|| তাসনিফ আবীদ ||
দেশের পাঠ্যক্রম নিয়ে যেন বিতর্ক শেষই হচ্ছে না। মানহীন পাঠ্যপুস্তক, ধর্মের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিষয় অন্তর্ভূক্তীকরণ, যাচ্ছেতাইভাবে তৈরি পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌছানোসহ নানা অভিযোগ রয়ে জাতীয় পাঠ্যক্রম নিয়ে।
পাঠ্যক্রমের এই দুরাবস্থা সমাজের যেকাউকে ভাবানোর মতো। তবে বিষয়টি নিয়ে দেশে যারা সবচেয়ে বেশি সচেতনা সৃষ্টি ও প্রতিবাদ করেছেন; তাদের মধ্যে অন্যতম দেশের আলেম সমাজ।চলমান বিতর্কিত এই পাঠ্যক্রমে নিয়ে কীভাবে কাজ করছে আলেমরা?
বিষয়টি নিয়ে দেশে প্রথম বারের মতো প্রায় সব ঘরনার আলেমদের নিয়ে ‘বিতর্কিত জাতীয় পাঠ্যক্রম; প্রজন্মের প্রকৃত শিক্ষা ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ওই সেমিনারের পর পাঠ্যক্রম নিয়ে কীভাবে কাজ করছে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ? জানতে চেয়েছিলাম সংগঠনটির সভাপতি মাওলানা নুরুল হুদা ফয়েজীর কাছে।
তিনি বলেন, পাঠ্যক্রমে নতুন সংযোজিত ট্রান্সজেন্ডার, শারীরিক শিক্ষা ও ধর্মবিমুখ বিভিন্ন অধ্যায় একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের মন মানসিকতার ওপর চরিত্রবিধ্বংসী বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করবে, অন্যদিকে তাদেরকে ধর্মহীন করে গড়ে তুলবে। তাই অচিরেই জাতীয় চিন্তার আলোকে সর্বাধুনিক, মননশীল ও জীবনমুখী পাঠ্যক্রম ও শিক্ষা সিলেবাস প্রণয়ন করার দাবিতে আমরা সেমিনার করি।
‘সেমিনারটি দেশ ও দেশের বাইরে বেশ প্রভাব ফেলেছে। মানুষ সচেতন হয়েছে। অনেকে তাদের সন্তানদেরকে এই বিতর্কিত পাঠ্যক্রম থেকে বাঁচানোর জন্য স্কুল থেকে এনে মাদরাসায় ভর্তি করাচ্ছে। তাই আমরা সেই সেমিনারের পরে বৈঠকের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিই, জনসচেতনতামূলক কাজ আরো বাড়াবো। সেই লক্ষ্যেই আমরা এগুচ্ছি।’ –জানান মাওলানা নুরুল হুদা ফয়েজী
তার মতে, যে শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করা হয়েছে, তার সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করলে মুসলমানের ঈমানে ঘাটতি তৈরি হবে। আগামীর মা, বাবারা তাদের সন্তানদের শেখানোর জন্য নূন্যতম যে ধর্মীয় শিক্ষা প্রয়োজন, তাও তারা দিতে পারবে না। তাই এর বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করা ইমানের দাবি।
তিনি জানান, সেই লক্ষে আমরা সেমিনারের আলোচনা ও পাঠ্যক্রমের অসঙ্গতিগুলো আরো সুবিন্যস্তভাবে একত্রিত করে একটি পুস্তিকা তৈরি করছি; যেটি মানুষের মাঝে বিতরণ করবো। পাশাপাশি এমন সেমিনার ধারাবাহিকভাবে আয়োজন করবো।
বিতর্কিক পাঠ্যক্রম নিয়ে গত সপ্তাহে ‘বর্তমান জাতীয় শিক্ষা কারিকুলাম ও নতুন পাঠ্যপুস্তকের বাস্তবতা ও ভবিষ্যত’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। এই সেমিনারটিতেও দেশের প্রায় সব ঘরনার আলেম ও বুদ্ধিজীবিদেরকে একত্রিত করা হয়। সবার সমন্বয়ে সেমিনার থেকে পাঠ্যক্রম নিয়ে বেশকিছু দাবি সরকারের কাছে উত্থাপন করা হয়।
দাবিগুলো হলো–
১। ‘ইসলামী শিক্ষা বিষয়’ প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সব শাখায় আবশ্যিক বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
২। দশম, একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির সামষ্টিক মূল্যায়ন তথা বোর্ড পরীক্ষায় ‘ইসলামী শিক্ষা বিষয়’ পুনঃবহাল করতে হবে।
৩। বিতর্কিত ও প্রত্যাখ্যাত কোরআনবিরোধী বিবর্তনবাদ ও ট্রান্সজেন্ডারবাদসহ ইসলামবিরোধী সব পাঠ্যরচনা সিলেবাস থেকে অপসারণ করতে হবে।
৪। আরব দেশগুলোর শ্রমবাজারে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকার জন্য আরবি ভাষার পাঠদান সর্বস্তরে বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৫। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে (এনসিটিবি) ঘাপটি মেরে থাকা ষড়যন্ত্রকারী ও তাদের সহযোগীদের চিহ্নিতকরণপূর্বক অপসারণ করে দেশপ্রেমিক ও ইসলামি মূল্যবোধসম্পন্ন ব্যক্তিদের দায়িত্ব দিতে হবে।
৬। ভবিষ্যতে বিতর্ক এড়াতে দেশের নির্ভরযোগ্য বিজ্ঞ আলেমদের পরামর্শের আলোকে পাঠ্যবইয়ের পুনঃসংস্করণ করতে হবে।
প্রদত্ত এই দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য কীভাবে কাজ করবে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ? এবিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদীর কাছে।
তিনি জানান, সেমিনারের পরপরই আমাদের পরামর্শসভা হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে পাঠ্যক্রম নিয়ে জনমনে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে জেলায় জেলায় ‘বর্তমান জাতীয় শিক্ষা কারিকুলাম ও নতুন পাঠ্যপুস্তকের বাস্তবতা ও ভবিষ্যত’ শীর্ষক সেমিনার করবে হেফাজতে ইসলাম।
‘এছাড়া আমাদের দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য এবং পাঠ্যক্রমকে বিতর্কমুক্ত করার জন্য শিক্ষামন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ারও পদক্ষেপ হাতে নেওয়া হয়েছে।’ –জানান মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী