|| তাসনিফ আবীদ ||
ত্যাগের মহিমা ছড়িয়ে দেওয়া আর আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ঈদুল আজহায় পশু কোরবানি করে থাকেন মুসলিমরা।পশু কোরবানির পর এর চামড়া সাধারণত বিক্রি করে সেই অর্থ দেওয়া হয় সমাজের অনাথ, গরিব, অসহায় মানুষদেরকে।
কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে অজানা এক সিন্ডিকেট গরিবের ‘হক’ চামড়ার সঠিক দাম পেতে নানাভাবে বাধা সৃষ্টি করে আসছে। এমনকি সরকারের পক্ষ থেকে চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিলেও সেই দামও পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ রয়েছে কোরবানিদাতাদের পক্ষ থেকে।
আসন্ন কোরবানির ঈদে কোরবানির পশুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। গতবারের চেয়ে এবার প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম ৫ টাকা বাড়িয়ে এবার ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ধরা হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। সেই সঙ্গে প্রতি পিস চামড়ার সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঢাকায় প্রতি পিস গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ১ হাজার টাকা। অন্যদিকে এবার ঈদে খাসির চামড়ার ক্রয়মূল্য প্রতি বর্গফুট ২০ থেকে ২৫ টাকা এবং বকরির চামড়ার ক্রয়মূল্য প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বর্তমান বাজার মূল্য, বিশ্ব বাজারে চামড়ার চাহিদা ও সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ‘চামড়ার এই মূল্য নির্ধারণ যথার্থ নয়।’ কিন্তু নির্ধারিত এই দামও না পাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর পেছনে তারা সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন।
এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, ‘চামড়া বেচা কেনায় যাতে কেউ সিন্ডিকেট তৈরি করতে না পারে সে ব্যাপারে আমাদের রয়েছে কঠোর নজরদারি।’
তিনি জানান, লবণের মূল্য যেন বৃদ্ধি না পায় এবং কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারে সেজন্য গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হবে।
এদিকে একাধিক মৌসুমী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকার ব্যবসায়ীরা প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের সংগ্রহ করা চামড়ার দাম দিতে চান না। তাই বিগত দুই বছরের মতো এবারও সরকার নির্ধারিত দাম না পাওয়ার আশঙ্কা তাদের। এসব কারণে প্রান্তিকভাবে তারা সঠিক দাম দিয়ে চামড়া কিনতে পারেন না। কেননা এই টাকা বিনিয়োগ করার পরে পুঁজি উঠে আসবে কী না তা নিয়ে শঙ্কা থাকে।
এ বছর চামড়ার বাজার নিয়ে কী ভাবছে কওমি মাদরাসাগুলো? কেমন যাবে চামড়ার বাজার? তাদের আশঙ্কা কী? এসব বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম কওমি মাদরাসাভিত্তিক শিক্ষাবোর্ড ‘বেফাকুল মাদারিসিদ দ্বীনিয়া’র মহাসচিব মুফতি মোহাম্মদ আলীর কাছে।
তিনি বলেন, এ বছর সরকারের পক্ষ থেকে চামড়ার দাম ১২শ বা ১ হাজার নির্ধারিত হলেও আমাদের কয়েক বছরের অভিজ্ঞায় দেখেছি, এর বাস্তবায়ন হয় না। কষ্ট করে চামড়া সংগ্রহ করার পর শেষে গিয়ে দেখা যায় এগুলো বিক্রি করতে হয় ৪/৫শ টাকাতেই।
তার মতে, কোরবানিদাতার পশুর চামড়াগুলো গরিবের হক। তাই এসব চামড়ার দাম না পাওয়া মানে গরিবের হক নষ্ট হওয়া। আর এসব গরিবের হক যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে।