ভাস্কর্য ও মূর্তি নিয়ে শীর্ষ উলামায়ে কেরামের ফতোয়া প্রকাশ

ফাতেহ ডেস্ক:

মূর্তি-ভাস্কর্য স্থাপন হারাম বলে ফতোয়া দিয়েছেন দেশের শীর্ষ উলামায়ে কেরাম। আজ বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুর ৩টায় ঢাকার রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে দেশের শীর্ষ উলামা মাশায়েখগণ এক সংবাদ সম্মেলনে এ ফতোয়া প্রকাশ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরার মুফতি ইনামুল হক।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, মুফতিগণ সর্বসম্মতিক্রমে এই প্রশ্নের যা রায় দেন তা হলো, কোরআন ও হাদীসের আলোকে মানুষ বা অন্য যে কোন প্রাণীর ভাস্কর্য-মূর্তি নির্মাণ, স্থাপন, সংরক্ষণ ও পূজার উদ্দেশ্যে না হলেও সন্দেহাতীতভাবে নাজায়েয, স্পষ্ট হারাম এবং কঠোরতর আযাবযোগ্য গুনাহ্। আর যদি পূজার উদ্দেশ্যে হয় তাহলেতো স্পষ্টই শিরক। প্রাণীর ভাস্কর্য ও পূজার মূর্তির মাঝে শরিয়তের দৃষ্টিকোণে হারাম ও নিষিদ্ধ হওয়ার দিক দিয়ে কোন পার্থক্য নেই।

এর স্বপক্ষে কুরআনের আয়াত এবং হাদীস তুলে ধরা হয় ফতোয়ায়।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, কিছু কিছু লোক যারা প্রাণীর ভাস্কর্য ও মূর্তির মাঝে পার্থক্য করে প্রাণীর ভাস্কর্যকে বৈধ করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই বলে যে ভাস্কর্য মূর্তি এক নয়, তাদের দাবি শরিয়া বিধানের দিক থেকে তো এক নয়-ই এমনকি অভিধানিকভাবেও ভুল। কারণ অভিধানিকভাবে প্রাণীর ভাস্কর্য আর মূর্তির মাঝে কোন বৈপরীত্য নেই। ভাস্কর্যের প্রকৃত অর্থ দেখে নিতে পারেন, বাংলা একাডেমী, ইংলিশ বাংলা ডিকশনারি, সংসদ বাংলা অভিধানের মাঝে।

প্রাণীর ভাস্কর্যকে বৈধ করতে গিয়ে এই লোকগুলো যে আয়াতটি পেশ করে তা হলো, সুরা সাবার ১৩নং আয়াত। এতে বলা হয়েছে:یَعۡمَلُوۡنَ لَہٗ مَا یَشَآءُ مِنۡ مَّحَارِیۡبَ وَتَمَاثِیۡلَ وَجِفَانٍ کَالۡجَوَابِ وَقُدُوۡرٍ رّٰسِیٰتٍ ؕ তারা সোলায়মানের ইচ্ছানুযায়ী দুর্গ, ভাস্কর্য, হাউযসদৃশ বৃহদাকার পাত্র এবং চুল্লির উপর স্থাপিত বিশাল ডেগ নির্মাণ করত। (সুরা সাবা,আয়াত ১৩)।

এই আয়াতে বর্ণিত تماثيل তথা ভাস্কর্য নির্মাণের কথাকে কেন্দ্র করে যারা প্রাণীর ভাস্কর্যকে বৈধ বলে দাবি করে করে। তারা মুলত এ আয়াতের বিশুদ্ধ তাফসিরকে পাশ কাটিয়ে যায়। কারণ বিশুদ্ধ তাফসিরে উক্ত আয়াতে বর্ণিত ভাস্কর্য দ্বারা উদ্দেশ্য হলো নিষ্প্রাণ বস্তুর ভাস্কর্য। তবে অনেকে এটাকে প্রাণীর ভাস্কর্য বলে দাবি করেছেন। কিন্তু তারা একথাও স্পষ্ট করছেন যে, সুলাইমান আ. এর যুগে তা বৈধতা থাকলেও পরবর্তিতে শেষ নবী সা. এর শরিয়তে বিশুদ্ধ হাদিসে প্রাণীর ভাস্কর্যকে কঠোরভাবে নিষেধ করার মাধ্যমে উক্ত বৈধতা রহিত হয়ে গেছে। যেমন ভাই বোনের পরস্পরের বিয়ে হযরত আদম আঃ এর যুগে বৈধতা ছিলো,আমাদের শরিয়তে সেটা রহিত হয়ে গেছে। (তাফসিরে কুরতুবি ১৪/২৭২, আলবাহরুল মুহিত ৮/৫৫২, ফাতহুল বারী ৬/৪৬৭, ফাতহুল মুলহিম ৪/৩৫)

ভাস্কর্যের পক্ষে আরেকটি দলিল এভাবে পেশ করা হয় যে, আলফ্রেড গিয়োম তার সীরাতে ইবনে হিশামের ইংরেজি অনুবাদে এভাবে উল্লেখ আছে যে, মক্কা বিজয়ের সময় মহানবি সা. ৩৬০টি মূর্তি ভাঙ্গার অনুমতি দিলেও মাঝে থাকা মেরির ছবি দেখে তাতে হাত রেখে তিনি বলেন,এটা তোমরা ভেঙ্গো না। এটি একটি অসত্য বর্ণনা। নবী সা. এর পবিত্র সীরাত যাদের অধ্যায়ে এসেছে এবং প্রাণীর প্রতিকৃতি তৈরী ও তার বিধানের ব্যাপারে যারা অবগত আছেন তারা এই মিথ্যাচার সহজেই উপলব্ধি করতে সক্ষম। কেননা বিশুদ্ধ হাদীস সমূহের দ্বারা কাবা শরিফের সকল মূর্তি অপসারণ ও প্রতিকৃতি মুছে ফেলার কঠোর নির্দেশ প্রমাণিত রয়েছে।

এর স্বপক্ষে ফতোয়ায় কয়েকটি হাদীস তুলে ধরা হয়।

লিখিত বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের সুযোগ দেয়া হয় ফতোয়া সম্পর্কিত প্রশ্ন করার জন্য। কিন্তু কয়েকজন সাংবাদিক অজ্ঞতাপ্রসূত এবং অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করায় তাদের কিছু প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয় এবং কিছু প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়নি।

ফতোয়াপ্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আল্লামা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, আল্লামা আব্দুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুর, মুফতী আরশাদ রহমানী বসুন্ধরা, আল্লামা আবুল কালাম মুহাম্মদপুর, মুফতী মাহফুজুল হক, মাও. জুনাইদ আল-হাবীব, মুফতী বাহাউদ্দীন যাকারিয়া, মুফতী মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, মাও. খোরশেদ আলম কাসেমী, মাও.খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবীসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় উলামা মাশায়েখ ও মুফতিগণ।

আগের সংবাদগত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত ২৩১৬, মৃত ৩৫
পরবর্তি সংবাদ‘লাভ জিহাদ আইনে’ ভারতে প্রথম মুসলিম যুবক গ্রেফতার