অগ্নি নিরাপত্তা : মসজিদ-মাদরাসাগুলো কতটা নিরাপদ

|| তাসনিফ আবীদ ||

নানা কারণে বর্তমানে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। প্রাণ হারাচ্ছে অসংখ্য মানুষ। চিরতরে পঙ্গু হচ্ছে অনেকে। অনেকে হচ্ছে পথের ফকির। এসব ঘটনার জন্য অপরিকল্পিত নগরায়ন, স্থাপনা নির্মাণে নিয়মের তোয়াক্কা না করা, প্রয়োজনীয় অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা না রাখাকে দায়ী করছেন অনেকে।

সারা দেশের তুলনায় ঢাকায় আগুন লাগার ঘটনা তুলনামূলক বেশি। এদিকে ঢাকায় সাধারণ ভবনের তুলনায় মসজিদের পরিমাণও কম নয়। ঢাকাকে বলা হয় ‘মসজিদের শহর’। মসজিদের এই শহরের মসজিদগুলোসহ দেশের মসজিদগুলো কতটা নিরাপদ? এছাড়া ধর্মী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মাদরাসাগুলোই বা কতটা প্রস্তুত অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিজেদের নিরাপদ রাখতে?

ঢাকার কুড়িল বিশ্বরোডের মাতবরবাড়ি মসজিস একসময় টিনের তৈরি ঘরে ছিল। গত কয়েক বছর আগে মসজিদটি চারতলা ভবনের আকার ধারণ করেছে। মসজিদের ভবন নির্মানের সময় অগ্নি নিরাপত্তায় বিষয়গুলো মাথায় রেখে নির্মাণ করা হয়েছিল কী না জানতে চাইলে মসজিদের ইমাম ও খতিব মুফতি শাহাদাত হোসাইন বলেন, আমি এখানে এসেছি একবছর হয়। অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে এপর্যন্ত কমিটির কারো সঙ্গে আমার কোনো কথা হয়নি বা এ বিষয় নিয়ে কোনো কথা উঠতেও দেখিনি।

তিনি বলেন, মসজিগুলোতে তো অন্যান্য ভবনের মতো গ্যাসের ব্যবহার নেই। আর বিদ্যুৎও ব্যবহার হয় অন্যান্য ভবনের তুলনায় কম। তাই আগুন লাগার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

তবে অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করলে বিষয়টি আরো নিরাপদজনক হবে বলে মত দেন তিনি।

নরসিংদী জেলার ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া ইসলামিয়া নুরিয়া মাদরাসার কমিটিতে যুক্ত আছেন ডা. সয়েফ উল্লাহ সরকার। তার আগে তার বাবা ছিলেন মাদরাসা পরিচালনা কমিটির প্রধান। তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম, অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে তারা কোনোকিছু ভাবনায় রেখেছে কী না?

তিনি বলেন, আগুন লাগার ঘটনা থেকে মাদরাসাকে নিরাপদ রাখতে আমরা রান্নাঘর মাদরাসার একেবারে কর্নারে আলাদাভাবে রেখেছি। তাছাড়া ফায়ার সার্ভিসের নাম্বার আছে। যেকোনো কারণে তাদের সহযোগিতা নেওয়ার সুযোগ আছে। আসলে জেলা শহর ও গ্রামের মাদরাসাগুলোতে আগুন লাগার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কেননা, এসব প্রতিষ্ঠানে গ্যাস ও বিদ্যুতের অনিরাপদ ব্যবহার নেই একেবারেই। অনেক প্রতিষ্ঠানে তো আলাদা ঘরে লাকড়ি দিয়েও রান্না হয়। এ ঘর মাদরাসা ভবন থেকে অনেক দূরে অবস্থিত।

এদিকে ঢাকার বেশ কয়েকটি মাদরাসার পরিচালক ও মুহতামিমের সঙ্গে অগ্নি নিরাপত্তা বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলে তারা মতামত দিতে রাজি হননি। তবে রাজধানীতে অবস্থিত স্বনামধন্য একটি মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমি নাম বলতে চাই না। তবে ঢাকার পুরোনো মাদরাসাগুলোর অধিকাংশই আগুন লাগলে তা সামাল দেওয়ার মতো পরিস্থিতিতে নেই। এমনকি বিষয়টি তাদের ভাবনাতেও নেই। প্রথমে ছোট একটি ভবন, এরপর ক্রমান্বয়ে ভবনের পরিধি বাড়ানোর কারণে ঢাকার প্রতিষ্ঠানগুলো অগ্নি নিরাপত্তায় ব্যবস্থায় কতটা নিরাপদ তা ভেবে দেখা দরকার। আল্লাহ না করুন, অপ্রত্যাশিতভাবে যদি কোনো মাদরাসায় আগুনের ঘটনা ঘটে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কী হতে পারে তা বলা মুশকিল।

তাছাড়া ঢাকায় এখন প্রচুর পরিমাণে প্রাইভেট মাদরাসা গড়ে উঠেছে। যার সবগুলোই আবাসিক ভবন ভাড়া নিয়ে প্রতিষ্ঠিত। এসব প্রতিষ্ঠান শুরুর সময় ওই ভবনের অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিষয়ে সব খবর নিয়ে মাদরাসাগুলো প্রতিষ্ঠিত হয় বলে মনে হয় না। তাই সামগ্রিকভাবে বিশেষ করে ঢাকার মাদরাসাগুলো অগ্নি নিরাপত্তার বিষয়টি আমলে এলে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া সময়ের দাবি।

বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের সাবেক পরিচালক মেজর একেএম শাকিল নওয়াজ বলেন, অগ্নি নিরাপত্তায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাটাই সবচেয়ে জরুরী। এটা নির্মাণের সময় মূল নকশার সাথে সংযুক্ত থাকতে হবে এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারকে তা নিশ্চিত করতে হবে।

এখন অনেক ভবনে এ ধরণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার কারণে আগুন লাগার মতো দুর্ঘটনা কমে এসেছে এবং আগুন লাগলেও তা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে থাকছে। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা স্থাপনায় আগুন লাগলে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণটা অকল্পনীয় হারে বেড়ে যায়। -যোগ করে তিনি

তিনি বলেন, বর্তমানে মসজিদগুলোতে এসির পরিমাণ বাড়ছে। এ কারণে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বিদ্যুতের প্রবাহ অনেক বেশি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে নিম্ন মানের বৈদ্যুতিক তার ও সরঞ্জাম ব্যবহৃত হলে সেখান থেকে বৈদ্যুতিক গোলযোগের সৃষ্টি হয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

এছাড়া মসজিদের আকারও দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই তুলনায় আমাদের মসজিদগুলোর অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা সন্তোষজনক নয়। -যোগ করেন তিনি

তিনি মত দেন, আধুনিক বিশ্বের মতো আমাদের দেশের মসজিদগুলো যদি ভালো মানের সিভিল ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তৈরি হয় তাহলে ধর্মপ্রাণ মানুষ আরো স্বস্তির সঙ্গে ইবাদত করতে পারবে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে হলে সরকারের তদারকি, নির্মানে মানসম্মত পণ্যের ব্যবহার ও সচেতনতার বিকল্প নেই। আগুন নেভানোর জন্য ব্যবস্থা থাকতে হবে সব মসজিদে।

আগের সংবাদদেশের আকাশে চাঁদ দেখা গেছে, রোজা শুরু মঙ্গলবার
পরবর্তি সংবাদওমরা পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব সফরে গেলেন আল্লামা মাহমূদুল হাসান