশ্বরের অংশও নন। এই মতবাদে দীক্ষিতদের শীর্ষে ছিলেন স্প্যানিশ বংশোদ্ভূত ধর্মতাত্ত্বিক মিগুয়েল সার্ভেটাস। এই মতবাদ লালন করার দায়ে ১৫৫৩ সালে প্রোটেস্ট্যান্টরা অদ্ভুতভাবে তাকে পুড়িয়ে মারে ধর্মযাজক জন ক্যালভিনের আদেশ অনুসারে।
মিগুয়েল সার্ভেটাসকে পোড়ানো সত্ত্বেও একেশ্বরবাদী আহ্বান চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতাব্দীতে ইতালীয় ‘ফাউস্টো সোজিনি’ এই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত হন। মতবাদ ‘সোজিনিয়ান’ মতবাদ হিসেবে ইউরোপে বিখ্যাত হয়। সোজিনি বলেছিলেন, খ্রীষ্ট বাস্তবে ঈশ্বর হতে পারেন না। এই মতবাদের কারণে ইতালিতে এই মতবাদের অনুসারীদের যুদ্ধ করতে হয়। পরে ১৫৭৯ সালে তারা পোল্যান্ডে চলে যায়।
সোজিনি ‘ট্রিনিটারিয়ান বিরোধী আন্দোলন’-এর মধ্যে বিরোধপূর্ণ দলগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করেছিলেন। তিনি তার ‘দ্য র্যাকোভিয়ান ক্যাটিসিজম’ বইতে এই প্রচেষ্টা প্রমাণ করেছেন। পোলিশ শহর রাকভের সূত্রে তাদেরকে র্যাকোভিয়ানও বলা হয়। রাকভ তাদের আন্দোলন এবং কার্যকলাপের কেন্দ্র ছিল।
সোজিনি এবং তার অনুসারীরা একেশ্বরবাদ আন্দোলনকে রাজনীতি থেকে পিঠ বাঁচিয়ে দূরে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল। স্কুল, গির্জা প্রতিষ্ঠান এবং ছাপাখানা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই আন্দোলনটি ট্রান্সিলভেনিয়ায়, বর্তমান রোমানিয়াতে পৌঁছে যায়। খ্রিস্টীয় সপ্তদশ শতাব্দীতে আন্দোলনটি জার্মানিতে সমর্থক লাভ করে, যে ভূমি থেকে লুথারানিজমের উৎপত্তি হয়েছিল। আল্টড্রফ বিশ্ববিদ্যালয় ছিল তাদের বৈজ্ঞানিক ও ধর্মতাত্ত্বিক কার্যকলাপের কেন্দ্রবিন্দু।
সোজিনির একেশ্বরবাদ আন্দোলন ইংল্যান্ডের সীমানায় পৌঁছে যায়। বিখ্যাত ইংরেজ কবি ও লেখক জন মিল্টন এটিকে একটি সংস্কার আন্দোলন হিসেবে গ্রহণ করেন। তবে মিলটনের দাওয়াত গ্রহণের দু বছর পর দ্য র্যাকোভিয়ান বইটির সমস্ত প্রচারিত কপি বাজেয়াপ্ত এবং পুড়িয়ে ফেলার পক্ষে ইংরেজ পার্লামেন্ট ভোট দেয়। ব্রিটেনে বইটি বাজেয়াপ্ত করা সত্ত্বেও আমস্টারডামে ১৬৮০ খ্রিস্টাব্দে একটি সংশোধিত ল্যাটিন সংস্করণ পাওয়া যায়, যা সুসিনির নাতি আন্দ্রে সম্পাদনা করেছিল। পরে ১৮১৮ সালে এটির ইংরেজি অনুবাদ করা হয়।
সোজিনির বই পুড়িয়ে ফেলার পাশাপাশি সুজিনিয়ানরা ১৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপে সংগঠিত নৃশংস নিপীড়নের শিকার হয় এবং তাদের অনেককে জীবন্ত পুড়িয়ে ফেলা হয়। এমনকি ১৬৫৮ সালে তাদেরকে ক্যাথলিক ধর্ম গ্রহণ বা নির্বাসনে যাওয়ার বিকল্প দেয়া হয়। পরে সুজিনিয়ানরা উরোপের উপকণ্ঠে ছড়িয়ে পড়ে।
সুজিনিয়ান আন্দোলন পোল্যান্ড থেকে জার্মানি এবং সেখান থেকে ব্রিটেন এবং নেদারল্যান্ডে ছড়িয়ে পড়ে। ১৬৪৮ সালে রাজা জন ক্যাসিমির ক্ষমতায় আসার পরে পোল্যান্ডের ক্যাথলিকরা অল্প সময়ের মধ্যে শক্তি অর্জন করে। জন ছিলেন জেসুইট ক্যাথলিক এবং একই সময়ে একজন কার্ডিনাল। এই কারণেই ক্যাসিমির সুজিনিয়ানদের ধর্মীয় এবং পরে রাজনৈতিকভাবে দমিয়ে দেয়। সুজিনিয়ানদের জোয়ার কমে যায়। তবে তাদের অনুসারীরা গোপন বৈঠকে মিলিত হতো। তাদের মধ্যে কয়েকজন ক্যালভিনিস্ট চার্চে যোগদান করেছিল।
ইউরোপে সুজিনিজমের বিরুদ্ধে ক্যাথলিক এবং প্রোটেস্ট্যান্ট গির্জার এই নিপীড়ন সত্ত্বেও বিখ্যাত ইংরেজ দার্শনিক এবং চিন্তাবিদ এই মতবাদ গ্রহণ করে। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন জন লক, জোসেফ প্রিস্টলি, বেলশাম।
এই তিনজন ইংল্যান্ডে ট্রিনিটির বিলুপ্তি ঘটিয়েছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, ব্রিটিশ ধর্মযাজক এবং রসায়নবিদ জোসেফ প্রিস্টলি খ্রিস্টধর্মকে প্রভাবিত করে এমন বিচ্যুতিগুলির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিলেন এবং দুই খণ্ডে ‘খ্রিস্টান ধর্মের বিকৃতির ইতিহাস’ লিখেছিলেন। এই বইটি ইংলিশ চার্চের অনুসারীদেরকে উত্তেজিত করেছিল। কারণ এটি খ্রীষ্টের দেবত্বকে বাতিল করে দিয়েছিল। প্রিস্টলি ১৭৭৪ সালে অক্সিজেন আবিষ্কার করেছিলেন এবং এটি তাকে বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়ের মধ্যে খ্যাতি এনে দিয়েছিল। ফলে তাকে তার খ্রিস্টান একেশ্বরবাদী মতবাদের বিরুদ্ধে বিচার থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছিল। তারপর তিনি তার জীবনের শেষ বছরগুলিতে ব্রিটেন থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের সিদ্ধান্ত নেন এবং সেখানে ইউনিটেরিয়ান চার্চ প্রতিষ্ঠা করেন।
সোজিনিয়ান একেশ্বরবাদী মতবাদ খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতাব্দীতে মার্টিন লুথারের সাথে শুরু হওয়া ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন। এই আন্দোলনের অনুসারীরা যুগে যুগে নির্যাতিত হয়েছিল। যেমন অ্যান্টিওকের বিশপ পল আল-শমেশাতি , অ্যারিয়াসের অধ্যাপক লুসিয়ান, আলেকজান্দ্রিয়ার বুকলিস চার্চের বিশপ।
সূত্র: আল-জাজিরা