খোঁজ পাওয়া গেছে কুরআন গবেষক মাওলানা আতীক উল্লাহ’র

খোঁজ পাওয়া গেছে কুরআন গবেষক মাওলানা আতীক উল্লাহ’র

হামমাদ রাগিব :

প্রায় দুইমাস ধরে নিখোঁজ তরুণ আলেম লেখক ও কুরআন গবেষক মাওলানা আতীক উল্লাহর সন্ধান পাওয়া গেছে। তিনি সুস্থ অবস্থায় আছেন। মাওলানা আতীকের পারিবারিক সূত্রে এ খবর নিশ্চিত হয়েছে ফাতেহ টুয়েন্টি ফোর।

পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, আজ শনিবার সকালের দিকে মাওলানা আতীক উল্লাহ তাঁর আম্মা ও স্ত্রীকে ফোন করে জানান তিনি নারায়ণগঞ্জের আদমজী ইপিজেডস্থ র‌্যাব-১১-এর হেড কোয়ার্টারে আছেন।

আতীক উল্লাহর আম্মা তৎক্ষণাৎ আতীক উল্লাহর ভাইকে জানান ব্যাপারটা। আতীক উল্লাহর ভাই ঢাকাতেই ছিলেন। তিনি তাঁদের শুভাকাঙ্ক্ষী আরও দুজনকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জে র‌্যাব-১১-এর হেড কোয়ার্টারে যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, আতীক উল্লাহকে কিছুক্ষণ আগে নারায়ণঞ্জ কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

তাঁরা তৎক্ষণাত ছুটে যান নারায়ণগঞ্জ কারাগারে। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন তাঁকে কোর্টে নেওয়া হয়েছে। আতীক উল্লাহর ভাইয়েরা তৎক্ষণাত নারায়ণগঞ্জ কোর্টে যান। অবশেষে কোর্টে দেখা হয় মাওলানা আতীক উল্লাহর সঙ্গে।

সূত্র জানায়, মাওলানা আতীক উল্লাহর সঙ্গে আজ তাঁর পরিবারের লোকজনের দেখা হয়েছে, কথাও হয়েছে। তিনি সুস্থ আছেন। তবে কীভাবে তিনি র‌্যাব-১১-এর হেফাজতে গেলেন, তা বিস্তারিত জানা যায়নি।

আজ বিকালে তাঁকে আদালত থেকে নারায়ণগঞ্জ কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৪ অক্টোবর বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে রাজধানীর শ্যামলী থেকে বাড্ডায় যাবার পথে নিখোঁজ হন তরুণ এ আলেম। এর পর থেকে তাঁর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরিবারসহ দেশের অসংখ্য তরুণ মাদরাসা-পড়ুয়া তাঁকে নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন।

মাওলানা আতীক উল্লাহ রাজধানীর আদাবরস্থ মাদরাসাতুল কুরআনিল কারীমের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। এ মাদরাসা প্রতিষ্ঠার আগে বেশ কিছুদিন তিনি মাওলানা আবু তাহের মেসবাহ (আদীব হুজুর) পরিচালিত রাজধানীর কামরাঙ্গীর চরে মাদরাসাতুল মদীনায় শিক্ষকতা করেছেন। তার আগে চট্টগ্রামের জামিয়া পটিয়া থেকে দাওরায়ে হাদিস পাশ করার পর আরবি সাহিত্য বিষয়ে বেশ কিছুদিন গবেষণা করেছেন। একজন ভালো আলেম ও শিক্ষক হবার পাশাপাশি কুরআন গবেষণায় তাঁর বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। বাংলাভাষায় লেখালেখিতেও তিনি দক্ষতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন। এ পর্যন্ত তাঁর লিখিত ২১টির মতো গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর গ্রামের বাড়ি পার্বত্য চট্টগ্রামের পানছড়ি উপজেলা সদরে।

র‌্যাব অভিযোগে যা বলছে 

এদিকে শনিবার সন্ধ্যায় র‌্যাব-১১ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলেপ উদ্দিনের পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শুক্রবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে নরসিংদীর মাধবদী উপজেলার ছোট গদইচর এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাওলানা আতীক উল্লাহকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১১ এর সদস্যরা। এ সময় তাঁর কাছ থেকে বেশকিছু ‘উগ্রবাদী’ বই, লিফলেট, ল্যাপটপ ও হার্ডডিস্ক উদ্ধার করা হয়েছে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে র‌্যাবের ওই কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাওলানা  আতীক উল্লাহ নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) একজন ফতোয়া নির্ধারক ও দাওয়াতি শাখার সমন্বয়কারী। তিনি ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হারকাতুল জিহাদের (হুুজি) দেশব্যাপী বিভিন্ন কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ওই সময় তিনি হুজি নেতা আব্দুর রহমান এবং সম্প্রতি ঢাকায় গ্রেফতার আফগান ফেরত মুজাহিদ আতিকুল্লাহর কাছে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে (২০১৪ সালে) নিহত এক জেএমবি নেতার মাধ্যমে জেএমবিতে যোগদান করেন।

ফতুল্লা থানায় র‌্যাবের দায়ের করা সন্ত্রাসবিরোধী একটি মামলার পলাতক আসামি হিসেবেও তাঁকে উল্লেখ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আগের সংবাদ‘নিখোঁজ এবং আটক আলেমদেরকে অবিলম্বে ফিরিয়ে দিন’
পরবর্তি সংবাদহাসপাতালে নামাজরত অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন কিশোরগঞ্জের এক নারী