‘সব বিষয়েই পারদর্শিতা হোক’ : দারুর রাশাদ খুলছে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়

রাকিবুল হাসান নাঈম:

দ্বীনি শিক্ষার সঙ্গে জেনারেল শিক্ষার সমন্বয়ের ক্ষেত্রে বেশ পরিচিত মিরপুরের মাদরাসা দারুর রাশাদ। দারুর রাশাদের মাধ্যমে আধুনিক শিক্ষিত শ্রেণিকে ইসলামের মহীয়ান ভাবধারার সাথে একীভূত করার স্বপ্ন দেখেন মাদরাসাটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মাওলানা মুহাম্মদ সালমান। এবার সেই স্বপ্নের উড়ানে যুক্ত হচ্ছে নতুন ডানা। উপমহাদেশের কিংবদন্তি আলেম মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভির নামে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করেছেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাদরাসা দারুর রাশাদে আগে থেকেই চলছে ইংরেজী শিক্ষিত কলেজ ইউনিভার্সিটি পড়ুয়াদের জন্য কুরআন হাদীস শিক্ষার ৫ বছর মেয়াদী কোর্স, নৈশ কোর্স, দাওয়াত তাবলীগের মেহনত, বয়স্ক কুরআন শিক্ষা, ইসলাহী মজলিস প্রভৃতি। এখানকার ছাত্ররা মাদরাসা শিক্ষার পাশাপাশি জেনারেল শিক্ষাটাও নিচ্ছে। অংশগ্রহণ করছে এসএসসি, এইচএসিসহ বিভিন্ন সরকারী কেন্দ্রীয় পরীক্ষায়। তারই ধারাবাহিকতায় মাওলানা মুহাম্মদ সালমান শুরু করেছেন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির কাজ।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় মাওলানা মুহাম্মদ সালমানের সঙ্গে। ইউনিভার্সিটি করার পরিকল্পনা কেন জানতে চাইলে তিনি ফাতেহকে বলেন, ‘আমাদের মাদরাসার ছাত্ররা এখানকার পড়া শেষ করে কিংবা না করেই প্রচলিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গিয়ে ভর্তি হয়। সেখানে দ্বীনি পরিবেশ থাকে না, দ্বীনি মেজাযের শিক্ষক থাকে না। ফলে শিক্ষার্থীরা অনেক সময় বিভ্রান্ত হয়ে যায়। স্রোতের তালে গা ভাসিয়ে তারাও অন্যদের সঙ্গে মিশে যায়। দ্বীনি শিক্ষার ফলটা তার মধ্যে থাকে না। তাই ভাবলাম, যদি তাদেরকে দ্বীনি পরিবেশেই ইউনিভার্সিটির পড়াশোনা করানো যায়, তাহলে আমাদের ছাত্রগুলো বিভ্রান্ত হবে না। এই স্বপ্ন নিয়েই মূলত ইউনিভার্সিটি গড়ার কাজে হাত দিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, অনেকে প্রশ্ন করেন, একজন ডাক্তারকে যদি ইঞ্জিনিয়ার হতে বলা না হয়, তবে আলেমকে কেনো জাগতিক জ্ঞান অর্জন করতে হবে? আমি বলি, একজন ইঞ্জিনিয়ার রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হবে না। তবে তার রাষ্ট্রের মৌলিক বিষয়ে জ্ঞান রাখতে হবে। ইঞ্জিনিয়ার ডাক্তার হবে না। তবে তাকে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পর্কে মৌলিক জ্ঞান রাখতে হবে। কিছু বিষয় আছে যেগুলো মৌলিক। যেমন, বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ গণিত, সাধারণ বিজ্ঞান। এগুলোকে বলা হয় কোর সিলেবাস যা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকলের জন্য বাধ্যতামূলক। আমরা বলি আলেমরা অন্তত এতটুকু জানুক। আল্লামা রফি উসমানি বলেছেন, আলেমদের পাঁচটি বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে এখন। তারমধ্যে মেডিকেল, ব্যাংকিং, শিক্ষা ও আইন আদালত অন্যতম। এসব ক্ষেত্রে এখন জেনারেল লাইনের লোকজনই বড়। তাই আলেমদের তাদের কাছে মাথানত করে থাকতে হয়। এর উত্তরণ ঘটাতে হলে জেনারেল শিক্ষাটাও লাগবে।

ইতোমধ্যেই সাভারে ত্রিশ শতাংশ জায়গায় ইউনিভার্সিটির কনস্ট্রাকশনের কাজ প্রাথমিকভাবে শুরু হয়েছে। তবে তা নিতান্তই ছোট করে। একটি টিনশিড বিল্ডিং নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। সেখানে আপাতত নৈশ কোর্স চলছে। ইউনিভার্সিটির অনুমোদনের কাজ শুরু হয়েছে উল্লেখ করে মাওলানা সালমান বলেন, ‘আমরা ইউনিভার্সিটির প্রাথমিক পরিকল্পনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি। অনুমোদনের জন্য চেষ্টা করছি। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছে।’

তবে কী কী ফেকাল্টি নিয়ে ইউনিভার্সিটি শুরু হবে, তা জানাননি ইউনিভার্সিটির এই স্বপ্নদ্রষ্টা। তিনি বলেন, ‘পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। আরও চার-পাঁচ বছর লাগতে পারে পুরোটা সামনে আসতে। তবে মাদরাসা পড়ুয়ারাই এখন ভর্তি হতে পারবে, এমন নয়। বরং জেনারেল পড়ুয়ারাও এই ভার্সিটিতে ভর্তি হতে পারবেন বলে জানান মাওলানা সালমান।

অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, আলেম লেখক ও গবেষক আ.ফ.ম খালিদ হোসাইন এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি ফাতেহকে বলেন, ‘মাওলানা সালমান সাহেবের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়।’ তবে ইউনিভার্সিটির অনুমোদন পেতে বেশ ঝামেলা পোহাতে হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিদগ্ধ এই অধ্যাপক।

আগের সংবাদনোয়াখালী গ্রেফতার কাণ্ড : ধর্মঅবমাননা-বিশ্বাসের সীমা কোথায়?
পরবর্তি সংবাদফুটবল বিশ্বকাপ সামনে রেখে কাতারে ইসলামিক আর্ট মিউজিয়াম চালু