
বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত দাতব্য সংস্থা পিপল ইমপ্রুভমেন্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশ (পিসব)। সংস্থাটির পরিচালক তরুণ আলেম মাওলানা ইমরান হুসাইন হাবিবি। দেশের মানুষের এই ক্রান্তিলগ্নে তিনি ছুটে বেড়াচ্ছেন এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত। কখনো করোনা বিপর্যস্ত এলাকায়, কখনো আম্পান দুর্গত জেলায়, কখনো বন্যা কবলিত অঞ্চলে। প্রচণ্ড ব্যস্ত এই সময়ে মুঠোফোনে কথা হলো তার সঙ্গে। কথোপকথনটি ফাতেহের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
রাকিব: এখন কোথায় আছেন?
ইমরান হাবিবি: কুড়িগ্রাম। এখানে চার-পাঁচদিন ধরেই আছি।
রাকিব: কুড়িগ্রামের অবস্থা কেমন?
ইমরান হাবিবি: খুবই খারাপ। গতকাল চারপাঁচটা গ্রামে গেলাম। ঘর-বাড়ির চিহ্নও নেই। পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এখন যদিও পানি কমছে, সবাই বলাবলি করছে পানি আবারও বাড়বে। সবচে বেশি ক্ষতি হয়েছে ফসলের। সব ভেসে গেছে। গবাদিপশুরও একই অবস্থা। চারদিকে দেখছি মরা গরু ভেসে যাচ্ছে, গন্ধ ছড়াচ্ছে।
রাকিব: বন্যাকবলিত এসব এলাকায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে গিয়েছেন। কী কী ত্রাণ বিতরণ করলেন?
ইমরান হাবিবি: বন্যায় সবচে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কুড়িগ্রাম। কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গমারি, মাদারগঞ্জ, যাত্রাপুর, নাগেশ্বরী, কচাকাটা—এসব এলাকায় আমরা কাজ করছি। ইতোমধ্যে ৬০০ পরিবারকে প্রায় ১৮ কেজি করে খাবার দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে প্রতিটি পরিবারে ৫ কেজি চাল, ২ কেজি আলু, ১ কেজি পেয়াজ, ১ কেজি তেল, দুই কেজি চিড়া, ১০ প্যকেট স্যালাইন, সুজি, মুড়ি, তিন ধরণের অষুধ ইত্যাদি দিয়েছি। পাশাপাশি নদীভাঙনে পড়া ৭০০ পরিবারকে ১০ গজের একটি করে ত্রেপাল দিয়েছি। ঢাকা থেকে আরও ত্রেপাল আসছে। আরও এক হাজার পরিবারে ত্রাণ বিতরণের ইচ্ছে আছে।
রাকিব: বন্যা যেহেতু হয়েছে, খাবার পানি এবং পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার সঙ্কটও আছে।
ইমরান হাবিবি: অবশ্যই সঙ্কট। গতকাল এসব এলাকা ঘুরতে ঘুরতে ভাবছিলাম—কিছু নলকূপ এবং টয়লেট দেয়া দরকার। তবে লোকজন বলছেন, খাবার পানি তারা কোনোভাবে ম্যানেজ করতে পারবেন। তাদের খাবার জিনিস দরকার। তাই খাবার দিয়েছি। তবে টয়লেট এবং নলকূপও দিবো।
রাকিব: কুড়িগ্রামের আলেমরা কেমন আছেন?
ইমরান হাবিবি: অন্যদের মতো আলেমরাও সঙ্কটে আছেন। আমাদের ত্রাণ কার্যক্রমে আমরা আলেমদেরকে প্রাধান্য দিচ্ছি। করোনার ত্রাণ কার্যক্রমেও আলেমদের প্রাধান্য দিয়েছি।
রাকিব: ফান্ড কিভাবে কালেক্ট করেন?
ইমরান হাবিবি: আমাদের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয় বাংলাদেশের মানুষের টাকায়। বাইরের কারো টাকায় না। গত রমজানে সাড়ে ১৩ হাজার পরিবারে ত্রাণ দিয়েছি। আম্পানদুর্গত সাতক্ষীরায় সাড়ে ২১ শ পরিবারে ত্রাণ দিয়েছি। এত মানুষকে যে ত্রাণ দিচ্ছি, সব গ্রহীতার ডাটাও কিন্তু আমাদের কাছে আছে। সব ডাটা, ত্রাণ বিতরণের লোকেশন দাতা সংস্থাকে দিয়ে দেই। তারা ঘরে বসেই জিপিএস ট্র্যাকিং দিয়ে সব দেখতে পারছেন। কোথাও কোনো ঘাপলা রাখি না।
রাকিব: কুরবানি ঈদ উপলক্ষে আপনাদের কোনো কার্যক্রম আছে কিনা।
ইমরান হাবিবি: প্রতি কুরবানির ঈদেই আমাদের কার্যক্রম থাকে। তার ধারাবাহিকতায় এবারও প্লান আছে। গতবার সাত-আটটি দারিদ্র্য-পীড়িত জেলায় গরু জবাই করে গোশত বিতরণ করেছি। এবার করবো ইনশাআল্লাহ। অনেক এনজিও অল্প দামে গোশত দেয় ঈদের দিন। আমরা তা করি না। আমরা নিজেদের টাকায় গরু কিনি, রশিদ দাতা সংস্থাকে সরবরাহ করি, স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে জবাই করে গোশত বিতরণ করি।
রাকিব: আপনার মতো আরও আলেমগণ যদি এই সেবা কর্যক্রমটি শুরু করতে চায়, তাহলে কতটুকু সম্ভব?
ইমরান হাবিবি: আলেমগণ যদি এই সেবামূলক কাজে নেমে আসেন, তাহলে তারা সমাজের আরও কাছাকাছি যেতে পারবেন। বাংলাদেশি দাতাদের অর্থায়নেই তারা কাজটি করতে পারবেন। তবে শক্ত হিসাব ব্যবস্থাপনা, সুষম বন্টন, ডাটা সংরক্ষণ বিশ্বস্তভাবে করতে হবে। ইতোমধ্যে আলেমগণ কিন্তু সেবামূলক কাজে জড়িত আছেন। করোনায় সবচে বেশি সেবামূলক কাজ করেছেন আলেমগণ। হামজা শহীদুল ইসলামের আল মারকাজুল ইসলামি, গাজি ইয়াকুব ভাই, হাবিবুর রহমান মিসবাহর ইকরামুল উম্মাহ ফাউন্ডেশন—সবাই এই দুঃসময়ে জানপ্রাণ দিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে ছুটে বেড়াচ্ছেন।
রাকিব: ফাতেহকে সময় দেয়ার জন্য শুকরিয়া।
ইমরান হাবিবি: ফাতেহকে শুকরিয়া। ফাতেহ এগিয়ে যাক।