রাকিবুল হাসান নাঈম:
ছাত্র হিসেবে বৈধভাবে ভারত যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ইসলামী শিক্ষার অন্যতম প্রাণকেন্দ্র দারুল উলূম দেওবন্দে গিয়ে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে না বাংলাদেশের কওমি মাদরাসার ছাত্ররা। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হলেও কোনো ফল আসেনি। সংশ্লিষ্টগণ বলছেন, উদ্যোগ নিয়ে মাঝপথে কার্যক্রম স্থবির হয়ে যাবার কারণে বিষয়টি ফলপ্রসূ হচ্ছে না। দেওবন্দে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে বোর্ডকে সবসময় তৎপর থাকতে হবে।
সঙ্কট নিরসনে নানা উদ্যোগ
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেওবন্দ গমনেচ্ছু শিক্ষার্থীদের জন্য স্টুডেন্ট ভিসা লাভের বিষয়টি নিয়ে সরকারি দফতরে দৌড়াদৌড়ি করেছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সিনিয়র কর্মকর্তা ড. মাওলানা মুশতাক আহমদ। তিনি তার বন্ধু মাওলানা ওমর ফারূকের মাধ্যমে পিএম অফিসের মুখ্য সমন্বয়ক জনাব আবুল কালাম স্যারকে অবহিত করেন। তিনি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সচিব শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন। এরপর তারা ৬ সদস্যের একটি দল মাওলানা মাহফুজুল হক সাহেবের নেতৃত্বে স্টুডেন্ট ভিসা চালু করা’র লিখিত আবেদনসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয়ের সাথে দেখা করেন। ১৩ মার্চ, ২০১৯ সালে উপসচিব জিনাত রেহানা স্বাক্ষরিত মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে জারি করা একটি আবেদনপত্রে দেখা যায়, তিনি কওমি স্বীকৃতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে স্টুডেন্ট ভিসা প্রদান করার যথার্থতা তুলে ধরেন। পরে স্টুডেন্ট ভিসা প্রদানের আবেদন জানিয়ে কওমি স্বীকৃতির কপি বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, হাই কমিশনার অব ইন্ডিয়া, বাংলাদেশ হাই কমিশন দিল্লি, ডেপুটি হাই কমিশন কলকাতায় পাঠানোর নির্দেশনা দেন। সচিব মহোদয় মৌখিকভাবে বলেও দেন, বিষয়টি যেহেতু একান্তই নতুন, তাই আপনারা দেওবন্দের জন্য স্টুডেন্ট ভিসা পেতে আগ্রহীদেরকে যথানিয়মে চেষ্টা অব্যাহত রাখতে বলুন। এ ব্যাপারে তারা কোথাও আইনগত সমস্যায় পড়লে আমাদের অবহিত করবেন। আমরা দ্রুত সমাধান করে দেওয়ার চেষ্টা করবো।
উপরোক্ত ৬ সদস্য ছিলেন, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা ড. মুশতাক আহমাদ, মাওলানা মুফতি সিফাতুল্লাহ, মাওলানা মুফতি রুহুল আমিন, মাওলানা মুজিবুর রহমান, মাওলানা উমর ফারুক।
এরপরই ২০১৯ সালের ১৭ মার্চ রাজধানীর ফরিদাবাদ মাদরাসায় অনুষ্ঠিত হাইয়াতুল উলয়ার তৎকালীন চেয়ারম্যান আল্লামা আহমদ শফীর সভাপতিত্বে একটি বৈঠক হয়। সেখানে কওমি মাদরাসা-শিক্ষার্থীদের বিদেশে উচ্চশিক্ষাগ্রহণের প্রক্রিয়া সুগম করার লক্ষ্যে ৬ সদস্য বিশিষ্ট বিশেষ একটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়। বলা হয়, এই কমিটির অধীনে কওমি শিক্ষার্থীদের ‘স্টুডেন্ট ভিসা’ সহজিকরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি বহির্বিশ্বের শিক্ষার্থীরাও যাতে বাংলাদেশের কওমি মাদরাসাগুলোতে পড়াশোনার সুযোগ পেতে পারে সে-ব্যাপারেও কাজ করবে এ কমিটি। বেফাকের তৎকালীন মহাসচিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুসকে আহ্বায়ক করে গঠিত উচ্চতর কমিটিতে ছিলেন মুফতি রুহুল আমীন, মাওলানা মাহফুজুল হক, মুফতি নুরুল আমিন, মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া, মুফতি মোহাম্মদ আলী।
এই কমিটি এখনও বলবৎ আছে। তবে বিদেশে উচ্চশিক্ষা বিষয়ক কোনো উদ্যোগ নিয়ে তাদের আলোচনা নেই। জটিলতা নিরসন করে বিদেশে উচ্চশিক্ষা সুগম করতে কমিটি কী করছে জানতে চাইলে কমিটির সদস্য মুফতি মোহাম্মদ আলী ফাতেহকে বলেন, ‘কমিটি বলবৎ থাকলেই হয় না। কার্যক্রম থাকতে হয়। পরবর্তীতে বিদেশে উচ্চশিক্ষা সুগম করার লক্ষ্যে কমিটিতে তেমন কোনো আলোচনা হয়নি।’ বিষয়টি স্বীকার করেছেন বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সহকারী মহাসচিব এবং আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি‘আতিল কওমিয়া বাংলাদেশের স্থায়ী কমিটির সদস্য হযরত মাওলানা মুফতী নূরুল আমীনও।
কাজ এখন হাইয়াতুল উলয়ার
কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা জনাব মোহাম্মদ আবুল খায়ের ফাতেহকে বলেন, এ সঙ্কট ও স্থবিরতা নিরসনে কওমি শিক্ষাবোর্ডকে সরব তৎপর হতে হবে। তারা যদি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে তাড়া দেন, তাহলে অতিদ্রুত বিষয়টি নিষ্পন্ন হবে। এখানে পলিটিক্যালি কোনো ঝামেলা নেই।’
এর আগে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান ফাতেহকে বলেছিলেন, ‘সরকার দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্স সমমানের স্বীকৃতি দিয়েছে। এখন সব ক্ষেত্রেই তারা তাদের সার্টিফিকেট শো করতে পারবে। এতে কোনো বাধা নেই। আন্তর্জাতিক কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষার আবেদন করতে গিয়ে যদি কেউ যদি সমস্যায় পড়ে, আমাদেরকে জানালে আমরা দেখব। যতটুকু জানি, সমস্যা হবার কথা না ‘
ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ জামাতের খতিব ও ইকরা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান শায়খুল ইসলাম আল্লামা ফরীদ উদ্দীন মাসউদের ছেলে মাওলানা সদরুদ্দীন মাকনুন ফাতেহকে বলেন, ‘একটা সময় আমরা চেষ্টা করেছিলাম। ভারতে কংগ্রেস যখন ক্ষমতায়, তখন। পরে বিজিপির সময়েও আমরা চেষ্টা করেছি। ভারতীয় দূতাবাসে দেখা করে কথা বলেছি। তখনো সরকার কওমি মাদরাসাকে স্বীকৃতি দেয়নি। ভারত কর্তৃপক্ষের কথা ছিল, বাইরের দেশে পড়তে যাওয়া ছাত্রদের দায়িত্ব নেবার মতো কোনো বোর্ড লাগে। অর্থাৎ, যারা দেওবন্দ পড়তে যাবে, তাদের অথরাইজড করবে কারা, তা নিশ্চিত করতে হবে। এখন যেহেতু সরকার স্বীকৃতি দিয়েছে, হাইয়াতুল উলয়া বিষয়টি নিয়ে উদ্যোগ নিতে পারে। তবে আলোচনা যদি দু’দেশের সরকারে হয়, তাহলে বিষয়টি সহজ হবে।’