ফাতেহ ডেস্ক :
জামায়াতের সাবেক নায়েবে আমির ও পাবনা-৫ আসনের পাঁচবারের সাবেক সংসদ সদস্য কারাবন্দী মাওলানা আবদুস সুবহান আর নেই। তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত এ নেতা শুক্রবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মারা যান। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সুবহানের আত্মীয় গোলাম হাদী সাঈদী।
তিনি জানান, আবদুস সুবহান কাশিমপুর কারাগারে ছিলেন। দীর্ঘদিন কারাগারে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। এখানে চিকিৎসাধীন তার মৃত্যু হয়।
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে প্রায় সাত বছর ধরে সুবহান কারান্তরীণ ছিলেন।
জামায়াতের কর্মপরিষদের সদস্য এহসান মাহবুব যোবায়ের জানান, মাওলানা আবদুস সুবহান কাশিমপুর কারাগারে অন্তরীণ ছিলেন। গত বছরের ২২ জুলাই কারাগারের বাথরুমে পড়ে আহত হন তিনি। এরপর থেকে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।
জানা গেছে, গত ২৪ জানুয়ারি আবদুস সুবহানকে কাশিমপুর কারাগার থেকে ঢাকা মেডিকেলে আনা হয়। বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন তিনি। আজ দুপুর ১টা ৩৩ মিনিটে তিনি না ফেরার দেশে চলে যান।
লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রয়েছে জানিয়ে ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইন্সপেক্টর বাচ্চু মিয়া জানান, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক মর্গে রয়েছে।
হাসপাতাল ও কারাগারের আনুষ্ঠানিকতা শেষে জামায়াত নেতা আবদুস সুবহানের মরদেহ পাবনা নিয়ে যাওয়া হবে এবং সেখানেই তার দাফন সম্পন্ন হবে বলে জানান এহসান মাহবুব যোবায়ের।
আবদুস সুবহান জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতা ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করায় সংগঠনে তার প্রভাব ছিল উল্লেখ করার মতো। তিনি দলীয় টিকিটে পাবনা-৫ আসন থেকে পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সবশেষ ২০০১ সালের নির্বাচনে চারদলীয় জোটের মনোনয়ন নিয়ে এমপি নির্বাচিত হন।
জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা আবদুস সুবহান পাকিস্তান আমলে ছিলেন পাবনা জেলা জামায়াতের আমির ও কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য। তিনি পাবনা আলিয়া মাদ্রাসার সাবেক হেড মাওলানা ছিলেন।
২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের এই প্রভাবশালী নেতাকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে প্রাণদণ্ড দেন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
প্রসিকিউশনের আনা ৯টি অভিযোগের মধ্যে ছয়টি অভিযোগে আমলে নিয়ে মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত তাকে ফাঁসির রজ্জুতে ঝুলিয়ে দণ্ড কার্যকর করার আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
মাওলানা সুবহান হলেন জামায়াতের নবম শীর্ষ নেতা, যাকে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
রায়ের দিন সুবহানকে নির্দোষ দাবি করে তার ছেলে নেছার আহমদ নান্নু বলেছিলেন– রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে মিথ্যা মামলায় তাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, মাওলানা সুবহানের জন্ম ১৯৩৬ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি সুজানগর থানার মানিকহাটি ইউনিয়নের তৈলকুণ্ডি গ্রামে। তার বাবার নাম শেখ নাঈমুদ্দিন, মায়ের নাম নুরানী বেগম।