মধুখালী হত্যাকাণ্ড : বিচার নিয়ে বাড়ছে অসন্তোষ

|| তাসনিফ আবীদ ||

গত ১৮ এপ্রিল মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লি গ্রামে একটি কালীমন্দিরে প্রতিমার কাপড়ে আগুন লাগার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অবস্থানরত শ্রমিকদের ওপর হামলা হয়। এতে উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের চোপেরঘাট গ্রামের কুরআনের হাফেজ দুই ভাই আশরাফুল (২১) ও আরশাদুল (১৫)কে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

মন্দিরে আগুন দেওয়ার গুজব ছড়িয়ে দুই ভাইকে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এ পর্যন্ত অন্তত ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান মধুখালী থানার অফিসার ইনচার্জ ।

তবে এ হত্যাকাণ্ডের ২০ দিন পেরোলেও এর সঙ্গে জড়িত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহ্ মো. আসাদুজ্জামান তপন ও ইউপি সদস্য অজিত সরকার ধরাছোঁয়ার বাইরে। বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে স্থানীয় সাধারণ মানুষ, সচেতন নাগরিক, নিহতের পরিবার ও আলেম-ওলামায়ে কেরামের মাঝে।

নিহত দুই ভাইয়ের বাবা শাহজাহান খান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা ভিডিওতে দেখেছি প্রথমে আমার ছেলেদের মারপিট শুরু করে চেয়ারম্যান তপন। এরপর অজিত মেম্বারসহ সবাই তাদের মারপিট করে। তপন এবং অজিত এখনো কেন গ্রেফতার হলো না তা আমরা বুঝতে পারছি না।

নিহতের চাচা মো. সাজ্জাদ খান কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার কলিজার টুকরোদেরকে কোন অপরাধে মারলো তা এখনো জানতে পারলাম না। ওই মন্দিরেই বা কারা আগুন দিলো তাও জানা গেল না। ঘটনা ঘটেছে আজ ২০ দিন, যারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এখনো তাদের ধরা গেল না। আসল অপরাধীরা আদৌ ধরা পড়বে কী না তা নিয়ে এখন আমাদের মনে সন্দেহের সৃষ্টি হচ্ছে।

নিহত দুজনের চাচাতো ভাই ইমরান খান বলেন, আমরা দ্রুত এ ঘটনার সঠিক বিচার চাই। এটা কোনো গণপিটুনির ঘটনা নয়, এটি পরিকল্পিত খুন।

অসন্তোষ প্রকাশ করে ফরিদপুরের স্থানীয় আলেমরা বলেন, ওসি সাহেব আমাদেরকে শান্ত থাকার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন এর সুষ্ঠু বিচার হবে। কিন্তু এতোদিন পেরোনোর পর তেমন কোনো উন্নতি না দেখায় আমরা হতাশ। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সাধারণ মানুষ ও সর্বস্তরের জনতার মাঝেও ক্ষোভ বিরাজ করছে।

স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, আবহকাল থেকে আমরা এদেশে সম্প্রীতির সাথে বসবাস করছি। কিন্ত সম্প্রতি মধুখালীর পঞ্চপল্লীতে ঘটে যাওয়া এ ঘটনা ইতিহাসের নির্মম, বর্বরোচিত ঘটনা। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সর্ব্বোচ্চ শাস্তি এখন সময়ের দাবি।

নিহতদের এলাকা সফর ও তাদের কবর জিয়ারত শেষে এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান বলেন, ঘটনার সময়ের ভিডিও, পরিবার ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এতটুকু বোঝা গিয়েছে, এতে ডুমাইন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও মেম্বার দুইজন সরাসরি জড়িত। আমরা প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানাব, বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত করে ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় হেফাজতে ইসলাম সারাদেশে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবে।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত তপন ও অজিতকে ধরিয়ে দিতে ফরিদপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। তাদের ব্যাপারে র‌্যাবপ্রধান বলেছেন, শিগ্গিরই তারা ধরা পড়বেন।

ফরিদপুর জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার জানান, এই ঘটনায় চেয়ারম্যান তপন ও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য অজিত বিশ্বাসের সম্পৃক্ততার যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদেরকে ধরিয়ে দিতে সহযোগিতা করলে উপযুক্ত পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণাও এসেছে। এ ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা ও তাদের পরিবারকে জীবিকা নির্বাহের জন্য খাদ্য সামগ্রী প্রদান ও কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তাই এ ঘটনাকে নিয়ে যাতে কোনো মহল বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের অপচেষ্টা চালাতে না পারে সেজন্য সবার সহযোগিতা চাই।

আগের সংবাদরাফায় হামলা করলে ইসরাইলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের হুঁশিয়ারি বাইডেনের
পরবর্তি সংবাদহামাসকে পরাজিত করতে প্রয়োজনে ইসরাইল একা লড়বে: নেতানিয়াহু