জহুরুল ইসলাম
বর্ণবাদের বিরুদ্ধে এক চিরায়ত দ্রোহের নাম ম্যালকম এক্স:
কৈশোরে পিতা হারানো এবং তারুণ্যে মাকে মানসিক হাসপাতালে রেখে আসার পর ম্যালকম এক্সকে বুক ভরা বেদনা নিয়ে নিদারুণ বাস্তবতার সঙ্গে মোকাবেলা করতে হয়েছে। মা-বাবাহীন জীবন এমনিতেই যেখানে অপাঙতেয়, সেখানে আরো কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল আমেরিকার পুঁতিগন্ধময় বর্ণবাদী পরিবেশ। এসবের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে জীবনের হিসেব অনেকটা কঠিনভাবে কষে নিয়েছিলেন ম্যালকম।
এছাড়াও শুরুতে বাধাহীন জীবনচর্চা, পরে শিয়াধর্মের দীক্ষা ও সবশেষে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ তার মস্তিষ্ক ও বোধে নানামাত্রিক পূর্ণতা এনে দিয়েছিল। সত্যানুসন্ধিৎসা ও জনতার মাঝে ঢেউয়ের মতো মিশে যাওয়া জীবন তার অভিজ্ঞতাকে করেছিল ঋদ্ধ। এ কারণেই ম্যালকমের দর্শন ও তার মুখনিঃসৃত বাণীর সঙ্গে বাস্তবতার বিলক্ষণ মিল দেখতে পাওয়া যায়।
আমরা এখানে তার কিছু নির্বাচিত বাণী উদ্ধৃত করছি :
১. “আমি জীবনের শুরুতেই এ শিক্ষা পেয়ে গেছি যে, নিশ্চুপ ব্যক্তি সবসময় অধিকার-বঞ্চিত হয়।”
২. “আমেরিকাকে সর্বাগ্রে ইসলামের পাঠ নিতে হবে। কারণ, ইসলামই একমাত্র ধর্ম, যেখানে বর্ণবাদ সমস্যার সমাধান রয়েছে।”
৩. “জগতে সবচেয়ে শক্তিশালী বস্তু হলো মিডিয়া। তারা যে কোন নির্দোষকে দোষী ও দোষীকে সাধু বানানোর ক্ষমতা রাখে। জনগণের মস্তিষ্কে কর্তৃত্ব করে বলেই মিডিয়ার এই ক্ষমতা।”
৪. “যদি কোন কিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে চাও, তবে অলসতা, অজুহাত ও মোক্ষম সময়ের অপেক্ষায় বসে থাকার প্রবণতা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নাও।”
৫. “স্বাধীনতা ও সুখ-শান্তি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। কোন ব্যক্তি যতক্ষণ স্বাধীন হতে পারবে না, ততক্ষণ সুখ-শান্তির দেখাও পাবে না।”
৬. “জাতীয়তাবাদ যেন সত্যের ব্যাপারে আমাদের অন্ধ করতে না পারে। ভুল সব সময়ই ভুল— তা যে করুক, যেভাবে করুক!”
৭. “আত্মরক্ষার প্রয়োজনে যে সহিংসতার সৃষ্টি হয়, তাকে আমি সহিংসতা বলি না। বরং তা জাতির জাগ্রত মস্তিষ্কের প্রমাণ।”
৮. “মার্কিন জনসমাজে আমি ছিলাম সর্বনিকৃষ্টদের একজন। কিন্তু যখন আমি আল্লাহ ও তার দেয়া ধর্ম ইসলামের দেখা পেয়েছি, আমার জীবনের রূপ পাল্টে গেছে।”
৯. “আজকের দিনে সব সংকট নিরসনের একমাত্র পথ হলো, সত্য ধর্ম (ইসলামের) নেতৃত্বে রাষ্ট্র পরিচালনা করা।”
১০. “ইউরোপে একজন নারীর বাহ্যিক সৌন্দর্য শেষ হলে সবাই তার প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলে। বিপরীতে ইসলামে শিক্ষা দেয় নারীর ভেতরগত সৌন্দর্যের দিকে দৃষ্টি দিতে।”
১১. “সন্তান জন্ম দিলেই পিতা হওয়া যায় না। জন্ম দিতে তো সবাই পারে। কিন্তু পিতা শুধু তাকেই বলে, যে সন্তানের জীবন গড়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে।”
১২. “তোমাকে ঘিরে থাকা বেষ্টনিকে যখন ভাঙতে পারবে, তখন থেকে তোমার সফলতার প্রথম কদম শুরু হবে।”
১৩. “স্বাধীনতা অর্জনের জন্য অপরের দ্বারস্থ হতে হলে কখনই তা অর্জন সম্ভব নয়। স্বাধীনতা এমন জিনিস, নিজ হাতেই যা অর্জন করে নিতে হয়।”
১৪. “আমরা মধ্যপন্থা অবলম্বনের পাশাপাশি যদি জাগতিক উৎকর্ষ ও আর্থিক মূল্যবোধের সমাহার ঘটাতে পারতাম, তবে দুনিয়ায় জান্নাতের দেখা পেয়ে যেতাম।”
১৫. “আমি আমার একাংশ পবিত্র মক্কা ফেলে এসেছি, অপরাংশ নিয়ে জীবনযাপন করছি।”
১৬. “একজন সাদাচামড়ার লোক নিজের প্রতি যে দৃষ্টিতে তাকায়, আমার দিকে যতক্ষণ সেভাবে না তাকাবে, ততক্ষণ আমি তাকে আমার প্রতি সদাচরণকারী বলতে পারি না।”
১৭. “আমাদের চোখের আলো কেড়ে নিয়েছে ওই সাদাচামড়ারা। অথচ তারাই আমাদের এখন দৃষ্টিহীন বলে গালি দেয়।”
১৮. “মানুষ যখন আল্লাহর হয়ে যায়, আল্লাহ তখন মানুষের হয়ে যান। আর প্রয়োজনের সময় এমন নিদর্শন পাঠান, যা আল্লাহর অস্তিত্বকে তার কাছে প্রমাণ করে।”
১৯. “জুলুমের সামনে মাথা নত করা ও আত্মরক্ষার প্রচেষ্টা না করা একপ্রকার জুলুম।”
২০. “জীবন কখনো সহজ হবে না। বরং তোমাকেই কঠিন হতে হবে।”
২১. “দুঃখ-হতাশা মানুষকে শুধু কাঁদাতেই পারে। আর জিদ তাকে দিন বদলের কর্মী বানায়।”
২২. “স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যদি মৃত্যুঝুঁকি নিতে না পারো, তবে ‘স্বাধীনতা’ শব্দটি তোমার অভিধান থেকে মুছে ফেলা উচিত।”
২৩. “তোমার চেয়ে অগ্রগামী কাউকে দেখলে মনে করবে, সে এমন কিছু করেছে, যা তুমি করতে পারোনি।”
২৪. “তুমি কি জানো, অনেক মহান ব্যক্তিকে ইতিহাস স্বীকৃতি দিয়েছে কবরের গর্তে তার হাড়গোড় মিশে যাওয়ার পর?”
২৫. “একটি হজের সফর আমার দৃষ্টিকে বিকশিত করেছে এবং চিন্তার পরিধিকে প্রশস্ত করেছে। ফলে দুই সপ্তাহে আমি সেসব বিষয় বুঝেছি, যা বিগত ঊনচল্লিশ বছরেও বুঝতে পারিনি।”
২৬. “তুমি তোমার উদারতাকে উন্মুক্ত বইয়ের পাতা বানিয়ে রেখো না। এখানে এমন অনেকে আছে, যারা তোমার একটি হরফ গ্রহণের যোগ্যতাও রাখে না।”
২৭. “অজুহাতের কোন মূল্য নেই— যখন একই ভুল তোমার দ্বারা বারবার হবে।”
২৮. “আস্থা-বিশ্বাস অনেকটা মানুষের মতো। বড় হতে অনেক সময় লাগে। কিন্তু শেষ হতে লাগে একমুহূর্ত।”
২৯. “চরম বোকা ওই ব্যক্তি, যে শত্রুকে বাদ দিয়ে সন্তানদের শিক্ষা দেয়।”
৩০. “তোমার কাজের কোন সমালোচনাকারী না থাকলে তোমার সফলতা অনিশ্চিত।”
(সূত্র : আরবি ওয়েবসাইট— ‘হিকাম ডটকম’)