তৃতীয়বারের মতো পরিবর্তিত প্রশ্নে দাওরার অবশিষ্ট ৮ পরীক্ষা, প্রশ্নফাঁস রোধে হাইআর প্রযুক্তিনির্ভর ভিন্ন ব্যবস্থা

হামমাদ রাগিব

এক বছরে একাধারে দুইবার প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ঘটায় হাইআতুল উলয়া সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেছে। একই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র দুইবার বাতিল করে তৃতীয় বারের মতো অবশিষ্ট ৮ পরীক্ষার জন্য নতুন প্রশ্নপত্রে আগামীকাল থেকে পরীক্ষা নেবে বোর্ডটি। প্রযুক্তির সহায়তায় প্রতিদিন পরীক্ষা শুরুর আধঘণ্টা আগে সারাদেশের প্রতিটা কেন্দ্রের প্রধান দায়িত্বশীলের কাছে সেদিনকার প্রশ্ন প্রেরণ করা হবে। ফাতেহ টোয়েন্টি ফোরকে এমনটাই জানিয়েছেন হাইআতুল উলয়ার তরুণ সদস্য মাওলানা মুসলেহুদ্দীন রাজু। এ ক্ষেত্রে প্রতিটা পরীক্ষাকেন্দ্রের প্রধান জিম্মাদারকে হাইয়াতুল উলয়ার অফিসিয়াল নাম্বারে দ্রুত যোগাযোগ করার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।

গত ৮ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া সম্মিলিত কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশের দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠলে পরীক্ষার চতুর্থ দিন হয়ে যাওয়া চার পরীক্ষা বাতিল এবং অবশিষ্ট পরীক্ষাগুলো স্থগিত করে দেয় বোর্ডটি। পরে ২৩ এপ্রিল থেকে আবারও নতুনভাবে পরীক্ষা নেবার ঘোষণা দেয়। কিন্তু ২৩ এপ্রিল পরীক্ষা শুরু হলে তৃতীয় দিনের মাথায় গতকাল ২৫ এপ্রিল আবারও প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠে। হাইআতুল উলয়া সঙ্গে সঙ্গে ২৫ এবং ২৬ এপ্রিলের পরীক্ষা স্থগিত করে দেয়। এবং সারাদেশে বিতরণ করা অবশিষ্ট পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও বাতিল ঘোষণা করে।

পুরোনো রুটিনে আগামীকাল ২৭ এপ্রিল থেকে অবশিষ্ট পরীক্ষাগুলো নেবে বোর্ডটি। কিন্তু সম্পূর্ণ নতুন প্রশ্নপত্রে। প্রতিদিনের প্রশ্নপত্র বিশ্বস্ত বিশেষ একটি টিম আগের দিন রাতে প্রস্তুত করবে। পরদিন সকালে পরীক্ষা শুরুর আধ ঘণ্টা আগে সারা দেশের কেন্দ্রগুলোতে কেন্দ্র-জিম্মাদারের কাছে প্রযুক্তির সহায়তায় পৌঁছে দেওয়া হবে এ প্রশ্নপত্রের কপি। কেন্দ্র-জিম্মাদার সম্ভব হলে সেটা আধঘণ্টার ভেতরে প্রিন্ট করে ছাত্রদের হাতে হাতে পৌঁছে দেবেন অথবা প্রশ্নগুলো ছাত্রদের সামনে ব্ল্যাকবোর্ডে লিখে দেবেন। ব্ল্যাকবোর্ড থেকে দেখে দেখে ছাত্ররা প্রশ্নের উত্তর লিখবে।

হাইআতুল উলয়ার তরুণ সদস্য মাওলানা মুসলেহুদ্দীন রাজু জানান, প্রশ্নফাঁস রোধে সাময়িকভাবে শুধু এ বছরের জন্য এ পদ্ধতি অবলম্বন করা হবে। আগামী বছর থেকে ঠিক কোন পদ্ধতি গ্রহণ করা হবে, তা পরীক্ষাশেষে বোর্ডের সর্বোচ্চ অথরিটি ভেবেচিন্তে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। এ ক্ষেত্রে আইটি ইঞ্জিনিয়ারদের পাশাপাশি দেশের তরুণ, চিন্তক এবং শিক্ষাগবেষক ওলামায়ে কেরামের পরামর্শকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে।

মাওলানা মুসলেহুদ্দীন রাজু আরও জানান, প্রশ্নফাঁসের মতো এমন জঘন্য ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারণে যেম্নিভাবে সারা দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ মর্মাহত হয়েছেন, তেম্নি বোর্ড কর্তৃপক্ষও পড়েছে সীমাহীন পেরেশানির মধ্যে। ছাত্রদের ভোগান্তির কথা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

মাওলানা মুসলেহুদ্দীন রাজু বলেন, অতীতের মতো নির্ভেজাল, প্রশ্নাতীত ও গ্রহণযোগ্য পরীক্ষার জন্য আমরা দুই ধাপে পরীক্ষা বাতিল ও স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছি। এটা ছাত্রদের কল্যাণের কথা বিবেচনা করেই করা হয়েছে। কিন্তু এতে ছাত্রদের যে ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে, সে-জন্য সবার মতো আমরা খুব মর্মপীড়ায় ভোগছি। আগামীতে এরকমটা যাতে না হয়, পরীক্ষা-শেষে হাইআতুল উলয়ার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা এটার ওপরই থাকবে। কীভাবে প্রশ্নফাঁসের কোনো ধরনের সুযোগ না রেখে আগামী থেকে পরীক্ষা গ্রহণ করা যায়, সে ব্যাপারে সব রকম চেষ্টা গবেষণা এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে নতুন একটা পদ্ধতি দাঁড় করানো হবে।

প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে কারা জড়িত, এ বিষয়ে তদন্ত কত দূর, জানতে চাইলে মাওলানা রাজু বলেন, এটা তদন্ত কমিটি ভালো বলতে পারবে। তবে তাঁরা বোধহয় এখনই কিছু বলবেন না। তদন্ত শেষ হলে সমস্ত কিছু একসঙ্গে খুলে বলবেন। তখনই আপনারা জানতে পারবেন।

প্রশ্নফাঁসের এই ঘটনায় হাইআতের কোনো দায় আছে কি-না বা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ বিভাগের কোনো দুর্বলতা আছে কি-না জানতে চাইলে বোর্ডটির তরুণ এ সদস্য বলেন, দায় তো অবশ্যই আছে। সবারই আছে। তবে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ বিভাগের কোনো দুর্বলতা আছে কি-না তা তদন্তে উঠে আসবে। তখন যথামাফিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ি বড় মাদরাসা এবং সিলেটের আযাদ দীনি এদারা বোর্ড হাইআ থেকে বের হয়ে স্বতন্ত্রভাবে পরীক্ষা নেবার যে ঘোষণা দিয়েছিল, সে ব্যাপারে জানতে চাইলে মাওলানা মুসলেহুদ্দীন রাজু বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, ইতিমধ্যেই তাঁরা তাঁদের সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে এসেছেন। পূর্বের মতো সব বোর্ড ও মাদরাসার অংশগ্রহণে আগামীকাল থেকে সারা দেশে এক যোগেই দাওরায়ে হাদিসের অবশিষ্ট ৮ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

আগের সংবাদশ্রীলংকার মুসলমানদেরকে মসজিদে না যাওয়ার আহ্বান দেশটির মুসলিম ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রীর
পরবর্তি সংবাদ‘ব্রুনাই ও বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে’