
ফাতেহ ডেস্ক:
কথিত ‘গণকমিশন’ কর্তৃক দেশের সম্মানিত ১১৬ জন আলেম ও ১০০০ মাদরাসার বিরুদ্ধে বানোয়াট শ্বেতপত্র এবং ইসলাম ও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত প্রতিরোধে করণীয় শীর্ষক ওলামা সম্মেলন আয়োজনে প্রশাসনিক বাধার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২ জুন) ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান।
দেশের বৃহত্তর ধর্মপ্রাণ জনগোষ্ঠীর ধর্ম, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি রক্ষা ও নাগরিকদের মানবিক মর্যাদা সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে বেশকিছু দাবীও তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
ওলামা-মাশায়েশ আইম্মা পরিষদের দাবী সমূহ:
১। অবিলম্বে ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটিকে জনতার কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে শ্বেতপত্র প্রত্যাহার করে নিতে হবে।
২। এই শ্বেতপত্রের সাথে জড়িত সকলের রাজনৈতিক গোপন অভিলাষ প্রকাশ ও ব্যবস্থা নিতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে।
৩। ঘাদানিকের অর্থের উৎস খুঁজে বের করে তা জনগণের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে।
৪। এই শ্বেতপত্র স্পষ্টভাবেই সংবিধানের মৌলিক নীতির বিরোধিতা করেছে। ফলে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার কার্যক্রম শুরু করতে হবে।
৫। এই শ্বেতপত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে মিথ্যাচার করেছে এবং মানবিক মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ফলে ঘাদানিকের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে।
৬। এই শ্বেতপত্রে মাঠ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। তাদের এই মিথ্যাচারের তদন্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
৭। গণকমিশন নিজ থেকে ক্ষমা চেয়ে শ্বেতপত্র প্রত্যাহার না করলে এই শ্বেতপত্র রাষ্ট্রকে বাজেয়াপ্ত করতে হবে।
৮। এই শ্বেতপত্রে স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের যতগুলো ঘটনা ঘটেছে, সবকিছুর পেছনে দেশের ইসলামী রাজনৈতিকে, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, মাদরাসা শিক্ষা এবং আলেম-ওলামাদেরকে একতরফাভাবে দায়ী করা হয়েছে। অতএব, স্বাধীনতা পরবর্তী দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের যতগুলো ঘটনা ঘটেছে, সবগুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। একটি শক্তিশালী বিচারবিভাগীয় কমিশন গঠন করে সংখ্যালঘু নির্যাতন, সংখ্যালঘুদের সম্পদ অবৈধভাবে ভোগ-দখল এবং সংখ্যালঘু সংক্রান্ত সকল অভিযোগ নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদেরকে চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে এবং তদন্ত রিপোর্ট জনগণের সামনে প্রকাশ করতে হবে।
৯। যারা বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উপস্থাপন করে দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করতে চায়, তাদের কার্যক্রমকে তদন্তের আওতায় এনে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
১০। দেশের সম্মানিত আলেমদের বিরুদ্ধে হয়রানীমূলক সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
১১। কারাবন্দী সকল মজলুম আলেমদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।
১২। ওয়াজ মাহফিল নিছক একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান। তাই সারা দেশে ওয়াজ মাহফিল সকল প্রশাসনিক বিধি নিষেধের আওতামুক্ত রাখতে হবে।
১৩। সারা দেশের আলেম ওলামা ও মাদরাসার বিরুদ্ধে সকল প্রকার হয়রানী বন্ধ করতে হবে।
১৪। আল্লাহ, রাসূল (স.), ধর্মীয়-রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও সমাজে সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে মানহানিকর শব্দের ব্যবহার নিষিদ্ধে আইন করতে হবে এবং তার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
১৫। দুর্নীতিমুক্ত ও নৈতিকতা সমৃদ্ধ সুনাগরিক গড়ে তুলতে সারা দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মুসলিম সন্তানদের জন্য নামাজ শিক্ষা, কুরআন শিক্ষা এবং রাসূল (স.)-এর জীবনী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
এসময় লিখিত বক্তব্যে সংগঠনটির পক্ষ থেকে নতুন কর্মসূচি প্রদান করা হয়।
কর্মসূচিসমূহ:
১। গণবিরোধী ‘গণকমিশনের’ কথিত শ্বেতপত্রের মিথ্যাচার ও অসৎ উদ্দেশ্যের মুখোশ উম্মোচন করে বস্তুনিষ্ঠ শ্বেতপত্র প্রকাশ করা।
২। দেশের সকল মসজিদ ও জনসম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানে কথিত গণকমিশনের মিথ্যাচার ও দেশবিরোধী কর্মকান্ডের ব্যাপারে সচেতনতা তৈরি করা।
৩। গণকমিশন ও ঘাদানিকের মিথ্যাচার ও দেশবিরোধী কার্যক্রম সম্পর্কে জন সচেতনতা তৈরির লক্ষে গণ-মতবিনিময় সভাসহ জন সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা।
৪। দেশের সকল জেলা/মহানগর, থানা/উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে তৃণমূল ওলামা সম্মেলনের আয়োজন করা।
৫। এরপরও কথিত শ্বেতপত্র ও গণকমিশনের বিষয়ে সরকার কোন উদ্যোগ গ্রহণ না করলে রাজধানী ঢাকায় ওলামা-মাশায়েখ ও সূধী সমাবেশ করা হবে।