মুনশী নাঈম:
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশে ২৩°০২´ থেকে ২৪°৪৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯২°৩৯´ থেকে ৯১°২২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ জুড়ে কুমিল্লা জেলার অবস্থান। রাজধানী ঢাকা থেকে এ জেলার দূরত্ব প্রায় ১০৫ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় সদর থেকে প্রায় ১৪৯ কিলোমিটার। এ জেলার দক্ষিণে ফেনী জেলা ও নোয়াখালী জেলা; পশ্চিমে চাঁদপুর জেলা, মেঘনা নদী ও মুন্সিগঞ্জ জেলা, উত্তর-পশ্চিমে মেঘনা নদী ও নারায়ণগঞ্জ জেলা, উত্তরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা এবং পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা প্রদেশ অবস্থিত।
কুমিল্লা অঞ্চলটি একসময় প্রাচীন সমতট অঞ্চলের অধীনে ছিল। পরবর্তীকালে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে যোগ দেয়। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে কুমিল্লা জেলা হরিকেল অঞ্চলের রাজাদের অধীনে আসে। অষ্টম শতাব্দীতে লালমাই ময়নামতি দেব বংশ এবং দশম থেকে একাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত চন্দ্র বংশের শাসনাধীনে ছিল। ১৭৬৫ সালে এ অঞ্চলটি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে আসে। ১৭৯০ সালে জেলাটি ত্রিপুরা জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬০ সালে এর নাম পরিবর্তন করে কুমিল্লা রাখা হয়। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা জেলার অন্তর্গত চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা পৃথক জেলায় পরিণত হয়।
কুমিল্লার নামকরণে শাহজালাল
কুমিল্লা নামকরণের অনেকগুলো প্রচলিত মত রয়েছে। যার মধ্যে উল্লেখযাগ্য চৈনিক পরিব্রাজক ওয়াং চোয়াঙ কর্তৃক সমতট রাজ্য পরিভ্রমণের বৃত্তান্ত থেকে। তার বর্ণনায় কিয়া-মল-ঙ্কিয়া নামক যে স্থানের বিবরণ রয়েছে সেটি থেকে কমলাঙ্ক বা কুমিল্লার নামকরণ হয়েছে।
তবে এটা ছাড়াও এ জেলার নামকরণের পেছনে ইতিহাস আশ্রিত একটি কিংবদন্তি আছে। হজরত শাহজালাল চতুর্দশ শতকে প্রথম পাদে তার মাতুল আহমদ কবীর কর্তৃক দেয়া এক মুঠো মাটি নিয়ে বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারের জন্য আসেন। মামা কবীরের নির্দেশ ছিল, ‘যে জায়গার মাটির সঙ্গে এই মাটির রং, গন্ধ ও স্বাদ মিলবে, সে স্থানই শাহজালালের সাধনার স্থান হবে।’ হজরত শাহজালাল অনেক পথ পেরিয়ে কুমিল্লা শহরের পূর্বদিকে গাজীপুর মহল্লার ঘিলাতলিতে এসে উপনীত হন। এবং রাত কাটানোর উদ্দেশ্যে একটি উঁচু টিলাতে তাঁবু ফেলেন। হঠাৎ কী মনে করে তার ভূতত্ত্ববিদ চাশমি পীর এ স্থানের মাটি পরীক্ষা করে তাঁদের বয়ে আনা মাটির সঙ্গে মেলাত গিয়ে ‘কোহমিলা’ বলে উল্লাসে ফেটে পড়েন। ‘কোহমিলা’ অর্থাৎ, ‘অভীষ্ট পাহাড় পাওয়া গেছে শাহজালাল।’ এই ‘কোহমিলা’ থেকেই ‘কুমিল্লা’ নামের উদ্ভব বলে কিংবদন্তি রয়েছে।
কুমিল্লায় মুসলিম শাসন
ত্রিপুরা রাজা থেকে আজ পর্যন্ত সর্বমোট ১১৭ জন জন নৃপতির নাম পাওয়া যায়। ‘রাজমালা’ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে, ত্রিপুরা ৯৫ তম রাজা চেথুম্পারের সঙ্গে গৌড়ের সুলতানের যুদ্ধ হয় এবং মুসলিম বাহিনীকে পরাজিত করে ত্রিপুরায় একটি স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ডাঙ্গরফারের ছেলে রত্নফারের সময় থেকে ত্রিপুরার রাজাদের সাথে গৌড়ের শাসক ও সুলতানদের রাজনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। রাজ্য থেকে বিতাড়িত হয়ে রত্নাফা বংলার সুলতান ইলিয়াস শাহের (১৩৪২-৫৮ ইং) সাহায্য পার্থনা করেন। রত্নফাকে ত্রিপুরায় সিংহাসনে প্রতিষ্ঠিত করে তাকে ‘মাণিক্য’ উপাধি প্রদান করা হয়। এখনো ত্রিপুরার রাজারা ‘মাণিক্য’ উপাধি ধারণ করে আছেন।
কথিত আছে, ইলিয়াস শাহের পুত্র ও উত্তরাধিকারী সেকেন্দর শাহ হাতি সংগ্রহের জন্য ত্রিপুরায় অভিযান করেন। তবে ত্রিপুরায় ষোড়শ শতাব্দীর পূর্বে মুসলিম আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ষোড়শ শতাব্দীর প্রারম্ভে সুলতান হোসেন শাহের আমলে ত্রিপুরা রাজা ধন্য মাণিক্য গৌড়ের মসুলতানের নিকট পরাজিত হন । আবদুর করিম হোসেন শাহের ত্রিপুরা অভিযান সম্পর্কে বলেন, ‘হোসেন শাহের ত্রিপুরা অভিযান তার নিজের শিলালিপি এবং ত্রিপুরা রাজমালায় তথ্য পাওয়া যায়।’ সোনার গাঁয়ে প্রাপ্ত ১৫১৩ সালে উৎকীর্ণ এক শিলালিপিতে দেখো যায়, ‘খাওয়াস খান নামের এক সেনাপতি ত্রিপুরা ভূমির সর-ই-লস্কর ছিলেন। অতএব শিলালিপির স্বাক্ষ্যমতে, হোসেন শাহ ত্রিপুরা রাজ্যের অন্তত কিছু অংশ জয় করেছিলেন। কিন্তু শিলিলিপিতে হোসেন শাহের ত্রিপুরা রাজ্য জয়ের কোনো বিবরণ পাওয়া যায় না।
ত্রিপুরার ‘রাজমালা’ থেকে জানা যায়, ‘১৫১৩ সালে ধন্য মাণিক্য চট্টগ্রাম জয় করলে হোসেন শাহ তার সুযোগ্য সেনাপতি গোরাই মল্লিকের নেতৃত্বে ত্রিপুরা আক্রমণের জন্য পাঠান। গোরাই মল্লিক হোসেন শাহের হৃত রাজ্যগুলো পুনরাধিকার করেন। কিন্তু এর পরের বছর ১৫১৪ সালে ধন্য মাণিক্য পুনরায় চট্টগ্রাম দখন করেন। হোসেন শাহ হৈতন খাঁকে ধন্যের বিরুদ্ধে পাঠান। এ অভিযান অংশিকভাবে সফল হয়। তবে রাজমালায় ত্রিপুরা রাজাদের জয়ের বর্ণনা বেশি দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা চট্টগ্রাম বারবার আক্রমণ করলেও তা সফল হয়নি।
হোসেন শাহী আমলে ত্রিপুরার কিয়দাংশ গৌড় সুলতানের দখলে ছিল। ১৫১৮ সালের পর্তুগীজ বণিক জো-আঁ-দে সিলভেরা চট্টগ্রামে এসে এটিকে সুলতানের অধীন দেখতে পান। হোসেন শাহ ধন্য মাণিক্যকে পরাজিত করে কালিয়াগঢ় বা কসবায় একটি দুর্গ নির্মাণ করেন। সপ্তদশ শতাব্দীতে আরাকানীগণ চট্টগ্রাম দখন করে ত্রিপুরর্য পর্যন্ত অভিযান করেন। তাদের এ অভিযান উদয়পুর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। সপ্তদশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ত্রিপুরার রাজা রাজধার মাণিক্য মুঘলদের নিকট পরাজিত হলে ত্রিপুরা মুঘল শাসনাধীনে চলে যায়।
জনসংখ্যা
২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী কুমিল্লা জেলার মোট জনসংখ্যা ৫৬,০২,৬২৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২৬,৭৮,২৩৫ জন এবং মহিলা ২৯,২৪,৩৯০ জন। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় ১,৮১৬ জন এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার প্রায় ১.৫৮%।[১]
ধর্মবিশ্বাস অনুসারে কুমিল্লা জেলার মোট জনসংখ্যার ৯৪.৬২% মুসলিম, ৫.২৬% হিন্দু এবং ০.১২% বৌদ্ধ ও অন্যান্য ধর্মের অনুসারী।
ভাষা ও সংস্কৃতি
কুমিল্লা জেলার ভূ-প্রকৃতি ও ভৌগলিক অবস্থান এই জেলার মানুষের ভাষা ও সংস্কৃতি গঠনে ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে অবস্থিত এই জেলাকে ঘিরে রয়েছে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, ঢাকা বিভাগ ও চট্টগ্রাম বিভাগের অন্যান্য জেলাসমূহ। এখানে ভাষার মূল বৈশিষ্ট্য বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার মতই, তবুও কিছুটা বৈচিত্র্য খুঁজে পাওয়া যায়। যেমন কথ্য ভাষায় মহাপ্রাণ ধ্বনি অনেকাংশে অনুপস্থিত, অর্থাৎ ভাষা সহজীকরণের প্রবণতা রয়েছে। কুমিল্লার দাউদকান্দি, তিতাস, মেঘনা, হোমনা প্রভৃতি উপজেলার আঞ্চলিক ভাষার সাথে সন্নিহিত ঢাকা অঞ্চলের ভাষার, চৌদ্দগ্রাম ও লাকসাম উপজেলার আঞ্চলিক ভাষায় নোয়াখালি এলাকার ভাষার অনেকটাই সাযুজ্য রয়েছে। মেঘনা-গোমতী নদীর গতিপ্রকৃতি এবং লালমাই পাহাড়ের পাদদেশে কুমিল্লার মানুষের আচার-আচরণ, খাদ্যাভ্যাস, ভাষা, সংস্কৃতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
কুমিল্লায় ঐতিহাসিক মুসলিম নিদর্শন
কুমিল্লা জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বেশিদিন হয়নি। জেলার সীমানায় ঐতিহাসিক মুসলিম নিদর্শন দেখা যায়। যা মুসলমানদের স্বাক্ষর বহন আজো দাঁড়িয়ে আছে।
১. বড় গোয়ালিয়া মসজিদ
আহমদ হোসেন দানি বলেন, ‘দাউদকান্দির নিকট বড় গোয়ালিয়ার এক গম্বুজ বিশিষ্ট একটি মসজিদ আছে। হিজরি ৯০৬/ইং ১৫০০ সালে নির্মিত মসজিদটি গৌড়ের ছোট সোনা মসজিদের অনুকরণ নির্মিত।’ তবে তার এ মতকে বিভ্রান্তিকর বলেছেন ‘বাংলাদেশে মুসলিম পুরাকীর্তির লেখক আহমদ মাহমুদুল হক। তিনি বলেন, ‘তার মন্তব্যটি বিভ্রান্তিকর। কারণ আয়তকার বহু গম্বুজবিশিষ্ট ছোটো সোনা মসজিদের সাথে বড় গোয়ালিয়ার মসজিদটির কোনো মিল নেই। তা ছাড়া মসজিদটি ধ্বংসপ্রাপ্ত।
২. কালিয়াগঢ় দুর্গ, ষোড়শ শতাব্দী
কসবার নিকট কালিয়াগঢ় নামক স্থানে গৌড়ের সুলতান হোসেন শাহ একটি দুর্গ নির্মাণ করেন। ত্রিপুরারাজ ধন্য মাণিক্যের বিরুদ্ধে অভিযানকালে এই দুর্গটি নির্মাণ করা হয়।
৩. শাহ সুজার মসজিদ
শাহ জাহানের দ্বিতীয় পুত্র শাহ সুজা বাংলার সুবেদার ছিলেন। কুমিল্লার শাহ মসজিদটি সম্পর্কে দুটি প্রবাদ প্রচলিত। এক. শাহ সুজা ত্রিপুরা জয় করে বিজয়ের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে কুমিল্লায় মসজিদ নির্মাণ করেন। দুই. শাহ সুজার মিত্র ও আশ্রয়দাতা ত্রিপুরারাজ গোবিন্দ মাণিক্য শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবে এ মসজিদ নির্মাণের জন্য অর্থ দেন। শাহ সুজা ১৬৩৯ থেকে ১৬৬০ পর্যন্ত বাংলায় সুবেদার ছিলেন। তার রাজধানী ছির রাজমহল। মসজিদের নির্মাণকাল ১৬৫৮ বলে উল্লেখ করেন আ. ক.ম. যাকারিয়া। তিনি মসজিদটির আদি কাঠামোর বিস্তরিত বিবরণও দিয়েছেন তিনি। তার বর্ণনাটি ‘বাংলাদেশে মুসলিম পুরাকীর্তি’ বইয়ে আছে।
৪. বড় শরীফপুর মসজিদ
লাকসাম থানার শরিফপুর গ্রামে মুহাম্মদ আয়াত কর্তৃক নির্মিত আয়তকার এবং তিন গম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদটি অবস্থিত। এই মসজিদটি কোতওয়অলী মসজিদ নামেও পরিচিত। কারণ তিনি কোতওয়ার ছিলেন। মিসজিদটি মুঘল রীতিতে নির্মিত।
এই মসজিদে দুটি শিলিলিপি রয়েছে। একটি কেন্দ্রীয় মেহরাবের ওপর, আরেকটি পূর্বদিকের প্রবেশপথের উপর। নাসতালিক রীতিতে উৎকীর্ণ ফর্সি শিলালিপিতে পদ্যে রচিত সাংকেতি ভাষায় নির্মাণ তারিখ দেয়া আছ। একটিতে হিজরি ১০৬৮/ইং১৬৫৭-৫৮ এবং আরেকটিতে ১৭০৬-৭ ইং সনের কথা উল্লেখ আছে।
৫. চান্দিনা প্রাচীন মসজিদ ও ঈদগাহ
কুমিল্লা জেলার চান্দিনায় একটি প্রাচীন মিসজিদের ধ্বংসাবশেষ এবং এর সংলগ্ন একটি ঈদগাহ দেখা যাবে। এসব ইমরাত সপ্তদশ শতাব্দীর বলে মনে করা হয়। সম্ভবত শাহ সুজার কোনো অনুচর বা সেনাপতি এগুলো নির্মাণ করেন।
৬. লৎসর শাহি মসজিদ
১৭৭০ সালে তৎকালীন জমিদার শেখ জয়নুদ্দিন মিয় প্রচ্যের কারুকার্য খচিত এই মসজিদ নির্মাণ করেন। মসজিদটি ৩ গম্বুজ বিশিষ্ট। টালি ও ইট দিয়ে ৩০ ইঞ্চি পুরো দেয়াল। মসজিদটি সংস্কার না করায় এখন এর অস্তিস্ত হুমকির মুখে।
৭. আদিন মুড়া মাজার মসজিদ
এর অবস্থান লালমাই পাহাড়ের প্রায় মাঝামাঝি চূড়ায়। মসজিদ ও মাজারটি ৬৪ শত জায়গায় অবস্থিত। মাজারের খাদেম শাহ মুনিরুল ইসলামের বরাতে বংলা একাডেমির লোকজ সংস্কৃতি সিরিজের বইয়ে বলা হয়েছে, ৭৫০ বছর পূর্বে মাজারের পত্তন হয়। এখানে শুয়ে আছেন হজরত শাহ জালালের সঙ্গী শাহ কামাল ইয়ামানি। আর মসজিদটি ১০৯৩ সালে নির্মিত। এইট এক গম্বুজবিশিষ্ট।
৮. চিতড্ডা মসজিদ
বরুড়া উপজেলার চিতড্ডা ইউনিয়নের চিতড্ডা গ্রামে অবস্থিত। এটি মোহাম্মদ জামান চৌধুরী ১৭৭৫ সালে নির্মাণ করেন। মসজিদটি ৩ গম্বুজবিশিষ্ট।
৯. ভারেল্লা মসজিদ
ময়নামতি সেনানিবাস থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার পশ্চিম-উত্তরে অবস্থিত এ মসজিদ। এটি বর্গাকার মসজিদ, নির্মিত হয় ১২২৯ হিজরিতে।
১০. নবাব বাড়ি মসজিদ ও নবাব ফয়জুন্নেসার কবর
১৯০৩ সালে নবাব ফয়জুন্নেসার মৃত্যুর বছর এ মসজিদ নির্মিত হয়। ফয়জুন্নেসা এর নির্মাণ শুরু করেছিলেন। লাকসামের পশ্চিমগাঁয়ে নবাববাড়ির পশ্চিম পাশেই এর অবস্থান। এর গম্বুজ দশটি, ছোট মিনার ৪৪টি।
১১. অর্জুনতলা মসজিদ
বরুড়া পৌরসভা থেকে এক কিলোমিটার পশ্চিমে অর্জুনতলা গ্রামে ১২০৯ হিজরিতে দেওয়া মুহাম্মদ ছামি মিয়া কর্তৃক নির্মিত হয়।
১২. নূরমানিকচর মসজিদ
মসজিদটি কুমিল্লা শহর থেকে পশ্চিমে ১৮কিলোমিটার এবং ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক’র নূরমানিকচর বাস স্টেশনের আধা কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
নূরমানিকচর মসজিদ দেবীদ্বারের সবচেয়ে পুরাতন মসজিদ। ধারণা করা হয় এর বয়স প্রায় পাঁচশত বছর। পঞ্চদশ শতাব্দীর দিকে মরহুম সৈয়দ নূর আহমেদ কাদেরী পীর সাহেব এ মসজিদ নির্মাণ করেন। তার নামানুসারে ওই গ্রামের নামকরণ করা হয় নূরমানিকচর গ্রাম। আর গ্রামের নামানুসারে নূরমানিকচর মসজিদ এর নামকরন করা হয়।
মসজিদটি সাতগম্ভুজ বিশিষ্ট। মসজিদটির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ্য যথাক্রমে ১০ ও ৫ ফুট। এখানে একসঙ্গে ২০/২৫ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। চুন-সুরকী দিয়ে নির্মীত মসজিদটির ভেতরের অংশে অপরুপ কারুকাজ রয়েছে । মসজিদের ওপরের ছাদের অংশে রয়েছে ১১টি গম্বুজ, এর মধ্যে মূল ছাদে রয়েছে ৭টি এবং বাকী চারটি রয়েছে মসজিদের চারকোণায়। তবে সংরক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে সবকটি গম্বুজই আজ প্রায় বিলুপ্ত। সঠিক পরিচর্যার অভাবে মসজিদের বাহিরের কারুকাজ সম্বলিত স্তরগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। যত্নের অভাবে অধিকাংশ জায়গা থেকে আস্তরগুলো খসে পড়ছে। বৃষ্টির পানিতে মসজিদের দেয়ালে শেওলা জমে মসজিদের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এছাড়া কুমিল্লার মুসলিম ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে রয়েছে দারোগা বাড়ি মসজিদ (১২১১ হি. কুমিল্লা), ১৬৫৯ সালে স্থাপিত কাজীর মসজিদ, (পশ্চিমগাঁও লাকসাম), ৭ গম্বুজবিশিষ্ট খোশববাস মসজিদ (১২৬৯ বঙ্গাব্দ, বরুড়া), ৫ গম্বুজবিশিষ্ট আরফান্নেসা মসজিদ (পশ্চিমগাঁও লাকসাম), ১২১২ হিজরির জংলী বিবির মসজিদ (ছোটরা, কুমিল্লা), কাবিলা মসজিদ (১২০৬ হিজরি, বুড়িচং)।
সূত্র:
বাংলাদেশে মুসলিম পুরাকীর্তি, আহমেদ মাহমুদুল হক, মাওলা ব্রাদার্স
বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি: কুমিল্লা, বাংলা একাডেমি