বাংলাদেশে খৃস্টান মিশনারী: শামসুল হক ফরিদপুরীর প্রকল্প

রাকিবুল হাসান নাঈম:

ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৩। ঢাকার বিশিষ্ট উলামায়ে কেরামকে নিয়ে জরুরী পরামর্শ সভা ডেকেছেন মুজাহিদে আজম আল্লামা ফরিদপুরী রহ.। সভার উদ্দেশ্য—দেশে খৃস্টান মিশনারীদের অপতৎপরতা রোধকল্পে কী পদক্ষেপ নেয়া যায়, তাই। সভায় ফরিদপুরী রহ. নিজেই ‘ইসলামি মিশন’ কায়েম করার প্রস্তাব পেশ করেন। সভায় উপস্থিত সকলেই সে প্রস্তাব গ্রহণ করেন।

বাংলাদেশে তখন খৃস্টান মিশনারীদের চোখ পড়েছে বেশ ভালোভাবেই। ১৯৬১-৬২ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে পরপর কয়েকটি জলোচ্ছ্বাস ও ঘুর্ণিঝড় হওয়ায় দেশে তখন ভীষণ দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। ৬২ সালের ঘূর্ণিঝড়ে চট্টগ্রামের গহিরা গ্রাম একদম লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। সেবার নামে তখন চট্টগ্রামে আসে প্রধান পাদ্রী ফাদার পাঁয়ার। তিনি ৫০ লক্ষ টাকার সামগ্রী নিয়ে পাকিস্তান আগমন করেন। জেনারেল আইয়ুব খান তার ফান্ডে দেন আরও ৫০ লাখ৷ এক কোটি টাকার সামগ্রী নিয়ে চট্টগ্রাম পৌঁছলে তাদেরকে দেয়া হয় বিশাল অভ্যর্থনা। পাদ্রীর লক্ষ ছিল—সেবা দিয়ে মন জয় করে সেখানে একটি শান্তিদ্বীপ স্থাপন করা। শামসুল হক ফরিদপুরী রহ. পত্রিকা মারফত খবর পেয়ে বেশ চিন্তায় পড়ে গেছেন। কিন্তু দীর্ঘ সাতমাস অসুস্থ থাকায় তিনি কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেননি। তাই সুস্থ হয়েই কী করবেন না করবেন ভাবতে ভাবতে ডেকেছেন এই পরামর্শ সভা।

সভায় মানবসেবা নিয়ে নাতিদীর্ঘ একটি ভাষণ দান করেন মাওলানা যাফর আহমদ উসমানি। তিনি বলেন, সেবার নামে দূরদেশ থেকে খৃস্টানরা এসে এদেশে তাদের মিশন ফলাবে, তা হয় না। মানবসেবা ইসলামের মহান একটি দিক। আমাদেরকে এইক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে হবে। সবার সম্মতিক্রমে খৃস্টান মিশনারীদের মোকাবেলায় গঠিত হয় ‘আঞ্জুমানে তাবলিগুল কুরআন’। এর পৃষ্ঠপোষক বানানো হয় মাওলানা যাফর আহমদ উসমানিকে৷ সভাপতি মুফতি দ্বীন মুহাম্মদ, জেনারেল সেক্রেটারি সদর সাহেব এবং সহসভাপতি মাওলানা আজিজুল হক। এভাবে ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটির অস্থায়ী দফতর রাখা হয় লালবাগ মাদরাসায়। কেন্দ্রীয় দফতরের দায়িত্ব দেয়া হয় মাদরাসার দাওরায়ে তাফসিরের ছাত্র মাওলানা আবদুল আউয়ালকে। তিনি তার এক স্মৃতিচারণায় বলেন, ‘দফতরের কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। আঞ্জুমানের পক্ষ থেকে ৪-৫ জন মুবাল্লিগকে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ইসলাম প্রচার এবং খৃস্টান মিশনারীদের ধোকাবাকি সম্পর্কে অবহিত করতে পাঠানো হয়। চট্টগ্রামে পাঠানো হয় মাওলানা ফজলুর রহমানকে৷ তিনি গহিরা গ্রামে কাজ করেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে তিনি বহু গারো, নাগা, কুকিকে মুসলমান বানান। এমনকি তারা তাকে ৬০ একর জমিও দান করে। তিনি সেখানে মসজিদ, ফুরকানিয়া মক্তব এবং হাসপাতাল স্থাপন করার ব্যবস্থা করেন। এছাড়াও মাওলানা আশরাফ আলীকে ময়মনসিংহ, মাওলানা আবদুস সলামকে ঢাকা মহানগর ও পার্শ্ববর্তী এলাকায়, সদর সাহেবের খােদম মাস্টার আবদুল হককে রাহশাহী এবং মাস্টার ইয়াসিন শরীফকে খুলনায় পাঠানো হয়।

চট্টগ্রামে পাঠানো মুবাল্লিগ মাওলানা ফজলুর রহমান তার স্মৃতিচারণায় বলেন, ‘সদর সাহেব হুজুর আমাকে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাঠালেন। আমি হুজুরের লেখা ‘পাদ্রীদের গোমর ফাঁক’, ‘আল্লাহর প্রেরীত ইঞ্জিল কোথায়’, ‘শত্রু থেকে হুশিয়ার’ বইগুলো ছাপিয়ে বের হয়ে পড়লাম। ঘূর্ণিঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়েছিল আনোয়ারা থানার গহিরা গ্রাম। কিন্তু খৃস্টানরা কাজ করছিল রাউজান থানার গহিরা গ্রামে। আমি পাদ্রীদের অপকীর্তি ও অপতৎপরতারা কথা জনগণকে জানাতে লাগলাম। দুই বৎসর পর পাদ্রীরা গ্রাম ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়।’

খাদেমুল ইসলাম জামাত

১৯৪০ সালে শামসুল হক ফরিদপুরী রহ. গঠন করেন খাদেমুল ইসলাম জামাযত। এটি একটি সমাজ গঠন ও ব্যক্তি সংশোধনমূলক আত্মচেতনা ও আত্মমর্যাদা বোধ সৃষ্টিকারী দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে সেবামূলক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। বলা হয় এ জামাত চলবে আল্লাহর কোরআনের এবং রসুলের হাদীসের সর্ববাদী সম্মত ব্যাখ্যা অনুসারে। কোন এখতেলাফি মাসয়ালা বা ইসলামের কোন নূতন ব্যাখ্যা, নূতন এডিশন এই জামাতে স্থান পাবে না।

খৃস্টান মিশনারীদের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সদর সাহেব অনেক আগে থেকেই যে সতর্ক ছিলেন, তার প্রমাণ ১৯৪০ সালে গঠিত এ জামাতের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের বিবরণ। নিচে এ জামাতের কয়েকটি লক্ষ্য তুলে ধরা হলো:

ক. বিজাতীয়, বিধর্মীয়, দীর্ঘকালের পরাধীনতার ফলে সমাজে যে সব ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপ, সভ্যতা, কৃষ্টি ও মতবাদের সৃষ্টি হইয়াছে তাহার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করিয়া খাঁটি ইসলামী সভ্যতা, খাঁটি ইসলাম ধর্মকে পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত করিতে হইবে।

খ. খৃষ্টানী গোলামী যুগের হেয়তা বোধকে ইসলামী জাতীয় গৌরব বোধে পরিবর্তিত করিতে হইবে।

গ. খৃষ্টানী অসভ্যতার পরিবর্তে ইসলামী সভ্যতার স্থান ও মান উচ্চ হইতে উচ্চতম তাহা প্রতিষ্ঠিত ও প্রমাণিত করিতে হইবে।

ঘ. খাদেমুল ইসলাম জামায়াত মুসলিম একতায় ভাঙ্গন সৃষ্টিকারী সকল প্রকার কুসংস্কার তথা অনৈসলামিক বাতিল মতবাদের ও চিন্তা ধারার প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করিয়া সাধ্যমত মুসলিম জাতিকে এক ও নেক বানাইবার চেষ্টা করে।

ঙ. যথাস্থানে জামাত গঠন, ফোরকানিয়া মক্তব ও মসজিদ স্থাপন, অনাবাদ মসজিদ ও মক্তবকে আবাদ করা এবং কোরআন পাকের তাফসীরের ক্লাস পরিচালনা ও যিকিরের মজলিশ কায়েম, ইসলামী পাঠাগার, নৈশ বিদ্যালয় স্থাপন ইত্যাদির মাধ্যমে মুসলিম সমাজকে খোদামুখী শিক্ষায় শিক্ষিত করিয়া তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করে।

চ. যোগ্য মোবাল্লেগে দ্বীনের দ্বারা অমুসলিমদের নিকট ইসলামের সুশিক্ষা ও সৌন্দর্য ব্যাখ্যার মাধ্যমে ইসলামের দাওয়াত পেশ করে এবং সঙ্গে সঙ্গে ইসলামের আইন শৃঙ্খলা মানিয়া চলার মানসিকতা সমাজে জারী করে।

ছ. বিদেশী মিশনারী পাদ্রীগণ সেবা, শিক্ষা ও সাহায্যের নামে অপপ্রচারের মাধ্যমে ধোকা দিয়া যাহাতে মুসলিম সমাজকে বিভ্রান্ত করিতে না পারে এবং খৃষ্টান সংখ্যা বাড়াইয়া মুসলিম স্বাধীনতার পতন ঘটাইতে না পারে তদ্বিষয়ে পুঙ্খানুপুর তথ্য সংগ্রহ করিয়া জাতিকে হুঁশিয়ার করার দায়িত্ব পালন করে।

উপরের লক্ষ্যগুলোর বিবরণ থেকে স্পষ্ট—সদর সাহেব রহ. মিশনারীদের অপতৎপরতা রোধ করার জন্য প্রস্তাবনা পেশ করেছেন। মিশনারীদের বিপরীতে বাড়াতে হবে ইসলাম প্রচার, মানবসেবা, মক্তব প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি। পাশাপাশি মিশনারীদের অপতৎপরতাও তুলে ধরতে হবে জনগণের সামনে।

রচনাবলি

সদর সাহেব রহ. খৃস্টান মিশনারীদের বিরুদ্ধে কেবল সাংগঠনিক প্রকল্পই পরিচালনা করেননি, বরং তিনি নিজে তাদের বিরুদ্ধে কলমও ধরেছেন। তাদের লা-জওয়াব করে দিয়েছেন। এই বইগুলো কাজ করেছিল অস্ত্রের মতোন।

মিশনারীদের গোমর ফাঁস করে চারটি বই লিখেছিলেন তিনি।

১. পাদ্রীদের গোমর ফাঁক
২. আল্লাহর প্রেরিত ইঞ্জিল কোথায়?
৩. শত্রু থেকে হুঁসিয়ার
৪. চারি ইঞ্জিল

বিশেষ করে ইঞ্জিলের ব্যাপারে সদর সাহেব চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতেন, যদি তাদের ধর্ম সত্য হয়, আমার সামনে প্রমাণ করুক। আল্লাহর প্রেরিত ইঞ্জিল দুনিয়ার কোথাও নেই। তারা ইঞ্জিলের একজন হাফেজও দেখাতে পারবে না। ইঞ্জিলের আসল কপি কেউ দেখাতে পারলে আমি তাদের কথা মেনে নেব। এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছিল নারায়নগঞ্জের এক পাদ্রী। রোম থেকে এককপি ইঞ্জিল নিয়ে সে হাজির হয়েছিল সদর সাহেবের কাছে। কপিটি হাতে নিয়ে সদর সাহেব বলেছিলেন, এটাতো নকল ইঞ্জিল। আসল ইঞ্জিল তো সুরয়ানি ভাষায় নাজিল হয়েছে। এটাতো হিব্রু ভাষায় লেখা। পাদ্রী তখন পরাজিত হয়ে বলে, এটা ছাড়া আর কোনো কপি নেই।

মিশনারীবিরোধী কনফারেন্স

সদর সাহেব রহ. বিভিন্ন জনসভায় খৃস্টান মিশনারীদের বিরুদ্ধে কথা বলতেন। ১৯৬৪ সনে উত্তর বঙ্গের প্রাণকেন্দ্র রাজশাহীর সাহেব বাজার মসজিদকে কেন্দ্র করে এক বিশাল জনসভায় তিনি বলেন, বিশাল ঘন বসতিপূর্ণ পাকিস্তানের মুসলমানদের বিভ্রান্ত করিবার জন্য বিদেশী পাদ্রীগণ এই দেশকে প্রধান প্রচার কেন্দ্রে পরিণত করিয়াছে। তাহাদের কাছে কোন ধর্ম নাই। সেবা, শিক্ষা ও সাহায্যের নামে তাহারা সরল মুসলিম জনসাধারণের ঈমান নষ্ট করিতেছে। তাহাদের সংখ্যা বাড়াইয়া এই দেশকে খৃষ্টান দেশে পরিণত করিবার অপচেষ্টায় নামিয়াছে। কলিকাতা, গোবিন্দপুর, সুতানটি তিনটি পরগণা তাহারা শিক্ষার নামে কৌশলে দখল করিয়া অতঃপর কোম্পানীর রাজত্ব কায়েম করিয়া মুসলমানদের হাত হইতে এই দেশ নিয়া মুসলমানদের গোলামে পরিণত করিয়া পথের কাঙ্গাল বানাইয়া ছাড়িয়াছে। মুসলমানদের হাত হইতে জমিদারী ছিনাইয়া নিয়া হিন্দুদের দিয়া দিল আর মুসলমানদের উপর নির্যাতন চালাইতে লাগিল। মুসসানগণ পরাধীনতার জিঞ্জিরে আবদ্ধ হইয়া শ্বাসরূদ্ধকর অবস্থায় দিনাতিপাত করিতে লাগিল। বর্তমানে মুসলমানরা পাকিস্তান অর্জন করিয়াছে, কিন্তু এই পাকিস্তানকে খৃষ্টানদের অধীনে নিয়া মুসলমানদের পুনরায় গোলাম বানাইবার চেষ্টা চালাইতেছে।’

মাওলানা ফজলুর রহমান রাঙামাটির এক মিশনারীবিরোধী সভার স্মৃতিচারণ করে বলেন, পাদ্রীদের অপতৎপরতা বন্ধের জন্য রাঙ্গামাটিতে তবলছড়ি মসজিদ প্রাঙ্গনে বিরাট কনফারেন্স করেন সদর সাহেব। আমি ফজলুর রহমান ঐ কনফারেন্সের ব্যবস্থা করে হযরত সদর সাহেব, মাওলানা যাফর আহমাদ উসমানী এবং মুফতী দ্বীন মুহাম্মাদ খান সাহেবদেরকে নিয়ে তিন দিনের কর্মসূচী বাস্তবায়িত করি। আমি হিলট্রাক্সের ডি.সি সাহেবের নিকট দরখাস্ত করে কাপ্তাইয়ের নিকট শিলছড়িতে ষাট একর পাহাড়ী জমি কুরআন প্রচারের কেন্দ্র করার জন্য বন্দোবস্ত করে নিয়েছিলাম। সেখানে বিভিন্ন ফলের চাষ করবার কাজে পাহাড়ী লোকদের ব্যবহার করি । তাদের মাঝে ইসলামের সৌন্দর্য্য তুলিয়া ধরি। তাদের ছেলে মেয়েদের পড়াবার ব্যবস্থা করি।’

সদর সাহেব রহ. এভাবে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, রংপুর, রাজশাহী, যশোর, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলায় সফর করে তাবলিগুল কুরআনের শাখা গঠন করেন। তিনি খৃস্টান মিশনারীদের বিরুদ্ধে সজাগ করে তুলতে চান মুসলিম নাগরিকদের।

লালবাগের ছাত্রদের মিশনারী কর্যক্রম

সদর সাহেব রহ. জানতেন, মিশনারীরা সবচে বেশি মানুষের কাছাকাছি যায় চিকিৎসা ও সেবার মাধ্যমে। তাই তিনি লালবাগ মাদরাসার মুহতামিম থাকাকালে মাদরাসা ছাত্রদের মাধ্যমে একই কার্যক্রম শুরু করেন। ১৯৬২ সালের শুরু থেকেই দেয়া হয় কর্মী ট্রেনিং। লালবাগ মাদরাসা ফারেগ ছাত্রদেরকে দেয়া হয় হোমিও ট্রেনিং। পরে তাদেরকে ব্যাগ ও ঔষধ-পুস্তক দিয়ে পাঠানো হয় বিভিন্ন অঞ্চলে।

এই কর্মী ট্রেনিং এবং তাদের ব্যবস্থাপনার জন্য বিরাট অংক দান করেন জনাব ইয়াহইয়া বাওয়ানি। শিলছড়ির কুরআন একাডেমির দেখাশোনাও তিনি করতেন। চট্টগ্রামে তার হোটেল মেসকায় বিনাখরচে কর্মীদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতেন। তার নিজস্ব গাড়িতে মুবাল্লিগদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রাম, কাপ্তাই এবং রাঙামাটিতে যাতায়াত করার সুযোগ দিতেন। তিনি ১৯৭৩ সালে ইন্তেকাল করেন।

আগের সংবাদসামর্থ্য থাকলে মাদরাসা কর্তৃপক্ষের বেতন বাড়ানো উচিত: উবায়দুর রহমান খান নদভী
পরবর্তি সংবাদপ্রশ্নফাঁসের চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা : শিক্ষামন্ত্রী