
বিশ্ব মানবতার শত্রু ইহুদিবাদী সন্ত্রাসীদের অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলকে কোনোভাবেই মেনে না নেওয়ার ঘোষণা পুনর্ব্যক্ত করেছে পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি ও প্রখ্যাত ইসলামিক ব্যক্তিত্ব মুফতী তকী উসমানী।
বুধবার (৬ ডিসেম্বর) ইসলামাবাদে আয়োজিত ‘হুরমতে মসজিদে আকসা’ কনফারেন্সে বক্তৃতাকালে তিনি একথা বলেন।
মুফতী তকী উসমানী বলেন, সংকট থেকে উত্তরণে ফিলিস্তিনে দ্বি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা প্রকৃত সমাধান হতে পারে না। দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান তত্ত্ব কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। কোনো মুসলমানই একে মেনে নিতে পারে না। কেননা দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান মেনে নেওয়ার অর্থ ফিলিস্তিনের বুকে জায়োনিস্ট ইসরাইলকেও মেনে নেওয়া। আমরা এই তত্ত্বকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করি।
এছাড়া পাকিস্তানও এই বাস্তবতা থেকে পিছু হটতে পারে না। কেননা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠাতা কায়েদে আজম মুহাম্মদ আলি জিন্নাহ আনুষ্ঠানিক এক ঘোষণায় ইসরাইলকে অবৈধ বাচ্চা আখ্যায়িত করেছিলেন এবং কখনোই একে মেনে নেওয়া হবে না বলে অঙ্গীকার করেছিলেন।
কুদস রক্ষার জিহাদের ব্যাপারে তিনি বলেন, সাধ্যানুযায়ী সকল মুসলমানের উপর কুদস রক্ষার পর্যায়ক্রমে জিহাদ ফরজ। তাই অবস্থা অনুপাতে সকলকে ফিলিস্তিনিদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি আরো বলেন, মুসলিম বিশ্বের কাছে সেই সম্পদ ও সামর্থ্য আছে যার মাধ্যমে তারা ইসরাইল আমেরিকাকে নিশ্চুপ করে দিতে পারে। কিন্তু তা সত্ত্বেও মুসলিম দেশগুলো এদের গোলামীকে বেছে নিয়েছে। সকলের জেনে রাখা উচিত, খোদায়ী আমেরিকার নয় বরং খোদায়ী শুধুমাত্র আল্লাহর। আল্লাহ পাকের শুকরিয়া যে, হামাসের বীর মুজাহিদীন আমাদের সামনে স্বাধীনতা লাভের সুযোগ এনে দিয়েছে। পুরো মুসলিম বিশ্ব যদি এক হয়ে এতে সমর্থন যোগায় তবে পশ্চিমা কুফুরী শক্তি কিছুই করতে পারবে না।
হামাস কোনো সন্ত্রাসী সংগঠন নয় বরং একটি রাজনৈতিক শক্তি। লড়াইরত হামাস সদস্য ও ফিলিস্তিনিরাও নিছক যোদ্ধা নয় বরং দ্বীনের জন্য লড়াইরত মুজাহিদীন। তাদের যোদ্ধা না বলে মুজাহিদ বলা উচিত। কিন্তু বাস্তবতা হলো, পৃথিবীতে যারাই প্রকৃত স্বাধীনতার জন্য লড়াই করে পশ্চিমারা বিশেষত আমেরিকা তাদেরকেই সন্ত্রাসী বলে আখ্যায়িত করে। হামাসের বেলাতেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। কাশ্মীরী মুজাহিদীনরাও একই প্রোপাগাণ্ডার শিকার।
হামাসের ব্যাপারে তিনি আরো বলেন যে, রাজনৈতিক ও প্রতিরোধ শক্তি হামাস শুধু লড়াকু ফিলিস্তিনিদের কোনো কাফেলা নয় বরং দলপ্রধান ইসমাইল হানিয়ার বক্তব্য অনুযায়ী এর অধিকাংশ সদস্য হাফেজুল কুরআন ও দ্বীনের জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি। এধরণের মুজাহিদদের তারা সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করে থাকে। অথচ প্রকৃত সন্ত্রাসী হলো অবৈধ জায়োনিস্ট রাষ্ট্র ইসরাইল।
এছাড়াও তিনি বলেন, যুদ্ধ বন্ধের দাবীর পরিবর্তে আমাদের উচিত গাজ্জায় বোমাবর্ষণ বন্ধের দাবী জানানো। দাবী জানানো উচিত ফিলিস্তিনিদের নির্মম নির্যাতন ও গণহত্যা বন্ধের।
খেলাফত ফিরিয়ে আনার এখনই সুবর্ণ সুযোগ এদিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, পুরো মুসলিম বিশ্ব যখন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিকভাবে পশ্চিমাদের দাসত্ব করছে ইতিহাস তখন আমাদের সামনে এর থেকে বেরিয়ে আসার সুবর্ণ সুযোগ নিয়ে হাজির হয়েছে। এখনই সময় এর থেকে বেরিয়ে আসার সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার। সকলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার।
উল্লেখ্য, মাজলিসে ইত্তেহাদে উম্মাত পাকিস্তানের উদ্যোগে ইসলামের ৩য় পবিত্রতম স্থান মসজিদুল আকসার মর্যাদা রক্ষায় ইসলামাবাদে আয়োজিত কনফারেন্সটিতে পাকিস্তানের সর্বস্তরের ইসলামী দল ও এর নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন, তানজিমুল মাদারিসের সভাপতি মুফতী মুনিবুর রহমান, জমিয়তে আহলে হাদিসের আমির প্রফেসর সাজিদ মীর, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম (এফ) এর সভাপতি মাওলানা ফজলুর রহমান, জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের আমির সিরাজুল হক, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া পাকিস্তানের মহাসচিব কারী মাওলানা মুহাম্মদ হানিফ জালান্ধারী, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত পাকিস্তানের আমির মাওলানা মুহাম্মদ আহমদ লুধিয়ানবী, আলমি মাজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওতের আমির মাওলানা মুহাম্মদ নাসিরুদ্দিন খান খাকওয়ানি, জমিয়তে আহলে হাদিস পাকিস্তানের নায়েবে আমির মিয়া মনজুর আহমদ, পাকিস্তান শরীয়ত কাউন্সিলের মহাসচিব আল্লামা জাহেদ আর-রাশেদী, রাবেতাতুল মাদারিস পাকিস্তানের সভাপতি মাওলানা আব্দুল মালেক, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার নাজেম মাওলানা কাজী আব্দুর রশিদ প্রমুখ।
সূত্র: জিও নিউজ