সর্বজনীন পেনশন : সূদমুক্ত ব্যবস্থার উদ্যোগ নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ

|| তাসনিফ আবীদ ||
বাংলাদেশের ১০ কোটি সাধারণ মানুষকে সুবিধা দেয়ার চিন্তা মাথায় রেখে চলতি বছরের আগস্টে চালু হয় সর্বজনীন পেনশন। ‘পৃথিবীর বহু দেশের মতো বাংলাদেশেও সর্বজনীন পেনশন চালু হয়েছে’ মৌলিকভাবে এটি খুশির খবর। তবে সিংহভাগ মুসলমানের দেশে এই পদ্ধতিটি প্রবর্তনের ক্ষেত্রে ইসলামি অর্থনীতির বিষয়গুলো মাথায় না রাখায় ধর্ম-কর্ম মেনে চলা মুসলমানরা এটিকে নিরাপদ মনে করছেন না। কেননা শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে এর প্রক্রিয়া নিয়ে যথেষ্ট আপত্তি প্রকাশ করেছেন ইসলামিক স্কলারগণ।

তারা জানান, সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা দিয়ে সেই অর্থের বিনিময়ে অতিরিক্ত অর্থ পাওয়ার যে চুক্তি—তা সুদের আওতায় পড়ে। এদেশের বেশিরভাগ মুসলমান সুদকে অপছন্দ করে। এ কারণে কনভেনশনাল ব্যাংকগুলোর তুলনায় ইসলামী ব্যাংকসমূহে গ্রহকদের ভিড় বেশি। এছাড়া কনভেনশনাল ব্যাংকগুলোও গ্রাহক চাহিদার কারণে ইসলামী উইং খুলতে বাধ্য হচ্ছে। এমতাবস্থায় সাধারণ স্কিমের পাশাপাশি সুদমুক্ত একটা স্কিমও চালু করা উচিত।

সাদ্দাম হুসাইন নামে ঢাকার খিলগাঁওয়ের এক বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয় ফাতেহের। তিনি একটি বেসরকারী কোম্পানিতে কর্মরত। সর্বজনীন পেনশন স্কিম শুরু হওয়ার পর তিনি ইচ্ছে করেছিলেন এতে যুক্ত হবেন। কিন্তু ওলামায়ে কেরামের সঙ্গে পরামর্শ করার পর তিনি জানতে পারেন বর্তমান যে প্রক্রিয়ায় এটিকে সাজানো হয়েছে, এতে যুক্ত হলে সূদের ভাগ নিতে হবে।

তিনি বলেন, ‘আমি আলহামদুল্লিাহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি। পুরোপুরি ইসলাম মেনে চলার চেষ্টা করি। হালাল পেশায় যুক্ত থেকে টেনে-টুনে হিসেব করে সংসার চালাতে হয়। কিছুটা কষ্ট হলেও মনে তৃপ্ত আসে যে হারাম কোনোকিছুর সঙ্গে যুক্ত নেই। এই অবস্থায় শেষ বয়সে গিয়ে তো সূদের ভাগী হতে পারবো না। আমরা যারা হালাল-হারাম মেনে চলি তাদের জন্য ব্যাংকিং সেক্টরের মতো সর্বজনীন পেনশনে সিস্টেম রাখা উচিৎ।’

তার মতো এমন অনেকেই ফাতেহের কাছে তুলে ধরেন তাদের মনের কথা।

এদিকে সর্বজনীন পেনশন স্কিম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ধার্মিক নাগরিকদের অভিমতগুলো তুলে ধরলে তারা জানান, ইতোমধ্যে অনেক গ্রাহকই তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করেছে। হালাল-হারাম মেনে চলা গ্রাহকরা ইসলাম ভিত্তিক পেনশন স্কিমের আগ্রহ প্রকাশ করছে।

কর্তৃপক্ষ জানায়, এসব বিষয় মাথায় রেখে তারা ইতোমধ্যে কিছু উদ্যোগ হাতে নিয়েছে।

যারা ইসলামিক সর্বজনীন পেনশন স্কিমে আগ্রহী তাদের জন্য দ্রুতই কিছু করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রসঙ্গত, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থবিভাগের হিসাব অনুযায়ী ২০২০ সালে ৬০ বছরের অধিক বয়সী মানুষের সংখ্যা ছিল ১ কোটি ২০ লাখ এবং ২০৪১ সালে তাঁদের সংখ্যা হবে ৩ কোটি ১০ লাখ। দেশের চার শ্রেণীর প্রায় ১০ কোটি মানুষের কথা বিবেচনায় এনে বিশাল জনগোষ্ঠীকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় আনতে গত ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে এই স্কিম চালু হয়। ১৮ বছরের বেশী বয়সী যেকোন বাংলাদেশী নাগরিক সার্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় আসতে পারবেন।

সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা অনুযায়ী, এ কর্মসূচিতে যুক্ত হলে ৬০ বছর বয়সের পর থেকে একজন গ্রাহক আজীবন পেনশন সুবিধা পাবেন। নির্ধারিত পরিমাণের চাঁদা পরিশোধের পর গ্রাহক মারা গেলে তার নমিনি বা উত্তরাধিকারী এই পেনশন পাবেন ১৫ বছর।

আগের সংবাদদুর্বল হয়ে গেছে মিধিলি, বৃষ্টি ঝরিয়ে আরও শক্তি হারাবে
পরবর্তি সংবাদইসরায়েলের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ে প্রস্তুত হামাস: ইসমাইল হানিয়া