হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাই

সুমাইয়া মারজান:

অতীত নিয়ে লিখতে গেলে মনে হয় কোথাও ঝনঝন শব্দে ভেঙে পড়ছে কাঁচ। ফ্রেমে বাঁধা স্মৃতির আয়নার । একটা অচেনা বিষাদময় অনুভূতি ঘিরে ধরে আমায় । নিজেকে নিজে প্রশ্ন করি, আমি কি হারানো কিছুর বেদনায় মলিন? মনের ভেতর থাকা পোস্তদানা মনটা কিছু বলে না।

মনে পড়ে আমায় একটা গল্প লিখতে হবে। বেশ দূরে ফেলে আসা সময়ের গল্প। মেঘকালো থমথমে জীবনের করিডোরে নরম, কমলারঙা রোদ্দুর গড়াগড়ি করা দিনগুলোর । আমার মাদরাসা জীবন। অর্ধযুগ বা তার চেয়ে কিছুটা বেশি সময় যেখানে সংসার পেতেছিলাম। আমি তখন বেণি দুলিয়ে, ব্যাগ কাঁধে স্কুলে আসা যাওয়া করা ছাত্রী। প্রজাপতির মতো উড়ে বেড়ানোর দিন আমার। নিজেদের মাদরাসা থাকার সুবাদে কাছ থেকে দেখি মাদরাসা ছাত্রীদের যাপিত জীবন। বেঞ্চে কিতাব রেখে , মেঝেতে বিছানো কার্পেটের উপর বসে ইলমের দরস নেয় তারা। বেশ বিনয়ী ভঙ্গিতে। নতজানু বসার ধরণ। দেখলে মনে হয় যেন অপার্থিব কোন আলোকবর্তিকার আলোয় উজ্জ্বল অথচ আনত তারা। আমারও সাধ জাগে নিজেকে এমন করে বিলিয়ে দিই ইলম অন্বেষণে। আমার জীবনও হোক ঐশীবিভায় আলোকিত। স্কুলে পড়ছি তখনও, কারণ মাদরাসায় নূরানী বিভাগ চালু হয়নি। দিন কাটে , বছর কাটে, দিলের তড়প বাড়ে। ইলম অন্বেষণে নিজেকে বিলিয়ে দিতে। ক্লাস ফোরের বার্ষিক পরীক্ষার কিছুদিন আগে জেদ করলাম, আমি আর স্কুলে পড়বো না। স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে অযথাই মাদ্রাসায় বসে থাকি। মুগ্ধ হয়ে দেখি ছাত্রীদের ইলমের তরে নিজেকে সঁপে দেওয়ার প্রতিযোগিতা। আপন বোনের মতো সুখ- দুঃখ ভাগ করে নেওয়া। হৃদয়ের বন্ধন। সুন্নতি জীবনযাপন। বাসায় বার্ষিক পরীক্ষা দেওয়া নিয়ে ঝামেলা হয়েছিলো কী না তা মনে পড়ছে না। স্মৃতির জানালার পর্দা সরালে শুধু দেখতে পাই—তালিবুল ইলমের খাতায় আমার নাম লেখানোর মুহূর্তটি। কী তুমুল আনন্দ তখন মনে। চৌদ্দশ বছরের আলোকিত কাফেলায় সেদিন কিতাব, কলম নিয়ে আমিও শামিল হয়েছিলাম। পরম সৌভাগ্যময় একটি দিন আমার জীবনের। সবচে আনন্দের, সবচে রঙিন। ইলমে নববীর বাগানে একটি পুষ্পকলি হিসেবে প্রস্ফুটিত হবার আশায় আমার যাত্রা শুরু হলো।

পঞ্চম শ্রেণী বা জামাতে খামিছে ভর্তি হই রমজানের পর। তার আগ পর্যন্ত মাদরাসার মুগ্ধতার ঘোরে ঘোরেই দিন কাটিয়ে দিলাম। আরবি যা কিছু পড়েছি হেফজখানায়, (হেফজখানার স্মৃতি লিখছি না কারণ সেসব আমার মনে নাই ঠিকঠাক। হেফজখানায় পড়াকালীন আমি খুবই ছোট।) বাসায়, তা এখানে এসে তেমন কোন কাজে দিলো না। কারণ হেফজখানায় তো কুরআন কারীমে লেখা আরবি শিখেছিলাম। তাও হাতেকলমে না। অর্থ না বুঝে। এখানে আমাকে পড়তে হবে আদীব হুজুর দামাত বারাকাতুহুমের এসো আরবি শিখি, আরবি জবান, তালীমুল ইসলাম চতুর্থ খণ্ডের মতো আরও নানান আরবি, উর্দু কিতাব। অর্থসহকারে পড়তে হবে। আদীব হুজুরকে মূলত তখন থেকেই চেনা আমার। পরবর্তীতে তার এসো কলম মেরামত পড়ি থেকে রোজনামচা লিখতে শিখেছিলাম। আরও পড়েছি, বাইতুল্লাহর ছায়ায়,বাইতুল্লাহর মুসাফির, তুরস্কে তুর্কিস্তানের সন্ধানে, দরদী মালীর কথা শুনো ১ম ও ২য় খণ্ড, মুসলিম উম্মাহর পতনে বিশ্বের কী ক্ষতি হলো, শিশুতোষ সিরিজের বইগুলো। পুষ্পসমগ্রগুলোও পড়া হয়েছে। আমার সাহিত্যের পথে হাঁটতে শুরু করার পেছনে দুজন মানুষের অবদান রয়েছে। আমার মুহতারামা আম্মু ও আদীব হুজুর দামাত বারাকাতুহুম। এই দুজন মানুষই দুরন্ত কৈশোরে আমার ভেতর বুনে দিয়েছিলেন সাহিত্যের বীজ। আল্লাহ তাদেরকে তাদের শান অনুযায়ী প্রতিদান দিন। আমার উপর তাদের ছায়াকে আরও দীর্ঘদিন প্রলম্বিত করুন। আমীন।

স্কুলফেরত আমার জন্য আরবিটা মোটামুটি কঠিনই হয়ে পড়লো। কিন্তু আমাকে শিখতে হবে, আমার জেদ রক্ষা করতে হবে এইটুকু প্রতিজ্ঞা আমাকে দিয়ে নিরলস পরিশ্রম করাতে লাগলো। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার পরেও যে আমাকে খেলার মাঠ থেকে জোর করে আনা যেতো না। সে আমিই খেলাধূলা সব বাদ দিয়ে আসরের পরে আরবি লিখতে বসে যেতাম। লেখা গুছিয়ে আরবি পড়তাম। উর্দুটা মোটামুটি না কেবল, বেশ কঠিন হয়ে পড়লো। উর্দুর জন্য মন খারাপ করতাম প্রচণ্ড। আব্বুর কাছে রাতজেগে পড়তাম। তাও অনেকসময় ধরতে পারতাম না ঠিকঠাক। ভেতর থেকে ভেঙে পড়তাম। সব ক্লাসের পড়া মোটামুটি জোগান দিতে পারলেও উর্দুতে লবডংকা কাণ্ড। শেষতক উর্দুর সুরাহা হলো হেদায়াতুন্নাহু জামাতের এক আপুর মাধ্যমে। তাহাজ্জুদ পড়তে রাতের শেষাংশে উঠতেন তিনি। আমি রাতে শুতে যাবার আগে দেখিয়ে দিয়ে যেতাম পরেরদিনের পড়া কতটুকু। তিনি শেষ রাতে সেইটুকুর বাংলা উচ্চারণ লিখে রাখতেন আমার খাতায়। সকালে সেই উচ্চারণ মুখস্ত করে ক্লাসে পড়া দিতাম। খুবই সুন্দর ও স্পষ্টভাবে, বেশ দৃঢ়কণ্ঠে পড়া বলতাম ক্লাসে। এভাবে উর্দু ক্লাসের আপার কাছে সবচে প্রিয় ছাত্রী হয়ে উঠলাম। কী করে যে আমি উর্দুতে এমন হঠাৎ করে পারদর্শী হয়ে গেলাম তা কেউ ধরতে না পারলো না । আমি তো জানতাম আমার ভেতরকার খবর। আমাদের এইসব অবশ্য গোপনেই চলছিলো। আপার চোখে প্রিয় হয়ে আমার দিনকাল ভালোই যাচ্ছিলো। কিন্তু এইসব তো আর চিরকাল চলে না। চলতে পারে না। ফ্যাঁকড়াটা বাঁধলো তখনই যখন আমি পরীক্ষা দিলাম। ১ম সাময়িক পরীক্ষায় মুমতাজ মার্ক মিস হয়ে গেলো এই উর্দুর জন্যই। আমার ছোটমনে ব্যাপারটা প্রচণ্ড আঘাত করলো। আর তখনই আমার মুগ্ধতার ঘোর কেটে গেলো। বারবার মনে হতে লাগলো কেন স্কুল ছেড়ে এলাম। মাদ্রাসায় এত কঠিন পড়া। আগে জানলে মাদ্রাসায় আসতাম না।

এসো আরবি শিখি ও আরবি জবান পড়াতেন যে আপা তিনি বেশ কড়া মেজাজের ছিলেন। পড়া পারতেই হবে তার মূলনীতি। এখানে কোন অজুহাত চলবে না। যেভাবেই হোক তার পড়া ও হাতের লেখা চাই। যত্ন করে তার পড়া শিখতাম। কারণ পড়া না পারলে—যেসব শাস্তির প্রয়োগ হবে আমার উপর তা সহ্য করার মতো সাহস আমার ছিল না।

আদীব হুজুরের এসো ফিকহ শিখি কিতাবও পড়ানো হতো। কিশোরদের উপযোগী ফিকহের কিতাব এটি। এই কিতাব যে আপা পড়াতেন তিনি ছিলেন খুবই অমায়িক। তার বর্ণনা ও উপস্থাপনার ভঙ্গি ছিলো চমৎকার, আনকোরা। এই দরসের জন্য আমরা মুখিয়ে থাকতাম। পরবর্তীতে তার কাছে পড়েছি মিযানুসসরফ ও সফওয়াতুল মাসাদির কিতাব। এই কিতাবগুলোর দরস আমার জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

মাদরাসায় দরস চলতো প্রায় দুপুর দেড়টা পর্যন্ত। তারপর সাময়িক বিরতির ঘন্টা বাজানো হতো। ঘন্টা বাজলে ওযু করে যোহরের নামাজ পড়তাম। ছোট ছাত্রীদের জামাতে নামাজ পড়ার নিয়ম করা ছিল। আমাকে বানানো হলো যোহর ও আসরের ওয়াক্তের ইমাম। যোহরের নামাজ আমার খুবই লম্বা মনে হতো। ইমামতি করতে গিয়ে হাঁপিয়ে যেতাম। প্রথমবছর এই দায়িত্ব আদায় করতাম অত্যন্ত বিরক্তির সাথে। “ওয়াযআলনা লিল মুক্তাকিনা ইমামা” দোয়া শেখার পরে এই দায়িত্ব ভালোই লাগতো। এই দোয়ার সাথে কোথাও একটা মিল খুঁজে পেতাম নিজের মধ্যে। আহা! আমার শিশুমনের নির্মল ভাবনা। যেন সকালের স্নিগ্ধ সমীরণ।

তাকরারের অধ্যায়টা বেশ উপভোগ্য ছিল। গ্রুপ গ্রুপ করে পুরো ক্লাসের ছাত্রীরা তাকরারে বসতো। ক্লাসে যে পড়াটা পড়িয়ে দেওয়া হতো তাকরারে এসে ক্লাসের টপ ছাত্রীরা সেগুলো আবার পড়িয়ে দিতো। তাকরার বেশ উপকারীও। ক্লাসের পড়া পুরোপুরি হল হয়ে যেতো এখানে। দিনে দুইবার তাকরার হতো। দুপুরে ও রাতে। আমরা উচ্চ আওয়াজে (যতটুকু সম্ভব) পড়তাম। ওই সময়টুকুতে পড়া শেখার এক আনন্দের ধুম পড়ে যেতো যেন। কে যেন একদিন বললো, তোমাদের তাকরারের আওয়াজ রাস্তা থেকে শোনা যায়। তারপর থেকে তাকরারে খামিছ ও মিযানের বছর স্বাভাবিক আওয়াজে পড়েছি বলে মনে পড়ে না।

তাকরারের পরে মাদরাসা ছুটি। ঘুমের সময় তারপর। এমন নির্জন, উদাসী দুপুর ঘুমিয়ে নষ্ট করবো! ভাবতেই পারতাম না। মন উসখুস করে উঠতো পাখির মতো উড়ে বেড়ানোর জন্য। সুযোগ পেলেই ছুট দিতাম খেলার মাঠে। খুঁজে খুঁজে যতসব মানা ভাঙতে নেমে পড়তাম দলবল নিয়ে। আর যেদিন কড়া পাহারায় আটকে যেতাম, সেদিন চুপটি করে পড়ে থাকতাম বিছানায়। আস্তে আস্তে ঘুম এসে যেতো। দুরন্ত সময়টুকুর জন্য প্রচণ্ড মন খারাপ নিয়ে ঢলে পড়তাম সাময়িক মৃত্যুর কোলে। চোখের পাতা বন্ধ হওয়ার আগে দেখতাম বাইরে বইছে এলোমেলো হাওয়া। আছড়ে পড়ছে জানালার শার্সিতে। নির্জন দুপুরে দোল খাচ্ছে গাছের পাতারা। এমন দুপুরে ঘুমাতে ইচ্ছে করে কার? আমার উদাসী মন চাইতো আমিও হাওয়ার তালে ছুটতে থাকি পাখির মতোন। তা তো পারা যেতো না । এক অদ্ভুত বিষণ্ণতা ঘিরে ধরতো আমায়। দুপুর গড়িয়ে নামতো বিকেল। দূরের মিনার থেকে আসরের আজান আসতো ভেসে। নামাজ পড়ার জন্য আমাদের ডাক দিতেন আপারা। উঠে নামাজ পড়তাম। তারপরের সময়টুকু লেখা শেখার। এই সময়টা ফাঁকি না দিলে দিনটাই বৃথা হয়ে যেতো। যে করেই হোক এই সময়টুকু আমার নিজের মতো করে কাটাতাম। কিচ্ছু করার না থাকলে খাতায় স্কুলে শিখে আসা আর্টগুলো আঁকতাম। ফুল, পাখি, ঘরবাড়ি এইসব। কোন কোনদিন তাও ভাল্লাগতো না। মন চাইতো মাঠে গিয়ে একটু হেঁটে আসি। ছুটে যাই কলেজ স্ট্রিটে। সম্ভব হতো না। আপাদের কঠোর নজরদারির কারণে বের হওয়া যেতো না। তখন বারান্দার গ্রিলের ফাঁকে চোখ রেখেই কাটিয়ে দিতাম সেদ্ধ জলপাইয়ের মতোন বিস্বাদ বিকেল। বাইরে পাতায় পাতায় দোল খাচ্ছে মৃদু হাওয়া। প্রাচীরের ওপারে ফুটবল খেলছে একদল কিশোর। তাদের হর্ষধ্বনি, পাশের ব্যস্ত রাস্তায় চলা রিকশার টুংটাং, মোটরগাড়ির ভেঁপু শব্দ শুনতে শুনতে কাটতো বন্দী বিকেল। মাদরাসায় যাদের শৈশব বা কৈশোর কেটেছে তাদের এই সময়গুলোতে দুরন্ত ছুটে চলা হয় না। নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন। শৈশবের রঙিন, কৈশোরের উত্তাল দিনগুলো কেটে যায় বন্দী জানালায় মুখ রেখে।

লেখা ফাঁকি দিয়েছি বেশি মিযান ও নাহবেমীরের বছর। আনমনা, উদাস বিকেল কাটিয়ে পরদিন শূন্য খাতা নিয়ে ক্লাসে উপস্থিত হতাম। সাজাও পেতে হতো। নির্বিকার চিত্তে সাজা হজম করেছি। তবুও মনের ভেতর বিকেলটা নিজের মতো করে কাটানোর আনন্দটুকু লেপ্টে থাকতো। তাই পরদিন সেই একই রুটিন।

শূন্য লেখার খাতা গুছাতে গুছাতে সূয্যিমামা ডুব দিতো পশ্চিম আকাশে। এই সময়টুকুও আমার বেশ প্রিয়। শেষ বিকেলের আকাশে গুঁড়োগুঁড়ো আবির ছড়িয়ে থাকে। সারাদিনের দাপুটে রাজত্ব শেষে অস্তগামী সূর্যের বিদায়ে যেন সন্ধ্যা নামতো ঝুপ করেই। আরেকটা দিনের বিদায়ে আমার মন খারাপ হতো। মাগরিব বাদের দোয়া ও তাসবিহাত আদায় করে পড়তে বসার নিয়ম। টানা আড়াইঘন্টা পড়তে হবে। তাকরার, ক্লাসের পড়া রেডি করার সময় এখন। পড়া শেখা, আপার চোখ ফাঁকি দিয়ে নানান দুষ্টুমি, গালগপ্পো, কাগজছেড়া, মুড়ি মাখার আয়োজন করা। আহা! কীসব দিন পার করে এসেছি! কতবছর হবে? আঙ্গুলের কর গুনে দেখি প্রায় অর্ধযুগের কাছাকাছি বছর। বিদ্যুৎ থাকতো না যে রাতে আমাদের উৎসব লেগে যেতো যেন। মোমবাতির আলোয় কোনরকম এক আরেকজনকে দেখা যায়। বইয়ের পড়া দেখা যায় না তেমন। কয়েকঘন্টার জন্য লোডশেডিং হওয়ায় আমাদের পড়া থেকে মুক্তি মিলতো। পরদিন ক্লাসে পড়া না পারলেও তেমন চিন্তা নেই। আপারা তো জানতেনই বিদ্যুৎ ছিল না রাতে। হালকা ধমক দিয়ে ছেড়ে দিতেন। লোডশেডিংয়ের কারণে আমাদের ও বেতের উভয়েরই মুক্তি মিলতো সেদিন। আমরা তাই লোডশেডিংয়ের কাছে কৃতজ্ঞ থাকতাম।

এখনকার জেনারেটরের ঝা চকচকে আলোয় পড়া জেনারেশন কী করে বুঝবে— লোডশেডিংয়ের সুবাদে পড়া থেকে একটা সন্ধ্যা মুক্তি পাওয়ার আনন্দ! দিনদিন ব্যবস্থাপনা, প্রশাসনিক কার্যক্রমের উন্নতি হচ্ছে বটে, সেই সাথে হারিয়ে যাচ্ছে শৈশবের ফাঁকিবাজি করার সেই আনন্দঘন নির্মল প্রহরগুলো।

এশারের নামাজ পড়ার পর ডাক পড়তো রাতের খাবারের । খাওয়ার পর তালিমে বসতাম। রোজ রাতের এই তালিমের টাইমে ছিল আমার ঘুমের শিডিউল। ভীষণই ঘুমকাতুরে আমি তালিমে বসতাম সবার পিছনে। তারপর হারিয়ে যেতাম ঘুমের কোলে। সেখান থেকে কোনরকমে টেনেটুনে বিছানায়। তারপর আরেকটা দিনের শুরু। মোরগ ডাকা ভোরে পাখিদেরও আগে ঘুম থেকে জাগতাম আমরা। পাখিদের কিচিরমিচির শুরু হওয়ার আগেই আমাদের মুখে ফুটতো কোরআনের বাণী। এক মধুর গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠতো চারপাশ। ভোরের স্নিগ্ধতা আর কোরআন তেলাওয়াতের মধুর গুঞ্জনে এক অপার্থিব আবহের সৃষ্টি হতো। সে এক জান্নাতী পরিবেশ। মন ভরে যেতো মুগ্ধতায়।

মঙ্গলবার আর বৃহস্পতিবার ছিল সাপ্তাহিক জলসা ও তালিমের দিন। জলসা বসতো মঙ্গলবারে। সে এক উৎসবের দিন। ছোটবড় সবার মনে উৎসবের আমেজ। আজকে দুপুরের মক্তব নেই, তাকরার নেই। হালকার পরেই জলসায়। বড় ক্লাসের আপাদের সম্পাদনায় জলসা চলতো। কোরআন তেলাওয়াত, বিভিন্ন বিষয়ের উপরে বক্তৃতা প্রদান, ইসলামী সংগীত পরিবেশন, আরবি মুকালামা, কবিতা আবৃত্তিতে মুখর হয়ে উঠতো মাদরাসার হলরুম। দেড়- দুঘন্টার জলসায় বক্তৃতার টাইমে সবাই যেন তার নিজের মনের হাঁপ ছাড়তো। তেলাওয়াতে ও সংগীতের সময়ে চুপ থাকা যার ভেতর যে কথাগুলো জমতো তা বলা হয়া যেতো সে সময়ে। সহ সম্পাদিকাদের চোখ রাঙানির তোয়াক্কা করতো থোড়াই। আপারা বেত হাতে এসে ধমক দিলে সব চুপচাপ। আর সংগীতের সময় সব কাঠের পুতুল বনে যেতো একদম। মোহাবিষ্ট হয়ে থাকা একেকটা সময়। উপভোগ্য ছিল মুকালামার সময়টুকু। দোভাষীর ভূমিকায় থাকতো একজন। একেকজনের কবিতা আবৃত্তির নিয়ে হাসাহাসি হতো প্রচুর। কারণ আবৃত্তি তো করতো আনাড়ি ভঙ্গিতে।

বৃহস্পতিবার মক্তবের পর হতো সাপ্তাহিক তালিম। নসিহত, জবাবদিহি, দোআ সব মিলিয়ে ছিল তালিমের সময়।

মাদরাসা জীবনের স্মৃতি নিয়ে লিখতে বসেছি জীবনে বহুবার। প্রতিবারই খেই হারিয়ে ফেলেছি। কোত্থেকে শুরু করবো! কোথায় হবে শেষ! এত এত স্মৃতি। কোথায় লিখে রাখি এত এত নাম। গোলমাল হয়ে যায় সব। বই হয়ে যাবার কথা বেশ কয়েক ফর্মার। আর এই স্মৃতিগদ্যে কতটুকুই বা তার তুলে আনা যাবে। মোটাদাগে কিছু কথা তুলে আনা গেলো কেবলই। একেকটা দিন একেকরকম। প্রতিটি দিন নিয়ে একটি করে স্মৃতিগদ্য হবে যেন। আনন্দ, বেদনার মিশেলে দিনগুলো ছিলো বেশ ছন্দমুখর।

প্রতিবারই তো নতুন বছর শুরু হয়। আগেভাগেই কিতাব কিনে, মলাট করে নামধাম লিখে ফেলি মহোৎসাহে। একটা করে জামাতের সিঁড়ি পার হই আর মনে হয় এবার যেন একটু বড় হলাম। মেশকাত শেষ করে তাকমিলের বছর এলো যখন, মনখারাপ হলো প্রচুর। এবারই তো শেষ। আর নতুন বছরের আমেজে মন মাতবে না। এবার যেন একটু বড় হয়েছি এমন আনন্দে আর হৃদয় নেচে উঠবে না। এই অনুভূতিটুকু একপোঁচ বিষাদের কালি মেখে দিলো মনে। কোন আনন্দ নেই, আমেজ নেই, এমন করেই একদিন ভর্তি হয়ে এলাম মাদরাসায়। সবক শুরুর কদিন আগে মাদরাসায় গেলাম। দিনটা ভালোই কাটলো। সন্ধ্যায় হঠাৎই মনখারাপ হলো। ফেলে আসা বছরগুলোর জন্য বিষন্নতায় ছেয়ে গেলো মন। জানালা দিয়ে তাকিয়ে রইলাম। দূরের কাঁচপুর ব্রিজ দেখা যাচ্ছে। সোডিয়াম বাতির আলোয় ভেসে উঠেছে ব্যস্ত সেতুর উপর থমকে থাকা গাড়িগুলোর অবয়ব। কখন যে চোখের পাতা ভারি হয়ে এলো অশ্রুফোঁটায়। টেরও পেলাম না। পাছে কেউ দেখে ফেলে এই ভয়ে জানালার ধারেই বসে রইলাম। বিষণ্ণ, অবসর সন্ধ্যাটা কাটিয়ে দিলাম আঁধারে আলোর কোলাহল দেখতে দেখতে। চারদিকে এত মানুষ, তবু যেন টের পাই আমার চারপাশে নেমে এসেছে এক অদ্ভুত নির্জনতা। এত নির্জনতা যে একটি পাতাঝরার শব্দও শোনা যাচ্ছে না। একের পর এক স্মৃতি ভেতরে বাইরে ঝড় তুলে আমাকে লীন করে দিচ্ছে। আমি যেন শরাহত কোন পানকৌড়ি। আমার জীবন ফুরিয়ে এসেছে। ফিরে দেখার কিচ্ছু নেই আমার।

কদিন বাদে দরস শুরু হলো। সে এক দৌড়ঝাঁপের জীবন। ব্যস্তসমস্ত হয়ে কেবলই ছুটে চলা। দুদণ্ড দম ফেলবার ফুরসত, অবসর যাপনের সুযোগ নেই। ফজর বাদ থেকে দরস শুরু হতো। চলতো চাঁদ ডুবে যাওয়া মধ্যরাত্তির পর্যন্ত। বাদ ফজর যেমন ঘুমে ঢুলুঢুলু চোখ নিয়ে দরসে বসতাম। তেমনি গভীর রাতেও ঘুমে চোখের পাতা ভারি হয়ে আসতো। আমরা দরসেই আছি। তবু দিনগুলো ছিল মধুর। আনন্দ, বেদনা, ব্যস্ততার মিশেলে ছন্দমুখর। সন্ধ্যা নামার সাথে অবসান হতো একটা করে দিনের। ভোরের আলো ফোটার সাথে শুরু হতো ওয়া বিহী ক্বালা হাদ্দাসানার সুরে মন মাতোয়ারা হবার প্রহর । সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম দুরূদ মুখে ফুটতো অগুনতিবার। নানান ছন্দে। ক্লান্তিমাখা কণ্ঠে। উৎফুল্ল হৃদয়ে। এ যেন দুরূদ, হাদীসের সমুদ্দুর থেকে মুহূর্তে মুহূর্তে মুক্তো আহরণ। অন্যরকম এক জীবন।

একটা করে দিন যায় আর ভাবি যদি থেমে যেতো সময়ের কাঁটা। আমার বেলায় অনিয়মেরা ভীড় জমাতো। যদি না ফুরাতো এইসব স্বর্গীয় আবেশে জড়ানো দিন। রোজ রোজ মন খারাপ করে গুনে রাখা দিনগুলো তবু ফুরিয়ে গেলো যেন চোখের পলক ফেলতে ফেলতেই।

খতমে বুখারীর দিনকয়েক আগের এক বিকেলে আমরা ঘুমে । মেশকাতের ছাত্রীরা চুপিসারে কিছু বিদায়ী ছন্দ আর্ট করে আমাদের রুমের দেয়ালে টানিয়ে দিয়ে গেলো। ঘুম থেকে উঠে পড়লাম সেগুলো। একটায় লেখা ছিলো—

সদা ফুটতো মুখে,বাজতো কানে

ওয়া বিহী ক্বলা হাদ্দাসানা।

ওয়া বিহী ক্বলা হাদ্দাসানা।

সেই সুরের মুর্ছনা শুনবে না আর শুনবে না।

এই কথাগুলো আমাকে প্রচণ্ডভাবে আঘাত করেছিলো। সত্যিই তো সময় কাকে কোথায় নিয়ে যায়! হয়তো আর কোনদিনই দরসে হাদীসে বসার তাওফীক হবে না। চোখের সামনেই দেখেছি অনেকজনকে হারিয়ে যেতে জীবন নদীর স্রোতের প্রবাহে। অজুখানায় গিয়ে মনের মেঘগুলোকে বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ার সুযোগ করে দিলাম। সাথে মনে মনে দোয়া করলাম আল্লাহ, আমাকে কখনোই বিচ্ছিন্ন করো না ইলমের বাগান থেকে।

বছরের শেষদিকে কেবলই ইবারত টেনে পড়ে যাওয়া। একেক কিতাবে সর্বোচ্চ ৬০-৭০ পৃষ্ঠা পড়তে হয় ক্লাসে। দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার বেশ কিছুদিন পর থেকেই শুরু হয় এ নিয়ম। আমার খুবই খারাপ লাগতো ব্যাপারটা। মাতিনকে দ্রুত পড়তে হতো রোজকার টার্গেট পুরো করার জন্য। যে পড়তো, যারা শুনতো কে কতটা বুঝতো আল্লাহ মালুম বলেই ছেড়ে দিই। দরকার নেই এটা নিয়ে আলাপ করার। শুধু এইটুকু বলে রাখি মন চাইতো আরেকবার এই অধ্যায়গুলো তাকরিরসহ পড়ার জন্য হলেও তাকমিলে ভর্তি হই। এমন মাদ্রাসায় পড়বো যেখানে শুধু শেষের এই টানাটানির অধ্যায়গুলো ভালো করে পড়ানো হয়। আমার এ ইচ্ছে কোনদিনই হয়তো পূরণ হবে না। কারণ পুরো বাংলাদেশে এ নিয়মের ব্যতিক্রমী শিক্ষাব্যবস্থার কোন মহিলা মাদরাসা নেই। পুরুষদের শিক্ষাব্যবস্থার সিলেবাস নিয়ে আমার তেমন জানাশোনা নেই। এইসব টানাটানি নিয়ে তাদের কোনপ্রকার আপত্তি আছে কী না বা এই নিয়মকে তারা কতটুকু সঠিক মনে করেন তাও জানি না। তবে মেয়েদের সিলেবাসের ব্যাপারটা তখনই আমার ছোট মনের অনুভূতিকে আঘাত করেছিলো । সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে কয়েকবছরের ভেতরেই অতি অল্প বয়সে ধরেবেঁধে গুরুত্বপূর্ণ সব কিতাব পড়িয়ে দেওয়া হয়। নামের আগে সেঁটে যায় আলেমা তকমা। আর সব জামাত বাদই দিলাম। নিদেনপক্ষে মেশকাত ও তাকমিলের দুইবছরকে কী চারবছরের কোর্সের মতো করা যেতো না? করলে খুব কী ক্ষতি হয়ে যেতো? জামাতে মেশকাতের এক বছরে সাতখানা ঢাউস সাইজের কিতাব কতটুকু হল করা যায়? তাকমিলের এক বছরে ছিহাহ ছিত্তাহর কিতাবগুলোসহ মোটমাট এগারোখানা কিতাব কতটুকু হল করা যায়? দুইবছরে গুরুত্বপূর্ণ, বড় বড় আঠারোখানা কিতাব কোনরকম গিলে ষোলবছর বয়েসে আলেমা উপাধিধারী হয়ে গেলাম। আলেমা উপাধিটির ভার ধারণ করার কতটুকু সক্ষমতা এই অল্প বয়সী মেয়েদের হয় সেটা কী একটু ভেবে দেখার দরকার না?

এই ব্যাপারটা কী কোনদিনও আমাদের সিলেবাস প্রণেতাদের সুনজর কাড়বে? কবে যেন শুনেছিলাম হাইয়াতুল উলইয়ার অধীনে মেশকাত ও তাকমিল দুইবছর করে পড়তে হবে। আমি শুনে সাথেসাথেই নিয়ত করে ফেলেছিলাম এই দুই জামাত আমি আবার পড়বো চারবছরে। তাতেও যদি পূর্ণ কিতাবের তরজমা, তাশরিহ আর তাকরিরের অলিগলিতে আমার ঘুরে আসা হয়। ভালো বৈ মন্দ হবে না। বুকের ভেতর প্রতীক্ষারাও বাসা বেঁধেছিলো মহা আগ্রহে। আফসোস আমার, স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেলো। সেই দুইবছরে আঠারোখানা ঢাউস কিতাব হল করার নিয়মই রয়ে গেলো।

একটি সন্ধ্যা আমার জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। খতমে বুখারীর দিন পেরিয়ে যে সন্ধ্যাটুকু নেমে এসেছিলো মাদরাসার দেয়াল, ছাদ আচ্ছন্ন করে। বড় সুন্দর এক সন্ধ্যা ছিলো সেটি। একটি সুন্দর দিনের সমাপ্তির পরে হারানোর বেদনা, প্রাপ্তির আনন্দ মিলিয়ে অম্লমধুর ক্ষণ। হাটহাজারীর জামিয়ার শাইখ আল্লামা শেখ আহমদ সাহেব এলেন। আমরা তার কাছ থেকে সবক নিলাম। তার পক্ষ থেকে পেলাম হাদীসের দরস দানের ইজাযত। জীবনের এ এক পরম প্রাপ্তি। আমাদের সনদের সিলসিলার ধাপ শাইখুল ইসলাম ও হাদীস রহিমাহুমুল্লাহদের কাছাকাছি হলো আরও। এটুকু ছিলো পরম প্রাপ্তি। হারিয়েছি বলতে তারপর আর কোনদিনই কোন হুজুরের দরসে বসার সৌভাগ্য হয়নি। আজতক না।

সর্বপ্রথম কোন কিতাব শেষ হয়েছে তা মনে নেই। প্রতিটি কিতাব শেষ হবার পর মুনাজাত হতো। মুনাজাতে চলতো অবিরাম কান্না। আমরা আকুল হয়ে কাঁদতাম। যেন এই মুনাজাতেই চোখের পানিতে ভাসিয়ে দিতে চাই প্রিয় দরস, দরসগাহ, উস্তাদদের সান্নিধ্য, স্নেহ আর মায়াবী শাসন সব হারানোর বেদনা। আসলেই কি তা সম্ভব? কোনদিনই না। যদি একবারের চোখের পানিতে সব ধুয়েমুছে সাফ করে ফেলা যেতো! তাহলে আজ এই সময়ে এসে নস্টালজিক মন ফেলে আসা সেদিনগুলোর জন্য ডুকরে কেঁদে উঠতো না। বড় হুজুর দামাত বারাকাতুহু সম্ভবত তার শেষ দরসে বলেছিলেন তোমরা যখন আমার মৃত্যু সংবাদ শুনবে তখন সাথে সাথে সেজদায় লুটিয়ে পড়বে। সেজদারত অবস্থায় আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করবে—আল্লাহ! আপনি আমাদের উস্তাদের সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দিন। আল্লাহ তাকে ক্ষমা না করা পর্যন্ত আমি আপনার পায়ে পড়েই থাকবো। হুজুরের কথাটুকু আমার এখনও প্রায়ই মনে পড়ে মুনাজাতে। চোখ দিয়ে নিজের অজান্তেই গড়িয়ে পড়ে দুফোঁটা অশ্রু। আমি হুজুরের দীর্ঘহায়াত কামনা করে আকুল হয়ে আল্লাহর কাছে কেঁদে যাই। বারবার বলি, আল্লাহ আমার মুহসিন এ উস্তাদের ছায়া আমাদের উপর আরও দীর্ঘায়িত করুন। তাকে তার শান অনুযায়ী মর্যাদা প্রদান করুন। আমীন।

আমার ক্ষুদ্র এ জীবনের বড় একটা অংশ কেটেছে মাদরাসায়। মাদরাসা জীবন পাড়ি দিয়ে কর্মজীবনে প্রবেশ করলে জীবন হয়ে যায় অন্যরকম। কেবলই নানাবিধ ব্যস্ততার জালে আটকে পড়া। জীবনের প্রয়োজনে ব্যস্তসমস্ত হয়ে ছুটে চলা । দৌড়ঝাঁপ করে চললেও সুযোগ পেলে রোজ একবার করে হলেও মাদরাসা জীবনের স্মৃতিরা কড়া নাড়ে মনের দোরে। স্মৃতিকাতরতায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকে আপাদমস্তক। মন কল্পনার ডানায় চড়ে টাইম ট্রাভেলে মেতে উঠে নিষ্ঠুরভাবে। বর্তমানের আমিটাকে বড্ড একা করে দেয়। মনের ভেতর কোলাহল করে সেইসব হারানো দিন। নস্টালজিয়ার উত্তরী হাওয়ার ঝাপটায় মনের আর্দ্রতা এসে স্পর্শ করে অনুভূতিকে। অজান্তেই চোখ ভিজে যায়। কান্নারা ভিড় করে। তাদের গমকে কেঁপে উঠি । যেন থমকে যায় সমস্ত জীবন। তাই জীবনকে চালিয়ে নিতে, প্রয়োজনে জীবনের পথে চলতে গিয়ে সেসব মধুর স্মৃতি লুকিয়ে রাখি হৃদয় অলিন্দে যত্ন করে রাখা কাঁচের শিশিতে। মোহনীয় ঘ্রাণ ছড়ানো দুর্লভ আতরের মতো। মনের গোপন বাকসে।

কারণ আমাকে চলতে হবে জীবনের তাগিদে। পেরোতে হয় তাই স্মৃতির চৌকাঠ। ছাড়তে হয় নস্টালজিক মোহমায়ায় স্টেশন। সে স্টেশন ছেড়ে আসা যে ট্রেনে চড়ে আমি চলি জীবনের পথে, তার শেষ হুইসেলে বাজে—কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে?

আগের সংবাদএক তরুণ শিক্ষকের ডায়েরি
পরবর্তি সংবাদএদিকটায় যেন খুব রোদ ফুটেছে আজ