‘হেফজখানার রুটিন’ : শিশুদের মানসিক বিকাশে কতটা প্রভাব ফেলছে?

রাকিবুল হাসান নাঈম:

সম্প্রতি হেফজখানার ছাত্রদের রুটিন এবং মানসিক বিকাশ নিয়ে বিতর্ক তৈরী হয়েছে। অভিযোগকারীরা বলছেন, হেফজখানার ছাত্রদের ২৪ ঘণ্টাই নিরবচ্ছিন্ন শিডিউলের মধ্য দিয়ে যেতে হয় সেই ভোর থেকে শুরু করে রাত অবধি। এতে তার ঘুম যেমন পূর্ণ হয় না, তেমনি শরীরেরও ক্ষতি হয়। তাছাড়া মাঠে খেলাধূলা না করার কারণে বাধাগ্রস্ত হয় তার মানসিক বিকাশ। তবে সংশ্লিষ্টগণ এ অভিযোগের সত্যতা অস্বীকার করেছেন। তারা বলেছেন, ছাত্রদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্থ হবার মতো রুটিন এখানে নেই। বরং একজন ছাত্রের যতটুকু রিফ্রেশমেন্ট দরকার, তার পুরোটাই সে পায়।

বৈকালিক খেলাধূলা

এ প্রসঙ্গে কথা হয় জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলুম ফরিদাবাদ মাদরাসার হেফজবিভাগের শিক্ষক হাফেজ মাওলানা কবির আহমদের সঙ্গে। তিনি ফাতেহকে বলেন, ‘আসরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময় পুরোটা ছাত্রদের খেলাধূলার জন্য বরাদ্দ। এ সময়ে তারা স্বাধীন। কেউ আড্ডা দিচ্ছে, কেউ বিভিন্ন ধরণের খেলা খেলছে। শহরে তো মাঠ পাওয়া যায় না, গ্রামের অনেক মাদরাসায় মাঠ আছে। যেখানে মাঠ আছে,. ছাত্ররা মাঠে খেলাধূলা করে। যাদের মাঠ নাই, তারা মাদরাসার হলরুমেই বিভিন্ন খেলাধূলা করে। ফলে তাদের রিফ্রেশমেন্ট হয়ে যায়।’

সরেজমিন রাজধানীর কয়েকটি প্রাইভেট মাদরাসা ঘুরে দেখা গেছে, আসরের পর ছাত্ররা বিভিন্ন খেলাধূলা করছে। এরমধ্যে রয়েছে লুডু, ষোলগুটি, চোর-পুলিশ সহ আরও বিভিন্ন ধরণের খেলা। যেসব খেলা হলরুমে খেলা যায়, তার সব খেলাই তারা খেলতে পারে। রাজধানী কাজলায় মাদরাসাতুল ইতকানের হেফজবিভাগের প্রধান হাফেজ মাওলানা জহিরুল ইসলাম ফাতেহকে বলেন, ‘আসরের পর ছাত্ররা তাদের ইচ্ছেমতো খেলে। কাউকে বাধা দেয়া হয় না। যতটুকু রিফ্রেশমেন্ট দরকার, তা হয়ে যায়। তবে মাঠ থাকলে এবং মাঠে খেলার সুযোগ থাকলে হয়ত আরও বেশি ভালো হতো।’

এতটুকু সময়ের রিফ্রেশমেন্ট ছাত্রদের মানসিক বিকাশে বাধা হবে না উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজি বিভাগের প্রফেসর ড. মাহফুজা খানম ফাতেহকে বলেন, ‘মাঠেই খেলতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। ছাত্ররা যদি মাদরাসার রুমে, বারান্দায় খেলেও মানসিক তৃপ্তি পায়, তাহলেই হলো। এত মানসিক বিকাশে বাধাপ্রাপ্ত হবার কথা না। তবে যেভাবে হেফজের ছাত্ররা সারাদিন টানা পড়ে, তাতে কিছুটা চাপ পড়তে পারে। সেখানে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অবসর দেয়া যেতে পারে।

প্রয়োজনীয় ঘুম

শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ঠিকঠাক রাখতে পর্যাপ্ত ঘুমের কোনো বিকল্প নেই। ঘুম শরীরকে চাঙ্গা রাখে ও মানসিক চাপ কমায়। শৈশবে, কৈশোরে, তারুণ্যে, যৌবনে আর বার্ধক্যে ঘুমের চাহিদাও আলাদা আলাদা। যেমন শিশুদের একটু বেশি ঘুমাতে হয় প্রবীণ ও প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায়। বয়স অনুযায়ী প্রতিদিন কোন মানুষের কতটুকু ঘুমানো জরুরি; এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশন।

যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশন বলছে, বয়স অনুযায়ী মানুষের ঘুমের সময়টাও ভিন্ন হবে। তারা বয়স অনুসারে ঘুমের প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরেছে। বলেছে, প্রাক স্কুল পর্বে (৩-৫ বছর বয়স) যারা রয়েছে, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তাদের ১০ থেকে ১৩ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। স্কুল পর্যায় ( ৬-১৩ বছর) যারা রয়েছে, তাদের ৯-১০ ঘণ্টার ঘুম প্রয়োজন। তবে নিয়মিত ৭-৮ ঘণ্টা ঠিকঠাক ঘুমাতে পারলেও ওরা নিজেকে চালিয়ে নিতে পারে। টিন এজ (১৪-১৭ বছর) যারা, তাদের ৮-১০ ঘণ্টার ঘুম প্রয়োজন।

এই হিসেবে হেফজখানার ছাত্রদের ঘুমের সময় পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, তারা ফজরের আগে ঘুম থেকে উঠলেও তাদের পর্যাপ্ত ঘুম হয়ে যায়। সাধারণত, ইশার পর হেফজখানাগুলোতে পড়ার তেমন চাপ থাকে না। তখন খাবর এবং ঘুমের প্রস্তুতি। রাত ১০টার মধ্যেই সবাই ঘুমিয়ে যায়। তাদেরকে ঘুম থেকে তোলা হয় ফজরের আধাঘণ্টা আগে। বর্তমানের হিসেবে ফজর যদি সারে পাঁচটায় হয়, তাহলেও তার রাতের ঘুম হচ্ছে ৮ ঘণ্টা। দিনে ঘুমের সময় থাকে এক থেকে দেড় ঘণ্টা। সব মিলিয়ে ৯ ঘণ্টা ঘুম প্রতিনিয়তই হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজি বিভাগের প্রফেসর ড. মাহফুজা খানম ফাতেহকে বলেন, হেফজখানার ছাত্রদের যে ঘুমের পরিমাণ, ৮ থকে ৯ ঘণ্টা, তা যথেষ্ট। এরচেয়ে বেশি ঘুম লাগে না। যদি টানা নির্বিঘ্নে ঘুমাতে পারে। এটা শরীরেরও কোনো ক্ষতি করবে না।

 

আগের সংবাদদেওবন্দে পড়াশোনা: বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি-জটিলতা কাটছে না
পরবর্তি সংবাদদেশে বাড়ছে ইসলামি সংগীতের জনপ্রিয়তা