চীনের নিউজি মসজিদ : আরব্য এবং চীনা নির্মাণশৈলীর অপূর্ব সমন্বয়

চীনের নিউজি মসজিদ : আরব্য এবং চীনা নির্মাণশৈলীর অপূর্ব সমন্বয়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

চীনের পেইচিংয়ের কাউ স্ট্রিটে অবস্থিত নিউজি মসজিদকে বলা হয় চীনের সবচেয়ে পুরনো এবং গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ। মসজিদটি প্রথম নির্মিত হয় ৯৯৬ সালে। বর্তমানে ৬ হাজার স্কয়ার মিটার বা দেড় একর জায়গাজুড়ে এর অবস্থান। মসজিদের বাইরের গঠন দেখতে চাইনিজ স্থাপনার মতো হলেও এটি দেখতে বেশ অদ্ভুত এবং বেশ প্রাচীন মনে হয়। তবে, ভবনের ভেতরটা দেখতে আরব্য ঘরানার। পেইচিংয়ের সবচেয়ে বড় মসজিদ এই নিউজি মসজিদ। চীনের রাজধানীতে বাস করা সব মুসলিমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান হলো এই মসজিদ।

আরব্য এবং চীনা নির্মাণশৈলীর মিশ্রণে নির্মিত নিউজি মসজিদটি দেখতেও বেশ আকর্ষণীয়। ইতিহাস থেকে জানা যায়, কাউ স্ট্রিটের এই মসজিদটি লিয়াও সাম্রাজ্য (৯১৬-১১২৫) চলাকালীন প্রথম নির্মিত হয়। ত্রয়োদশ শতকে মঙ্গোলীয়রা পেইচিং জয় করার পর মসজিদটি ভেঙে দেয়। পরে ১৪৪২ সালে এটি পুনরায় স্থাপন করা হয়। বর্তমানে যে মসজিদ ভবন রয়েছে সেটির জায়গা বৃদ্ধি করা হয় সম্রাট কাংশির (১৬৬১-১৭২২) সময়ে। এরপর ১৯৫৫, ১৯৭৯ এবং ১৯৯৬ সালে মসজিদটি তিনবার সংস্কার করা হয়। সম্প্রতি আরও একবার আড়াই লাখ ডলার ব্যয়ে মসজিদের সংস্কার করা হয়েছে।

Related image

মসজিদের প্রধান ভবনগুলোর নাম হলো- মুসলিম হল, মুন হাউজ, মিনার বিল্ডিং, ট্যাবলেট প্যাভিলিয়ন এবং বাথরুম। মসজিদটি মক্কামুখী। আকর্ষণীয় গঠন এবং কিছুটা ব্যতিক্রম হওয়ায় এই মসজিদ দেখতে অনেক দর্শনার্থী আসেন। তবে দর্শনার্থীরা শুধু মসজিদের আশপাশের এলাকা আর বারান্দা, গলিতে ঘুরে বেড়াতে পারেন। নামাজের জন্য মূল ঘরে প্রবেশাধিকার শুধু মুসলমানদের।

স্থাপত্যশৈলী আর রঙের মিশ্রণের জন্য মসজিদটি অন্য সব মসজিদ থেকে একদম আলাদা। মসজিদের গায়ে আরব্য অনেক চিহ্ন তো আছেই, ছাদে আছে ড্রাগন আকৃতির স্তম্ভ। পবিত্রতার প্রতীক বলে মেঝের রঙের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে সাদা রংকে। মসজিদের ছাদ আর নকশায় যুক্ত করা হয়েছে চাইনিজ নকশা। অসংখ্য রঙের সমাহার এই নকশাগুলো। মূলত প্রতিটি রঙে চাইনিজদের পছন্দকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি দেয়াল রং করা হয়েছে উজ্জ্বল লালে এবং স্তম্ভগুলোতে দেওয়া হয়েছে সবুজ রং। কিছু স্তম্ভের মাঝে লেখা আছে ‘হ্যাপি ডোর’। এটি দেখতে মূলত প্রবেশমুখের (তোরণ) মতো। এই প্রবেশমুখগুলো আবার আরব্য শৈলীতে নির্মিত।

Related image

মসজিদ প্রাঙ্গণে একটি বাগানের মাঝখান দিয়ে হেঁটে ছোট একটি আঙিনায় প্রবেশ করলে দেখা যায় বেশ কিছু ভবন। আঙিনায় অনেকগুলো গাছ আছে। আঙিনার পাশে মূল হলে ‘চাঁদ দেখা’র জন্য একটি টাওয়ার রয়েছে। এটি দেখতে দোতলা মন্দিরের মতো, তবে মিনারের সঙ্গে এর মিল নেই। এখানে আরও আছে পড়াশোনা করার জন্য আলাদা কক্ষ। আঙিনায় সাইকেল পার্ক করে রাখার জন্যও জায়গা আছে।

মসজিদটি অবস্থিত পেইচিংয়ের জুয়ানু জেলায়। এই জায়গাটিতে প্রায় ৩ লাখেরও বেশি মুসলিমের বাস। পেইচিংয়ের কাউ স্ট্রিট মুসলমানদের সবচেয়ে বড় রাস্তা। বেশিরভাগ রাস্তার পাশেই আছে বড় বড় ভবন। এই এলাকায় মুসলিম রেস্তোরাঁর সংখ্যাও অনেক বেশি।

আগের সংবাদবাংলাদেশে পুশইন বন্ধে জোরালো কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করুন : ইসলামী আন্দোলন
পরবর্তি সংবাদরোহিঙ্গা ইস্যুতে সৌদি সবসময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে : সৌদি সিজিএস