বিস্ময়কর মেরাজ: মহান কুদরতের নিদর্শন

রাকিবুল হাসান:

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) যখন মক্কাবাসীর নির্যাতনে জর্জরিত, পাশে নেই প্রিয়তমা সঙ্গী হজরত খাদিজা (রা.) ও সাহায্যকারী চাচা আবু তালিব, তায়েফ থেকেও ফিরে এসেছেন খালি হাতে, নিদারুণ আশাহত এ সময়ে আল্লাহতায়ালা তাকে ডেকে নেন নিজের একান্ত সান্নিধ্যে। এক রাতে ‘বোরাকে’ চড়িয়ে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করান। এ অংশের নাম হলো ইসরা। এরপর মসজিদুল আকসা থেকে সপ্তমাকাশ পাড়ি দিয়ে সিদরাতুল মুনতাহায়, সেখান থেকে ‘রফরফে’ চড়িয়ে সত্তর হাজার নুরের পর্দা পার করে তাকে দান করেন দিদার। পুরো এ ঘটনাটিকে বলা হয় মেরাজ।

রাসূল (সা.)-এর মুজেজাগুলোর মধ্যে মেরাজ অন্যতম। মেরাজ বিষয়ে কুরআনের দুটি সূরায় আলোচনা এবং ৩১ জন সাহাবির কাছ থেকে বিশদ বিবরণ সংবলিত ৩২টি বর্ণনা রয়েছে। এর সঙ্গে রয়েছে ইমানের গভীরতম সম্পর্ক। কিন্তু অবিশ্বাসীরা এতে সব সময় খুঁজতে চেয়েছে বৈজ্ঞানিক যুক্তি। রাসূলের মুখে মেরাজের ঘটনা শুনে কাফেররা বলেছিল, ‘এক রাতে বিশ্ব চরাচর ভ্রমণ অসম্ভব।’ এ অবিশ্বাসের বিপরীতে হজরত আবু বকর (রা.) স্থাপন করেছিলেন, বিশ্বাসের দৃষ্টান্ত। তিনি বলেছিলেন, ‘রাসূল (সা.) বলে থাকলে তা সত্য। অসম্ভবের কিছু নেই।’

গতিবিজ্ঞান (Dynamics) মাধ্যাকর্ষণ তত্ত্ব (Law of Gravity) এবং আপেক্ষিক তত্ত্বের (Law of Relativity) সর্বশেষ বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনার আলোকে মেরাজের ঘটনাকে বিচার করলে, এর সম্ভাব্যতা সহজেই আমাদের কাছে বোধগম্য হয়ে ওঠে। বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতে পারেননি, মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে ভেদ করা সম্ভব। তাই পবিত্র মেরাজ নিয়ে অবিশ্বাসীদের প্রশ্ন ছিল, মহানবী (সা.) কীভাবে ‘মধ্যাকর্ষণ শক্তি’ অতিক্রম করলেন? তিনি কীভাবে অতি অল্প সময়ে এত দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে আবার ফিরে এলেন? কিন্তু সত্তরের দশকের বিজ্ঞানীরা চাঁদে পৌঁছানোর মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন, মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে ডিঙানো সম্ভব।

গতিবিজ্ঞানের (Dynamics) মতে, ঘণ্টায় ২৫ হাজার মাইল বেগে ঊর্ধ্বালোকে ছুটতে পারলে পৃথিবীর আকর্ষণ থেকে মুক্তি লাভ সম্ভব। এ গতিমাত্রাকে তারা মুক্তগতি (Escape velocity) নামে আখ্যায়িত করেন। আমরা জানি, রাসূলুল্লাহ (সা.) ‘বোরাক’ নামক এক অলৌকিক বাহনের ওপর বসে ঊর্ধ্বালোকে গমন করেছিলেন। আরবি শব্দ ‘বারকুন’ অর্থ বিদ্যুৎ। বোরাক বলতে মূলত বিদ্যুৎ থেকে অধিক গতিসম্পন্ন বাহনকে বোঝায়। অতএব, মাধ্যাকর্ষণ যুক্তি দ্বারা মেরাজের সম্ভাবনাকে নাকচ করা যায় না।

আপেক্ষিক তত্ত্বের প্রবক্তারা বলছেন, দর্শকের গতির তারতম্যে বস্তু বা ঘটনার স্থান নির্ণয়ে তারতম্য ঘটে। গতির মধ্যে সময় অস্বাভাবিকভাবে খাটো হয়ে যায়। এ তথ্যের আলোকে মিরাজের ঘটনা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বোরাক আরোহী রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর গতির মাত্রা এত বেশি ছিল, সব ঘটনাই পৃথিবীর দর্শকের কাছে কয়েক মুহূর্তের ঘটনা বলে মনে হলেও কালের প্রবাহে তা ছিল দীর্ঘসময়।

যুক্তিবিজ্ঞানের তত্ত্ব ও তথ্যগুলো প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। এগুলোর ওপর নির্ভর করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায় না। তাই কুরআন-হাদিস দ্বারা যেসব নিশ্চিত প্রমাণিত, তা নির্দ্বিধায় মেনে নেওয়া মুমিনের কর্তব্য। ইমান সুরক্ষিত রাখার এটিই একমাত্র পথ। মেরাজ এসব ঘটনার মধ্যে একটি।

আল্লাহতায়ালা তাঁর মহান কুদরত, অলৌকিক নিদর্শন, নবুয়তের সপক্ষে এক বিরাট আলামত, জ্ঞানীদের জন্য উপদেশ, মুমিনদের জন্য জ্বলন্ত প্রমাণ, হেদায়েত, নিয়ামত ও রহমত, ঊর্ধ্বালোক সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানার্জন, সৃষ্টিজগতের রহস্য উন্মোচন, স্বচক্ষে বেহেশত-দোজখ অবলোকন, পূর্ববর্তী নবী-রাসূলদের সঙ্গে পারস্পরিক সাক্ষাৎ ও পরিচিতি, সুবিশাল নভোমণ্ডল পরিভ্রমণ, মহাকাশ, আরশ, কুরসি, লওহ, কলম প্রভৃতি সামনাসামনি দেখিয়ে দেওয়ার জন্য তাঁর প্রিয় হাবিবকে নিজের একান্ত সান্নিধ্যে তুলে নিয়েছিলেন, যাতে তিনি প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়ে ইসলামের মর্মবাণী প্রচার করতে পারেন। তাই মেরাজের প্রকৃতি ও অনুপম শিক্ষা বিভিন্ন দিক দিয়ে অত্যন্ত গুরুত্ববহ ও তাৎপর্যপূর্ণ।

 

আগের সংবাদলালবাগে মুফতী ফজলুল হক আমিনীর জীবন শীর্ষক জাতীয় কনফারেন্স অনুষ্ঠিত
পরবর্তি সংবাদ১৪ বছরের কম বয়সীদের কাজে নিয়োগ দেওয়া যাবে না : মন্ত্রিসভা