![rashter jonno alem](https://fateh24.com/wp-content/uploads/2022/10/rashter-jonno-alem-696x371.jpg)
হুসাইন আহমাদ
কোনো বিষয়ে পড়াশোনা করে নিজস্ব চিন্তা দিয়ে কিছু লেখা আর সেই বিষয়ে অন্যের চিন্তাধারার ব্যাখ্যা দেওয়া— দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন কাজ। দুয়ের মধ্যে দ্বিতীয়টিই বেশ ঝুকিপূর্ণ ও কঠিন। কারণ, এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সম্পর্কে বিস্তর জানতে হয়। স্পষ্ট বুঝে নিতে হয় তার চিন্তা-চেতনা ও মতাদর্শকে। বিষয়বস্তুর সাথে তার দৃষ্টিভঙ্গির সঠিক ব্যাখ্যাটাও নিশ্চিত করতে হয়। ফলে রাষ্ট্রের সাথে আলেমদের সম্পর্ক কেমন হবে, এ ব্যাপারে শায়েখ ইউসুফ কারজাবী রহিমাহুল্লাহ এর দৃষ্টিভঙ্গি কি, তা নিখুঁতভাবে তুলে ধরা বেশ কঠিন। তবুও তাঁর লিখনী ও সাক্ষাৎকার থেকে যেটুকু জেনেছি, সংক্ষিপ্ত কয়েকটি আলোচনার মধ্য দিয়ে তা উপস্থাপন করার চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ!
এক. উলুল আমর ও তাদের আনুগত্য
আল্লাহ তা’য়ালা কুরআনুল কারিমে উলুল আমরের আনুগত্য করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِوَأُولِي الْأَمْرِ مِنكُمْ হে ইমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো এবং রাসুলের আনুগত্য করো এবং (আনুগত্য করো) তোমাদের মধ্যে কর্তৃত্বের অধিকারীদের। (সুরা নিসা–৫৯) কিন্তু আয়াতে উল্লিখিত উলুল আমর দ্বারা উদ্দেশ্য কারা? আল্লাহ কাদের আনুগত্য করতে নির্দেশ দিয়েছেন? এর উদ্দেশ্য নিরূপণ নিয়ে সাহাবি, তাবেয়ি ও মুজতাহিদ ইমামগণের যুগ থেকেই মতবিরোধ চলে আসছে। একপক্ষ বলেন, উলুল আমর হলেন ক্ষমতাশীল শাসকগণ। অপরপক্ষ বলেন, আলেমগণ। কিন্তু তৃতীয় আরেকটি পক্ষ বলেন, শাসক এবং আলেম উভয়ই উদ্দেশ্য। অর্থাৎ শাসকের আনুগত্য করা হবে শাসন কার্যে; যতক্ষণ না তিনি পাপ কাজের নির্দেশ দেন। আর আলেমের আনুগত্য করা হবে দীন সম্পর্কিত বিষয়ে; যতক্ষণ না তাঁরা কুরআন সুন্নাহর বাইরে যান।
শায়েখ কারজাবী রহ. তৃতীয় এই মতটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন এবং এর স্বপক্ষে যুক্তি পেশ করেছেন যে, উক্ত আয়াতে আল্লাহ পাক ‘উলুল আমর’ একবচনে না এনে বহুবচনে এনেছেন। এর অর্থ হল, কর্তৃত্বের অধিকারী একক কোনো ব্যক্তি হবেন না, তারা হবেন একাধিক। তাঁর এই যুক্তির পক্ষে সুরা নিসার ৮৩ নাম্বার আয়াত উদ্ধৃতি করেন, …و لو رَدُّوهُ إِلَى الرَّسُولِ وَإِلَى أُوْلِي الأَمْرِ مِنْهُمْ لَعَلِمَهُ الَّذِينَ يَسْتَنْبِطُونَهُ مِنْهُمْ… الآية “অথচ যদি তারা রাসুলের কাছে কিংবা ‘উলুল আমর’ এর কাছে এসব সংবাদ পৌঁছে দিত, তাহলে তাদের ইসতেম্বাতকারী লোকেরা সংবাদগুলোর সত্যতা বুঝতে পারত।” এই আয়াতে উলুল আমর দ্বারা শাসকদের নয় বোঝানো হয়েছে মুজতাহিদ আলেমদের। এ থেকে স্পষ্ট যে, উলুল আমর দ্বারা শুধু শাসক উদ্দেশ্য নয়, আলেমগণও উদ্দেশ্য। (আল উলামা ওয়াল হুকামা মিন বারনামাজিশ শারিয়াতি ওয়াল হায়াত, আল জাজিরা, ২৪- ০৪- ২০১২)
দুই. উম্মাহর কল্যাণকামিতা ও আলেমগণের কর্তব্যের পরিধি
উম্মাহর কল্যাণকামিতা কি? কারজাবী বলেন, ‘আমর বিল মারুফ ও নাহি আনিল মুনকার’ অর্থাৎ সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ হল উম্মাহর কল্যাণকামিতা। ইসলামের অবশ্যপালনীয় মৌলিক কর্তব্যের মধ্যে এটি হল উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান। মূলত এই গুণটির কারণেই আল্লাহ তায়ালা উম্মত মুহাম্মাদিকে শ্রেষ্ঠ ও কল্যাণকামী জাতি হিসেবে ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তা’য়ালা কুরআনুল কারিমের বিভিন্ন জায়গায় মুমিনের মৌলিক গুণাবলির বর্ণনা দিয়েছেন। সেখানে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধকে মুমিনের গুরুত্বপূর্ণ গুণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং এই কর্তব্য পালন থেকে বিরত থাকার কারণে আল্লাহ তায়ালা পূর্ববর্তী আহলে কিতাবদের নিন্দা করেছেন। সুতরাং সকল মুসলমান আল্লাহর পক্ষ থেকে ‘আমর বিল মারুফ ও নাহি আনিল মুনকার’ এর জন্য আদিষ্ট। এটাই হল উম্মাহর মধ্যে পরস্পরের প্রতি কল্যাণকামিতা। আর মুসলিম শাসকগণ উম্মাহর বাইরে নন। আমর বিল মারুফ ও নাহি আনিল মুনকারের মাধ্যমে উম্মাহর আলেমগণ তাঁদেরও কল্যাণকামিতা করবেন।
এই কর্তব্য পালনের পরিধি কতটুকু? রাসুলুল্লাহ সা. এর হাদিস থেকে তা নির্ণয় করা যায়। রাসুল সা. বলেন, তোমাদের কেউ যখন কোন অন্যায় দেখে সে যেন তা হাতের সাহায্যে পরিবর্তন করে। যদি তা করতে অপারগ হয় তাহলে যেন কথার মাধ্যমে পরিবর্তন করে। যদি তাতেও অপারগ হয় তাহলে যেন অন্তরে পরিবর্তনের ইচ্ছা রাখে। আর এটাই হল ইমানের দুর্বলতম স্তর। (মুসলিম)
শায়েখ কারজাবী রহ. বলেন, বর্ণিত এই হাদিস থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, কোনো মুমিন ব্যক্তির সামনে খারাপ কাজ হলে তিনি নিষ্ক্রিয় থাকতে পারেন না। তার প্রতিরোধ, প্রতিবিধান এবং নিতান্ত অপারগতার ক্ষেত্রে অন্তরের ইচ্ছা করা তাঁর ওপর ওয়াজিব হয়ে পড়ে৷ তবে এই ওয়াজিব পালনের জন্য রয়েছে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি শর্ত, যা হাদিসের ভাষ্য থেকে উৎসারিত হয়—
ক. সন্দেহাতীতভাবে কাজটি খারাপ ও শরিয়ত কর্তৃক নিষিদ্ধ হতে হবে।
খ. কাজটি প্রকাশ্যে করতে হবে।
গ. শক্তিবলে পরিবর্তন করার ক্ষেত্রে শক্তি প্রয়োগের ক্ষমতা ও টিকে থাকার সক্ষমতা থাকতে হবে।
ঘ. এরচেয়ে বড় ক্ষতি সৃষ্টি হওয়ার আশংকা না থাকতে হবে।
এই চারটি শর্ত উপস্থিত থাকলে সক্ষমতার ভিত্তিতে স্তর ভেদে অন্যায়ের প্রতিবিধান, প্রতিবাদ বা মনের ইচ্ছা থাকা আবশ্যক।
মুনকার ও হারাম কাজ যখন রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অথবা রাষ্ট্রীয় মদদে হতে থাকবে, তখন তার প্রতিরোধও উল্লেখিত মূলনীতির ভিত্তিতে হবে। তবে যুগ চাহিদার প্রেক্ষিতে ‘রাষ্ট্রীয় মুনকার’ এর প্রতিবিধানের লক্ষ্যে শায়েখ কারজাবী তিনটি কর্মপন্থা প্রস্তাব করেন — এক. সশস্ত্র বাহিনীর মাধ্যমে তার প্রতিবিধান করা যেতে পারে। ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী যেমন সশস্ত্র বাহিনীর মাধ্যমে বিরোধীদের দমন করে, ঠিক একই কায়দায় শাসকের বিরুদ্ধেও অগ্রসর হওয়া যেতে পারে।
দুই. পার্লামেন্টের মাধ্যমে তার প্রতিবিধান করবে। অর্থাৎ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের মাধ্যমে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে মুনকার রোধ করবে।
তিন. গণবিপ্লবের মাধ্যমে। যেমনটি আমরা ইরান বিপ্লবে দেখেছি। তবে যদি এই তিন পদ্ধতির কোনটিরই সক্ষমতা না রাখে, তাহলে নিজেরা সংগঠিত হতে থাকবে এবং লেখনী, বক্তৃতা ও দাওয়াতের মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম ও জনমত তৈরি করতে থাকবে।
(১৫৪–১৬৬ পৃ. من فقه الدولة في الاسلام)
তিন. শাসকদের সঙ্গে আলেমদের সংলাপ : কারজাবীর দৃষ্টিকোণ
“মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ শাসক তিনি যিনি আলেমের সাক্ষাতে যান এবং সবচেয়ে নিকৃষ্ট আলেম সে যে শাসকের সাক্ষাতে যায়।” অপর বর্ণনায় এসেছে,“যে বাদশাহর দরবারে যাওয়া-আসা করে সে প্রলুব্ধ হয়। আর যে বাদশাহর যত নিকটবর্তী হয় আল্লাহর কাছ থেকে সে তত দূরে সরে যায়।” উল্লিখিত হাদিসদ্বয় ছাড়াও বিভিন্ন হাদিসে রাজা-বাদশাদের নিকট যাওয়ার ক্ষেত্রে আলেমদের কঠিন পরিণতির হুঁশিয়ারি করা হয়েছে। শায়েখ কারজাবী রহ. এ বিষয়ের হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন, রাসুল সা. এর এই নিন্দা ও মন্দ পরিণতির সতর্কতা সেই সব আলেমদের জন্য যারা নিজেদের ইমান-ইলম জলাঞ্জলি দিয়ে বাদশাহর চাটুকারিতা করে। শরিয়ত বিরোধী কাজেও শাসকদের সমর্থন যোগায় এবং ভিক্ষুকের মত তাদের দরবারে পড়ে থাকে।
العلماء و الحكماء : من برنامج الشريعة والحياة، الجزيرة نت. 2012–04–26
অন্যথায় দীনি পরামর্শ, দাওয়াত এবং সামগ্রিকভাবে ইসলামের সৌন্দর্য তুলে ধরার লক্ষ্যে শাসকদের নিকট যাওয়া এবং তাদের সাথে সংলাপে বসা দোষণীয় নয়। এ ক্ষেত্রে তিনি শাসকদেরকে কয়েকটি শ্রেণিতে বিভক্ত করেন —
এক. যে সকল শাসক ভিন্নমত গ্রহণ করে ইসলামের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে, তাদের সঙ্গে সংলাপ নিরর্থক। কারণ তারা ইসলামের বিলুপ্তি ও ধ্বংস ছাড়া কিছু চায় না। তাদের মুয়ামালা আল্লাহর সাথে। আল্লাহ বলেন, “তারা আল্লাহর নুরকে নিজেদের মুখের ফুঁৎকারে নিভিয়ে দিতে চায়, অথচ আল্লাহ তা হতে দিবেন না স্বীয় নুরকেই পূর্ণতা দান ব্যতিত, যদিও কাফেররা তা অপছন্দ করে।” (সুরা নিসা– ৮৪)
দুই. যে সকল শাসক ইসলামকে ঘৃণা করে না— কিন্তু ভয় পায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ ভয়ের কারণ হচ্ছে ইসলাম সম্পর্কে তাদের অজ্ঞতা। কারজাবী বলেন, এদের অনেকেই ক্ষমার যোগ্য, কারণ ইসলামকে তারা বিশুদ্ধ সূত্র ও নির্ভরযোগ্য আলেমের কাছ থেকে জানার সুযোগ পায় নি। অনেক শাসক তাদের মতলববাজ কুমন্ত্রণাদাতার মিথ্যা হুঁশিয়ারির প্রভাবে অথবা বিদেশি চক্রান্তের শিকার হয়ে ইসলাম সম্পর্কে একটি শঙ্কিত মনোভাব পোষণ করে। ফলে এই শ্রেণির শাসকদের সামনে ইসলামকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরতে পারলে এবং ইসলাম যে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ জীবনের জন্য কল্যাণকর তা বোঝাতে পারলে আল্লাহর ইচ্ছায় হয়তো তারা বুঝতে পারবে। হক্কানি আলেমদের প্রভাবে শাসকদের মনমানসিকতায় পরিবর্তন এসেছে, ইতিহাসে এমন দৃষ্টান্ত বিরল নয়।
(পৃ. ২০০–২০১ أولويات الحركة الاسلامية)
তিন. যে দেশ শরিয়া আইনে পরিচালিত হয় সেখানে একটি শরিয়া কাউন্সিল থাকবে। কাউন্সিলের সদস্য যে আলেমগণ হবেন, তাঁরা দীন ও দুনিয়া, জীবন ও জগৎ সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান রাখবেন। তাঁরা ইসলামি আইন বাস্তবায়নে সরকারকে সহযোগিতা করবেন। (আল জাজিরা, প্রাগুক্ত)
চার. আলেম ও শাসক সম্পর্কের মৈত্রী ও বৈরিতা : ঐতিহাসিক দিক
শায়েখ কারজাবী বলেন, খেলাফতে রাশেদার যুগে শাসক ও আলেম ভিন্ন কোন সত্তা ছিল না। বড়ো আলেম যিনি হতেন তিনিই শাসনভার প্রাপ্ত হতেন। চার খলিফার প্রত্যেকের মধ্যেই এই বাস্তবতা স্পষ্ট। হযরত আবু বকর, উমর, উসমান ও আলি রা. প্রত্যেকেই ছিলেন মুজতাহিদ ফকিহ। তাঁরা অন্যান্য আলেমদেরও সবসময় পাশে রাখতেন। হযরত উমর রা. এর স্পষ্ট ঘোষণা ছিল, “পরামর্শকগণ আমার দুয়ারে চিরকাল স্বাগতম! যিনি আমার দোষত্রুটি সম্বন্ধে আমাকে অবগত করবেন আল্লাহ তাঁর উপর রহম করুন।” ফলে যুগের সকল আলেম যেমন, ইবনে মাসউদ, ইবনে উমর, ইবনে যুবায়ের, মুয়ায ইবনে জাবাল ও উবাই ইবনে কাব রাযিয়াল্লাহু আনহুম প্রমুখ সাহাবি সহ সকল সাহাবিগণ তাঁদের সঙ্গে থেকে সহযোগিতা করেছেন। আলেম ও শাসকদের মাঝে বিরোধ-বিভাজন ছিল না। কিন্তু হয়রত মুয়াবিয়া রা. এর যুগে এসে আলেম ও শাসকদের মধ্যকার এই সংযোগ কিছুটা হালকা হয়ে যায়। তাঁর পরবর্তী শাসকদের সময় এই সংযোগ আরো বেশি হালকা হয়ে যায়। মাঝখানে উমর ইবনে আব্দুল আযিয রহ. ক্ষমতায় এসে আবার সংযোগ স্থাপন করেন। তিনি আলেমদের সাহচর্য গ্রহণ করেন এবং খেলাফতে রাশেদার আদর্শ বাস্তবায়ন করে ইসলামের হৃতগৌরব ফিরিয়ে আনেন। কেননা তিনি ছিলেন মুখলিস আলেম ও হিজরি দ্বিতীয় শতকের মুজাদ্দিদ।
রাষ্ট্রের সাথে বিরোধ- প্রতিবাদে গিয়েছেন ইতিহাসে এমন আলেমের দৃষ্টান্তের অভাব নেই। এক্ষেত্রে তিনি বলেন, সত্যিকারের যিনি আলেম হক বলা থেকে তিনি কখনো বিরত থাকেন না। তিনি আল্লাহর হুকুমের সামনে কাউকে পরোয়া করেন না। শায়েখ সুরা মায়েদার ৫৪ নাম্বার আয়াত উদ্ধৃত করেন, “হে মুমিনগণ, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তার দীন থেকে ফিরে যাবে তাহলে অচিরেই আল্লাহ এমন কওমকে আনবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারা তাঁকে ভালবাসবে। তারা মুমিনদের উপর বিনম্র এবং কাফিরদের উপর কঠোর হবে। আল্লাহর রাস্তায় তারা জিহাদ করবে এবং কোন কটাক্ষকারীর কটাক্ষকে ভয় করবে না। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছা তিনি তাকে তা দান করেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।”
এই আয়াত উল্লেখ করে তিনি বলেন, জিহাদ শুধু শত্রু-কাফেরদের বিরুদ্ধে তরবারি ধারণ করার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আরো এক প্রকার জিহাদ আছে— হাদিসের ভাষায় যা উত্তম জিহাদ, তা অত্যাচারী শাসকের সামনে হক কথা বলার দ্বারা আদায় হয়। হযরত মুয়ায ইবনে জাবাল রা. থেকে এমনটিই বর্ণিত আছে। সুতরাং আলেমদের উচিৎ, তাঁরা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবেন, আল্লাহর দিকে আহ্বান করবেন এবং সময়মত জালেমের সামনে সত্য উচ্চারণ করবেন। সাধারণ মুসলমানদেরও এতে সাহসী করে তুলবেন।
ইযযুদ্দিন ইবনে আব্দুস সালাম রহ. এমন সাহসী উচ্চারণ করেছিলেন। তিনি দেশান্তরি হয়েছিলেন, তবু মামলুক সুলতানদের বিক্রি করে আযাদ করার যে ফতোয়া দিয়েছিলেন তাতে অটল ছিলেন। ইমাম নববি, ইবনে তাইমিয়া ও ইবনু কাইয়ুমের ছাত্রগণ— সকলকেই কারাভোগ করতে হয়েছে। হককথা বলার ‘অপরাধে’ (?) আলেমদের কারাভোগের এই ধারা অনেক পুরনো, তার তালিকাও অনেক দীর্ঘ। যার শুরু হয়েছিল তাবেয়ি হযরত সাইদ ইবনুল মুসাইয়িবের কারাভোগের মাধ্যমে, মারওয়ান তাকে বন্দি করেছিল। মাঝখানে ইমাম শাফেয়ি ও আহমদ সহ হাজারো আলেম কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে রক্ত ও প্রাণ ঝরিয়েছেন। যার ধারাবাহিকতা আজও বিদ্যমান। কিন্তু হকের পতাকবাহী আলেমগণ কখনো জালেমকে ভয় পান না। তাঁরা সাহসী কণ্ঠে সত্য উচ্চারণ করে যান। কেননা তাঁরা তো গোলামি করেন একমাত্র আল্লাহর। অন্য কারো পরোয়া তাঁরা করেন না।
(আল জাজিরা, প্রাগুক্ত)