হজ্ব সীমিতকরণ: কিছু সরল প্রশ্ন

সাঈদুর রহমান:

গত ২৩-শে জুন সৌদি হজ্ব ও ওমরা বিষয়ক মন্ত্রণালয় ঘোষণার মাধ্যমে জানিয়ে দেয় যে, খুবই সীমিত সংখ্যক অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে এবারের হজ্ব অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে গিয়ে কেউই এবার হজ্বে অংশ নিতে পারবে না। শুধু সৌদিতে উপস্থিত বিভিন্ন দেশীয় লোকজনের নির্বাচিত অংশ আবেদনের ভিত্তিতে সেখানে অংশ নিতে পারবে।

বিবিসি বাংলার ২৩শে জুন এর সংবাদে বলা হয়েছে, মাত্র এক হাজারের কম মানুষ এবারের হজ্বে অংশ নিতে পারবেন!

এই ঘোষণার সাথে বরাবরের মতই অনিবার্য অনুষঙ্গ হিসেবে সৌদি আরবের ‘হাইআতু কিবারিল উলামা’র সমর্থনও হজ্ব মন্ত্রণালয়ের টুইটের মাধ্যমে জানানো হলো। সাথে এর যৌক্তিকতাকে প্রতিষ্ঠিত করতে ‘দারাতুল মালিক আব্দুল আযীয’-এর সাইট থেকে অতীতে মহামারীর কারণে হজ্ব বন্ধ হওয়ার বেশ কিছু ইতিহাস তুলে ধরা হলো।

আলোচ্য প্রসঙ্গটি নিয়ে অনেক গুণীজন মুখ খুলেছেন ও কথা বলেছেন। এখানে যে ব্যাপারটি মূলে কাজ করেছে সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা দরকারী মনে হচ্ছে। যুগে যুগে শাসক শ্রেণির ‘মাইন্ডসেট’-ই হচ্ছে সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে আসল নিয়ামক। এরপর এর স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় বিবৃতি ও সমর্থন ধরে বেঁধে যুক্ত করা কোনো মহা সমস্যার বিষয় না।

শাসকশ্রেণির মনস্তত্বে জেঁকে বসা মানসিক দাসত্ব

আমরা এখানে সে ব্যাপারটিই দেখতে পাই। শাসকশ্রেণীর যে ব্যাপকতর প্রবণতা শতাব্দিকাল ধরে দৃশ্যমান তা হলো, পশ্চিমা শক্তির মানসিক দাসত্ব। প্রযুক্তিতে ও শক্তিমত্তায়  শতাব্দিকাল ধরে মোটামুটি একক বিজয়ী পশ্চিমাদের কাছে মাথা নুইয়ে ও আনুগত্য করে নিজের পরিসরকে সাজিয়ে নেওয়ার এক চক্র। যার ব্যত্যয় সামান্যই দেখা গেছে।

সেই পরম্পরায় যে সিদ্ধান্ত ওখান থেকে আসে, তার সাথে সামঞ্জস্য রেখেই এদিকে সিদ্ধান্ত  নেওয়া হয়। মুসলিম জাতির ঐতিহ্যগত রুহানিয়াত সম্বলিত ও তাওয়াককুলনির্ভর সিদ্ধান্তের ক্ষমতা এই শাসকদল হারিয়ে ফেলেছে।

ইসলামে রোগের সংক্রমণ চিন্তায় যে অসাধারণ ভারসাম্য ও স্বাভাবিকতা, এটাকে ধারণ করার মানসিক শক্তি পার্থিব শক্তির কাছে মাথা নুইয়ে দিয়েছে। ফলে যে কোনো সিদ্ধান্ত তাদের মত করে নিয়ে তার সাথে ধর্মকে মিলিয়ে নেওয়া খুব সহজসাধ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে।

এই নতজানু মানসিকতা থেকে উদ্ভূত ‘মাইন্ডসেট’ বড় অদ্ভুত। মানুষ অনেক কিছু রসিকতা করে বললেও এর বাস্তবতা থাকে। এসব সিদ্ধান্তের পিছনে করোনা ভাইরাস সৃষ্ট পরিস্থিতিকে কারণ বলা হয়ে থাকে। মানুষ রসিকতা করে বলে, এই ভাইরাস খুব বুযুর্গ,  হাটে বাজারে যায় না; তবে মসজিদে আসে নিয়মিত। ফলে সব সতর্কতা এসে থেমেছে মসজিদে। অন্যখানে মন চাইলে কিছু সতর্কতা নিয়ে বা সতর্কতা ছাড়াই সব কিছু সিদ্ধ। এখানে এইসব অসিদ্ধ।

করোনার আবির্ভাবের শুরু থেকেই যে বিষয়টি প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে, তা হলো মুসলমানদের নিয়ে বিভিন্ন গোত্রের বিস্তর মাথা ব্যথা। তার চেয়ে বড় সমস্যা হলো, মুসলমানদের নিজেদেরই হীনমন্যতা। এই বুঝি মসজিদে করোনা আঘাত করে সব লণ্ডভণ্ড করে দিল! এই বুঝি জুমায় হানা দিল!

ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান তথা United Kingdom National Health Service করোনাকালের শুরুতে দাবী করেছিল, মুসলমানরা করোনায় সর্বাধিক আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। কারণ মুসলমানদের পারিবারিক বন্ধন দৃঢ়, তাছাড়া তারা মসজিদে যায়, জুমায় অংশ নেয়। তাই মেলামেশা বেশি হওয়ায় তাদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচে বেশি। ব্রিটেনভিত্তিক পত্রিকা ইন্ডিপেন্ডেন্ট গত ১৯ মার্চ এ বিষয়ক একটি মতামত প্রকাশ করে।

কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, ব্রিটেনের সাবেক watchdog on community relations, the Equality and Human Rights Commission এর প্রধান মি. ট্রেইভর ফিলিপস, যিনি উক্ত সংস্থার প্রধান থাকাকালে ইসলামোফোবিয়ার দায়ে অভিযুক্ত। তার নেতৃত্বে ওয়েবার ফিলিপস নামে একটি দল করোনাভাইরাস আক্রান্তদের মধ্যে সমীক্ষা চালায়। এরপর তারা জানায় যে, ইংল্যান্ডের মধ্যে অধিকহারে আক্রান্ত হয়েছে আফ্রিকান কালো ও এশিয়ান মাইনরিটি অধিবাসীরা। কিন্তু অদ্ভূতভাবে মুসলমান মাইনরিটি সম্পূর্ণই ব্যতিক্রম। যেসব অঞ্চলে মুসলমানদের তথা পাকিস্তানী ও বাংলাদেশীদের  সংখ্যা বেশি সেখানে আক্রান্তের হার সবচে কম।

মি. ফিলিপস বলেন,

“If one key to stopping transmission of the virus is hand washing, might a faith community, many of whose members ritually wash before five times a day prayers, have something to teach the rest of us?”

“করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়াকে বন্ধ করার একটি চাবি যদি হয় হাত ধোয়া, তাহলে একটি ধার্মিক গোষ্ঠী যারা ধর্মীয় রীতি হিসেবেই দিনে পাঁচবার নামাযের জন্য হাত ধোয়, তাদের কাছে আমাদের কি কিছু শেখার নেই!”

ওয়েবার ফিলিপস প্রতিবেদনে জানায়,

the sharp difference between Muslim and other minority groups meant vulnerability is “far more likely to be environmental or behavioural”.

“মুসলমান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মধ্যে আক্রান্তের হারে এই সুস্পষ্ট পার্থক্যের কারণ তাদের পরিবেশগত বা আচরণগত অবস্থা।”

(এ বিষয়ে বিস্তারিত দেখুন, আরব আমিরাত ভিত্তিক জার্নাল the nation এ ২২শে এপ্রিল প্রকাশিত British Muslims ‘might have something to teach the rest of us’ in curbing coronavirus নামক প্রতিবেদন)

এই হচ্ছে বাস্তব ঘটনা। অথচ বহু মুসলিম এমনকি কতক পশ্চিমা মুসলিম স্কলারও ইসলামোফোবিক প্রথমোক্ত প্রচারণা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তা ছড়িয়ে যাচ্ছিল।

এই প্রতিবেদনে যে গুরুত্বপূর্ণ কথাটি উঠে এসেছে তা হলো, মুসলমানদের যে জীবনাচার ইসলাম শিখিয়েছে, তাতে খুব স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যমান রয়েছে নিরাপত্তা, আত্মরক্ষা ও সুস্থ্যতার উপকরণ। সুন্নতী জীবনযাপন নিঃসন্দেহে সর্বাধিক স্বাস্থ্যসম্মত। তবে আসল কারণ তথা রুহানিয়্যাত ও তাওয়াককুলের দিকটি তারা বলেনি বলতে পারারও কথা না।

একদিকে মুসলমানদের শ্রেষ্ঠ সম্পদ তাওয়াক্কুল-নির্ভর আকীদা অন্যদিকে উৎকৃষ্ট রক্ষাকবচ সুন্নতী জীবনাচার। এদুটো মিলিয়ে মুসলমানদের সকল কর্মপন্থা নির্ধারণ করা উচিত। কিন্তু আকীদা ও সুন্নত দুটোতেই এই তল্পীবাহক গোষ্ঠীর অনীহা। ফলে সারাবিশ্বের আগমণকারীদের জন্য হজ্ব বন্ধ করার এরকম মাথামোটা সিদ্ধান্ত সৌদী শাসকগোষ্ঠী গ্রহণ করেছে এবং অনুরূপ বরাবরই গ্রহণ করে আসছে।

অদূরদর্শী সিদ্ধান্তসমূহের পরম্পরা

এই শাসকগোষ্ঠীর শুরু থেকেই অদুরদর্শী ও অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের ঐতিহাসিক পরম্পরা রয়েছে। ইতিহাসের পট পরিবর্তনগুলোতে তারা মোটা মোটা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তন্মধ্যে একটি বড় সিদ্ধান্ত ছিল সৌদীর নিরাপত্তার নাম করে আমেরিকার সাথে ১৯৭৩ খৃস্টাব্দে পেট্রোডলার চুক্তি। যে চুক্তির মাধ্যমে আমেরিকার অর্থনীতিকে দেওয়া হয়েছে দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা। ১৯৯০ সালে অদ্ভূত ইরাকভীতির নামে এবং মার্কিন কূটনীতির সরল শিকারে পরিণত হয়ে সৌদীতে পাঁচ লক্ষাধিক আমেরিকান সৈন্য আনা হয়। যা ছিল মুসলিম জাতীর জন্য মোটামোটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। সৌদীর ভুমি রক্ষার জন্য অস্ত্রের কোনো অভাব ছিল না সৌদীর কাছে। অভাব ছিল জনবল ও প্রশিক্ষণের। এই অভাব পূরণে মুসলিম বিশ্বে সহযোগীর কোনো ঘাটতি থাকার কথা নয়। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় যে, তখন চাহিবামাত্র সৈন্য প্রত্যাহারের শর্তে তাদের প্রবেশ ঘটলেও আজও সেখান থেকে পরিপূর্ণ সৈন্য প্রত্যাহার করা হয়নি। উল্টো কী ঘটছে? মিডল ইস্ট মিররের বরাত দিয়ে চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারী দৈনিক ইনকিলাব রিপোর্ট করে,

‘সউদী আরবে অবস্থানরত মার্কিন সেনাদের খরচ বাবদ গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার দিল দেশটি।’ আবার পড়ুন, ৫০০ মিলিয়ন ডলার!

উপরের রিপোর্ট থেকে আরো পড়ুন,

‘যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ব্যয় কমাতে সউদী আরবের আর্থিক অনুদান প্রদানের ঘটনা এটিই প্রথম নয়। নব্বইয়ের দশকে ইরাকের বিরুদ্ধে ছয় মাসের উপসাগরীয় যুদ্ধের খরচ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে ৩৬০০ কোটি ডলার দিয়েছিল সউদী আরব ও কুয়েতসহ উপসাগরীয় দেশগুলো।’

২০১৭ এর জুন মাসে কাতার অবরোধের সিদ্ধান্ত এবং তৎপরবর্তী সময়ে তুরস্কবিরোধী ও ইজরাইলঘেষা রাজনীতি, জামাল খাশোকজীকে হত্যা তাদের এই মাথামোটা ও রুহানিয়্যাতশূন্য সিদ্ধান্তসমূহের পরম্পরাকে টিকিয়ে রেখেছে।

তাদের ইজরাইলঘেষা কূটনীতির বিবরণ উঠে এসেছে ২৫শে নভেম্বর ২০১৭ এর বিবিসি বাংলার রিপোর্টে,

‘বিবিসির কূটনীতি ও প্রতিরক্ষা বিষয়ক সংবাদদাতা জনাথন মার্কাস লিখেছেন, তলে তলে এই দুটো দেশের মধ্যে কি হচ্ছে প্রায়শই তার কিছু ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

গত সপ্তাহে ইসরায়েলের চিফ অফ স্টাফ জেনারেল গাদি আইজেনকট যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক একটি সৌদি সংবাদপত্র এলাফকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ইরানকে মোকাবেলায় তার দেশ সৌদি আরবের সাথে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ের জন্যেও প্রস্তুত রয়েছে।

“আমাদের মধ্যে স্বার্থের মিল রয়েছে ইরানি চক্র মোকাবেলার ব্যাপারে আর এ ব্যাপারে আমরা সৌদি আরবের সাথেই আছি,” বলেন তিনি।’

এখানে কিছু উল্লেখযোগ্য নমুনা তুলে ধরা হলো। এ থেকে অনুমান করে নেওয়া কষ্টকর না যে, তাদের সিদ্ধান্তগুলো কোন ‘মাইন্ডসেট’ বা মনস্তত্ব থেকে আসে।

খুব পরিস্কার যে, হারামাইনকে তারা এ পর্যায়ে এসে নিজেদের রাজনৈতিক সুবিধার হাতিয়ার বানিয়ে ফেলার পর্যায়ে চলে এসেছে। ফলে পূণ্যভুমিতে আমেরিকান সৈন্য আনার মত অদুরদর্শী সিদ্ধান্ত নিতে যেমন তাদের কারো পরামর্শের ধার ধারার প্রয়োজন হয়নি, আজও হারামাইন নিয়ে যাচ্ছে তাই সিদ্ধান্ত নিতে তাদের পশ্চিমের সামঞ্জস্য রক্ষার চেয়ে বেশি ভাবার দরকার পড়ে না।

সংক্রমণ; ঈমানের নবরূপ, আমেরিকান ঈমান

উপরের বিবরণ থেকে ঈমানের নবরূপ পরিস্কার হয়ে যায়। তা হলো, আমেরিকান ঈমান। মানবগোষ্ঠীর সিদ্ধান্ত তার বিশ্বাসকে কেন্দ্র আবর্তিত হয়। ঈমান বিল্লাহর ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত এক রকম হয় আর ঈমানে আমেরিকান ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত স্বভাবতই অন্যরকম হবে।

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই যে সুস্পষ্ট বাণী যা অনেক সাহাবীর সূত্রে অনেকভাবে বর্ণিত হয়েছে,

لَا عَدْوَى وَلَا طِيَرَةَ ، وَلَا هَامَةَ وَلَا صَفَرَ

সংক্রমণ ধারণাকে এখানে খণ্ডন করা হয়েছে। ইসলামে সংক্রমণ বিশ্বাস নেই। এই সংশ্লিষ্ট বর্ণনাগুলো মিলিয়ে দেখলে বোঝা যায় যে, সংক্রমণকে দ্ব্যর্থহীনভাবেই নাকচ করেছে ইসলাম। যারা সংক্রমণকে স্বীকার করে এই বর্ণনাগুলোকে অন্যখাতে প্রবাহিত করতে চান তাদের বক্তব্যের তুলনায় এই  ব্যাখ্যাটা এজন্যেই অধিক শক্তিশালী যে, এর সাথে যোগ হয়েছে খোদ নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যাখ্যা। যেখানে বাহ্যত সংক্রমণ ঘটতে দেখে প্রশ্ন করায় তিনি বলেছেন, প্রথমটিকে কে সংক্রমিত করল! (সহীহ বুখারী হা.নং ৫৭১৭) এর সাথে আরো যোগ হয়েছে হযরত ইবনু উমার রা. এর ব্যাখ্যা, যেখানে তিনি প্রচলিত অর্থে সংক্রমিত উট ক্রয় করে রেখে দেওয়ার সময় বলেছেন,

دَعْهَا، رَضِينَا بِقَضَاءِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” لَا عَدْوَى ”

‘উটটি রেখে যাও, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই ফায়সালায় আমরা সন্তুষ্ট যে, সংক্রমণ নেই।’ (সহীহ বুখারী ২০৯৯)

এর সাথে আরো যোগ হয়েছে হযরত আয়েশা রা. এর ব্যাখ্যা, যেখানে তিনি নবীজী সংক্রমণ ধারণাকে সমর্থন করার ব্যাপারটি স্পষ্ট শব্দে নাকচ করে বলেন,

فقالت: ما قال ذلك، ولكنه قال: لا عدوى، وقال: فمن أعدى الأول؟ قالت: وكان لي مولى به هذا الداء فكان يأكل في صحافي ويشرب في أقداحي، وينام على فراشي ”

(তবারীর সূত্রে হাফেজ ইবনু হাজার রহ. এর ফাতহুল বারী ৫৭০৭ নং হাদীসের ব্যাখ্যা)

ফলে এই সংক্রমণকে নাকচ করার মত-ই সাধারণভাবে অধিকাংশ আলেম গ্রহণ করেছেন। যার মধ্যে ইমাম মালেক, আবু উবাইদ, তবারী, ইবনু খুযাইমা, ইমাম তহাবী থেকে শুরু করে বহু উলামা। (বিস্তারিত দেখুন ফাতহুল বারী, ৫৭০৭ নং হাদীসের ব্যাখ্যা)

এখানে একটি প্রশ্ন তোলা হয় যে, এই বক্তব্য অনুযায়ী বাস্তবতাকে অস্বীকার করা হচ্ছে! বাস্তবে তো একজন থেকে অন্যদের সংক্রমিত হতে দেখা যায়!

এর উত্তর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই দিয়েছেন। অর্থাৎ প্রথমজনের যেভাবে হয়েছে পরেরজনের সেভাবেই হয়েছে। তথা এই রোগের কারণ প্রত্যেকের জন্য আল্লাহ দিয়েছেন এবং সে কারণ দ্বারা রোগ সৃষ্টি করেছেন।

আসলে যে কোনো রোগের কারণ বা সববই কোনো না কোনো ভাবে ছড়ায়। পানি, বাতাস, আবর্জনার মাধ্যমে ছড়ায়, হাঁচির মাধ্যমে ছড়ায়। সেই সবব/কারণ থেকে সতর্ক থাকার জন্য শরীয়তের শিক্ষা আলাদাভাবে আছে। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, আঙ্গিনা পরিস্কার রাখা, হাঁচিতে মুখে হাত দেওয়া, অত্যাধিক রোদে বের না হওয়া, চর্বি হাতে নিয়ে না ঘুমানো, অবৈধ যৌনমিলন না করাসহ রোগের আসবাব/কারণসমূহ থেকে বাঁচার সার্বিক নির্দেশনা ইসলামে আছে। রোগের আসবাব থেকে স্বাভাবিক সতর্ক থাকতে হবে।

কিন্তু রোগ সংক্রমণ ভিন্ন জিনিস। রোগ আল্লাহর হুকুম হলে হবে। না হয় হবে না। রোগের আসবাবগুলো সর্বদা মানুষের ভিতরে বহুভাবে প্রবেশ করছে, কিন্তু রোগ হচ্ছে না। অর্থাৎ আসবাবগুলো রোগের কারণ বটে কিন্তু খুবই দুর্বল কারণ। ফলে আগুন যেমন হাত পোড়ানোর শক্তিশালী সবব/কারণ,  রোগের এই আসবাবগুলো তেমন নয়। ফলে রোগ হলো হুকমুল্লাহ/আল্লাহর স্বতন্ত্র নির্দেশ। আর আগুনের পোড়ানো হলো আদাতুল্লাহ/আল্লাহপ্রদত্ত রীতি। আদাতুল্লাহর ক্ষেত্রে আত্মরক্ষা হবে সর্বোচ্চ মাত্রায়। কিন্তু আমাদের আলোচ্য ক্ষেত্রে সতর্কতা হবে স্বাভাবিক। অতিকায় না। কারণ এগুলো দিয়ে রোগ দেওয়া সম্পূর্ণই আল্লাহর হুকুম। এগুলো এমন সবব যে, রোগ হলে বলা হবে এটা রোগের কারণ হয়েছে৷ কিন্তু রোগ না হলে বলা হবে না যে এটা রোগের কারণ হবেই।  আর আগুন দিয়ে পোড়ানো আল্লাহর আদাত। কাউকে যদি আল্লাহর হুকুমে নাও পোড়ায় তবু বলা হবে আগুন পোড়ায়। কারণ পোড়ানোটাই তার আল্লাহপ্রদত্ত্ব রীতি। যেহেতু রোগের সববগুলো রোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে ধ্রুব না, রীতিও না এই কারণেই বলা হবে রোগ ছোঁয়াচে না। প্রথমজনের যেমন আল্লাহর হুকুমে হয়েছে, পরেরজনেরও তাই।

আরও পড়ুন : ইসলাম ও সংক্রমণ : মুসলিম চিন্তার ঐতিহাসিক পাঠ

আর একটি প্রশ্ন হতে পারে যে, একই সময়ে মহামারী হয়ে অনেক মানুষের রোগ হওয়া থেকে তো বোঝা যায় সংক্রমণের দ্বারা রোগ হওয়া আদাতুল্লাহ বা আল্লাহ প্রদত্ত রীতি!

এখানে লক্ষ্য করার বিষয়, ব্যাপারটিকে কেউ আদাত বললেও তা আদাতে মুত্তারিদাহ বা মুসতামিররাহ না (অর্থাৎ সাধারণত এই কারণের দ্বারা রোগ হতে থাকবে বা একই সময় সবার হতে থাকবে তেমন নয়) বরং শুধু যতক্ষণ হুকুম আছে ততক্ষণের জন্য। যে কারণে দেখা যায় আজ যেটা ছোঁয়াচে বলা হয় সেটা কদিন বাদে মানুষের শরীর সয়ে যায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তাতে অভ্যস্ত হয়ে যায়, ফলে তাতে আর ব্যাপকতর রোগ হয় না। কলেরা তার জ্বাজ্জ্বল্য উদাহরণ। এমনকি যখন ব্যাপকভাবে হয় তখনও এটা বহু মানুষের হয় না। সে হিসেবে মহামারিকেও বলা যায় কিছুদিনের জন্য আল্লাহর হুকুম। আদাত বলার কোনো স্বার্থকতা বের করা মুশকিল।

সংক্রমণ নাকচ করার বাইরে যেসব বর্ণনায় প্রচলিত অর্থে সংক্রামক রোগী থেকে দুরত্ব অবলম্বনের কথা পাওয়া যায়, তা উম্মতের জন্য সুযোগ ও দয়াশীলতা। উম্মতের জন্য যেন কঠিনতা চেপে না যায়, দুর্বল ঈমানদারদের জন্য যেন অবকাশ তৈরি হয় সে জন্যে বলা হয়েছে। যেমনটি ব্যাখ্যাকারগণ উল্লেখ করেছেন।

আরও পড়ুন : মহামারী বিপর্যয়ে সচেতনতা : অষ্টাদশ শতকের হানাফি ফকিহের ব্যাখ্যা

এবার এই আলোচনা সামনে রেখে সামান্য চিন্তা করুন, যে বিষয়টি শুধু দুর্বলদের সহজীকরণ ও অবকাশ দানের জন্য, তা সবার উপর চাপিয়ে দেওয়া আমেরিকান ঈমান ছাড়া কী? এই যে বিশাল সংখ্যক মানুষ হৃদয়ের আবেগ নিয়ে কত কষ্ট করে হজ্বের জন্য প্রস্তুতি নিল তা নিজেরদের একক মাথামোটা সিদ্ধান্ত দিয়ে বন্ধ করার কোনো যৌক্তিকতা তো পাওয়া মুশকিল।

এছাড়া এখানে আরো লক্ষণীয় বিষয় হলো, প্রবলভাবে আক্রান্ত দেশগুলো যেমন ইতালী, স্পেন ইত্যাদি দেশগুলোতেও ইতিমধ্যে করোনা পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক হয়ে এসেছে, আর অধিকাংশ মহামারী বসন্তকালে এসে গ্রীষ্মকালে সাধারণত বিদায় নেয়। হাফেজ ইবনু হাজার রহ. মিশরে ৮৩৩ হিজরীর ভয়াবহ মহামারী বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন

وكانت الطواعين الماضية تقع في فصل الربيع بعد انقضاء الشتاء وترتفع في أول الصيف.

‘অতীত মহামারীগুলো শীতের শেষে বসন্তকালে হত, আর গ্রীষ্মের শুরুতে বিদায় নিত।’ (বাযলুল মাউন পৃ. ৩৬৯)

একদিকে সংক্রমণের ক্ষেত্রে ইসলামের অবস্থান, অন্য দিকে অবস্থার পরিবর্তন সব কিছু মিলিয়ে তাদের সিদ্ধান্তকে আরো অযৌক্তিক করে দিয়েছে।

বন্ধ হওয়া আর বন্ধ করার গোলযোগ

এখানে ‘দারাতুল মালিক আব্দুল আযীয’-এর প্রকাশিত হজ্ব বন্ধের ঘটনাগুলো কেউ নিরপেক্ষভাবে পড়লে বুঝতে পারবেন যে, এসব ঘটনায় গণহারে হাজীদের মৃত্যুর কারণে এমনি হজ্ব বন্ধ বা বন্ধের মত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু প্রকাশ করার ক্ষেত্রে এমন ভাষায় প্রকাশ করা হলো যেন, কাগুজে হিসেব-নিকেশ করে মহামারী প্রমাণিত হওয়ায় সরকারীভাবে বন্ধ করে দিয়েছে!

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কাগুজে হিসেব নিকেশ করে বন্ধ করা আর হাজীদের ব্যাপক মৃত্যুর কারণে এমনিই ভীতি সঞ্চারিত হয়ে বা লোকসঙ্কটের কারণে বন্ধ হওয়া। দুটো বিষয় কখনো এক না।

অনেক ক্ষেত্রে সমবেত লোকদের ব্যাপক মৃত্যুর কারণে এমনিতেই সবাই ভীত ও বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরিবেশে বন্ধ ঘোষণা করারও না হয় একটি যৌক্তিকতা থাকে। যা করোনার শুরুর সময়ে কিছুটা ছিল। (যে কারণে তখন বিভিন্ন দেশে উলামায়ে কেরাম জুম’আ ও জামা’আত সীমিত করার অনুমতি দিয়েছিলেন।) এখন সে পরিস্থিতি নেই। বরং করোনায় আল্লাহ তা’আলা স্পষ্টভাবেই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ও অমুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের মধ্যে বরং অমুসলিম দেশের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা ও অন্যান্য অঞ্চলের মধ্যেও আক্রান্ত ও মৃত্যুর স্পষ্ট পার্থক্যরেখা টেনে দিয়েছেন। কথিত মুসলিম রাষ্ট্র ইরান ছাড়া অন্য কোনো মুসলিম দেশেই করোনা ভয়াবহ আকার ধারণ করেনি। এটা আল্লাহ তা’আলার প্রকাশ্য কুদরত ও ঈমানদারদের উপর রহমত ছাড়া কিছু না। অনুরূপভাবে আল্লাহ তা’আলা সমবেত হওয়ার শরয়ী নির্দেশনা আছে এমন কোনো সমাগমের কারণে ইসলামধর্মীয় কোনো স্থানকে বেইজ্জত করেননি। সুতরাং যে সকল মুসলিম রাষ্ট্রের শাসকগোষ্ঠী ভয়ে কুঁকড়ে ছিল ও আছে তাদের নিশ্চয় হাতে জুলুম ও রক্তের দাগ লেগে আছে। আমাদের আলোচিত দেশটির শাসকগোষ্ঠী মিশরে অন্যায় কর্ম ঘটাতে গিয়ে, ইয়ামানে হস্তক্ষেপ করতে গিয়ে, নিজ দেশে মুক্ত মত প্রকাশের অপরাধে (?) বহু উলামাদের আটকে রেখে এবং কুফফার জালিমদের অর্থায়ন করে নিজেদের হাতে যে পরিমাণ রক্ত লাগিয়েছে সে কারণেই এক মহাভীতি চাপিয়ে দিয়েছেন আল্লাহ এদের উপর।

গত ১০ই এপ্রিলের সময় নিউজের সংবাদটি পড়ুন,

‘করোনার ভয়ে প্রাসাদ ছেড়ে পালালেন সৌদি বাদশাহ-যুবরাজ!

মহামারি করোনাভাইরাসের আতঙ্কে রাজপ্রাসাদ ছেড়ে জেদ্দায় নতুন ভবনে চলে গেছেন ৮৪ বছর বয়সী সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ। বর্তমানে তিনি লোহিত সাগর উপকূলীয় শহরটির কাছে একটি আইল্যান্ড প্যালেসে অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস।

এ ছাড়া ৩৪ বছর বয়সী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানও জেদ্দার এক প্রত্যন্ত এলাকায় চলে গেছেন। যেখানে ইতোমধ্যে তিনি ‘নিওম’ নামে একটি ভবিষ্যত নগরী গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সৌদি রাজপরিবারের অন্তত দেড়শ’ সদস্য করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন সম্প্রতি ইউরোপ ভ্রমণ করেছিলেন।

আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন রাজপরিবারের শীর্ষ সদস্য রিয়াদের গভর্নর প্রিন্স ফয়সাল বিন বান্দার বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদ। তিনি এখন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) আছেন।

পরিস্থিতি সামলাতে ইতোমধ্যে মক্কা, মদিনা, রিয়াদ, জেদ্দা শহরে কারফিউ জারি করা হয়েছে। সব ধরনের আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।’

আজাব ভীতি

মুমিন মাত্রই আল্লাহর আজাবের ভয় থাকবে। সাথে থাকবে রহমতের আশা এবং তাওয়াককুল। কিন্তু অপরাধী হিসেবে যে আতঙ্ক তা ভিন্ন জিনিস। হাতে রক্তের দাগের কারণে সেই আতঙ্কই তাদের মাঝে পরিস্ফুট হয়ে উঠেছে। যার ফলে এই পলায়ন, যার ফলে এই সব অদ্ভূতুড়ে সিদ্ধান্ত। হাদীসে এসেছে মহামারী মুমিনদের জন্য রহমত ও শাহাদাত। আর ঈমানহীনদের জন্য আজাব।

حَدَّثَنَا يَزِيدُ ، حَدَّثَنَا مُسْلِمُ بْنُ عُبَيْدٍ أَبُو نُصَيْرَةَ ، قَالَ : سَمِعْتُ أَبَا عَسِيبٍ مَوْلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” أَتَانِي جِبْرِيلُ بِالْحُمَّى وَالطَّاعُونِ، فَأَمْسَكْتُ الْحُمَّى بِالْمَدِينَةِ، وَأَرْسَلْتُ الطَّاعُونَ إِلَى الشَّامِ، فَالطَّاعُونُ شَهَادَةٌ لِأُمَّتِي وَرَحْمَةٌ، وَرِجْسٌ عَلَى الْكَافِرِ “.

এই হাদীসে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘মহামারী আমার উম্মতের জন্য শাহাদাত এবং রহমত, কাফেরদের জন্য আজাব।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ২০৭৬৭ হাফেজ ইবনু হাজার রহ. নিজের সনদে হাদীসটি বর্ণনার পর বলেন, হাদীসটি হাসান দ্র. বাযলুল মাউন পৃ.৭৯)

ধর্মীয় বাতাবরণ

এ ধরণের শাসকগোষ্ঠীর সর্বকালের স্বভাব হলো, এই সিদ্ধান্তগুলোকে ধর্মীয় পোশাক পড়ানো। হারাম শরীফের একজন খতীব শায়েখ সালেহ বিন হুমাইদ জুম’আর খুতবায় এই সিদ্ধান্তের সমর্থন করতে গিয়ে আশ্চর্য কথা বলেছেন, সুরা আলে ইমরানের ৯৭ নম্বর আয়াত-

ومن دخله كان آمنا

‘যে হারামে প্রবেশ করবে সে নিরাপদ হয়ে যাবে’ এর ব্যাখ্যায় উলামায়ে কেরামের নাম দিয়ে উল্লেখ করেন,

أمنوه

অর্থাৎ এর মানে হলো, তাদের নিরাপত্তা দাও।

এর দ্বারা তিনি বোঝাতে চাইলেন, নিরাপত্তার জন্য তাদের হারামে ঢুকতে দিও না, হজ্বে আসতে দিও না!

এরকম ব্যাখ্যা ইতিহাসের কোন আলেম করেছেন তা আমাদের বোধগম্য না। এই ব্যাখ্যা  খোদ এই আয়াতেরই বিপরিত। আয়াতে স্পষ্টই বলা হয়েছে যে, প্রবেশ করবে সে নিরাপদ, তাকে ক্ষতি করা যাবে না।

শায়েখের ব্যাখ্যা থেকে মনে হচ্ছে, কুদরতের হুকুমে মৃত্যু ঘটা থেকে দুরে রাখাও তাদের দায়িত্ব। অথচ আল্লাহ তা’আলা বলেছেন,

أَیۡنَمَا تَكُونُوا۟ یُدۡرِككُّمُ ٱلۡمَوۡتُ وَلَوۡ كُنتُمۡ فِی بُرُوجࣲ مُّشَیَّدَةࣲۗ

যেখানেই থাক তোমৱা মৃত্যু তোমাদেৱ নিকট পৌঁছবে, যদিও তোমরা সুউচ্চ প্রাসাদে থাক! (সুরা নিসা, ৭৮)

এ বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সাথে লক্ষ রাখা দরকার যে, সরকার প্রভাবিত ফাতওয়াকে সরকার প্রভাবিত না এমন আলেমদের ফাতওয়ার সাথে মিলিয়ে দেখা কর্তব্য। তা না হলে ভুল বার্তাগ্রহণের বিস্তর সুযোগ থাকে। হারামাইনের খতীব হন বা যিনিই হন অবশ্যই চোখ বন্ধ করে এই ফাতওয়া গ্রহণ করার সুযোগ নেই। এই আলেমদের বাতিল করে দেওয়ারও প্রয়োজন নেই। হয়তো তাঁদের কোনো ওযর থাকবে। কিন্তু কিছুতেই তাদের ফাতওয়া নিরপেক্ষ আলেমদের ফাতওয়ার সাথে মিলিয়ে নেওয়া ছাড়া গ্রহণীয় নয়।

শেষ কথা

যে সকল নিরপেক্ষ আলেম বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন, তারা একটি বিষয়ে জোর দিয়েছেন যে, হারামাইন মুসলিম উম্মাহর সম্পদ, এটি ভৌগলিক পরিধির ভিতরে পড়ে যাওয়ায় কারো একক অধিকার নয়। সুতরাং এর সাথে সংশ্রিষ্ট সিদ্ধান্তগুলো তারা এককভাবে নিতে পারে না, সবার সাথে পরামর্শ করে সারাবিশ্বের উলামাদের মতামত নিয়ে তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া কর্তব্য৷

বর্তমান অবস্থায় তাদের উচিত ছিল, যারা নিজস্ব নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে হজ্বে না আসতে চায়, তাদের জন্য সেই সুযোগ তৈরি করে দেওয়া। এবং অসুস্থ ও দুর্বলদের আসতে না দিয়ে অন্য সবার  যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যবস্থা করে আসার পথ খোলা রাখা। কিন্তু এই সিদ্ধান্তের জন্য যে রুহানী ও নৈতিক শক্তি দরকার তা আগেই তারা হারিয়েছে।

আরও পড়ুন :

মহামারী ব্যাখ্যায় মুসলিম বোঝাপড়া

আগের সংবাদশায়খ অব দ্য ব্রিটেন : আবদুল্লাহ কুইলিয়াম
পরবর্তি সংবাদ‘আল্লাহ কেন দেন বিপর্যয়?’ : বিপর্যয়ের নৈতিক ব্যাখ্যার সন্ধানে