
ফাতেহ ডেস্ক:
দেশে ১১ লাখ পথশিশু কোনো না কোনো অপরাধে জড়িত। তাদের প্রায় অর্ধেক মাদকাসক্ত। পুনর্বাসন না করলে এই পথশিশুদের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। এই তথ্য উঠে এসেছে পুলিশের এক গবেষণায়।
পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, প্রায় এক বছর ধরে পুলিশ পথশিশুদের নিয়ে গবেষণা করেছে। ওই গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ১১ লাখ পথশিশু কিছু না কিছু অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত; বিশেষ করে মাদক কারবার, চুরি ও ছিনতাইয়ে জড়িত তারা। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও বরিশালে অপরাধ হচ্ছে বেশি।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ঢাকার ২২৯টি স্থানে পথশিশুদের অপরাধ বেশি হচ্ছে। তাদের নিয়ন্ত্রণ করে এলাকার কিছু ‘বড় ভাই’। ওই সব ‘বড় ভাইদের’ তালিকা করার কাজ চলছে।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, পথশিশুদের প্রায় ৪৪ শতাংশ মাদকাসক্ত। ঢাকা বিভাগে মাদকাসক্ত শিশুর প্রায় ৩০ শতাংশ ছেলে এবং ১৭ শতাংশ মেয়ে। মাদকাসক্ত ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সী ছেলে এবং মেয়েশিশুরা শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রচণ্ড ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। মেয়ে পথশিশুরা যৌনকর্মেও জড়িয়ে পড়ছে।
এ ছাড়া ৪১ শতাংশ পথশিশুর ঘুমানোর কোনো বিছানা নেই, ৪০ শতাংশ গোসল করতে পারে না, ৩৫ শতাংশ খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে, ৫৪ শতাংশ অসুস্থ হলে দেখার কেউ নেই এবং ৭৫ শতাংশ অসুস্থ হলে চিকিৎসকের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারে না। ৩৪ দশমিক ৪ শতাংশ শিশু কোনো স্থানে সর্বোচ্চ ছয় মাস অবস্থান করে। তাদের মধ্যে ২৯ শতাংশ শিশু আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কারণে স্থান পরিবর্তন করে। আর নিরাপত্তাকর্মীদের কারণে স্থান ত্যাগ করে ৩৩ শতাংশ শিশু। খোলা আকাশের নিচে ঘুমানোর পরও তাদের মধ্যে ৫৬ শতাংশ শিশুকে মাসিক ১৫০ থেকে ২০০ টাকা নৈশপ্রহরী ও মাস্তানদের দিতে হয়।
পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, পথশিশুদের ৮৫ শতাংশই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মাদকে আসক্ত। ঢাকার অন্তত ২২৯টি স্পট রয়েছে, যেখানে ৯-১৮ বছর বয়সী শিশুরা মাদক সেবন করে। তা ছাড়া মিছিল-মিটিং, বিভিন্ন রাজনৈতিক শোডাউন কিংবা হরতালের পিকেটিংয়ে পথশিশুদের ব্যবহার করা হয়। শোডাউন ছাড়াও পিকেটিং, ভাঙচুর কিংবা ককটেল নিক্ষেপের মতো বিপজ্জনক কাজে ব্যবহার হচ্ছে ওরা।
পুুলিশের গবেষণায় পথশিশুদের দুর্দশা তুলে ধরার পাশাপাশি তাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশও করা হয়। বলা হয়, তাদের সংশোধন করতে হলে আটক করে ভবঘুরে পাঠানো দরকার। পাশাপাশি দেশের সব জেলার পুলিশ সুপারদের (এসপি) পথশিশুদের নিয়ে আলাদাভাবে কাজ করার জন্য তাগিদ দেওয়া হয়েছে।